শুভ নববর্ষ ১৪৩২

in আমার বাংলা ব্লগ6 days ago

shubho noboborsho 1432.png


"আমার বাংলা ব্লগ"-এর সকল সদস্যকে জানাই বাংলা শুভ নববর্ষের আন্তরিক প্রীতি ও শুভেচ্ছা

আজ পহেলা বৈশাখ, বাংলা ১৪৩২ সালের প্রথম দিন । বাংলাদেশ, ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, আসাম ও ত্রিপুরা রাজ্যে আজ বাংলা নববর্ষ উদযাপিত হচ্ছে । সপ্তদশ শতাব্দীতে বঙ্গাধিপতি মহারাজ শশাঙ্ক বাংলা বর্ষ চালু করেন । তাঁরই আমলে সর্বপ্রথম বাংলা বর্ষপঞ্জী তৈরী করা হয় । শশাঙ্কের এই বাংলা বর্ষপঞ্জী ছিল মূলতঃ হিন্দু ধর্মের নানান পূজা ও ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানের সঠিক দিন মাস ও সময় নির্ধারণের জন্য । তাই এই বর্ষপঞ্জীর ব্যবহার ছিল প্রধানত হিন্দু পুরোহিত শ্রেণীর হাতে । বাংলার সর্বসাধারণের জন্য নয় ।

এর বহু পরে মুঘল সম্রাট বাংলা দখলের পর শশাঙ্কের বর্ষপঞ্জীকে রাজস্ব আদায়ের সুবিধার্থে পরিবর্তন ও পরিমার্জন করে বাংলার জনসাধারণের জন্য প্রচলন করেন । সেই থেকে প্রত্যেক বছর বৈশাখ মাসের প্রথম দিনটিকে বাংলা নববর্ষের সূচনা বলে অভিহিত করা হয় ।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জমিদারির আমলে পহেলা বৈশাখে হালখাতার পাশাপাশি পুণ্যাহ অনুষ্ঠানের কথা শোনা যায় । এই পুণ্যাহ কিন্তু, মুঘল বাদশা আকবরের আমলের রাজস্ব আদায়ের সেই বর্ষপঞ্জীর কথাই স্মরণ করিয়ে দেয় । পুণ্যাহ মূলত ছিল বাংলা নতুন বছরের সূচনায় প্রজা কর্তৃক একটা অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বিগত বৎসরের সকল খাজনা শোধ করা । খাজনা শোধ করার পরে মিষ্টি বিতরণ ও ভোজ সভার আয়োজন করা হতো । এটিই পুণ্যাহ ।

আর হালখাতা তো আমরা জানিই । এই অনুষ্ঠানটিও হয় বাংলা নববর্ষের দিনে । ব্যবসায়ীরা এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে থাকেন । আর তাঁদের সকল খদ্দের শ্রেণীর মানুষ এই অনুষ্ঠানে নিমন্ত্রিত হয়ে এসে তাঁদের যত বাকীর খাতা থাকে সেগুলো থেকে সমুদয় বাকী পরিশোধ করে নতুন বাকীর খাতা শুরু করেন । এটিই হালখাতা ।

আবার পহেলা বৈশাখের এই দিনটিকে হিন্দু ধর্মের অত্যন্ত মঙ্গলময় একটি দিন হিসেবে দেখা হয় । তাই এই দিনে প্রায় প্রতিটা বাড়িতে পূজা সহ নানান মাঙ্গলিক শুভ আচার অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়ে থাকে । ছোটবেলায় দেখেছি পয়লা বৈশাখের দিনে আমাদের গ্রামের প্রতি বাড়িতে ভগবতী পুজো হতো ।

এখন প্রত্যেক বছর পয়লা বৈশাখ কাটে আমার ভোরবেলা ঘুম থেকে উঠে বিশাল এক ভোজ আর বিকেলে হালকা ঘোরাঘুরির মাধ্যমে । এ বছরও তার ব্যতিক্রম হচ্ছে না । প্রত্যেক পয়লা বৈশাখের মতো এ বছরও ঘুম থেকে উঠেই রবীন্দ্র সংগীত চালিয়ে দিলাম ফুল ভলিউমে ।

"এসো, এসো, এসো হে বৈশাখ।
তাপসনিশ্বাসবায়ে মুমূর্ষুরে দাও উড়ায়ে,
বৎসরের আবর্জনা দূর হয়ে যাক॥

যাক পুরাতন স্মৃতি,
যাক ভুলে-যাওয়া গীতি,
অশ্রুবাষ্প সুদূরে মিলাক॥
মুছে যাক গ্লানি, ঘুচে যাক জরা,
অগ্নিস্নানে শুচি হোক ধরা।"

গানটি না শুনলে আমার পয়লা বৈশাখ অপূর্ন থেকে যায় । গান শুনতে শুনতে কিছুক্ষণ পায়চারি করি । এরপরে ল্যাপটপ অন করে কিছুক্ষন কাজ করতে করতেই খাওয়ার সময় হয়ে যায় । সকালে আজকের পয়লা বৈশাখের স্পেশ্যাল মেন্যু ছিল -

০১. পান্তা ভাত
০২. গরম ধোঁয়া ওঠা আতপ চালের ভাত
০৩. আলু ভর্তা
০৪. বেগুন পোড়া ভর্তা
০৫. মিষ্টি কুমড়ো ভর্তা
০৬. ঢ্যাঁড়শ ভর্তা
০৭. মটর ডাল ভর্তা
০৮. শিম ভর্তা
০৯. কালোজিরা ভর্তা
১০. টমেটো ভর্তা
১১. চিংড়ি ভর্তা
১২. কাঁচকলা ভর্তা
১৩. থানকুনি ভর্তা
১৪. পেঁপে ভর্তা
১৫. ইলিশ মাছের লেজ ভর্তা
১৬. চুই ভর্তা
১৭. লাল শাক ভর্তা
১৮. কাঁকরোল ভর্তা
১৯. মটরশুঁটি ভর্তা
২০. ডিম ভর্তা
২১ . ইলিশ মাছ ভাজা
২২ . পুঁটি মাছ ভাজা
২৩ . কচি পাঁঠার ঝোল
২৪ . বাগদা চিংড়ির পোস্ত-সর্ষে ঝোল

খেয়েদেয়ে এখন পোস্ট লিখে এখন স্নান করে বাইরে ঘুরতে বেরোবো একটু । সবাই ভালো থাকবেন, আনন্দে থাকবেন এই কামনায় আরো একবার সবাইকে জানাই শুভ নববর্ষ


Mangal_Shobhajatra_in_Dhaka.jpg
Creative Common License Under Fair Usage Policy- Source : Wikimedia


------- ধন্যবাদ -------


পরিশিষ্ট


এই পোস্টটি যদি ভালো লেগে থাকে তো যে কোনো এমাউন্ট এর টিপস আনন্দের সহিত গ্রহণীয়

Account QR Code

TTXKunVJb12nkBRwPBq2PZ9787ikEQDQTx (1).png


VOTE @bangla.witness as witness

witness_proxy_vote.png

OR

SET @rme as your proxy


witness_vote.png

»»——⍟——««

Sort:  
 6 days ago 

শুভ নববর্ষের প্রীতি ও ভালোবাসা রইল দাদা ♥️

নববর্ষ মানেই নতুনের সূচনা। নববর্ষের শুভ দিনে হৃদয়ে জাগ্রত হোক প্রেম-ভালোবাসা ও ভক্তি। বাংলা নববর্ষ নিয়ে অনেক কিছুই আমাদের সাথে শেয়ার করেছেন আজকে পড়ে অনেক বিষয় জানতে পারলাম। এত প্রকারের খাবারের মেনু দেখে তো সত্যিই খেতে ইচ্ছা করছে। আমাদের গ্রামের বাড়িতে এখনো নববর্ষের দিনে ভগবতী পূজা হয়। অনেক সুন্দর একটি পোস্ট আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।

 6 days ago 

নববর্ষের শুভেচ্ছা রইল দাদা। বেশ পুরনো কিছু তথ্য জানলাম, আপনার লেখার মাধ্যমে।

 6 days ago 

পহেলা বৈশাখ মানেই যেন এক নতুন সূর্যের আলোয় ভেজা বাঙালির প্রাণের উচ্ছ্বাস। আপনার লেখাটি সময়ের আবহ, ইতিহাসের সুবাস এবং ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার মিশেলে সত্যিই মন ছুঁয়ে গেল। বাংলা নববর্ষের ইতিহাসের ধারাবাহিক বর্ণনা এবং শশাঙ্ক থেকে শুরু করে আকবর, রবীন্দ্রনাথ পর্যন্ত সময়ের প্রেক্ষাপটে তুলে ধরাটা ছিল খুব তথ্যবহুল এবং হৃদয়গ্রাহী।

 6 days ago 

শুভ নববর্ষের শুভেচ্ছা নেবেন দাদা৷ সুন্দর আলোচনা করেছেন বাংলা নববর্ষ ও পঞ্জিকা নিয়ে৷ অনেকেই এতো কিছু জানে না৷ আর দুপুরে দেখছি বাড়িতে এলাহি আয়োজন ছিল। আহা। ভালো থাকুন পরিবার নিয়ে।

 6 days ago 

শুভ নববর্ষ দাদা। সত্যি বলতে নববর্ষ সম্পর্কে আমার এত কিছু জানা ছিল না। আপনার পোস্টের মাধ্যমে আজকে অনেক কিছুই জানতে পারলাম। আর আপনাদের খাবারের মেনু দেখে আমি তো অবাক। কারণ হচ্ছে খাবার থেকেও এতগুলো রেসিপি তৈরি করা অনেক বেশি কষ্টকর। তবে ভর্তা জাতীয় রেসিপিগুলো আমি একটু বেশি পছন্দ করি। সব মিলিয়ে বেশ ভালো দিন কাটালেন। সত্যি অনেক বেশি ভালো লাগলো।

 6 days ago 

দাদা এ তো দেখলাম ভর্তার মিলন মেলা ৷ এতগুলো ভর্তার স্বাদ কিভাবে নিয়েছেন দাদা ৷ যা হোক পহেলা বৈশাখ মানে বাঙালির মনে অন্য রকম এক দিন ৷
পহেলা বৈশাখ কার আমল থেকে শুরু কিভাবে বর্ষবরন এলো অনেক কিছু জানলাম ভালো লাগলো দাদা ৷

 6 days ago 

শুভ নববর্ষ দাদা। আপনার পোস্ট পড়ে নববর্ষ সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে পারলাম। তবে খাবারের মেনু দেখে তো অবাক, এতগুলো একসাথে কিভাবে খেলেন? এত পদের ভর্তার নাম শুনে জিভে জল চলে আসলো। আপনার নববর্ষের দিনটি খুব ভালো কেটেছে বুঝতে পারছি। এভাবেই সারাটি বছর হাসিখুশিতে ভরে থাকুক আপনার জীবন এই প্রার্থনা করি।

 6 days ago 

শুভ নববর্ষ দাদা।🌸
আপনার পোস্টটি পড়ে নববর্ষ সম্পর্কে অনেক নতুন ও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানতে পারলাম। শশাঙ্ক থেকে শুরু করে মুঘল আমল ও রবীন্দ্রনাথের সময়কাল সবকিছুই আপনি অত্যন্ত সুন্দরভাবে তুলে ধরেছেন। আর খাবারের তালিকা দেখে তো মন ভরে গেল! এত পদের ভর্তা একসাথে? ভাবতেই জিভে জল চলে এল। সত্যি দাদা, আপনার নববর্ষ উদযাপন ছিল একেবারেই অনন্য। আপনার লেখায় বর্ষবরণ আরও রঙিন হয়ে উঠেছে।

 6 days ago 

দাদা পহেলা বৈশাখে ২৪ পদের খাবার খেয়ে ঘুরতে বের হন কিভাবে, টেনশনে পরে গেলাম। এত খাবার যে তৈরী করেছে সে হয়তো এক মাস আর কাজ করবে না হা হা হা। ব্লগটি পড়ে ভীষণ মজা পেয়েছি। আপনাকেও নববর্ষের শুভেচ্ছা। ধন্যবাদ।

 6 days ago 

শুভ নববর্ষ দাদা। খাবারের মেনু কিন্তু কম হয়ে গেলো। আরও কিছু আইটেম থাকলে ভালো হতো হা হা হা। এতো আইটেম এক চিমটি করে খেলেও তো পেট ভরে যাবে। যাইহোক সবমিলিয়ে দিনটা বেশ ভালো কাটিয়েছেন দাদা। এতো চমৎকার একটি পোস্ট আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।