আগস্ট ২০২৪-এ বাংলাদেশে বন্যা

in #bonya2425 days ago (edited)

bonya6.jpeg
২০২৪ সালের ২১ আগস্ট ভারী বর্ষণ এবং ভারত থেকে নেমে আসা ঢলে বাংলাদেশের পূর্বাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। ভারত থেকে নেমে আসা ঢল ও টানা কয়েকদিনের ভারী বর্ষণে স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়ে ফেনী ও নোয়াখালীসহ দেশের দশ জেলার ৭৭টি উপজেলা প্লাবিত হয়। এছাড়া ভারি বর্ষণ ও অতিবৃষ্টির কারণে উজান থেকে আসা ঢলে দেশের উত্তর-পূর্ব, দক্ষিণ-পূর্ব ও পূর্বাঞ্চলের ৫ জেলার নিম্নাঞ্চলে স্বল্পমেয়াদি বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়।
বিশেষজ্ঞ মহল মনে করেন বঙ্গোপসাগরে লঘুচাপের কারণে হঠাৎ অতিবৃষ্টি ও আন্তসীমান্ত নদী থেকে আসা উজানের ঢলে দেশে আকস্মিক বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। একই সাথে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের ডুম্বুর জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের বাঁধ খুলে দেওয়ায় এই আকস্মিক বন্যা। ভারতীয় গণমাধ্যম এটা বললেও পরে ভারত সরকার তা প্রত্যাখান করে।
১৯ আগস্ট রাত থেকেই ফেনী জেলার পরশুরাম, ফুলগাজী ও ছাগলনাইয়া উপজেলার প্রায় বেশিরভাগ এলাকা বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। বন্যা পরিস্থিতি অবনতি হওয়ায় মঙ্গলবার থেকে এ তিন উপজেলাসহ সোনাগাজী ও দাগনভূঞা উপজেলার কিছু এলাকায় বিদ্যুৎ পুরোপুরি সংযোগ বন্ধ করা দেওয়া হয়। একই সঙ্গে ভারী বৃষ্টিতে ফেনী শহরে জলাবদ্ধতার কারণে দুপুর থেকে রাত অবধি বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ করে দেওয়া হয়।

bonya3.jpeg

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় এর তথ্য অনুযায়ী ২০ আগস্ট থেকে বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়ে কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ফেনী, চট্টগ্রাম, খাগড়াছড়ি, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ ও সিলেট জেলার ৬৫ উপজেলা প্লাবিত হয়েছে।
২১ আগস্ট কুমিল্লার নাঙ্গলকোট উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়। সকাল থেকে উপজেলার অনেক এলাকা বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়। উপজেলার ১৬টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভার অধিকাংশ এলাকায় লাখ-লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েন। গ্রামীণ অধিকাংশ সড়ক ও ফসলি মাঠ পানিতে তলিয়ে যায়।

bonya2.jpeg

২২ আগস্ট সন্ধ্যা ৬টায় ডালিয়া পয়েন্টে পানির প্রবাহ ছিল ৫১ দশমিক ৫০ সেন্টিমিটার। এই পয়েন্টে বিপৎসীমা ধরা হয় ৫২ দশমিক ১৫ সেন্টিমিটার। একই সময়ে কাউনিয়া পয়েন্টে পানির প্রবাহ ছিল ২৮ দশমিক ৬১ সেন্টিমিটার। এই পয়েন্টে বিপৎসীমা ২৯ দশমিক ৩১ সেন্টিমিটার। দুপুর ৩টার তুলনায় সন্ধ্যা ৬টায় এই পয়েন্টে পানির প্রবাহ বেড়েছে দশমিক ৭ সেন্টিমিটার।
২৩ আগস্ট কুমিল্লার দেবীদ্বার পয়েন্টে সকাল ৯টায় গোমতী নদীর পানির সমতল ছিল ৮.৫৮ মিটার, যা বিপৎসীমার ৫৩ সেন্টিমিটার ওপরে। একই সময়ে নদীর পানি কুমিল্লা পয়েন্টে বইছিল ১২.৪৮ মিটার উচ্চতায়। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) ১৯৮৮ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত ৩৭ বছরের রেকর্ড বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, এই সময়কালে গোমতীর পানি এতটা উচ্চতায় পৌঁছেনি।

bonya1.jpeg

কুমিল্লায় বৃষ্টি ও বন্যার প্রভাবে ৪ জনের মৃত্যু হয়। ২২ আগস্ট ফেনীতে ডুবে ১ জন মারা যায়। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট বন্যার পানিতে ডুবে এক অন্তঃসত্ত্বা নারীর মৃত্যু হয়। কক্সবাজার দুইজনের মৃত্যু হয়।
ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে কসবার তিতাস, সিনাই, বুড়ি, বিজনা, সালদা নদীর পানি বৃদ্ধি পায়। সেই পানি কসবা ৬০০ হেক্টর রোপা আমনও বিভিন্ন গ্রামের নিম্নাঞ্চল তলিয়ে যায়।

bonya4.jpeg

২২ আগস্ট দুপুরে বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে এক ব্রিফিংয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব কে এম আলী রেজা জানান চলমান বন্যায় দেশের ৮ জেলায় অন্তত ২৯ লাখ ৪ হাজার ৯৬৪ জন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বাংলাদেশের ১১টি জেলা বন্যাকবলিত জেলাগুলোতে ৮ লাখ ৮৭ হাজার ৬২৯টি পরিবার পানিবন্দী। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সংখ্যা প্রায় ৪৫ লাখ। এখন পর্যন্ত ১৩ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। চলমান বন্যায় দেশের বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই বন্যায় প্রায় ১০ লাখ গ্রাহক বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়েছেন। পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি এবং পিডিবি উভয়ের অধীনেই বিপুল সংখ্যক গ্রাহক বিদ্যুৎ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। বিদ্যুৎ ব্যবস্থার বিভিন্ন
যন্ত্রপাতি ও অবকাঠামোর ব্যাপক ক্ষতির ফলে প্রায় সাড়ে ৮ কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে।
• বাম গণতান্ত্রিক জোট নেতারা অভিযোগ করেন পূর্বসতর্কতা ছাড়াই বাঁধ খুলে দিয়ে ভারত আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী উজানের কোনো দেশ নদীর ওপর দেওয়া বাঁধের গেট খুলে দেওয়ার ৭২ ঘণ্টা আগে ভাটির দেশকে জানানোর কথা। কিন্তু এবার পূর্বসতর্কতা ছাড়াই ডুম্বুর ও কলসি বাঁধ খুলে দেওয়া হয়েছে।
• বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় কুমার ভার্মা জানান ভারতের ডম্বুর বাঁধ ইচ্ছাকৃত নয়, স্বয়ংক্রিয়ভাবে খুলে গেছে। ২২ আগস্ট বিকেলে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকে তিনি এই কথা বলেন।
• অভিন্ন নদীতে অন্যায়ভাবে বাঁধ নির্মাণ করে পানির স্বাভাবিক প্রবাহকে বাধাগ্রস্ত করেছে ভারত। এ কারণেই দেশের মানুষ বন্যায় কষ্ট পাচ্ছে বলে জানিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ।
• ভারত পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দাবি করেন ত্রিপুরার গোমতী নদীতে ভারতীয় বাঁধ থেকে পানি ছাড়ার কারণে বাংলাদেশে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়নি।
• পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ বাংলাদেশে বন্যায় প্রাণহানি ও ধ্বংসযজ্ঞের ঘটনায় গভীরভাবে উদ্বিগ্ন হওয়ার কথা জানিয়েছেন শুক্রবার ২৩ আগস্ট সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে একথা জানিয়েছেন। তিনি বলেন বাংলাদেশে বন্যায় প্রাণহানি ও ধ্বংসযজ্ঞে আমি গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। আমি বাংলাদেশের জনগণ এবং নিহতদের পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি। বিপর্যয়ের এই সময়ে বাংলাদেশের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করছি। তিনি আরও বলেন আমি আত্মবিশ্বাসী বাংলাদেশের সহনশীল জনগণ তাদের চারিত্রিক অধ্যবসায় ও দৃঢ়তা দিয়েই এই কঠিন সময়কে অতিক্রম করবে।