**অন্ধকারের ছায়া**

in #bloge24 days ago

1000031040.jpg

রাত তখন গভীর। গ্রামের সব ঘরবাড়ির বাতি নিভে গেছে। নির্জন এই ছোট্ট গ্রামটির নাম বালিয়াপুর। এখানে কয়েকদিন ধরে কিছু অদ্ভুত ঘটনা ঘটছে। গ্রামের মানুষজন জানে না, কিন্তু গ্রামের পাশের পুরনো জঙ্গলের মধ্যে কিছু একটা অশুভ ঘুরে বেড়াচ্ছে।

রাতের আঁধারে হঠাৎ গাঁয়ের মাঝখানে ছোট্ট বাড়িটাতে কান্নার আওয়াজ ভেসে এলো। মালতি বউটা অবাক হয়ে বাইরে তাকালো। "এই সময় কে কাঁদছে?" সে নিজেকে প্রশ্ন করল। সে দেখলো, জঙ্গলের দিক থেকে এক নারী আকৃতির ছায়া এগিয়ে আসছে। ছায়াটা ধীরে ধীরে কাছে আসতে লাগল, আর কান্নার আওয়াজটা ক্রমশ জোরালো হচ্ছিল।

মালতি দরজাটা খোলার সাহস পেল না। কিন্তু বাইরে থেকে কেমন যেন এক অদ্ভুত কুয়াশার মতো কিছু আসতে লাগলো, যা তার দম বন্ধ করে দিচ্ছিল। হঠাৎ, ছায়াটা তার বাড়ির দরজার সামনে দাঁড়িয়ে গেল। মালতির বুকের ধুকপুকানি তীব্র হয়ে উঠল। চোখের পাতা পড়ল না, সে দেখলো ছায়াটা ধীরে ধীরে এক নারী রূপ ধারণ করছে। তার চুল এলোমেলো, চোখ দুটো রক্তলাল, আর মুখে এক বিভৎস হাসি।

মালতি দরজাটা আটকে রাখতে চাইল, কিন্তু যেন কেমন একটা অদৃশ্য শক্তি তার শরীরকে অসাড় করে রেখেছে। হঠাৎ, সেই নারীর হাত বাড়িয়ে দরজাটা ঠেলে খুলে দিল। মালতির ঠোঁট থেকে এক চিৎকার বেরিয়ে এলো, কিন্তু সে শব্দ বাইরে বেরোলো না। নারীমূর্তি বলল, "তুমি আমাকে চিনতে পারছো না, তাই না? আমি এসেছি প্রতিশোধ নিতে।"

মালতির মনে পড়ে গেল, কয়েক বছর আগে গ্রামের পুরোনো পুকুরের ধারে এক মেয়েকে হত্যা করা হয়েছিল। সেই মেয়ের নাম ছিল রূপা। সবাই জানতো, সে আত্মহত্যা করেছে, কিন্তু আসল সত্য কেউ জানতো না। মালতি জানতো, কারণ সেই হত্যার পিছনে তার স্বামীর হাত ছিল। রূপা তাকে ভয় দেখিয়েছিল সত্যি প্রকাশ করবে বলে।

রূপার আত্মা আজ ফিরে এসেছে প্রতিশোধ নিতে। মালতি চিৎকার করে উঠল, কিন্তু তখনই সেই নারীমূর্তি তার গলা চেপে ধরল। অন্ধকারে মালতির দৃষ্টিশক্তি ধীরে ধীরে নিস্তেজ হয়ে গেল, আর তার শরীরটা নিথর হয়ে পড়ল।

পরদিন সকালে, গ্রামের লোকজন মালতির ঘরের সামনে জমায়েত হলো। তারা দেখলো, মালতি নিথর হয়ে পড়ে আছে। তার মুখে সেই নারীমূর্তির মতোই বিভৎস হাসি। কেউ জানলো না, কী ঘটেছে, কিন্তু তারা জানলো—পুরনো পাপ কখনো মাফ হয় না, প্রতিশোধ ঠিকই ফিরে আসে।

গ্রামের লোকজন সেই রাত থেকে আর কখনও জঙ্গলের পথে পা রাখেনি। কারণ তারা জানতো, রূপার ছায়া এখনও ওখানে অপেক্ষা করছে, তার পরবর্তী শিকারের জন্য।