ফরেক্স ট্রেডিংয়ে সর্বস্ব খুয়ানো এক ছেলের বাস্তব গল্প।

in আমার বাংলা ব্লগ9 days ago

আসসালামু আলাইকুম। কেমন আছেন আপনারা? আশা করি ভাল আছেন। আজ আপনাদের সামনে একটি বাস্তব ঘটনা প্রকাশ করব ফরেক্স/কটেক্স ট্রেডিং করে এমন একটা ছেলের জীবনের ঘটনা নিয়ে।


scam-9468014_1280.jpg

Image by Markus Winkler from Pixabay


গতকাল সন্ধ্যার পর আমি কাজ শেষ করে একটি দোকানে বসে চা খাচ্ছিলাম। আমি মাঝে মাঝেই এই দোকানে যাই এবং কিছুটা সময় কাটাই। আমার হাতে তখন মোবাইল ছিল এবং মোবাইলে আমি কয়েন মার্কেটে পুশ কয়েনের প্রাইস এবং ট্রেড ভলিউম দেখছিলাম। তখন পাশে থাকা একটি ছেলে তা খেয়াল করে এবং আমাকে বলে, ভাই আপনি কি অনলাইনে কাজ করেন? যেহেতু আমি স্টিমিটে কাজ করি, তাই বললাম, হ্যাঁ। আমি টুকটাক করি। তখন সে বলল, আপনি কি ফরেক্স ট্রেডিং জাতীয় কিছু করেন। বললাম, না। আমি ক্রিপ্টো কারেন্সি জাতীয় সাইটে কাজ করি। তখন সে বলল, ভাই। আমিও পরে ফরেক্স ট্রেডিং এর মত একটি জায়গায় কাজ করি। এরপর সে তার জীবনের ঘটনাগুলো আমাকে খুলে বলে। তখন সে আমাকে এই ধরনের ট্রেডিং সাইটগুলোর সিক্রেটগুলো সম্পর্কে কিছুটা ধারণা দেয়। আমি আজ আপনাদের সামনে তা তুলে ধরব।

বেশ কয়েক বছর আগে সে এই ট্রেডিং সম্পর্কে প্রথম জানতে পারে তার এক বন্ধুর মাধ্যমে। সেই বন্ধু কোন এক ঈদের আগে বেশ কিছু টাকা পয়সা কামিয়েছিল এই ট্রেডিং থেকে। তখন সে তার বন্ধুর কাছ থেকে একথা শুনে বাসায় এসে ইউটিউবে সার্চ দিয়ে তা সম্পর্কে জানতে পারে। তখন বেশ কয়েকটি ইউটিউব ভিডিও থেকে সে পুরো প্রসেস সম্পর্কে জানতে পারে। এরপর সে কোটেক্স নামের এক ট্রেড এক্সচেঞ্জে একটি অ্যাকাউন্ট খুলে সর্বপ্রথম একশ ডলার ডিপোজিট করে। যা সে জেনেছে সেই অনুযায়ী সে প্রথম ট্রেড করে। প্রথম ট্রেডেই সে বেশ ভালো একটি টাকা কামায়। বাংলাদেশি টাকায় যার পরিমাণ ছিল ৭ থেকে ৮ হাজার টাকা। এত টাকা একদিনে কামিয়েছে যা সে বিশ্বাসই করতে পারছিল না। তাই সে এত টাকা কিভাবে খরচ করবে তা নিয়ে চিন্তায় পড়ে যায়! প্রথম দিনই সে বেশ কিছু টাকা পয়সা শপিং করে এবং তার বন্ধুদেরকে নিয়ে পুরো খুলনা শহর ঘুরে বেড়ায়। তার লাভের বেশ কিছু টাকা সে সেদিন খরচ করে ফেলে।

পরবর্তী এক সপ্তাহ এভাবেই সে বেশ ভালো টাকা কামাই করে। সে যেহেতু প্রতিদিন এভাবে হিউজ এমাউন্টে টাকা কামাচ্ছে, তাই সেভাবে খরচও করতে থাকে। সে পুরোপুরি তাতে আসক্ত হয়ে যায়। কিন্তু এরপরই সে বাস্তবতা বুঝতে পারে। পরবর্তী এক মাসে সে প্রচুর পরিমাণে লসের মধ্যে দিয়ে যেতে থাকে। এভাবে লস করতে করতে একসময় তার লসের পরিমাণ এক লক্ষ টাকারও বেশি হয়। এই পুরো টাকাটাই সে তার বাবার কাছ থেকে নিয়েছিল। যেহেতু সে সবগুলো টাকাই ট্রেডিং করে হারিয়েছে, তাই এই বিষয়টি সে তার বাবাকে বিশ্বাস করতে পারছিল না। তার বাবা নিশ্চিত ধরে নিয়েছে ছেলে সম্ভবত জুয়ার মধ্যে আসক্ত। তার বাবার সাথে তার কথা কাটাকাটি হয় এবং সে রাগ করে বাড়ি থেকে বের হয়ে যায়। বর্তমানে সে একটি গার্মেন্টসে কাজ করছে।

তার কথা অনুযায়ী এই ধরনের ট্রেডিংগুলো প্রথমে আসক্ত করে ফেলে। এরা যখন আসক্ত হয়ে যায় তখন ধীরে ধীরে তাদের লসের মুখে ফেলে। এভাবেই একজন ট্রেডারের সর্বস্ব ট্রেডিং কোম্পানিগুলো হাতিয়ে নিয়ে যায়। দিন শেষে দেখা যায় একজন ট্রেডার যত টাকা লাভ করেছে তার দ্বিগুণ বা তিন গুন বা তার চেয়ে বেশি পরিমাণ লস করেছে। তাই আমি আপনাদেরকে বলবো যারা এ ধরনের ট্রেডিং এর সাথে যুক্ত, অবশ্যই জেনে বুঝে ট্রেডিংগুলো করবেন। কারন আমি শুধু তার মুখ থেকে তার বাস্তব ঘটনা শুনেছি। এছাড়া পত্র-পত্রিকায়, বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এনিয়ে অনেক হতাশাজনক গল্প শুনেছি। এই ধরনের ট্রেডিংগুলো করে অনেকেই নিজেদের সর্বস্ব হারিয়েছে। সবাই ভালো থাকবেন ধন্যবাদ।


gif.gif

নিজের সম্পর্কে
আমি মুহাম্মদ সাব্বির আকিব। জন্মসূত্রে একজন বাংলাদেশি। জেলাঃ চাঁদপুর, থানাঃ ফরিদগঞ্জ। থাকি ঢাকা জেলার সাভার উপজেলার আশুলিয়া থানাধীন দক্ষিণ গাজীরচট নামক স্থানে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে রসায়নে স্নাতক (সম্মান) সম্পন্ন করেছি। বর্তমানে একটি ফার্মেসিতে ফার্মাসিস্ট হিসাবে কর্মরত রয়েছি। বিবাহিত এবং আল্লাহ একটি পুত্র সন্তানের জনক করেছেন, আলহামদুলিল্লাহ।