NFT বা নন-ফানজিবল টোকেন কি?

in #cryptocurrency4 years ago

আমরা যারা COC, PubG, Call of Duty ইত্যাদি গেম খেলি এবং এই সব গেম খেলতে খেলতে এই সকল গেমের ক্যরেক্টার, অস্ত্র, বাড়ী ইত্যাদি আপগ্রেড করে থাকি। আর এই সব আপগ্রেড করা ক্যরেক্টার, অস্ত্র, বাড়ী ইত্যাদি যা কিছুই আপনি আপগ্রেড করুন না কেন, এইগুলো যদি অন্য কোন গেম ব্যবহার করা যায় তবে কেমন হয়? নিশ্চয় মন্দ হয় না।

জি, হ্যাঁ বর্তমান সময়ে এখন এই রকম কিছুই হতে যাচ্ছে এবং ধীরে ধীরে হতে শুরু করছে। আপনি চাইলেই এই সব আপগ্রেড কৃত জিনিষ গুলো বিক্রিও করতে পারেন।

এছাড়া কেমন হবে যদি আপনি একটি ডিজিটাল ল্যান্ডে ক্রয় করে তার উপর আপনি আপনার মত বাড়ি বা বিল্ডিং বানান। আর সেই বাড়ি বা বিল্ডিং আবার বিক্রিও করতে পারেন।

binance_ref_banner

জি, হ্যাঁ ধীরে ধীরে ভবিষৎ এমন হতেই যাচ্ছে হয়তো। আর তার শুরুটা হচ্ছে NFT বা নন-ফানজিবল টোকেন এর মাধ্যমে। আজকে আমরা NFT বা নন-ফানজিবল টোকেন সম্পর্কে জানার চেষ্টা করবো।

তো চলুন শুরু করা যাক……………….

NFT বা নন-ফানজিবল টোকেন কি?

NFT টোকেন এমন একটি টোকেন যেখানে প্রতিটি টোকেনের মধ্যে ইউনিক তথ্য জমা করে রাখা যায় তার স্মার্ট কন্ট্রাক্ট ব্যবহার করে। আর এই জন্য একটি NFT টোকেন থেকে অন্য আরেকটি NFT টোকেন আলাদা। যার কারনেই এটিকে বলা হয় নন-ফানজিবল টোকেন।

বিষয়টিতে মনে হয় একটু কনফিউজ হয়ে গেলেন! চলুন ছোট্ট উদাহরন দিয়ে এর কনফিউশন দূর করার চেষ্টা করি।

যেমন ধরুন, আপনার কাছে এক বিকয়েন আছে সেই বিটকয়েনের মূল্য ১০০০০/- ডলার, এখন আপনার বন্ধুর কাছেও এক বিটকয়েন আছে। আপনার বিটকয়েন আর বন্ধুর কাছে যে বিটকয়েন আছে তার মূল্য কি আলাদা? নিশ্চয় না। অর্থাৎ আপনার আর আপনার বন্ধুর বিটকয়েনর মূল্য একই। আপনি চাইলে আপনার বন্ধুর সাথে আপনার বিটকয়েন এক্সচেন্জ করতে পারেন। এতে করে কোন বিটকয়েনের মূল্যের মধ্যে কোন পার্থক্য ঘটবে না।

আবার ধরুন আপনার কাছে ২০২০ সালের নতুন ৫০০ টাকার নোট আছে আর আপনার বন্ধুর কাছে ২০১০ সালের ৫০০ টাকার নোট আছে। এখন আপনার ৫০০ টাকার নোট আর আপনার বন্ধুর কাছে থাকা পুরানো ৫০০ টাকার নোটের মাঝে মূল্যের দিকে দিয়ে কোন পার্থক্য আছে? নিশ্চয় নেই। অর্থাৎ আপনি আপনার ৫০০ টাকা দিয়ে যা ক্রয় করতে পারবেন, আপনার বন্ধুর কাছে থাকা সেই ৫০০ টাকা দিয়েও একই জিনিষ ক্রয় করতে পারবে। এই জিনিষকে বলা হয় ফানজিবল।

এখন আসি নন-ফানজিবল বিষয়ে।

NFT বা নন-ফানজিবল টোকেন একটি অপরটি থেকে আলাদা। ধরুন আপনার কাছে একটি NFT টোকেন রয়েছে। অপরদিকে আপনার বন্ধুর কাছেও একটি NFT টোকেন রয়েছে। এখন আপনার NFT টোকেন এবং আপনার বন্ধুর কাছে থাকা NFT টোকেনের ভ্যলু একই? জি না, একই না (NFT টোকেনে কি ষ্টোর করা আছে তার উপর নির্ভর করবে টোকেনের মূল্য)। আর এইটাই হচ্ছে NFT টোকেনের প্রধান বৈশিষ্ট্য।

NFT টোকেনের আরেকটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এই টোকেনকে ভাঙ্গা যায় না। অর্থাৎ আপনার কাছে যদি ১ বিটকয়েন থাকে তবে সেই ১ বিটকয়েন থেকে ভেঙ্গে ভেঙ্গে খরচ বা ট্রান্সফার করতে পারবেন। যেমন আপনি চাইলেই ০.০৫ বিটকয়েন ট্রান্সফার করতে পারেন। কিন্তু NFT টোকেন এই ভাবে ভেঙ্গে ভেঙ্গে ট্রান্সফার করতে পারবেন না।

বর্তমানে NFT টোকেনের ভাল একটা উদাহরন হতে পারে CryptoKitties । যা বর্তমান সময়ে খুব জনপ্রিয় একটি গেম। এই CryptoKitties এর কিটি বা বিড়ালগুলো হচ্ছে NFT। CryptoKitties -এ বিভিন্ন ধরনের বিড়াল দেখতে পাবেন। আর আপনি এই বিড়াল গুলোকে টোকেনাইজ ফর্মে ষ্টোর করতে পারবেন। আর আপনি চাইলে সেই বিড়ালকে পরিবর্তনও করতে পারেন। কারন আপনার কাছে এই বিড়াল বা NFT টোকেনের প্রাইভেট কি রয়েছে।

আপনি যখন কোন বিড়ালের পরিবর্তন ঘটাবেন, তা টোকেনাইজ ফর্মের কারনে ব্লকচেইনে রেকড থেকে যাবে। CryptoKitties হচ্ছে ইথেরিয়াম ব্লকচেইনের উপর নির্ভর কৃত গেম যা ERC-721 স্মার্ট কন্ট্রাক্টের NFT প্রোভাইড করে।

NFT টোকেনের স্পেশালিটি

প্রথমে বলেছি যে, NFT টোকেনের নিজস্ব ইউনিক কিছু বিষয় রয়েছে। অর্থাৎ আপনার কাছে NFT টোকেন অন্য যেকোন NFT টোকেন থেকে আলাদা। এখন এই আলাদা হওয়ার বিষয়টি NFT টোকেনের মূল স্পেশালিটি। আর আপনার NFT টোকেনর মূল্য নির্ভর করবে আপনি সেই টোকেনে কি ষ্টোর করছেন তার উপর।

ধরুন আপনি আপনার NFT টোকেনে পাবজি গেমের একটি ফুল আপগ্রেড অস্ত্র ষ্টোর করেছেন আর আপনার বন্ধু তার NFT টোকেনে একটি বিল্ডিং ষ্টোর করেছে। তাহলে, নিশ্চয় বুঝছেন আপনার আর আপনার বন্ধুর NFT টোকেনের মূল্য এক হতে পারেন না।

কিভাবে NFT টোকেন ব্যবহার করবেন?

যেহেতু বর্তমানে CryptoKitties একটি জনপ্রিয় NFT টোকেনাইজ গেম তাই প্রথমে সেটা নিয়েই আলোচনা করি। ধরুন আপনার কাছে যে CryptoKitties এর বিড়াল বা NFT টোকেন গুলো রয়েছে তার সবই গুলোই আলাদা আলাদা। প্রতিটি বিড়ালের আলাদা আলাদা পরিচয় বা স্পেশালিটি। আপনি এই বিড়াল গুলো ষ্টোর করে রেখে ফিউচারে তার মার্কেট প্রাইসে সেল করতে পারেন। আর এর মূল্য মার্কেট বা সেই বিড়াল গুলোই নির্ধারন করতে পারে।

cryptokitties

যার ফলে একটি NFT থেকে অন্য NFT টোকেনর মূল্য সম্পূর্ণই ভিন্ন হতে পারে।

আবার আরেকটি উদাহরন দেয়। ধরুন আপনি পাবজি গেম খেলছেন যা NFT টোকেনাইজ করা। অর্থাৎ আপনার গেমটির সকল তথ্য ব্লকচেইনে রেকর্ড থেকে যায়। এখন এই গেমের সকল কিছুই টোকেনাইজ। আপনার ক্যরেক্টার, অস্ত্র ইত্যাদি সব কিছু। এখন আপনি আপনার একটি অস্ত্র আপগ্রেড করলেন। তাহলে সেই অস্ত্রটি অর্থাৎ NFT টোকেনটির আগে যে মূল্য ছিলো তার চেয়ে নিশ্চয় দাম বৃদ্ধি পাবে। এখন আপনি চাইলে এই অস্ত্রটি অন্য কারো কাছে বিক্রিও করতে পারবেন। কারণ আপনার কাছে সেই টোকেনের “প্রাইভেট কি” রয়েছে। এই ভাবে একটি NFT টোকেন অন্য NFT টোকেন থেকে আলাদা।

আপনি হয়তো Decentraland (MANA) টোকেনের কথা জেনে থাকবেন। তাদের কনসেপ্ট হচ্ছে একটি ডিসেন্ট্রালাইজ ওয়ার্ল্ড (ভার্চুয়্যাল পৃথিবী)। আপনি Decentraland থেকে যেকোন ল্যান্ড বা প্রোপার্টি ক্রয় করতে পারবেন। আর আপনি সেখানে যে ল্যান্ড বা জায়গা ক্রয় করবেন সেখানে আপনি বাড়ী, নিজের মতো করে বানাতে পারবেন। যেমনটা আমরা রিয়্যাল লাইফে করতে পারি, তবে এটি হচ্ছে সম্পূর্ণ ভাচুয়্যলি। আর চাইলে পরবর্তীতে আপনি সেই বাড়ী বিক্রিও করতে পারবেন। আপনি যখন একটি জায়গা ক্রয় করে সেখানে বাড়ী/ বিল্ডিং বানাবে তখন নিশ্চয় আপনি যেদামে তা ক্রয় করেছেন তা সেই দামেই সীমা বদ্ধ থাকবে না! জি হ্যাঁ এইটাই হচ্ছে NFT।

আরো পড়ুন: ক্রিপ্টোকারেন্সি এক্সচেন্জ বিষয়ক গুরুত্বপূর্ন বিষয়

NFT টোকেনের ভবিষৎ

NFT টোকেনর ভবিষৎ অনেক সুদূর প্রসারী হতে পারে। NFT টোকেনের আপডেট করে এটিকে আমাদের রিয়্যাল লাইফেও ব্যবহার করা যেতে পারে। যেমন কোন প্রোপার্টি, পুরানো কোন বস্তু যার চাহিদা রয়েছে, জন্ম সনদ, আইডি কার্ড ইত্যাদি সহকারে এই সব NFT টোকেনে টোকেনাইজ করা যায়। যার ফলে এগুলোর মাঝে সচ্ছতা আসতে পারে।

বিশেষ করে কোন জমি-জমা ক্রয় বিক্রয় এর জন্য তা NFT টোকেনাইজ করা যেতে পারে। কারন আমাদের দেশে জমি-জমা ক্রয় বিক্রয় বেশ ঝামেলা হয়ে থাকে। আমাদের দেশে দেখা যায়, একজনের জমি জালিয়াতি করি আরেকজন বিক্রি করে দিয়ে থাকে। কিন্তু যদি এই কাজটি ব্লকচেইনের দ্বারা করা যায় তবে বিষয়টিতে খুব সচ্ছ এসে যাবে। সকলেই যেকোন জমি-জমার ওনারশির খুব সহজেই চিহ্নিত করতে পারবে। তাই কোন ব্যক্তি জালিয়াতি করে অন্যের জমি বিক্রি করতে পারবে না।

হয়তো এমনটা হতে খুব একটা সময় দূরে নেই। কারন বাংলাদেশে ব্লকচেইন নিয়ে অলরেডি কথা বার্তা শুরু হয়েছে। আর সরকারি ভাবে ব্লকচেইনের উপর স্টাডি শুরু হয়েছে।

সর্বপ্রথম NFT ইথেরিয়াম নেটওয়ার্ক এর উপর লনচ করা হয়েছে। যাকে ERC-721 স্মার্টকন্ট্রাক্ট টোকেন বলা হয় (শুধু মাত্র নন-ফানজিবল টোকেন)। তবে খুব সাম্প্রতি ইথিরিয়াম নেটওয়ার্ক ডেভলপাররা এর উন্নতি করে নতুন স্মার্ট কন্ট্রাক্ট এর উদ্ভাবন করেছে, যা হচ্ছে ERC-1155। এই একটি মাত্র কন্ট্রাক্টে এক সাথে দুইটি টোকেন অর্থাৎ ফানজিবল এবং নন-ফানজিবল টোকেন ষ্টোর করা যাবে।

যদিও সর্বপ্রথম ইথেরিয়াম নেটওয়ার্কের উপন নন-ফানজিবল টোকেন ডেভলপ করা হয়েছে। তবে এখন ট্রোন, নিও ইত্যাদি নেটওয়ার্কের উপরও এর কাজ চলছে।

NFT টোকেন কি বিক্রি করতে পারবেন?

এখন আপনি যদি আপনার NFT এমন কোন কাজে না লাগিয়ে সরাসরি বিক্রি করতে চান তবে তাও পারবেন। NFT বিক্রি করার জন্য আপনি গুগোল করতে পারেন। এখন বেশ কিছু ওয়েবসাইট NFT টোকেন ক্রয়-বিক্রয়ের সুবিধা দিয়ে থাকে। এছাড়া আপনি চাইলে আপনার ট্রাস্টওয়ালেট থেকে NFT টোকেন বাই সেল করতে পারেন।

আপনি আপনার NFT টোকেন ট্রাস্টওয়ালেট থেকে বিক্রি করতে চাইলে নিচের ধাপ গুলো অনুসরন করতে পারেন।

NFT বা নন-ফানজিবল টোকেন কি?

ট্রাস্টওয়ালেট থেকে উপরের স্ক্রিনশটের নির্দিষ্ট জায়গায় ক্লিক করুন।

02 NFT বা নন-ফানজিবল টোকেন কি?

উপরের সার্চ বক্সে opensea.io লিখে সাইটটিতে প্রবেশ করুন।

03 NFT বা নন-ফানজিবল টোকেন কি?

এরপর প্রথমে উপরের এ্যরোতে ক্লিক করে Account >> My Items এ বাইন্যান্স থেকে পাওয়া আপনার NFT টোকেনে ক্লিক করুন।

04-trustwallet-nft

NFT টোকেনের এ্যভারেজ প্রাইস অটোমেটিক এখানে ‘সো’ করবে। আপনি চাইলে আপনার মতো করে দিতে পারেন।

05-trustwallet-nft

প্রাইস সেট করার পর নিচে একটু স্ক্রল করলে Post Your Listing দেখতে পাবেন। এখন এই বাটনে ক্লিক করুন।

06-trustwallet-nft

এখানে আপনার NFT বিক্রি করার জন্য নেটওয়ার্ক ফি দেখাবে। উপরের ছবিতে দেখা যাচ্ছে এখানে ফি অনেক ধরা হয়েছ। আপনি এই ফি কমাতে পারবেন নিজের মতো করে। ফি কমানোর জন্য হলুদ রং দ্বারা চিহ্নিত গিয়ার অপশনে ক্লিক করুন।

07-trustwallet-nft

এখন এইখানে Gas Price(Gwei) এর জায়াগয় 21 এবং Gas Limit এর জায়গায় 30000 বসিয়ে সেভ করুন।

08-trustwallet-nft

এখন এখানে দেখতে পাচ্ছেন এর ফি অনেক কমে গিয়েছে। এখন আপনি আপনার সেল ওর্ডারটি পাবলিশ করার জন্য Approve বাটনে ক্লিক করুন।

আশা করা যায় NFT টোকেন কি এবং এর কাজ কি আর সামনের দিকে আরো কি হতে পারে তার কিছুটা ধারনা পেয়েছেন।

আর বাইন্যান্স নিয়ে কোন জিজ্ঞাসা থাকলে বাইন্যান্সের অফিসিয়াল বাংলাদেশ বাইন্যান্স টেলিগ্রাম গ্রুপ তো আছেই। সেখানে আপনার সমস্যা বা জিজ্ঞাসা তুলে ধরুন। আর এখনো যারা বাংলাদেশ বাইন্যান্স টেলিগ্রাম গ্রুপে জয়েন করেন নি তারা আজই জয়েন করুন।

বাইন্যান্সের অফিসিয়াল বাংলাদেশ বাইন্যান্স টেলিগ্রাম গ্রুপ: https://t.me/BinanceBangladeshi

আর ক্রিপ্টোকারেন্সি নিয়ে অন্য যেকোন ধরনের আলোচনা করার জন্য বাংলাদেশ ক্রিপ্টো কমিউনিটিতে যোগ হয়ে থাকতে পারেন: https://t.me/Bangla_Cryptocurrency

এছাড়া ক্রিপ্টোকারেন্সির বিভিন্ন Airdrop, Bounty বা যেকোন ধরনের প্রমোশনাল অফার পেতে এই গ্রুপে জয়েন হয়ে থাকতে পারেন: https://t.me/Crypto_BountyAirdrop

সতর্কতাঃ- ফরেক্স ও ক্রিপ্টোকারেন্সি মার্কেট অধিক ভলটালিটির কারনে ট্রেডিং করা অনেক বেশি বিপদজনক। তাই এই পোষ্টে কাউকে এই মার্কেটে ট্রেড করার জন্য উৎসাহিত করা হচ্ছে না। যদি কেউ ট্রেড করতে চাই, তবে তা সে নিজের দায়িত্বে করবে, এর জন্য এই ব্লগের কর্তৃপক্ষ দায়বদ্ধ থাকবে না।

পূর্বপ্রকাশিত.

আরো বিভিন্ন বিষয়ে জানতে আমাদের ওয়েব সাইটে ভিজিট করেত পারেন। এছাড়া আমদেরকে সোয়াল মিডিয়াতে ফলো করতে পারেন। Medium, Facebookএবং LinkedIn এ।