একটি পড়ন্ত বিকেল।
১৬ রমজান,১৪৪৫ হিজরি
১৩ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
২৭শে মার্চ,২০২৪ইং
আসসালামু আলাইকুম,
" আমার বাংলা ব্লগ " কমিউনিটির সকল সদস্যকে বৃষ্টি সিক্ত বসন্তের শুভেচ্ছা। আশা করি সকলেই ভালো আছেন।ভালো থাকারই কথা। এমন সুন্দর পরিবেশ, বাইরে ঝিরিঝিরি বৃষ্টি, সেই সাথে বইছে হালকা বাতাস।আর বাতাসের সাথে ভেসে বেড়াচ্ছে আমের বোলের মন মাতানো সুঘ্রাণ। প্রকৃতির এমন সুন্দর পরিবেশনা যে কারো মন ভালো রাখার জন্য যথেষ্ট।
এমন সুন্দর মুহূর্ত উপভোগ করতে করতে হঠাৎ একটি গল্প মাথায় আসলো। তাই সেটিই শেয়ার করতে চলে আসলাম আপনাদের মাঝে।
আমি শুভ্র,
কিছুদিন আগে মাধ্যমিকের পরীক্ষা শেষ করলাম।হাতে বেশ লম্বা সময় ছুটি পেয়েছি। আমার বন্ধু মহলের অনেকে ইতোমধ্যে ছুটি কাজে লাগাতেও শুরু করে দিয়েছে। কেউ কেউ অবশ্য ঘুরতেও চলে গিয়েছে। মাঝখানে এই যে আমি এখনও ভেবে চলেছি কি করবো?.... কি করবো?।
কোন কূল না পেয়ে ঠিক করলাম বই পড়েই সময় কাটানো যাক। কেননা ছোটো বেলা থেকেই আমার সাহিত্যের প্রতি আলাদা ঝোঁক রয়েছে। সাহিত্যের বই গুলো আমার বেশ ভালো লাগে। তাই সাহিত্যিক বই পড়েই ছুটি কাটানোর সিদ্ধান্ত নিলাম।
তো যেই ভাবা সেই কাজ। নতুন কিছু বই কিনে আনার জন্য চলে গেলাম রেলস্টেশনের ধারে। সেখানে নতুন-পুরনো সব ধরনের বই-ই পাওয়া যায়। কিছু বই কিনে নিয়ে চলে আসলাম বাসায়। বাসায় এসে বইগুলো টেবিলে রাখতেই বইগুলোর মধ্যে থেকে একটি ডায়েরি বেরিয়ে এলো।
'কি আশ্চর্য! এটা এলো কোত্থেকে।'
আসার কারণ ভাবতে ভাবতেই ডায়েরীটা হাতে নিয়ে পৃষ্ঠা উল্টোতে শুরু করলাম।
কিছু পৃষ্ঠা উল্টানোর পর হঠাৎ একটি জায়গায় এসে চোখ আটকে গেলো,
পড়া শুরু করলাম.....
“ ০১লা আষাঢ়, ১৪০০ বঙ্গাব্দ।
(তারিখ দেখে বুঝলাম লেখাটি আজ থেকে প্রায় অনেক বছর আগের)
বাইরে রিমঝিম ধারায় বৃষ্টি পড়ছে। সাথে ঝিরঝির বাতাস। বেশ ভালোই লাগছে দেখতে। প্রকৃতির এমন অপূর্ব সুন্দর মুহূর্ত উপভোগ করার সুযোগ ছাড়া ঠিক না এটা মহা-অপরাধের চেয়েও কম না। তাই বিছানা থেকে কষ্ট করে উঠে গিয়ে বারান্দার ইজি চেয়ারটাতে কোনোমতে বসলাম। আর জহিরকে ডেকে বললাম এক কাপ চা দিয়ে যেতে।
(জহির আমার গ্রামেরই ছেলে। বাবা-মা হারা ছেলে। আমার সাথেই থাকে। আমার দেখাশোনা করে।)
কিছুক্ষণ পর জহির চা দিয়ে গেলো। আমি চায়ের কাপটা টেবিলের উপর রেখে একটা সিগারেট ধরালাম। চায়ের কাপ থেকে ভেসে উঠা ধোঁয়া আর সিগারেটের ধোঁয়া একসাথে মিশে গিয়ে হাওয়ায় মিলিয়ে যাচ্ছে। আর আমি অপলক দৃষ্টিতে তাদের মিলিয়ে যাওয়া দেখছি।দেখতে দেখতেই নিজের ছোটবেলার এক অসম্পূর্ণ গল্পের কথা মনে হয়ে গেলো।
"আজ থেকে প্রায় ৪০-৫০ বছর আগে তখন সবে মাত্র ক্লাস সেভেনে উঠেছি।
নতুন স্কুলে ভর্তি হয়ে আজই আমার প্রথম দিন। স্কুল কাছে হওয়ায় বাসা থেকে একাই পাঠানো হলো স্কুলে। আমিও মনে মনে বেশ খুশিই হলাম।কেননা পরিবারের একমাত্র সন্তান হওয়ায় কখনো আমাকে একা বের হতে দেওয়া হয় না। আর সেইখানে আজ আমাকে একাই যেতে দেওয়া হচ্ছে । প্রথম দিন হওয়াতে হাতে সময় নিয়ে বের হলাম ।
আমার স্কুল ছিলো দুই শিফটের। দুই শিফটের হওয়াতে প্রথমে মেয়েদের ক্লাস করে ছুটি, এরপর ছেলেদের ক্লাস শুরু হবে। তো হাতে সময় নিয়ে আসার কারণে আগেই পৌঁছে গিয়েছিলাম।অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে হলো। আশে পাশে তাকিয়ে বেশ রকম চমকেই গেলাম কেননা এত মানুষ আমি আগে কখনো একসাথে দেখিনি, দেখে মনে হচ্ছিলো কোনো এক মানুষের অরণ্যে চলে এসেছি।অরণ্যে গাছদের তবুও নিয়ম আছে, যে কেউ কারো গায়ে ঘেঁষে থাকে না। কিন্তু এই অরণ্য দেখে মনে হচ্ছে এই অরণ্য যতটা নিয়ম মানে তার চেয়ে বেশি ভাঙে।কিছু সময় পর হঠাৎ ঘন্টা বেজে উঠলো।
বুঝলাম প্রথম শিফটের ছুটি হয়েছে। একে একে সকলে বেরিয়ে আসতে লাগলো। হঠাৎ একজনের চোখের উপর গিয়ে চোখ আঁটকে গেলো। অদ্ভূত মায়বী এক জোড়া চোখ। এক অদ্ভুত অনুভূতি কাজ করতে শুরু করলো। কিছুতেই আমি চোখ সরাতে পারছি না। কিছু আগে যেই অরণ্য নিয়ে আমি বিরক্ত ছিলাম তাকে দেখে সেই অরণ্যকেও ভালো লাগতে শুরু করলো।
তারসাথে কথা বলতে ইচ্ছে করছিলো,পরিচয় জানতে ইচ্ছে হচ্ছিলো।কিন্তু কি কথা বলবো!?.....
কি নিয়েই বা কথা বলা যেতে পারে? আত্রলিতার খোলা চিঠি?ডিউকের আত্মহত্যা? অথবা বিলি মরিসনের পিয়ানো? কি নিয়ে তার সাথে কথা বলা যেতে পারে। নাকি হেনরিয়েটার ভাঙা আয়না? কিংবা কাসাইয়ের ঘাটের দুরন্ত প্রেমিক-প্রেমিকা?
কি নিয়ে কথা হতে পারে। কথা বলার বিষয় ভাবতে ভাবতেই ভিড়ের মাঝে তাঁকে হারিয়ে ফেললাম।
এদিক সেদিক অনেক খুঁজলাম কিন্তু সেই চোখ দুটো খুঁজে পেলাম না। ব্যর্থ মন নিয়ে স্কুলের প্রথমদিনটা কাটিয়ে সেদিনের মতো বাসায় চলে আসলাম। ”
তারপরের পৃষ্ঠা উল্টোতেই দেখলাম ফাঁকা,কোনো কিছুই আর লেখা নেই। আরো বেশ কিছু পৃষ্ঠা উল্টানোর পরও কিছু পেলাম না।
হঠাৎ! মা ডেকে উঠলো।।
"শুভ্র!শুভ্র! এই শুভ্র!খেতে আয়।"
মায়ের ডাকে আমার মনোযোগ ভাঙলো।ঘড়িতে দেখলাম রাতের খাওয়ার সময় হয়ে গেছে।
ডায়েরিটা টেবিলের উপরই রেখে ফ্রেশ হয়ে খেতে চলে গেলাম। আর খেতে খেতে ভাবতে থাকলাম, "'আচ্ছা! তার পরে কি হয়েছিল?? তিনি কি আদৌ তারপর সেই মেয়ের দেখা পেয়েছিলেন? নাকি এখানেই শেষ।
কি হয়েছিলো?""..............
(পার্ট-১)
আজ এতটুকুই। ভালো লাগলে জানাবেন।শীঘ্রই পরের পর্ব নিয়ে হাজির হবো।
আল্লাহ হাফেজ।