দয়াকরে এই কাজগুলো কেউ করবেন না।

in #bangla23 days ago

গুলশান বাড্ডা লিংক রোড। গত পরশুদিন রাত ঠিক ১১.৩৫। অনেকদিন পর বৃষ্টি হয়ে চারিদিকে শান্ত পরিবেশ। সুন্দর এই পরিবেশে একটু হাঁটার জন্য বের হলাম। গেট থেকে বের হতেই ঐ ছেলেটিকে রাস্তার পাশে বসে থাকতে দেখলাম। ছেলেটাকে এভাবে বসে থাকতে দেখেই মায়া লেগে গেলো।

cemera mobile.jpg

গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি পরছে। রাস্তা ঘাট একেবারে ফাঁকা। বেওয়ারিশ কুকুরে ঘুরাঘুরি আর থেমে থেমে পথিকের আসা যাওয়া যাওয়া ছাড়া নিস্তব্ধ এলাকা। আমার চোখ বারবার ছেলেটির দিকে ছুটে যায়। গেটে দাড়িয়ে কিছুক্ষণ তাকে অবলোকন করলাম। মায়া আরো বেড়ে গেলো। মনে হচ্ছিল সে কাউকে কল দিচ্ছে কিন্তু ধরছে না।

আমি হেটে গুদারা ঘাটের দিকে যেতে লাগলাম। কিন্তু ঐ ছেলের কথা ভুলতে পারছিলাম না। তাই ৬/৭ মিনিট পর ব্যাক করে তার কাছে আসলাম। ছেলেটি এখনো বসে আছে। কাছে গিয়ে সুন্দর করে জিজ্ঞেস করলাম ‘কোন সমস্যায় পরছো’?

কোন হেল্প লাগবে? মোবাইলে টাকা নাই, কাউকে কল করতে হবে?

১৭/১৮ বছরের ছেলেটি লজ্জা পেয়ে গেলো। আমি লজ্জা ভাঙিয়ে বললাম ‘লজ্জার কিছুই নাই, বিপদ আপদ মানুষেরই হয়’। কোন সমস্যা থাকলে বলো, দেখি কিছু করতে পারি কিনা।

সে বললো: আসলে আমি একটা পার্সেল ডেলিভারি দিতে এসেছি, এড্রেস এই আসে পাশেই। কিন্তু রিসিভার কল ধরছে না। থাকি মিরপুরে। আজ ডেলিভারি না দিলে কালকে আবার আসতে হবে, এছাড়া কোম্পানিও আমাকে ঝাড়ি দিবে।

কোম্পানিকে জানিয়েছো যে কল ধরছে না?

প্রথমে ভয়ে জানাইনি, এখন জানিয়েছি, ঝাড়ি মারছে আমারে, এখন কম্পানি কল দিচ্ছে কিন্তু কোম্পানির কলও ধরছে না।

তো, অন্য নাম্বার দিয়ে কল দাও।

না, অন্য নাম্বার দিয়ে কল দেয়া কম্পানির নিষেধ আছে।

তো আমাকে নাম্বার দাও, আমি কল দিয়ে দেখি।

দিবে না, ভয়ে।

আশ্বাস দিয়ে বললাম ‘দাও, আমি সুন্দর করে কথা বলি, কোন সমস্যা করবে না।

পরে নাম্বার দিলো।

কল দিলাম।

কল ধরলো এক ম্যাডাম।

অনেক সুন্দর করে রিকোয়েস্টের সুরে বললাম ‘একটা ডেলিভারি ম্যান এসে বৃষ্টির মধ্যে বসে আছে, আপনার যদি কোন সমস্যা না থাকে তাহলে প্লিজ ডেলিভারিটি রিসিভ করুন। ছোট্ট একটা ছেলে ভয় পেয়ে আছে।

ম্যাডামের অভিযোগ ‘ডেলিভারি ম্যান আসার কথা ছিল ১০ টার মধ্যে। এখন এত লেট করছে তাই আমি রিসিভ করতে চাচ্ছি না। বাসায় পুরুষ মানুষ নাই, ব্লা ব্লা বহুত কিছু। তারপরও বললাম ছোট ছেলে, সাইকেল নিয়ে ডেলিভারি দেয়, আবার বৃষ্টি হয়েছে, তাই একটু দেরি হয়েছে, দয়া করে রিসিভ করে ছেলেটিকে একটু সহযোগীতা করুন। ম্যাডাম রাজি হলেন। ছেলেটিকে গেটের সামনে যেতে বললো। ছেলেটিকে বিদায় দিয়ে আমি বাসায় চলে আসলাম।

আমার একটা জিনিস বেশ ভালো লাগে। আজ থেকে ১০/১২ বছর আগেও এই পাঠাও, উবার, ফুড ডেলিভারি, পার্সেল ডেলিভারি কালচার দেশে চালু ছিল না। এখন এই সেক্টরে শত শত ইয়াং ছেলে কাজ করছে, সবাই কত হাসিমুখে পরিশ্রম করে, নিজেকে সাপোর্ট দেয়, পরিবারকে সাপোর্ট দেয়। অনেক ভালো লাগে এই দৃশ্য দেখলে। আমার মনে হয় দেশের সবারই ভালো লাগে। এই যে ঘরে বসে নিজের প্রয়োজনীয় পন্য পেয়ে যাওয়া যায়, বিষয়টি একটা প্রিভিলেজড। এই সেক্টরের প্রতি কৃতজ্ঞতা থাকা উচিৎ আমাদের সবার।

ভালো লাগার পাশাপাশি এই ছেলে মেয়েদের প্রতি সবাই আরেকটু সুহৃদ হলে ছেলেগুলি কাজে উৎসাহ পাবে। আরো ভালো করে কাজ করবে। আরো নতুন ছেলে মেয়ে এই লাইনে ঢুকবে। একটা সময় বড় একটি জিবীকার ক্ষেত্র হবে এই সেক্টর। তাই আসুন, সবাই এদের পাশে দাঁড়াই। এদের সাথে খারাপ ব্যবহার না করি। এদের স্বপ্নভঙ্গ না করি।

কথাটি ভালো লাগলে শেয়ার করবেন