যত কাণ্ড দিল্লিতে!
পরিবেশদূষণ যে ক্রিকেটারদের শরীরে কতটা বিরূপ প্রভাব রাখছে, তার প্রমাণ দিলেন সুরাঙ্গা লাকমল। আজ টেস্টের চতুর্থ দিনের সকালে তিন ওভার বল করেই অসুস্থ হয়ে পড়েছেন এই পেসার। ফিজিও আসার পর মাঠেই একপ্রস্থ বমি করেছেন। সে সময়ই মাঠ ছেড়ে বেরিয়ে গিয়েছেন তিনি। তবে তিন ওভারের মাঝেই তিনি ওপেনার মুরালি বিজয়ের উইকেট তুলে নিয়েছেন। পরে অবশ্য মাঠে ফিরে আরও চার ওভার বল করেছেন। দিল্লি টেস্টের চতুর্থ দিনেও খেলা ছাপিয়ে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে রইল বায়ুদূষণ।
দিশেহারা শ্রীলঙ্কা মাঠের খেলাতেও কোণঠাসা। ভারত ৩৫৫ রানের লিড নিয়ে চা বিরতিতে গেছে। দ্রুতই চলে আসবে ইনিংস ঘোষণা। শ্রীলঙ্কা বোধ হয় এই টেস্ট শেষ হলেই বাঁচে! এরই মধ্যে শ্রীলঙ্কার ক্রীড়ামন্ত্রী পর্যন্ত হস্তক্ষেপ করেছেন। ওয়ানডে সিরিজের জন্য দলে যোগ দিতে অপেক্ষায় থাকা ক্রিকেটারদের তিনি দেশ না ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছেন। সব মিলিয়ে না ভারত-শ্রীলঙ্কার ক্রিকেটীয় সুসম্পর্ক কালো ধোঁয়ায় ঢেকে যায়!
ক্রিকেট মাঠে মাস্ক পরে ফিল্ডিং করেছেন শ্রীলঙ্কার ক্রিকেটাররা। মাঠের বাইরে এসে বমি করেছেন দীর্ঘদেহী পেসার লাহিরু গামাগেসহ অনেকেই। লঙ্কানদের এমন অসুস্থতার পেছনের কারণ খোঁজা হচ্ছিল। সরাসরি না বললেও ভারতীয় দল বুঝিয়ে দিয়েছিল, লঙ্কানদের এই আচরণ তাদের ভালো লাগছে না। ঠারেঠোরে এমন প্রশ্নও তোলা হয়েছিল, আসলেই কি বায়ুদূষণ, নাকি কোহলিদের ব্যাটে কচুকাটা হওয়ার চাপ সামলাতে না পারা। আজ মাঠে বমি করে যেন লাকমলকে প্রমাণ দিতে হলো, সত্যিই এই দূষণে কাহিল শ্রীলঙ্কা!
ভারত বনাম শ্রীলঙ্কা দিল্লি টেস্টের তৃতীয় দিন ফিরোজ শাহ কোটলা স্টেডিয়ামে দূষণের মাত্রা সহনীয় মাত্রার ১৮ গুণ বেশি ছিল। রোববার তিন-তিনবার খেলা বন্ধ করতে হয়েছে। সফরকারী খেলোয়াড়রা বেশ কয়েকবার খেলা বন্ধ রাখার অনুরোধ করলেও আম্পায়ার খেলা চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেন। ইন্ডিয়ান মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (আইএমএ) অবশ্য বারবারই খেলা না হওয়ার পক্ষে রায় দিয়েছিল। এই প্রতিষ্ঠানের প্রেসিডেন্ট কে কে আগারওয়াল বলেছেন, ‘এই টেস্ট মাঠে গড়ানোই উচিত হয়নি। আইসিসির দূষণের বিরুদ্ধে নীতিমালা গ্রহণ করা উচিত...আপনি পাঁচ দিনের জন্য ফাস্ট বোলার, ফিল্ডার, ব্যাটসম্যানদের দূষণের মাঝে রাখছেন। দীর্ঘ মেয়াদে এটি শরীরের ওপর গুরুতর ক্ষতি করবে।’
এই টেস্টে ডাবল সেঞ্চুরি করেছেন বিরাট কোহলি, প্রায় দুদিন ব্যাটিং করেছেন। তাঁর তো কোনো সমস্যা হয়নি—ভারতের বোলিং কোচ ভারত অরুণ এমন মন্তব্যও করেছিলেন। অথচ দিল্লির মার্কিন দূতাবাসের পক্ষ থেকে সব মার্কিন নাগরিককে ঘরের বাইরে কাজ না করার পরামর্শ দিয়েছে। বাতাসে ক্ষতিকর পদার্থ পিএম ২.৫-এর আধিক্য থাকায় এমন সতর্কবাণী জানিয়েছে তারা।
গত মাসেই দিল্লিতে হাফ ম্যারাথন অনুষ্ঠিত হয়েছিল, যেখানে প্রায় ৩০ হাজার অ্যাথলেট অংশ নেন। অংশগ্রহণকারীরা দৌড় শেষে বমি, চোখজ্বলা, শ্বাসকষ্টসহ বিভিন্ন সমস্যায় ভুগেছেন। ডাক্তারদের একটি দল কোর্টে এই দৌড় বন্ধের দাবি তুলেছিল, কিন্তু সফল হয়নি। এ সময় অতি দূষণে স্কুল-কলেজ বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছিল।
ফিফা অনূর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপের সময় পরিবেশবাদী সংগঠন গ্রিনপিস তরুণ ফুটবলারদের রক্ষার্থে দিল্লিতে খেলা না রাখার আবেদন জানিয়েছিল। সাধারণত শীতকালে পাঞ্জাব ও পার্শ্ববর্তী স্থানে ফসল পোড়ানোর কারণে দিল্লিতে বায়ুদূষণের মাত্রা বাড়ে। তবে তা নভেম্বরের মধ্যেই সহনীয় অবস্থায় নেমে আসত। এ বছর তা সব মাত্রা ছাড়িয়েছে। এর মাঝেই টেস্ট ক্রিকেটের কঠিন পরীক্ষা দিতে হচ্ছে ভারতীয় ও লঙ্কান ক্রিকেটারদের। শারীরিক ঝুঁকি নিয়ে আজও খেলা চালিয়ে যাচ্ছে দুই দল।