না ঘুমালে কি স্বাস্থ্যের ক্ষতি হয়..............................নিজে জানুন অন্যকে জানান

in #health2 years ago

বন্ধুরা,

ঘুম প্রতিটি মানুষের জন্য অতন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই ঘুমের জন্য আমাদের অত্যন্ত সচেতন থাকতে।

একজন মানুষের সুস্থ থাকার অন্যতম নিয়ামক হলো ঘুম। স্বাভাবিক প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের প্রতিদিন কমপক্ষে ৭ থেকে ৮ ঘন্টা ঘুমানো প্রয়োজন। দিনে ৬ ঘণ্টার কম ঘুমালে তার স্বাস্থ্যহানির কারণ হতে পারে। তবে বয়স অনুযায়ী শরীরের ঘুমের চাহিদা ভিন্ন হয়। সাধারণত পূর্ণ বয়স্ক মানুষদের ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা, শিশুদের ৯ থেকে ১৩ ঘণ্টা, নবজাতক বাচ্চাদের ১২ থেকে ১৭ ঘণ্টা ঘুম প্রয়োজন। ঘুমানোর মাধ্যমে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।ঘকসি নামক পদার্থ শরীর থেকে বের করে দিয়ে কর্মক্ষমতা বাড়ে। সুতরাং পরবর্তী দিনের শক্তি ও দক্ষতার অনেকটাই নির্ভর করে ব্যক্তির পর্যাপ্ত ঘুমের উপর। রাতে ঘুম না আসা বা আসলেও বারবার ভেঙে যাওয়া কে বলা হয় ইনসমনিয়া বা অনিদ্রা রোগ। যার ফলে দিনের বেলা ঘুমাও, সারাদিন ঝিমুনি ভাব, কাজে মনোযোগ না দিতে পারা, সারাদিন মেজাজ খিটখিটে ও বিষন্ন হয়ে থাকার মতো ঘটনা ঘটতে পারে। শিশু থেকে বৃদ্ধ সবাই ইনসম্নিয়া হতে পারে।

তবে বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে ঘুমের হার কমে যাওয়া বা ঘুম পাতলা হয়ে যাওয়ার লক্ষণ দেখা দেয়। কিন্তু বর্তমান প্রজন্মের অনেকেই সোশ্যাল মিডিয়ার আসক্তির কারণে ইনসোমনিয়া ভুক্তভুগি। সমস্যা এখন এতটাই প্রকট আকার ধারণ করেছে যে অনিদ্রা কে দৈনন্দিন অভ্যাসে পরিণত করে ফেলেছে কেউ কেউ। অধ্যাপক ওয়াকার লিখেছেন, বিশ্বের একটা বিশাল অংশ অন্ধকারে জেগে থাকে যে ঘুমটাই নষ্ট হচ্ছে সেটা যে পূরণ করা দরকার সেটা তারা ভাবে না। তারা মনে করে যা গেছে তো গেছেই।

cure-insomnia-naturally.jpg

source

অনিদ্রা স্বাস্থ্যের ক্ষতি করে

ঘুম কম হওয়া বা ঘুম সমস্যার কারণে ব্যক্তি শারীরিকভাবে নানা সমস্যার মুখোমুখি হয়। এ পর্যন্ত ১৫৩ টি গবেষণা পর্যালোচনা করে দেখা গেছে পর্যাপ্ত ঘুমের সাথে ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ ও ওজন বৃদ্ধির সম্পর্ক রয়েছে। জার্নাল সায়েন্সের সম্প্রতি প্রকাশিত এক প্রতিবেদন বলছে, অনেকটা সঙ্গে দ্রুত মৃত্যুর কোন সম্পর্ক নেই। কিন্তু অন্যান্য ওষুধ ডিমেনশিয়া বা স্মৃতিভ্রংশ তা এবং ডিপ্রেশন বা বিষন্নতা সঙ্গে যোগসূত্র রয়েছে। এক গবেষণা বলছে কেউ টানা ১৭ থেকে ১৯ ঘন্টা জেগে থাকলে মস্তিষ্কে যে ধরনের প্রভাব পড়ে অতিরিক্ত মদ্যপানের ফলে একই ধরনের প্রভাব পড়ে এবং সময়ের সঙ্গে সঙ্গে গতি বৃদ্ধি পেতে থাকে। গবেষণায় পৌঁছে কোন ব্যক্তি যদি টানা ১১ দিন না ঘুমিয়ে থাকে এতে স্বাভাবিক আচরণ ও দৈনন্দিন কাজকর্মে মারাত্মক প্রভাব পড়ে্। যা তাকে শর্ট টাইম মেমোরি লস থেকে শুরু করে হেলুসিনেশন এমনকি মস্তিষ্ক বিকৃতির দিকে নিয়ে যেতে পারে।

চলুন দেখে নিই ঘুমের সমস্যা দূর করার কয়েকটি ঘরোয়া উপায়ে

sleep-inner20180821051210.jpg

source

রাত জেগে কাজ না করা - যারা রাত জেগে কাজ করেন তারা অনেক স্বাস্থ্য জনিত সমস্যায় পড়েন। রাতে কাজ করে তারা দিনে ঘুমায় রাতে ঘুমের অভাব পুষিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু তা যথেষ্ট নয় কারণ সাধারণত তারা দিনের বেলায় ঘুম কখনই এমন গভীর হয় না এবং তারা রাতের ঘুমের সুফল এনে দিতে পারেনা শরীরকে। খাবারের এক গবেষণা বলছে রাতে কাজ করা লোকজনের অনেকেই নিশাচর হয়ে যান। তারা কিছুতেই দিনের আলোয় বের হতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন না।

প্রতিদিন একই সময়ে ঘুমোতে যাওয়া - প্রতিদিন রাতে নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমাতে যেতে হবে এবং সকালে একটি নির্দিষ্ট সময়ে বিছানা থেকে উঠতে হবে। প্রতিদিন একই সময়ে ঘুম থেকে উঠা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কারণ এটা ঘুমানোর সময় কালকে নিয়মিত রাখে এবং শরীরের সঙ্গে সঙ্গে অভ্যস্ত হতে পারে।

কফি থেকে দূরে থাকা - চা কফি খেলে অনেকেরই ঘুমের সমস্যা হয়। শুধু চা-কফি নয় যেকোন কোমলপানীয় ঘুমের সমস্যার কারণ হতে পারে। প্রফেসর ওয়াকার বলেছেন ঘুমানোর সময় থেকে ১২ ঘণ্টা আগে এসব খাওয়া বন্ধ করা উচিত। কেননা এর প্রভাব শরীরের থেকে যায় দীর্ঘ সময়ে।

দূরে রাখ ফোন ল্যাপটপ - আমরা অনেকে বিশ্রাম নিতে কিংবা ঘুমের আগে ফেসবুক থেকে ঘুরে আসি। কিন্তু এতে ঘুম আসার পরিবর্তে মস্তিষ্ককে উত্তেজিত করে চোখ থেকে ঘুম পাড়িয়ে দেয়। তাই ঘুমের সমস্যা দূর করতে চাইলে দীর্ঘ সময় ধরে মোবাইল, কম্পিউটার, ল্যাপটপ ইত্যাদি ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন।

খাদ্যাভাস - আমরা অনেকেই জানি না ঘুমের সমস্যার পেছনে খাদ্যাভাসের ভূমিকা অনেক। যারা ইনসমনিয়া ভুগছেন তাদের জন্য খাদ্যাভাসের পরিবর্তন আনা ঘুমে জন্য সহায়ক হতে পারে।

ম্যাগনেসিয়ামযুক্ত খাবার - ম্যাগনেসিয়াম হলো এমন একটি খনিজ পদার্থ যা পেশীকে শিথিল করতে এবং ট্রেস করতে সাহায্য করে। চকলেট, বাদাম, এভোক্যাডো এগুলোতে ম্যাগনেসিয়াম রয়েছে।রাতে এগুলো খেলে ভালো উপকার পাবেন।

মেলাটোনিন যুক্ত খাবার - মেলাটোনিন শুধু ঘুম আসছে না ঘুম দীর্ঘস্থায়ী করতে সাহায্য করে। আমরা সালাত হিসেবে যা খায় যেমন টমেটো, শশা, ব্রকলি, সরিষা, আখরোট ইত্যাদিতে মেলাটোনিন থাকে। প্রতিদিনের খাবারের সবজিগুলো যোগ করলে ঘুমের সমস্যা কেটে যাবে।

কলা - অনিদ্রা কমাতে কলা খুবই কার্যকর। কলাতে আছে ম্যাগনেসিয়াম ও পটাশিয়াম যা মাংসপেশি শিথিল করে দ্রুত ঘুম আনতে সাহায্য করে।

গরম দুধ - অনিদ্রা দূর করতে গরম দুধের কোন বিকল্প নেই। গরম দুধে থাকে ট্রিপটোফ্যান নামে এক ধরনের অ্যামাইনো এসিড যা সেরাটনিক হিসেবে কাজ করে। আর এই সেরাটনিক ঘুমাতে খুবই সহায়ক।

মধু - মধু কে বলা হয় সর্ব রোগের মহৌষধ । এক চামচ মধু ভালো ঘুমের জন্য খুবই সহায়ক। কেননা এটি শরীরে ইনসুলিনের মাত্রা বাড়াতে সাহায্য করে। তাছাড়া মানসিক চাপ সৃষ্টিকারী হরমোন কমাতেও মধুর জুড়ি নেই।

আমাদের সাথে থাকুন

নতুন সব তথ্য জানুন

ধন্যবাদ