অসমাপ্ত ভালোবাসা
অসমাপ্ত ভালোবাসার কাহিনী
কলেজ থেকে ফিরে প্রিয়সী মোবাইল টা অন করল। সাথে সাথে মেসেজের শব্দ। অচেনা নাম্বার থেকে ৩টা মেসেজ এসেছে।
প্রিয়সী অবাক হয়ে যায় যখন মেসেজ গুলা পড়ে। তিনটিই রোমান্টিক মেসেজ। হাসল সে আর মনে মনে বললো,
-নিশ্চই কোনো প্রেমিক কবি তার প্রেমিকা কে দিতে গিয়ে ভুলে তার নাম্বারে দিয়ে ফেলেছে।
কিন্তু তার ভাবনা ভুল সেটা বুঝতে পারে,কারন বিকেলের মধ্যেই আরো ৪টা মেসেজ আসে ঐ নাম্বার থেকে।
প্রিয়সী এখন চিন্তায় পড়ে যায়। কে হতে পারে এই পাগল? পরিচিত কেউ, নাকি অচেনা? তবে প্রিয়সী একটা রিপ্লেও করল না।
করার প্রশ্নই আসে না। অচেনা একটি লোক মেসেজ করছে এখন রিপ্লে পেলে লাই পেয়ে যাবে।
কিন্তু লোকটি আসলেই পাগল রিপ্লে না পেয়েও মেসেজ করে যাচ্ছে।
ঐদিন মোট ১৫টি মেসেজ আসল।এরমাঝে কয়েকটা কবিতাও ছিল।
প্রিয়সীর ব্যাপার টা যেমন অদ্ভুত লাগছে আবার লেখা গুলো ভালোও লাগছে।
এরপরের দিন মেসেজ এর সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ হয়ে যায়। প্রিয়সী ভেবে পায়না কে এই পাগল। নিশ্চই তার পরিচিত কেউ।
কন্ঠ চিনে ফেলবে সে ভয়ে কখনো ফোন দেয়না।
পরেরদিন ও মেসেজের ধারাবাহিকতা ধরে রাখে। শেষ পর্যন্ত প্রিয়সী বিরক্ত হয়ে নিজেই কল দেয়।
-আচ্ছা আপনার সমস্যা টা কি বলেন তো? একটা মেসেজের রিপ্লে দিচ্ছি না তারপর ও ক্লান্ত হচ্ছেন না।
আর এত রোমান্টিক মেসেজ আমাকে দেয়ার মানে কি? আমি কি আপনার প্রেমিকা? আচ্ছা আপনি কে বলুন তো?
আমায় চিনেন? নাম কি?
প্রায় ২মিনিট একা একা কথা বললো প্রিয়সী।
-শেষ! মাত্র ২মিনিট ঝাড়ি দিলে?আমিতো ভেবেছিলাম প্রথম যেদিন ফোনে কথা হবে কমপক্ষে ১০মিনিট ঝাড়ি দিবে।
প্রিয়সী পুরো মনোযোগ দিয়ে কন্ঠটা শুনল,নাহ এই কণ্ঠস্বর এর আগে আর শুনেনি।
-মানে কি, আমি কি ঝগড়াটে নাকি যে অচেনা একজনকে ঝাড়ি দিবো।
নাহ তুমি অনেক মিষ্টি একটা মেয়ে।
-আপনি কি আমায় দেখেছেন নাকি যে মিষ্টি বলছেন?
– কল্পনার রাজ্যের রানী তুমি
পরীদের থেকেও রূপসী
চাঁদের আলো লজ্জা পাবে
দেখলে তোমার ঐ হাসি,
প্রথম দেখায় পড়েছি প্রেমে
বলতে চাই তাই ভালবাসি
অতৃপ্ত মনের বাসনা তুমি
ফারাবির স্বপ্নের প্রিয়সী।
-তারমানে আপনি আমার নাম টাও জানেন। কে আপনি বলেন তো?
-বললাম তো ফারাবি।
-এই নামের কাউকে তো আমি চিনি না।আমায় চিনেন কিভাবে আপনি? আর নাম্বার পেলেন কই?
-কাউকে মন থেকে ভালবেসে ফেললে তার সম্পর্কে সবকিছু জানা টা খুব একটা কঠিন কাজ না।
-তারমানে বলবেন না? আচ্ছা না বলেন।কিন্তু আমাকে আর এইসব মেসেজ দিবেন না।
-তুমি আমায় ভালো না বাসো এতে আমার কোনো অভিযোগ নেই।কিন্তু তোমায় আমি ভালবেসে যাবো এখানে কেন তুমি বাঁধা দিবে?
-কিন্তু আমি আপনাকে চিনিনা, অচেনা কারো সাথে কথা বলবো কেন?
-সবাই সবার কাছে অচেনা থাকে, ধীরে ধীরে চেনা হয়ে যায়। আমরাও হবো।
-আমার ইচ্ছে নাই।
-ভালবাসি তোমায়, তাই তোমার কথা ফেলতে পারি না। ভালো থেকো।
বলেই ফারাবি লাইন কেটে দেয়।
লাইন কাটতেই প্রিয়সীর কেন যেন খুব খারাপ লাগতে লাগলো। “ধ্যাত, এভাবে না বললেও হত।”
এই দিন ও তার পরের দিন আর কোনো মেসেজ আসলো না প্রিয়সীর মোবাইলে।
হঠাত করেই প্রিয়সী মনের মাঝে এক শূন্যতা অনুভব করে। বারবার মোবাইলের মেসেজ বক্স থেকে ঘুরে আসে।
সিম কোম্পানি থেকে আসা মেসেজ গুলোও তাকে কাঁপিয়ে দেয়। বুঝতে পারে না এত মিস করছে কেন অচেনা পাগলের ঐসব মেসেজ গুলো?
সে সিদ্ধান্ত নেয় ফোন করে সরি বলবে। তাই ঐ অচেনা নাম্বার টি খুঁজে বের করে কল দেয়।কিন্তু হতাশ হতে হয় তাকে, নাম্বার টি বন্ধ।
পাঁচ দিন চলে গেল ঐ নাম্বার থেকে আর একটা মেসেজ আসলো না। নাম্বারটিও বন্ধ করে রাখছে।
প্রিয়সী ছাদে বসে সূর্য ডুবা দেখছিল, হঠাত মোবাইলে মেসেজের টোন বাজে।
“”ভালবাসার মানুষটির জন্য অপেক্ষা করাটা যন্ত্রণাদায়ক সুখ। কষ্ট হয় তবু অপেক্ষা করতে ভালো লাগে।””
প্রিয়সী কিছু না ভেবেই সাথে সাথে ফোন করে।
-আপনি এমন করলেন কেন? এই পাঁচটা দিনে একটা মেসেজ করলেন না তার উপর মোবাইল ও বন্ধ ছিল।।
কি?হয়েছিল কি আপনার??
-সেদিন তোমার কথা শুনে খুব খারাপ লাগছিল তাই ফ্রেন্ডদের সাথে আড্ডায় ফাস্ট সিগারেট খাই,তাও পরপর ৩টা খেয়ে ফেলছিলাম।
রাতে খুব জ্বর আসলো। বিগত কয়েক বছর আমার এমন কঠিন জ্বর হয়নি।মোবাইল অফ করে রাখছিল আম্মু।
-আজিব তো,এত বড় অসুখ হল আর আমাকে জানালেন না।
-আমি তোমার কে হই? যে জানাবো। শুধু শুধু অন্যকে বিরক্ত করতে চাই নি আমি।
-আপনি এখনো সেদিনের কথাগুলো মনে পুষে রেখেছেন। সেদিনের ব্যবহারের জন্য আমি বিষণ ভাবে লজ্জিত।
-তোমার লজ্জিত হওয়ার কিছু নেই।এমন কিছুই তো বলোনি। আমি ভালবাসি বলে তুমিও যে আমায় ভালবাসবে এমন তো কোনো কথা নেই।
-আচ্ছা আমরা এমনি বন্ধু হয়ে থাকতে পারিনা???
-আপনি ছেড়ে তুমি বলা শুরু করো তাইলে পারবো।
ফারাবির কথায় হেসে ফেললো প্রিয়সী।
!
তারপর থেকে প্রতিদিন অনেক টা সময় তাদের ফোনে কথা হয়।ফারাবি মাঝেমাঝে কবিতা দিতো মেসেজে, প্রিয়সী মুগ্ধ হয়ে পড়তো সেগুলি।
শুধু কবিতা না ফারাবির সব কিছু মুগ্ধ করে প্রিয়সীকে। ফারাবির কথা বলা, ওর কন্ঠে গান শুনলে সে নিজেকে যেন কোথাও হারিয়ে ফেলে।
ধীরে ধীরে প্রেমে পড়ে যায় ফারাবির। একটা সময়ে এসে সে নিজেই ফারাবিকে ভালবাসার কথা বলে।
সেদিন টা ছিল প্রিয়সীর সবচেয়ে বেশি আনন্দের দিন।
কিন্তু তার এই আনন্দ বেশিদিন থাকলো না। কিছুদিন পরেই ফারাবি বদলে যেতে লাগলো।
হঠাত একদিন ফারাবির মোবাইল বন্ধ পেলো। প্রতিদিন কম করে হলেও শতবারের বেশি ওর মোবাইলে কল দেয় প্রিয়সী।
অনেকগুলা মেসেজ ও দিয়ে রাখছে।কিন্তু কোনো রেসপন্স নাই ফারাবির থেকে। প্রিয়সী ভাবে কোনো বিপদ হয়নি তো আবার??
আমি জানি ফারাবি আমাকে অনেক ভালবাসে। নিশ্চিত কোনো সমস্যায় পড়েছে যার জন্য আমার সাথে যোগাযোগ করতে পারছে না।
কিন্তু আমার যে আর সহ্য হচ্ছে না ওর সাথে কথা না বলে থাকতে।
ফারাবি কভে ফিরে আসবে তুমি??………….
!
প্রিয়সীর ডায়রি পড়ে চোখটা ভিজে গেলো তার বোন প্রিয়ন্তির।
দুইদিন হল প্রিয়সীর মৃত্যুর। সেদিন কলেজ থেকে ফেরার পথে রোড এক্সিডেন্ট এ মারা যায় প্রিয়সী।
ভালবাসার মানুষটির ফিরে আসার অপেক্ষায় আর থাকা হল না তার।একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ডায়রি রেখে দেয় প্রিয়ন্তি।
তখনি তার কাছে থাকা প্রিয়সীর মোবাইল টা বেজে ওঠে। কাঁপা হাতে মোবাইল টা হাতে নিয়ে দেখে একটা মেসেজ এসেছে।
“অচেনা” লেখে সেইভ করা নাম্বার টা।
***জানি আমার অপরাধের কোনো ক্ষমা নেই। তবুও আজকে তোমাকে সব বলে দিতে চাই।আমি রিফাতের বন্ধু।
রিফাতকে তো চেনার কথা?তোমাদের পাশের বাসাটা ওর মামার। সেখানে বেড়াতে গিয়ে রিফাত তোমার প্রেমে পড়ে যায়।
সে তার মনের কথা তোমাকে জানিয়েছিল। কিন্তু তুমি তাকে নিরাশ করেছিলে।
একারণে রিফাত তোমাকে ভালবাসা না পাওয়ার কষ্টটা বুঝানোর জন্য আমাকে দিয়ে এই নাটকটা করে।
আমিও বোকার মতো ওর কথায় ইমোশনাল হয়ে তোমার সাথে অভিনয় শুরু করি।
একটা পর্যায়ে তুমি যখন রিলেশনে সিরিয়াস হয়ে গেলে তখন উপলব্ধি করলাম আমি কত বড় ভুল করছি।
তাই হঠাত করেই আমার এই নাম্বার টা অফ করে রাখি।
তুমি সত্যি অসাধারণ একটি মেয়ে।আমার যদি প্রেমিকা না থাকত তাহলে সত্যিই তোমার প্রেমে পড়ে যেতাম।
আমার অপরাধের কোনো ক্ষমা নেই জানি, তাই বলছি আমায় ঘৃণা করো, কিন্তু খুব বেশি ঘৃণা করতে যেওনা।
তাহলে আর ভুলতে পারবেনা, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আমায় ভুলে যেও। অচেনা একটা প্রতারক এর জন্য নিজেকে কষ্ট দিও না।***
মেসেজটা পড়ে প্রিয়ন্তির মেজাজ বিগড়ে গেলো। জানালা দিয়ে মোবাইল টা ছুড়ে ফেলে দিলো। কোনো সূত্র রাখবে না এই অচেনা মানুষটির।