বিস্মৃতির অতল থেকে ফুঁড়ে বেরোলেন রোহো

in #argentinawin6 years ago

উড়ে আসা লম্বা ক্রসটা লিওনেল মেসিকেও খুঁজে নিতে পারত। কিন্তু না, জায়গা মতো ছিলেন মার্কোস রোহো। হাওয়ায় ভেসে আসা বাঁক খাওয়া বলটা পড়ার সুযোগই দিলেন না তেমন। দুর্দান্ত ভলি করলেন। আর্জেন্টিনা, বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নেওয়ার মুহূর্তে ঘুরে দাঁড়াল রোহোর গোলে। লিওনেল মেসির নেতা হয়ে ওঠার ম্যাচেও তাই শেষ পর্যন্ত নায়ক রোহো। ওই গোলটা না হলে? আর্জেন্টিনার ফুটবলেই এতক্ষণে শুরু হয়ে যেত ওলটপালট। রোহো, আর্জেন্টিনাকে বিশ্বকাপে টিকিয়েই শুধু রাখলেন না; কে জানে, ওই এক গোলের মাহাত্ম্য হয়তো আরও অনেক বড়!

21bb82ed7395bff1f4e86f0a306c937d-5b32ac5961725.jpg

২০১৪ বিশ্বকাপে দুনিয়া চিনেছিল তাঁকে। দেখতে সুদর্শন। মুখে সব সময় মিষ্টি হাসি। শুধু এ কারণে নয়; তখনকার ২৪ বছর বয়সী তরুণ নজর কেড়েছিলেন ঠান্ডা মাথায় ডিফেন্স সামলে আবার আক্রমণে উঠে যাওয়ার দক্ষতার কারণে। এতটাই মুগ্ধ করেছিল, তখনকার হল্যান্ড কোচ লুই ফন গাল ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে আসার সময় সঙ্গে করে নিয়ে এলেন। ইউনাইটেড, আর্জেন্টিনার ফুটবলের আরেক দুঃখগাথার নাম। এই ক্লাবেই খেলতে এসে হারিয়ে যেতে বসেছিলেন হুয়ান সেবাস্তিয়ান ভেরন। গিয়েছিলেনও প্রায়। রোহো হাঁটছিলেন সেই পথে!

ক্লাবে জায়গা এতটাই নড়বড়ে হয়ে গিয়েছিল, এবারের বিশ্বকাপ স্কোয়াডে জায়গা পেয়েছেন, নিতান্ত আর্জেন্টিনার ডিফেন্ডার নেই বলে। ফুলব্যাকের ভূমিকা বদলে শুধু রক্ষণ সামলাতে দেওয়া হয়েছিল। প্রথম দুই ম্যাচে কী নড়বড়ে! রোহো তবু টিকে গেলেন আজকের একাদশে। ওই যে, গ্যাবি মারকাদোর ক্রসটা যে তাঁকে খুঁজে নেবে বলে ঠিক করে রাখা ছিল!

আজ যেন হারিয়ে যাওয়া দৃশ্যপট থেকে আবার হাজির হলেন রোহো। শেষ দৃশ্যে ভিলেনের ডেরায় দেয়াল ফুঁড়ে যেভাবে হাজির হয় নায়ক। ম্যাচের ঘড়ির কাঁটার সঙ্গে সঙ্গে ফুরিয়ে আসছে আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপের আয়ু। সেই সময় ঠান্ডা মাথায় সেই গোল। মেসি সোজা কাঁধে চেপে বসলেন রোহোর। দৃশ্যটা প্রতীকীই। মেসিকে নিজের কাঁধে বয়েই বিশ্বকাপের নকআউট পর্বে গেলেন রোহো। মেসি যতই বলে রাখুন বিশ্বকাপ না জেতা পর্যন্ত অবসর নেবেন না; আর্জেন্টিনা প্রথম রাউন্ডে বাদ পড়লে সেই কথায় অটল থাকতে পারতেন বলে মনে হয় না।

শুধু মেসি কিংবা আর্জেন্টিনা নয়; রোহো আপাতত বাঁচিয়ে দিলেন হোর্হে সাম্পাওলিকেও। অদ্ভুতুড়ে সব ফরমেশন ভুলে আজ যিনি ৪-৪-২ এর সরল ছকে খেলেছেন। আজ আর্জেন্টিনাও খেলেছে জান লড়িয়ে। এই প্রথম মনে হয়েছে, নাহ, এই দলটাকে দিয়ে হবে। দ্বিতীয় রাউন্ডে প্রতিপক্ষ ফ্রান্স। আর্জেন্টিনা নিজেদের থিতু করে নিতে সময়ও পাচ্ছে কিছুদিন। এই লড়ে যাওয়া ধরে রাখতে পারলে, মেসিকে আজকের মতো উজ্জীবিত রাখতে পারলে আরেকটি ধাপ পার করার আশা আর্জেন্টিনা করতেই পারে।

পরের কথা পরে। আপাতত রোহো-বন্দনায় সবাই। ইউনাইটেডে শুরুর দিন থেকে কুফা লেগেছিল তাঁর। কী এক মামলার কারণে ইংল্যান্ডে ওয়ার্ক পারমিটই পাচ্ছিলেন না। সেসব ঝামেলা চুকে খেলতে শুরুর করলেন বেশ। তখনই কাঁধের মারাত্মক চোট। এরপর ধীরে ধীরে রোহো কেবলই হারিয়েছেন। হোসে মরিনহোর মতো ডিফেন্সিভ ট্যাকটিকসে খুঁতখুঁতে হেড মাস্টারের স্কুলে জায়গা টিকিয়ে রাখা ঢের কঠিন। আজ জাতীয় দলের জার্সি গায়ে করলেন মাত্র তৃতীয় গোল। যে গোলটার কারণে আর্জেন্টিনার ফুটবলের আবেগীয় রূপকথার অংশই হয়ে গেলেন হয়তো।

আশ্চর্যের বিষয় হলো এই, রোহো এর আগে গত বিশ্বকাপে গোল করে জিতিয়েছিলেন এই নাইজেরিয়ার বিপক্ষেই। সেই ম্যাচের বাকি দুই গোলদাতার নামও ছিল মেসি ও মুসা! মেসির জোড়া গোল মুসার জোড়া আঘাতে হারিয়ে যেতে যেতে ঠিক এভাবেই বক্সে কোত্থেকে যেন হাজির হয়েছিল এই রোহোই!

রোহোর চিত্রনাট্য কেউ না কেউ অলক্ষ্যে বসে লিখছে ঠিক। রোহো ফিরে এসেছেন। ফিরে এসেছেন মেসি। এবার আর্জেন্টিনা মাঝারি সারির দল নিয়েও গতবারের মতো আরও কিছুটা পথ পাড়ি দেওয়ার সাহসও তো হয়তো ফিরে পাবে।

Sort:  

Hi! I am a robot. I just upvoted you! I found similar content that readers might be interested in:
https://www.hobbs.co.uk/promotions/sale-highlights

উড়ে আসা লম্বা ক্রসটা লিওনেল মেসিকেও খুঁজে নিতে পারত। কিন্তু না, জায়গা মতো ছিলেন মার্কোস রোহো। হাওয়ায় ভেসে আসা বাঁক খাওয়া বলটা পড়ার সুযোগই দিলেন না তেমন। দুর্দান্ত ভলি করলেন। আর্জেন্টিনা, বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নেওয়ার মুহূর্তে ঘুরে দাঁড়াল রোহোর গোলে। লিওনেল মেসির নেতা হয়ে ওঠার ম্যাচেও তাই শেষ পর্যন্ত নায়ক রোহো। ওই গোলটা না হলে? আর্জেন্টিনার ফুটবলেই এতক্ষণে শুরু হয়ে যেত ওলটপালট। রোহো, আর্জেন্টিনাকে বিশ্বকাপে টিকিয়েই শুধু রাখলেন না; কে জানে, ওই এক গোলের মাহাত্ম্য হয়তো আরও অনেক বড়! ! ২০১৪ বিশ্বকাপে দুনিয়া চিনেছিল তাঁকে। দেখতে সুদর্শন। মুখে সব সময় মিষ্টি হাসি। শুধু এ কারণে নয়; তখনকার ২৪ বছর বয়সী তরুণ নজর কেড়েছিলেন ঠান্ডা মাথায় ডিফেন্স সামলে আবার আক্রমণে উঠে যাওয়ার দক্ষতার কারণে। এতটাই মুগ্ধ করেছিল, তখনকার হল্যান্ড কোচ লুই ফন গাল ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে আসার সময় সঙ্গে করে নিয়ে এলেন। ইউনাইটেড, আর্জেন্টিনার ফুটবলের আরেক দুঃখগাথার নাম। এই ক্লাবেই খেলতে এসে হারিয়ে যেতে বসেছিলেন হুয়ান সেবাস্তিয়ান ভেরন। গিয়েছিলেনও প্রায়। রোহো হাঁটছিলেন সেই পথে! ক্লাবে জায়গা এতটাই নড়বড়ে হয়ে গিয়েছিল, এবারের বিশ্বকাপ স্কোয়াডে জায়গা পেয়েছেন, নিতান্ত আর্জেন্টিনার ডিফেন্ডার নেই বলে। ফুলব্যাকের ভূমিকা বদলে শুধু রক্ষণ সামলাতে দেওয়া হয়েছিল। প্রথম দুই ম্যাচে কী নড়বড়ে! রোহো তবু টিকে গেলেন আজকের একাদশে। ওই যে, গ্যাবি মারকাদোর ক্রসটা যে তাঁকে খুঁজে নেবে বলে ঠিক করে রাখা ছিল! আজ যেন হারিয়ে যাওয়া দৃশ্যপট থেকে আবার হাজির হলেন রোহো। শেষ দৃশ্যে ভিলেনের ডেরায় দেয়াল ফুঁড়ে যেভাবে হাজির হয় নায়ক। ম্যাচের ঘড়ির কাঁটার সঙ্গে সঙ্গে ফুরিয়ে আসছে আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপের আয়ু। সেই সময় ঠান্ডা মাথায় সেই গোল। মেসি সোজা কাঁধে চেপে বসলেন রোহোর। দৃশ্যটা প্রতীকীই। মেসিকে নিজের কাঁধে বয়েই বিশ্বকাপের নকআউট পর্বে গেলেন রোহো। মেসি যতই বলে রাখুন বিশ্বকাপ না জেতা পর্যন্ত অবসর নেবেন না; আর্জেন্টিনা প্রথম রাউন্ডে বাদ পড়লে সেই কথায় অটল থাকতে পারতেন বলে মনে হয় না। শুধু মেসি কিংবা আর্জেন্টিনা নয়; রোহো আপাতত বাঁচিয়ে দিলেন হোর্হে সাম্পাওলিকেও। অদ্ভুতুড়ে সব ফরমেশন ভুলে আজ যিনি ৪-৪-২ এর সরল ছকে খেলেছেন। আজ আর্জেন্টিনাও খেলেছে জান লড়িয়ে। এই প্রথম মনে হয়েছে, নাহ, এই দলটাকে দিয়ে হবে। দ্বিতীয় রাউন্ডে প্রতিপক্ষ ফ্রান্স। আর্জেন্টিনা নিজেদের থিতু করে নিতে সময়ও পাচ্ছে কিছুদিন। এই লড়ে যাওয়া ধরে রাখতে পারলে, মেসিকে আজকের মতো উজ্জীবিত রাখতে পারলে আরেকটি ধাপ পার করার আশা আর্জেন্টিনা করতেই পারে। পরের কথা পরে। আপাতত রোহো-বন্দনায় সবাই। ইউনাইটেডে শুরুর দিন থেকে কুফা লেগেছিল তাঁর। কী এক মামলার কারণে ইংল্যান্ডে ওয়ার্ক পারমিটই পাচ্ছিলেন না। সেসব ঝামেলা চুকে খেলতে শুরুর করলেন বেশ। তখনই কাঁধের মারাত্মক চোট। এরপর ধীরে ধীরে রোহো কেবলই হারিয়েছেন। হোসে মরিনহোর মতো ডিফেন্সিভ ট্যাকটিকসে খুঁতখুঁতে হেড মাস্টারের স্কুলে জায়গা টিকিয়ে রাখা ঢের কঠিন। আজ জাতীয় দলের জার্সি গায়ে করলেন মাত্র তৃতীয় গোল। যে গোলটার কারণে আর্জেন্টিনার ফুটবলের আবেগীয় রূপকথার অংশই হয়ে গেলেন হয়তো। আশ্চর্যের বিষয় হলো এই, রোহো এর আগে গত বিশ্বকাপে গোল করে জিতিয়েছিলেন এই নাইজেরিয়ার বিপক্ষেই। সেই ম্যাচের বাকি দুই গোলদাতার নামও ছিল মেসি ও মুসা! মেসির জোড়া গোল মুসার জোড়া আঘাতে হারিয়ে যেতে যেতে ঠিক এভাবেই বক্সে কোত্থেকে যেন হাজির হয়েছিল এই রোহোই! রোহোর চিত্রনাট্য কেউ না কেউ অলক্ষ্যে বসে লিখছে ঠিক। রোহো ফিরে এসেছেন। ফিরে এসেছেন মেসি। এবার আর্জেন্টিনা মাঝারি সারির দল নিয়েও গতবারের মতো আরও কিছুটা পথ পাড়ি দেওয়ার সাহসও তো হয়তো ফিরে পাবে।

I periodically make up my blog posts with TOP quotes. I really want to add this.

You got a 2.23% upvote from @oceanwhale With 35+ Bonus Upvotes courtesy of @mehedi623! Delegate us Steem Power & get 100%daily rewards Payout! 20 SP, 50, 75, 100, 150, 200, 300, 500,1000 or Fill in any amount of SP Earn 1.25 SBD Per 1000 SP | Discord server