বাংলাদেশে অনেক মেধাবী শিক্ষার্থী থাকার পরেও কেন আমরা প্রযুক্তি ও গবেষনায় পিছিয়ে আছি?

in #education2 years ago

অন্তত ৯৫% মানুষ এই মেধাবী কথাটির অর্থ বোঝে না। পরীক্ষায় বেশি নম্বর পেলে, তাকে আমরা মেধাবী বলি। এমন উচ্চ নম্বর পাওয়া ছাত্ররা আসলে পরিশ্রমী, মেধাবী নয়।
তাহলে, মেধাবী কারা?
কয়েক বছর আগে, বাংলাদেশে একটি লঞ্চ ডুবে কয়েক শত যাত্রী নিহত হয়েছিলো। ঘটনার দুই-একদিন পরে, একজন লোক একটা অচেনা নম্বর থেকে ফোন পেলো।
আপনি কি অমুক? আপনার ছেলে তমুক কি সেই লঞ্চ ছিলো? তাকে পাওয়া গেছে, অমুক হাসপাতালে আছে। আপনি দ্রুত সেই হাসপাতালে আসুন। চিকিৎসার জন্য বিকাশ এর মাধ্যমে আপাতত ১০ হাজার টাকা পাঠান।
পুত্র হারিয়ে এলোমেলো হয়ে গেছে লোকটা। কোন চিন্তা না করেই, দ্রুত টাকা পাঠিয়েছেন। পরে জানা গেলো ওটা ছিলো প্রতারণা। হয়তো ছেলেটি লঞ্চ ডুবে মারা গেছে।
লঞ্চ ডুবে কিছু লোক মারা গেছে, কিছু নিখোঁজ আছে। সেই সুযোগে শোকাহত কোন ব্যক্তি খুঁজে বের করে, তার কাছে টাকা চাইতে হবে। এটাকে মেধাবী বলে।
ভুল বুঝবেন না। আমি প্রতারণাকে উৎসাহ দিচ্ছি না। মেধাবী হলো সেই ব্যক্তি, যে এমন কিছু করে, যা অন্যরা চিন্তাও করতে পারে না। লঞ্চ ডুবে যাত্রী নিখোঁজ, এই সুযোগে টাকা চাওয়া, এমন অসাধারণ কৌশল, সাধারণ মানুষের মাথায় আসবে না।
ওই প্রতারক খুব মেধাবী। তার সমস্যা হলো, সে মেধাকে খারাপ কাজে লাগায়। মেধাকে ভালো কাজে লাগালে কি হয়, জানেন?
একজন মেধাবী মানুষ চিন্তা করলেন, তিনি একটি বিশেষ ধরণের ব্যাংক বানাবেন, যেখানে বেশিরভাগ গ্রাহক হবে নারী। সেই ব্যাংক ক্ষুদ্র ঋণ দিবে। খুব স্বল্প পরিসরে শুরু হলেও, ধীরে ধীরে সেই ব্যাংক বিশ্ব বিখ্যাত হয়ে গেলো। হ্যাঁ, বলছিলাম প্রফেসর ইউনূস ও গ্রামীণ ব্যাংক এর কথা। এই ব্যাংক এর সাফল্যর মূল কারণ হলো, এই ব্যাংক এমন কিছু কার্যক্রম চালু করেছিলো, যেটা আর কোন ব্যাংক করেনি। এটাকেই মেধাবী বলে। এমন কিছু করে, যেটা অন্যরা চিন্তাও করতে পারে না।
আমাদের দেশের প্রকৃত মেধাবী কারা, সেটা জানেন?
রাজনীতিবিদ
সারা দেশে মাত্র ৭০০-৮০০ রাজনীতিবিদ আছে, যারা সংসদ সদস্য হয়, বা হবার যোগ্যতা আছে। আরো কয়েক শত বড় রাজনীতিবিদ আছে, যারা নির্বাচনে অংশ নেয় না, কিন্তু দল পরিচালনায় কাজ করে। সব মিলিয়ে, প্রথম সারির রাজনীতিবিদ মাত্র এক হাজার জন।
এই এক হাজার মানুষ, পুরো দেশের ১৬ কোটি মানুষকে জিম্মি করে রেখেছে। সারা দেশের মানুষ শিক্ষা, অর্থ, ক্ষমতা, কোনকিছু দিয়েই ওই এক হাজার মানুষের সাথে পারে না। এটাকেই মেধাবী বলে। তারা এমন কিছু করে, সেটা অন্যরা চিন্তাও করতে পারে না।
বাংলাদেশের প্রথম সারির মেধাবী হলো রাজনৈতিক নেতারা।
দ্বিতীয় পর্যায়ের মেধাবী হলো শিল্পপতি, উদ্যোক্তা ইত্যাদি। ছোট থেকে শুরু করে, পরে অনেক বড় ব্যবসা করে।
তৃতীয় পর্যায়ের মেধাবী হলো দুর্নীতিবাজ ও প্রতারক।
লক্ষ্য করুন - এদের কেউই শিক্ষার্থী নয়। এদের বেশিরভাগই তাদের মেধাকে ভালো কাজে ব্যবহার করে না। আমাদের শিক্ষার্থীদের মধ্যে মেধাবী নেই।
তাছাড়া, প্রযুক্তি ও গবেষণার জন্য যথাযথ আয়োজন নেই। আমাদের সামর্থ্য আছে, কিন্তু ইচ্ছা নেই। কোটি টাকা খরচ করে অন্যে দেশের রোবট ভাড়া করে আনি। কিন্তু নিজের দেশে, রোবটিক্স পড়ার ব্যবস্থা করি না।
সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো শিক্ষা পদ্ধতি। এটা একটি সুপরিকল্পিত মেধা নষ্ট করার পদ্ধতি। মেধাবী কেউ এই পদ্ধতিতে থাকলে, মেধা নষ্ট হয়ে যায়। এজন্যই আমাদের শিক্ষার্থীদের মধ্যে মেধাবী নেই বললেই চলে। রাজনীতিবিদ, শিল্পপতি, দুর্নীতিবাজ ও প্রতারক, এরই আমাদের আসল মেধাবী।
292550457_541841854293819_8750571694734430902_n.jpg