ডলারের বেঁধে দেওয়া দাম উঠে যাচ্ছে
ডলারের বেঁধে দেওয়া দাম তুলে দেওয়া হচ্ছে। ডলারের দাম বাড়তে থাকায় গত রোববার দাম বেঁধে দিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে দাম কম হওয়ায় কমে গেছে প্রবাসী আয়, রপ্তানিকারকেরাও বিল নগদায়ন করছেন না। এতে আমদানি বিল মেটাতে গিয়ে গতকাল সংকটে পড়ে বেসরকারি খাতের কয়েকটি ব্যাংক।
এমন পরিস্থিতিতে বুধবার সন্ধ্যা সাতটায় বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবিরসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের চেয়ারম্যান (এবিবি) ও ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সেলিম আর এফ হোসেন। এতেই ডলারের দামের সীমা তুলে দেওয়ার বিষয়ে একমত পোষণ করে বাংলাদেশ ব্যাংক।
তবে বেঁধে দেওয়া দাম তুলে দেওয়া হলেও তদারকি জোরদার করবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। যাতে কেউ কৃত্রিম সংকট তৈরি করে মুনাফা করার সুযোগ না পান। ডলারের দাম একবারে নাগালের বাইরে না চলে যায়।
এ বিষয়ে সভায় উপস্থিত কেউ কথা বলতে চাননি। তবে বিষয়টি নিয়ে ওয়াকিবহাল একজন ব্যাংকার জানান, আগে দাম বেঁধে দেওয়ার ক্ষেত্রে কোনো আনুষ্ঠানিক চিঠি দেয়নি কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এবার তুলে দেওয়ার ক্ষেত্রেও কোনো চিঠি দেওয়া হবে না। ডলারের বেঁধে দেওয়া দামের সীমা তুলে নেওয়া হবে। তবে কেউ চাইলেই আগের মতো যেমন ইচ্ছা দাম বাড়ানোর সুযোগ পাবেন না।
গত বৃহস্পতিবার ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ (এবিবি) ও বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলারস অ্যাসোসিয়েশনের (বাফেডা) নেতাদের সঙ্গে এক সভা করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এই সভায় ডলারের বিনিময়মূল্য কত হবে, তা নির্ধারণের জন্য ব্যাংকগুলোকে প্রস্তাব দিতে বলা হয়। গত রোববার দুপুরে বাফেডার চেয়ারম্যান আতাউর রহমান প্রধান ও এবিবির চেয়ারম্যান সেলিম আর এফ হোসেন ডলারের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়ে গভর্নর ফজলে কবিরের কাছে একটি চিঠি দেন। এতে তিনি উল্লেখ করেন, বাংলাদেশ ব্যাংক নিয়মিত ভিত্তিতে বাজারে ডলারের জোগান দিয়ে ও ডলারের দাম পুনর্বিবেচনা করলে বর্তমান পরিস্থিতির উত্তরণ ঘটবে।
ডলারের দাম বাড়তে থাকায় গত রোববার আমদানি, রপ্তানি ও আন্তব্যাংক লেনদেনে ডলারের দাম কত হবে, তা বেঁধে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংক রপ্তানি বিল নগদায়নে ৮৮ টাকা ১৫ পয়সা, আন্তব্যাংক লেনদেনে প্রতি ডলারের দাম ৮৯ টাকা ও আমদানিকারকদের কাছে বিক্রিতে ৮৯ টাকা ১৫ পয়সা দাম নির্ধারণ করে দেয়। আর প্রবাসী আয়ে সর্বোচ্চ ৮৯ টাকা ২০ পয়সা দাম দিতে বলা হয়।
তবে ডলারের দাম কম হওয়ায় চলতি সপ্তাহে প্রবাসী আয় কমে যায়। পাশাপাশি রপ্তানিকারকেরাও বিল নগদায়ন করছেন না। দাম বাড়বে এমন আশায় ধরে রাখছেন বিল। সাধারণত রপ্তানিকারকদের বিলের ৭৫ শতাংশ ব্যাক টু ব্যাক ঋণপত্রের দায় ও ১৫ শতাংশ রপ্তানি প্রত্যাবাসন কোটায় (ইআরকিউ) রাখতে পারে। বাকি থাকে ১০ শতাংশ। দাম কম হওয়ায় এটাও নগদায়ন করতে চাইছেন অনেক রপ্তানিকারক। এর ফলে ব্যাংকগুলোতে ডলারের সংকট হয়।
আগে ৯৭ টাকা দরেও প্রবাসী আয় আনে কিছু ব্যাংক। আমদানি বিলে দাম ধরে আরও বেশি। অনেক রপ্তানিকারক অন্য ব্যাংকের কাছে বেশি দামে বিল নগদায়ন করেন।
গতকাল একাধিক ব্যাংক বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে ডলার চেয়ে আবেদন করে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক সরকারি খাতের একটি ব্যাংকের সরকারি ঋণপত্রের দায় পরিশোধের জন্য ১৩ কোটি ডলার বিক্রি করে। অন্য কাউকে ডলার সহায়তা দেয়নি। এ জন্য সংকট আরও প্রকট হয়।
বেসরকারি খাতের একটি ব্যাংকের এমডি নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, দাম বেঁধে দিয়ে ডলার সংকটকে আরও প্রকট করা হয়েছে। আমদানি বিল পরিশোধে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। এতে দেশের জন্য বড় ধরনের ঝুঁকি তৈরি হয়েছে।
এদিকে ডলার মজুত নিয়ে ভুল তথ্য প্রদান, কৃত্রিম সংকট তৈরি করে মুনাফা করা ও বেশি দামে প্রবাসী আয় এনে ডলারের দাম বাড়ানোর সঙ্গে যুক্ত ব্যাংকগুলো পরিদর্শন করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ইতিমধ্যে কয়েকটি ব্যাংককে কারণ দর্শানো নোটিশ দেওয়া হয়েছে। শিগগির শাস্তির আওতায় আসবে কয়েকটি। এমনটিই জানান কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক কর্মকর্তা।
This post was upvoted by @hustleaccepted
Use our tag #hustleaccepted and mention us at @hustleaccepted to get an instant upvote.
Also, you can post at our small community and we'll support you at Hustle Accepted
Visit Our Website at
Hustle Accepted