সকল ক্রিকেটপ্রেমী-দেশপ্রেমিকরা পড়ুন।
সকল ক্রিকেটপ্রেমী-দেশপ্রেমিকরা পড়ুন।
♣♣♣♣♣♣♣♣♣♣♣♣♣♣
আলাওলের নাম জানেন???
সপ্তদশ শতাব্দীর বিখ্যাত বাঙালী কবি,পদ্মাবতীর রচয়িতা।আলাওলের বাড়ি ছিল ফরিদপুর।সেখান থেকে তাকে অপহরন করে পর্তুগীজ জলদস্যুরা।
.
পরবর্তীতে আলাওলকে বিক্রি করে দেয়া হয় আরাকানের দাস বাজারে,সেখান থেকে তাকে কিনে নেন আরাকানের রাজার জনৈক অমাত্য।সেখানে নিজগুনে তিনি উঠে আসেন রাজকবির পদে।
কিন্তু এই সৌভাগ্য সবার ছিল না।১৫০০-১৬৬৩ সালের মধ্যে কয়েক লাখ বাঙালীকে পর্তুগীজ জলদস্যুরা এভাবে অপহরন করেছে,তারপর যে কথা শুনেছে,তাকে ক্রীতদাস হিসেবে বিক্রি করেছে আরাকান,শ্রীলঙ্কা,ইরান বা চীনে।অনেককে পশুর মত পরিশ্রম করিয়েছে ইন্দোনেশিয়ান স্পাইস আইল্যান্ডসে।
আর যারা কথা শোনে নি,তাদের জ্যান্ত পুড়িয়ে মেরেছে।তারপর পুড়ে যাওয়া হাড়গোড় বস্তায় ভরে ফেলে দিয়েছে সাগরে।কত হাজার মেয়েকে এরা ধর্ষনের পর দাসী হিসেবে বিক্রি করেছে তার কোন হিসেব নেই।পর্তুগীজদের অত্যাচারে বার বার বিরান হয়ে গেছে বাংলার উপকূলীয় অসংখ্য জনপদ।তাদের অত্যাচার ও নিষ্ঠুরতার বিবরন জানতে চাইলে ছোট একটা বই পড়ে নিতে পারেন,মশলার যুদ্ধ-সত্যেন সেনের লেখা।তবে বইটায় কোন পার্টিকুলার রিজিওনের মানুষের সাথে পর্তুগীজদের আচরন হাইলাইট করা হয় নাই,বরং সামারাইজ করা হয়েছে সম্পুর্ন পর্তুগীজ আগ্রাসনকেই।
এ তো গেল পর্তুগালের কথা।চলে আসি এবার সময়ের ডায়েরীর আরেকটু সামনের দিকের পাতায়।
ছিয়াত্তরের মন্বন্তরের নাম শুনেছেন??গ্রেট ইন্ডিয়ান ফেমিন অথবা পঞ্চাশের মন্বন্তরের নাম শুনেছেন???
.
প্রথমটা হয় ১৭৭০ সালে,দ্বিতীয়টা ঊনবিংশ শতাব্দীর তিনটা ভিন্ন ভিন্ন সময়ে,শেষটা হয় ১৯৪৩ সালে।
প্রথম আর শেষটায় বাংলাদেশে মারা যাউ অন্তত দেড় কোটি মানুষ।জ্বি,সংখ্যাটা দেড় কোটি।
১৭৭০ সালের এই দূর্ভিক্ষে বাংলার মোট জনসংখ্যার প্রতি তিনজনে একজন না খেতে পেয়ে মারা গিয়েছিল।এমনকি ব্রিটিশ ইন্ডিয়ার গভর্নর ওয়ারেন হেস্টিংসের রিপোর্টেই এক কোটি মৃত্যুর কথা উল্লেখ করা আছে,নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন সরাসরি একে মানবসৃষ্ট দূর্ভিক্ষ বলেছেন।এর দায় পুরোপুরি ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীকে দেয়া হয়।ফসল কম হবার কারনে বাংলাদেশের ইতিহাসে এমন কোন দূর্ভিক্ষ হয় নাই,যাতে না খেয়ে দশ হাজার মানুষও মারা গেছে,ইতিহাসে কোথাও পাবেন না।বাংলাদেশে দূর্ভিক্ষ হয়েছে দুঃশাসন ও লুটপাটের কারনে।পৃথিবীর সবচাইতে ধনী ভুখন্ডে ব্রিটিশরা ঢোকার তেরো বছরের মাথায় না খেতে পেয়ে সেখানকার প্রতি তিনজনে একজন মারা গেছে।বুঝতে পারেন সেটা কোন লেভেলের লুটপাট ছিল??
সে অনেক আগের কথা।
এবার আসি পঞ্চাশের মন্বন্তরের ঘটনায়।
তখন চলছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ।সেনাবাহিনীর রেশনের জন্য দরকার প্রচুর চাল ও গম।ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের সবচাইতে বড় খাদ্যভান্ডার ছিল ব্রিটিশ ইন্ডিয়া।সেই ভান্ডারের সবচাইতে উর্বর জমি ছিল এই পূর্ব বাংলা।
ব্রিটিশের সেনাবাহিনীর জন্য খাদ্য মজুদ করতে গিয়ে পূর্ব বাংলার খাদ্যগুদাম উজাড় করে দেয়া হল।সব চাল নিয়ে মজুদ করা হল দিল্লী,বিহার আর কলকাতায়।
আর এই পূর্ব বাংলায় মাত্র পঞ্চাশ লাখ মানুষ মরলো না খেতে পেয়ে।উইনস্টন চার্চিলকে এই ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে তিনি জানালেন,ভারতবাসী নাকি ইদুরের মত বাচ্চা জন্ম দেয়,সেকারনে এখানে এত দূর্ভিক্ষ হয়।তার এতে কিছু করার নেই।
চাল কিন্তু তখন ছিল কোলকাতার গুদামে।জমিদার দাদাবাবুরা,ভদ্দরলোকেরা সেই চাল পুর্বের মানুষকে দেয়ার প্রয়োজন বোধ করেন নাই।
গ্রেট বেঙ্গক ফেমিন লিখে বা পঞ্চাশের মন্বন্তর লিখে গুগল করলেই সব পাবেন,অসংখ্য অথেনটিক সোর্স আছে ইন্টারনেটে।
.
যাক,ব্রিটিশদের কথাও বাদ দেই।
খোকা ঘুমালো,পাড়া জুড়ালো,বর্গী এলো দেশে,
বুলবুলিতে ধান খেয়েছে,খাজনা দিবো কিসে??
এই গান তো সবাই জানেন,নাকি??
এই বর্গী কারা ছিল,ইতিহাসের ছাত্র মাত্রই বলতে পারবেন।মারাঠারা,আইমিন,ভারতীয়রা।
এই গানের পেছনে আছে ১৭৪১ সাল থেকে ১৭৫১ সালের মধ্যে অন্তত চার লাখ মানুষকে গণহত্যার রক্তাক্ত অতীত।প্রি মডার্ন টাইমে রেইপকে ক্যাজুয়ালটির সাথে সেভাবে হিসেব করা সম্ভব ছিল না,তা না হলে রেইপের পরিমানটাও জানা যেত। আপনার আমার টেক্সটবুকে এগুলো নাই,কেন নাই,ভেবে দেখতে পারেন।
মোস্ট রিসেন্ট ম্যাসাকার হল ১৯৭১ এ পাকিস্তানি ম্যাসাকার,ত্রিশ লাখ মানুষ খুনের নৃশংস অমানবিক যজ্ঞ।সেই সাথে আছে দুই লাখ ধর্ষন।
.
সেই যজ্ঞে ইন্ধন যুগিয়েছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র,সমর্থন দিয়েছিল গণচীন,সউদি আরবের মত দেশ।
.
তো আমরা দেখলাম,গণহত্যায় চ্যাম্পিয়ন হচ্ছে ইংল্যান্ড,ঠান্ডা মাথার খুনী।এরপর একে একে আসে পাকিস্তান,ভারত ও পর্তুগালের নাম,পর্তুগাল যা করেছে তা গণহত্যার চাইতে কোন অংশে কম না।
.
এবং গনহত্যায় সাহায্যকারী হিসেবে ছিল কখনো কোলকাতার জমিদার,আবার কখনো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র,চীন বা সউদী আরব।
এখন তাহলে পুরা জাতসুদ্ধ যদি আমরা ঘৃনা করা শুরু করি,যদি ঘৃনাই হয় আমাদের দেশপ্রেম প্রকাশের মাধ্যম,তবে শুরুতেই আগে ব্রিটেনের সাথে আমাদের সম্পর্ক ছেদ করতে হবে,ব্যবসা বাণিজ্য,জনশক্তি রপ্তানী,রেমিট্যান্স,সব বন্ধ।যেহেতু খেলার সাথে রাজনীতি ব্যাপারটাও জড়িত,তাই ইপিএল দেখা বন্ধ করা দরকার,শুরু করা দরকার ব্রিটিশ পণ্য বর্জন।ব্রিটিশ দেখলেই ব্লাডি মার্ডারার বলে গালি দেয়া উচিত।
এরপর পাকিস্তান,সব সম্পর্ক ছিন্ন করা।সেই সাথে পাকিস্তানের প্রধান দোসর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকেও আমাদের মনে প্রানে ঘৃনা করা উচিত,জি আর ই পরীক্ষা বাদ দেয়া উচিত,আমেরিকান মডেল,সুপারস্টার,এবং পণ্য ঘৃনা করা উচিত।
এরপর,পর্তুগালের খেলোয়াড়দের গালি দেয়া উচিত,পর্তুগালকে বয়কট করা উচিত,যেহেতু আমরা অনেক দেশপ্রেমিক এবং দেশপ্রেমের স্ট্যান্ডার্ড হল ঘৃনা করা।তা সে ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোই হোক বা শহীদ আফ্রিদি বা ভিরাট কোহলি।
নেক্সট,আমাদের হজ্বে যাওয়া বন্ধ করে দেয়া উচিত,সউদী সহ পুরা মধ্যপ্রাচ্যকেই(ইয়েমেন বাদে প্রায় কেউই মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশকে সমর্থন দেয় নাই) বয়কট করা উচিত।
.
তো আমরা দেখলাম,ঘৃনা যদি দেশপ্রেমের প্রধান স্ট্যান্ডার্ড হয়,তাহলে এদের সবাইকে আমাদের ঘৃণা করতে হবে,অন্তত ইংল্যান্ড,পাকিস্তান,ভারত আর পর্তুগালকে ঘৃণা না করলে তো হবেই না।
.
আর যদি ঘৃনা না করেন,তাহলে এদের কাউকেই ঘৃণা করা যাবে না।এক খুনীকে ঘৃনা করবেন আরেকজনকে করবেন না,তাহলে আপনি কেমন দেশপ্রেমিক??
.
বাস্তবতা হল,এই ঘৃনা করার কালচার একটা শাহবাগী প্রোডাকশন(৫ই ফেব্রুয়ারির শাহবাগ আর ৭ই ফেব্রুয়ারির পরের শাহবাগ এক না),এই ঘৃনার ব্যবসা করে ইমরান এইচ সরকার আজকে কোটিপতি,শিক্ষামন্ত্রীর মেয়ের জামাই।
.
উপমহাদেশের প্রেক্ষাপটে খেলার ভেতর রাজনীতি চলে আসে,আসতে বাধ্য।
অতএব,যখন খেলা হবে,নিজ দেশকে সমর্থন করার প্রশ্নে কোন আপোষ নেই।
কিন্তু দেশপ্রেমিক হতে হলে কাউকে ঘৃনা করতে হবে,না হলে তার দেশপ্রেম বৃথা,এই বোগাস চিন্তাভাবনায় আমি বিশ্বাস করি না।কারন এটা কিছু মানুষকে রাজনৈতিক সুবিধা এনে দেয়া ছাড়া বাস্তব জীবনে আমাদের জন্য ভাল কিছু নিয়ে আসে না।
.
আমাদের ইতিহাস জানতে হবে,ইতিহাসের আলোকে নিজেদের রাজনীতি বুঝতে হবে,কিন্তু কারো ব্যবসার হাতিয়ার হতে আমি বা আমরা বাধ্য না।
১৭৪১,১৭৭০,১৯৪৩ বা ১৯৭১ এ আমাদের সাথে যা ঘটানো হয়েছে তা আমরা কোনদিন ভুলবো না।কিন্তু আমাদের অনুভুতি নিয়ে কাউকে ব্যবসা করার লাইসেন্স আমরা দেই নাই।
ইটস সিম্পল।
ভারত পাকিস্তানকে ঘৃনা দিয়ে না,শুধুমাত্র মেধা দিয়েই হারানো সম্ভব।তাই দেশপ্রেম দেখান মেধা দিয়ে,ঘৃণা দিয়ে নয়।
ধন্যবাদ।
Congratulations @gkmiran! You have completed some achievement on Steemit and have been rewarded with new badge(s) :
Award for the number of upvotes
Click on any badge to view your own Board of Honnor on SteemitBoard.
For more information about SteemitBoard, click here
If you no longer want to receive notifications, reply to this comment with the word
STOP
By upvoting this notification, you can help all Steemit users. Learn how here!