মনখারাপের প্রধান কারণ - প্রত্যাশা!(The primary culprit behind depression is our own expectations!)
![]() |
---|
ছেলেবেলায় মুখ গোমড়া করে থাকলে, কাঁদলে বড়দের প্রথম প্রশ্ন এই কি রে, কি হয়েছে মন খারাপ? কেউ কিছু বলেছে? মা বকেছে ইত্যাদি।
একটু বড় হবার সাথে সাথে প্রশ্নের পরিবর্তন, এই কি রে বন্ধুদের সাথে ঝগড়া হয়েছে? নাকি বিশেষ মানুষটির সাথে মন কষাকষি, মন খারাপের কারণ কি?
এরপর সংসার জীবনে দেখেছি, আমার জেঠিমা আর মায়ের কথপোকথন, কি হয়েছে দাদা( ভাসুর) কিছু বলেছে? উল্টো প্রশ্ন শোনা যেতো কি গো দেওর কিছু বলেছে?
মানেটা দাঁড়ালো, জীবনে সময়ের সাথে সাথে মন খারাপগুলো থেকে যায় শুধু বদলে যায় তার পিছনের ব্যাক্তি আর কারণগুলো!
তবে, আধুনিকতা সবকিছুতেই থাবা বসিয়েছে! কাজেই, মন খারাপ বাদ যাবে কেন?
তাই মন খারাপের নাম বদলে তাকে আধুনিক সজ্জায় সজ্জিত করে ডিপ্রেশনের নাম দিয়ে দেওয়া হয়েছে। আর, তার সাথে মনখারাপ পরিবর্তিত হয়ে গিয়ে, এখন ডিপ্রেশনের রূপ নিয়েছে।
এটাও অস্বীকারের জায়গা নেই মন খারাপের কিন্তু মাত্রা আছে, অথবা শ্রেণী বিভাগ আছে, যেটাই বলুন না কেন!
আগে বিষয়টি নিয়ে এত কেউ মাথা না ঘামালেও আজকাল এটি সত্যি একটা কঠিন সমস্যা আর সময়ের সাথে সাথে এটি বাড়ছে বৈ কমছে না।
উপরের কথাগুলো অনেকেই হয়তো নিজেদের জীবনের ক্ষেত্রে দেখে থাকবেন, আবার কেউ কেউ অনুভব ও করে থাকবেন।
তবে, আজকে মন খারাপ অথবা ডিপ্রেশন এর মূল কারণ, খোঁজার প্রয়াস নিয়ে আমার লেখা;
তথা নিজের অভিমত ভাগ করে নিতে হাজির হওয়া।
![]() |
---|
("চিত্ত যেথা ভয়শূন্য, উচ্চ যেথা শির" - কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর অনেকদিন আগেই লিখে গিয়েছিলেন) |
---|
আমার মনে হয়,
- নিজের প্রত্যাশা পূরণ না হলে মন খারাপ/ ডিপ্রেশন!
- অন্যের থেকে প্রত্যাশা করা ইচ্ছে পূরণ না হলে ডিপ্রেশন!
- অন্যের সাথে নিজের জীবন, তথা জীবনসঙ্গীর তুলনা করে, প্রত্যাশায় কম রয়ে গেলে ডিপ্রেশন তথা মন খারাপ।
- প্রত্যাশা অনুযায়ী ব্যবহার, চাকরি, সমাদর না পেলে ডিপ্রেশন!
- নিজের ইচ্ছে পূরণের মাত্রায় ভাটা পড়লে মন খারাপ, মানে আবার সেই প্রত্যাশা!
- পছন্দের খাবার, পছন্দের পোশাক, পছন্দের কথা ইত্যাদি ইত্যাদি সবটাই কিন্তু প্রত্যাশার অন্তর্ভুক্ত।
![]() |
---|
(ফুলেদের ও কিন্তু ব্যাক্তি স্বাধীনতা আছে তাইবসব ফুলেদের সব ঋতুতে দেখা যায় না!) |
---|
দৈনন্দিন জীবনে এই রকম হাজার কারণ আছে মনখারাপের।
এবার কেউ আছে, যারা চোরা মন খারাপের অথবা ডিপ্রেশনের শিকার! আবার কাউ কেউ নিজেদের মন খারাপ জাহির করে ফেলেন অভিব্যক্তির মাধ্যমে।
যারা দ্বিতীয় কাজটি করেন তারা আক্ষরিক অর্থে বেঁচে যান। কারণ, অভিব্যাক্তি বহিঃপ্রকাশ এর মাধ্যমে যেমন মনের নালিশ, কষ্ট, রাগ, অভিমান বেরিয়ে যায়, তেমনি সময়ের সাথে সাথে মন ভালো হয়ে যায়, কারণ মনের জমা যা কিছু তারা কথার এবং অভিব্যক্তির মাধ্যমে খরচ করে ফেলেন।
সমস্যা প্রথম বর্গের ব্যাক্তিদের নিয়ে, যারা সব ঠিক আছে বলে, অন্যের সামনে ভালো থাকার মিথ্যে অভিনয় করে চলেন বছরের পর বছর।
অনেকেই আছেন, মনে মনে অনেক কথা বলতে পারলেও সামনে বলতে অক্ষম! তার পিছনের কারণ যেটাই হোক না কেনো, সেটা নিজের কাজের ক্ষতি রক্ষার্থেই হোক, সম্পর্কে হারিয়ে ফেলার কারণেই হোক, অথবা সম্মানের খাতিরেই হোক;
আমার কারণটা স্বভাবগত হতে পারে।
মুশকিল হলো এই অন্তর্মুখী মানসিকতা দীর্ঘদিন বয়ে চলেন বা চলছেন যারা, তারা নিজেদের ক্ষতি নিজেরাই ডেকে আনছেন!
প্রত্যাশা যদি করতে হয়, তাহলে নিজেকে উন্নত করতে তাকে ব্যবহার করুন, অন্যের কাছ থেকে নয়।
যদি নিজের কাছে করা প্রত্যাশার পূর্তি না হয়, কারণ অনুসন্ধান করুন।
বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আমি দেখেছি, আমরা নিজের চাইতে পরিবার, পরিজন, বন্ধু বান্ধব, কর্মস্থান ইত্যাদি থেকে বেশি প্রত্যাশা করি।
যে ছাত্র অথবা ছাত্রী ১-২ নম্বর এর জন্য ক্লাসে দ্বিতীয় হয়, আমার মনে হয়, সে কোনো অংশেই যে প্রথম হয়েছে, তার চাইতে কেনো ভাবেই কম দক্ষ।
নিজেদের যোগ্যতাকে যদি নিজেরাই সম্মান না করি, আর শিক্ষিত হয়ে পরাধীনতা মাথা পেতে নিতে অভ্যস্থ হয়ে যাই, তাহলে দোষটা কিন্তু সামনের ব্যাক্তির চাইতেও নিজেদের।
![]() |
---|
(ব্যাক্তি স্বাধীনতার মানে বুঝতে হবে) |
---|
আমরা সুযোগ দিয়েছি, অন্ধ বিশ্বাস করেছি, ভুল মানুষের হাত ধরেছি, পরনির্ভরশীলতা কে আপ্যায়ন করেছি, পরিশ্রমের উর্ধ্বে প্রত্যাশা করেছি, নিজের অর্জিত শিক্ষাকে নিজেকে উন্নত করবার চাইতেও অন্যের ইচ্ছে পূরন করতে মনোনিবেশ করে, তাকে বিসর্জন দিয়েছি! সবটা মিলিয়ে হাতে পড়ে থাকে কেবল ডিপ্রেশন অথবা মন খারাপ।
সময়ের সাথে সাথে দেখবেন যাদের জন্যই এতো আত্মত্যাগ তারাই প্রশ্ন তুলবে কি করেছো?
এটা হতেই হবে, আর হয়েও থাকে, কারোর অস্বীকারের উপায় নেই।
এই প্রশ্ন আসে শুরু থেকে প্রত্যাশা এতটাই বৃদ্ধি করে ফেলি আমরা যে, পরে সেটা পালন করতে না পারলে আসে তুলনা, আগে এটা করতে এখন করো না!
শুরুতে বলার আগেই কাজটা হয়ে যেতো, এখন হয় না!
![]() |
---|
(অনেক ফুলের মাঝে বিশেষ বিশেষ কিছু ফুল সমাদৃত হয়।) |
---|
আচ্ছা? তাই বলে কি, বিশ্বাস, ভরসা, ইচ্ছে, ভালোবাসা এসব কিছুই থাকবে না জীবনে?
তবে, প্রতিটি বিশেষণের পূর্বে
নাম নাই বা করলাম, কিন্তু এমন অনেক মানুষ আছে, যাদের থেকে অতিরিক্ত প্রত্যাশা করে ফেলেছিলাম, মায়ের চলে যাবার পরে।
ফলস্বরূপ, এমন চপেটাঘাত পড়েছিল, যার ব্যথা আজও অনুভব করি।
এরপরেও যে হয়নি তেমন নয়, তবে ওই এক্ জায়গায় বারি খেতে খেতে যেমন জায়গাটা অবশ হয়ে যায়, তেমনি মনে সকল শিক্ষাই রেখেছি, আর ঈশ্বরকে বেছে নিয়েছি, মনের অনুভূতি ব্যক্ত করতে।
কারণ কি জানেন? তাঁর লাঠিতে আওয়াজ হয় না! আমি অনেক প্রতিকূলতার মধ্যে দিয়ে গিয়ে দেখেছি, সৃষ্টিকর্তার পরে যদি সবচাইতে কাছের এবং আনকোরা বন্ধুত্ব গড়ে তুলতেই হয়ে তাহলে সেটা কাজের সাথে করাই শ্রেয়, কারণ কাজ মানুষের মতো বেঈমানি করে না।
পরিশ্রমের সাথে আপোষ না করলে, আর কাজকে ভালোবাসা দিলে, একদিন সে ধরা দেবেই। সেইদিন আপনার সব মন খারাপ এক্ নিমেষে দেখবেন ধুয়ে মুছে গেছে!
সাথে দেখবেন অপ্রিয় কথা বলা মানুষগুলো কখন প্রিয় কথা বলা শুরু করেছে, বাস্তব জীবনে অর্থ কথা বলে, কি ঠিক বললাম? মন্তব্যের প্রতীক্ষায় রইলাম।
![1000010907.gif](https://steemitimages.com/0x0/https://cdn.steemitimages.com/DQmXWAyVb1Cc1XAWU6HFRVVZopNCk2VhWTCH1VVxJdBwBJD/1000010907.gif)
![1000010906.gif](https://steemitimages.com/0x0/https://cdn.steemitimages.com/DQmc8yviUiSxfyoxr2Hiq7W5HcV2ytbSck6fdFkomrJ2PfH/1000010906.gif)
Upvoted. Thank You for sending some of your rewards to @null. It will make Steem stronger.
কারো কাছে অতিরিক্ত প্রত্যাশা করলেই কস্ট পেতে, এই কথাটা আমি কয়েক সপ্তাহ আগেই আমাদের কমিউনিটির একজনের লেখা পড়ে মন্তব্য করেছিলাম।
সত্যি বলতে, এটা আমি মন থেকেই বিশ্বাস করি যার কারনে কারো কাছেই খুব বেশি কিছু প্রত্যাশা করি না।নিজেকে মানসিক ভাবে প্রস্তুত রেখেছি যে এদের কাছ থেকে এমন ব্যবহার আসতে পারে।
যাতে কস্ট পেলেও সেটা সামাল দিতে পারি। কারন অনেক জায়গাতে নিজে ধাক্কা খেয়েছি যাদের কাছ থেকে কখনো এমনটা আশা করি নাই। আবার অনেক মানুষকে ধাক্কা খেতেও দেখেছি।
তাই আপনার কথার সাথে সুর মিলিয়েই বলতেছি যে, প্রত্যাশা যদি পুরোপুরিই করতে হয় সেটা ঈশ্বরের কাছে করাটাই উত্তম। আমরা শুধু আমাদের কাজ করতে পারি। ফলাফল তার হাতে।
ভালো থাকবেন সবসময়।
চেনা প্রসঙ্গে লেখা হয়ে গেছে বলছেন? আসলে আমারও মনে নেই কে লিখেছিল, আর কবে! কারণ, এখন লেখা পড়ার সুযোগ কম পাই, সাথে কিছু লেখা ভালো লাগে না পড়তে। রইলো বাকি প্রত্যাশা নিয়ে লেখার কথা, প্রতিদিন আমাদের মধ্যে কেউ না কেউ প্রত্যাশা পূরণ না হবার ফলে হয় মনক্ষুণ্য হচ্ছেন অথবা ডিপ্রেশনের স্বীকার। কাজেই আমার লেখার মূল কেন্দ্রবিন্দু ছিল ডিপ্রেশন অথবা মন খারাপ যাই বলুন না কেন!
একই প্রসঙ্গ লেখা হয়েছে আমি ওই অর্থে লিখি নাই ।আসলে প্রত্যাশা নিয়ে লিখতে হলে সে যেই লিখুক না কেন কিংবা শুব্দচয়ন যাই হোক না কেন ,অর্থ এমনি হবে।
ডিপ্রেশনের সাথে আমি লড়াই করেছি ।চিকিৎসাও নিয়েছি।কিন্তু এখন ইগনোর করা শিখে গেছি অনেককিছুই।যার কারণে ভালোও আছি ।
আর কাজের ক্ষেত্রে প্রাপ্তি নিয়ে যদি বলি ,তাহলে ,অনেক সময় আমি অনেক চেষ্টা করলেও আমার প্রত্যাশা পূরন হবে না ।কারন আমার চেয়েও কেউ ভালো করতেছে তাই আমাকে আরো ভালো করার চেষ্টা করতে হবে ।এভাবে ভাবতে পারলে অনেক ক্ষেত্রে অনেক কিছু সহজ হয়ে যায়।
ভালো থাকবেন সবসময় ।