‘ইলিভেন ড্যাশ লাইন’। বিশ্বের সবচেয়ে বিতর্কিত স্থান । Unknown Fact of Eleven Dash Line Bangla
১৯৩৭ সালে জাপান আক্রমণ করে চীনকে। তখন দক্ষিণ চীন সাগরের বেশ কিছু অঞ্চল চলে যায় জাপানের অধীনে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপান পরাজিত হয়ে আত্মসমর্পন করলে চীন তাদের হারানো অঞ্চল ফিরে পায়। ১৯৪৭ সালে তৎকালীন রিপাবলিক অব চায়নার জাতীয়তাবাদী দল কুওমিনট্যাং চীনের নতুন একটি মানচিত্র প্রকাশ করে। এতে চীনের মূল ভূখণ্ডের নিচে দক্ষিণ চীন সাগরের ওপর এগারোটি ড্যাশ লাইন আঁকা হয়। একে বলা হতো ‘ইলেভেন ড্যাশ লাইন।
আর এই ড্যাশ লাইন হল আন্তর্জাতিক বিতর্কের একটি কেন্দ্রস্থল। প্রিয় দর্শক অদেখা ভুবনের এই পর্বে বিতর্কিত স্থানের আদ্যপান্ত তুলে ধরব। চ্যানেলে নতুন হলে সাবস্ক্রাইব করতে ভুলবেন না আমাদের পরবর্তী ভিডিও দেখার জন্য।
বোঝাই যাচ্ছে, দক্ষিণ চীন সাগর নিয়ে এই অঞ্চলে চলছে গভীর সংকট। এই সংকট গত কয়েক দশক ধরে চলে আসছে। আজও তার সমাধান হয়নি। শুধু এই ছয়টি দেশই নয়, ভিয়েতনাম, ফিলিপাইন, তাইওয়ানের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকায় এই অঞ্চলে জড়িয়ে পড়েছে যুক্তরাষ্ট্রও। দক্ষিণ চীন সাগর নিয়ে যুদ্ধ শুরু হওয়ার আশংকায় আছেন আন্তর্জাতিক রাজনীতি বিশেষজ্ঞরা। কারণ, এই অঞ্চল নিয়ে আগে শুধু অ্যাকাডেমিক দিক দিয়েই দ্বন্দ্ব ছিল। কিন্তু ২০১৩ সাল থেকে চীন এই অঞ্চলে সামরিক শক্তিও বৃদ্ধি করা শুরু করেছে। কেন এত সংকট এই অঞ্চল নিয়ে? কেন এত গুরুত্বপূর্ণ এই অঞ্চল?
জাতিসংঘের সমুদ্র আইন অনুযায়ী, কোনো স্বাধীন রাষ্ট্র তাদের উপকূলীয় অঞ্চল থেকে ১২ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত সামুদ্রিক অঞ্চল নিজেদের দাবি করতে পারে। তাছাড়া ২০০ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত অঞ্চলকে বলা হয় এক্সক্লুসিভ ইকোনমিক জোন। এই অঞ্চলে তারা প্রাকৃতিক সম্পদ আরোহন, জলজ প্রাণী বা মৎস্য আরোহন, কৃত্রিম দ্বীপ নির্মাণ ইত্যাদির স্বাধীনতা ভোগ করতে পারে। চীনের নাইন ড্যাশ লাইন অনুযায়ী, তারা মূল ভূখণ্ড থেকে প্রায় ২,০০০ কিলোমিটার সামুদ্রিক অঞ্চল নিজেদের দাবি করছে। এই অঞ্চলে রয়েছে বেশ কিছু দ্বীপপুঞ্জ। যেমন- স্প্র্যাটলি দ্বীপপুঞ্জ, স্কারবরো শোল অঞ্চল, প্যারাসেল দ্বীপপুঞ্জসহ বেশ কিছু প্রবাল দ্বীপ।
বর্তমানে স্প্র্যাটলি দ্বীপপুঞ্জের ২১টি দ্বীপ ভিয়েতনামের অধীনে রয়েছে। তারা ১৯৮৮ সালে চীনের সাথে যুদ্ধে সাউথ জনসন রীফ অঞ্চল হারায়। ভিয়েতনাম দাবি করে, স্প্র্যাটলি দ্বীপপুঞ্জ তাদের উপকূলীয় অঞ্চল থেকে ২০০ নটিকেল মাইলের মধ্যে। সুতরাং, জাতিসংঘের আইন অনুযায়ী স্প্র্যাটলি দ্বীপপুঞ্জ তাদের। ১৯৭৫ সালে উত্তর ও দক্ষিণ ভিয়েতনাম একীভূত হয়ে যায়। তারপর থেকে তারা দাবি করছে প্যারাসেল দ্বীপও তাদের। যদিও ১৯৫৮ সালে উত্তর ভিয়েতনামের প্রধানমন্ত্রী এই অঞ্চলকে চীনের অধীনে বলেই স্বীকৃতি দিয়েছিলেন।
ফিলিপাইন জাতিসংঘের আইন অনুযায়ী ও ঐতিহাসিক দাবির প্রেক্ষিতে স্প্র্যাটলি দ্বীপপুঞ্জ ও স্কারবরো শোল অঞ্চল নিজেদের মনে করে। এই অঞ্চল নিয়ে ফিলিপাইনের সাথে চীনের দীর্ঘদিন ধরে স্নায়ুযুদ্ধ চলছে। চীন এই অঞ্চলে তাদের পতাকা টানিয়ে রাখলে ফিলিপাইনিরা সেগুলো তুলে ফেলে। চীন সন্দেহ করে ফিলিপাইনিরা সমুদ্রে মাছ ধরার নামে চীনের ওপর নজর রাখছে।
জাতিসংঘের আইন অনুযায়ী, ব্রুনাইয়ের দাবি স্প্র্যাটলি দ্বীপপুঞ্জের লুইসা রীফ অঞ্চল তাদের। মালয়েশিয়াও তাদের এক্সক্লুসিভ ইকোনমিক জোনের দাবি করছে। অন্যদিকে তাইওয়ানের দাবি চীনের মতোই। মজার ব্যাপার হচ্ছে, তাইওয়ানের জাতীয়তাবাদী দল কুওমিনট্যাংই চীনের ড্যাশ লাইন ব্যবস্থার প্রচলন করেছিল।