পরিবর্তন যুগের নিয়ম

in Incredible India18 hours ago (edited)

নমস্কার বন্ধুরা । আশা করছি সকলে সুস্থ আছেন। আজকে আমি একটি অন্যরকম বিষয় নিয়ে আপনাদের সকলের সামনে আলোচনা করছি।

আমাদের প্রত্যেক দিনের জীবনে আমরা অনেক কিছুর শিক্ষা পাই। প্রমাণ পাই। কিন্তু হয়তো আমরা সেই শিক্ষাটাকে কাজে লাগাই না অথবা সেই বিষয়গুলোকে নজরান্দাজ করে দিই। আজকের বিষয়টি ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ কিন্তু খুব ঠুনকো একটা ব্যাপার নিয়েই আমি বিষয়টিকে খুব সুন্দর করে আপনাদের সামনে তুলে ধরতে চাইছি।

1000166319.jpg

1000166315.jpg

আমার মায়ের বিয়ে হয়েছে ১৯৯৫ সালে। আজ থেকে কত বছর আগে! মায়ের বিয়ের সময় আমাদেরই এক পরিচিত দাদু আমার মাকে শখ করে কাঁসার একটা সাজি উপহার হিসেবে দিয়েছিল। ওই সময় অর্থাৎ তখনকার দিনগুলোতে বিয়েতে অন্নপ্রাশনে কাঁসার জিনিস দেওয়ার একটা চল ছিল খুবই। যেটা আধুনিক যুগে একেবারে নেই বললেই চলে। আজকালকার বিয়ের বাড়িতে অথবা অন্নপ্রাশনে কেউ যদি পিতলের বালতি নিয়ে হাজির হয় মানুষজন হয়তো অবাক হয়ে তাকাবে। অথবা নানারকম হাস্যকর কথা বলবে। কিন্তু তখনকার দিনে পিতলের অথবা কাঁসার জিনিসের মূল্যই আলাদা ছিল।

1000166316.jpg

1000166314.jpg

আমাদের বাড়িতে এখনো কাসার থালায় ভাত খাওয়া হয়। আধুনিক যুগের মেলামাইন অথবা চিনামাটির থালাতে প্রত্যেক দিন খাওয়া দাওয়া আমাদের অভ্যাস নেই। আর সত্যি বলতে আগেকার কাসার মর্যাদাই আলাদা ছিল। এই যে আমি পিতলের সাজির কথা বলছি। এই সাজিটা কিন্তু ভীষণ ভারী। আমি ছোট থেকে দেখে এসেছি আমার বাড়িতে কাঁসার কিছু জিনিস প্রতিনিয়ত ব্যবহার করা হয়। বাবার বিয়ের সময় কার কাঁসার গ্লাস, কাঁসার থালা, কাঁসার বাটি, সাজি আরও কত কিছু। আমাদের বাড়িতে সবারই আলাদা আলাদা করে কাঁসার থালা রয়েছে ভাত খাওয়ার জন্য।

1000166317.jpg

1000166318.jpg

যেহেতু এগুলো একেবারেই পুরনো দিনের স্মৃতি। অথবা যারা দিয়েছেন তারা আর বেঁচে নেই, তাই মায়ের কাছে এ প্রত্যেকটি জিনিস খুবই মূল্যবান। এমন কি আমার নিজের কাছেও। আমি নিজে অবাক হই যে আজকালকার দিনের কাঁসাগুলো এত হালকা হয় কেন। আগেকার দিনে কাঁসার বাসন এত ভারী আর মজবুত ছিল। যাইহোক বেশ অনেকদিন হয়ে যাচ্ছে মায়ের বিয়েতে পাওয়া সেই কাঁসার সাজি টা হঠাৎ করেই ভাঙতে শুরু করে। প্রথমে সাজির তলার বেসটা ভেঙে যায়। তারপরে আবার সাজির হ্যান্ডেলটা ভেঙে যায়। গত পরশু দিন সাজির একটা দিক পুরো চির ধরে যায়।

মা রীতিমতো এই ব্যাপারটা নিয়ে হতাশ। গত পরশুদিন থেকেই মা বারবার বাসনের দোকানে যেতে চাইছে। এই সাজিটাকে যদি ঝাল দিয়ে ঠিক করে নেয়া যায়। বাবা সেদিন থেকেই বলছে যেটা সম্ভব নয় কারণ যখন সাজিটার বেস ভেঙ্গে গিয়েছিল, তখন ঝাল দিয়ে একবার সারাই করে নিয়ে আসা হয়েছে। কিন্তু তারপরেও খুলে গেছে। আমি অনেকবার বারণ করলাম যে যেন ছেড়ে দেয়। ওটা দিয়ে আর কিছু করা যাবে না। কিন্তু আমার মা কিছুতেই এই সাজীর মায়া ছাড়তে পারছে না। অনেক কষ্টে মাকে রাজি করিয়ে বাবা আজকে মার্কেটে নিয়ে গিয়েছিল নতুন সাজি কিনতে।

বাড়িতে নতুন সাজি এলো। সাথে আরো দুটো কাসার জিনিস এলো। একটা কর্পূর দানি, আরো একটি বাসন। কিন্তু আমি নিজেও হাত দিয়ে নেড়েচেড়ে দেখলাম আমাদের পুরনো সাজিটার মত এক ফোটাও নয়। এক পারসেন্টও সেরকম নয়। সাজিটা যতটা মজবুত এবং সুন্দর দেখতে ছিল, এই সাজিটা কিন্তু সেরকম নয়। কিন্তু নতুন কিনতে হল। কিছু করারও নেই।

আমাদের যেহেতু ব্রোঞ্জের মূর্তি তৈরি হয়। তাই অনেক পিতল কাঁসা লাগে। তাই বাবা বলেছে ওই সাজিটা কোন মূর্তিতেই ব্যবহার করবে।

1000166320.jpg

1000166321.jpg

পুরো পোস্ট জুড়ে এত আলোচনা করলাম একটা কারণেই। এই সমস্তটা ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করার পর মনে একটা কথা বারবার ঘোরাফেরা করছে। কোন কিছুর স্থায়িত্ব নেই। একটা সময় পর সেটাকে বাতিল করতে হয়। পুরনো জিনিস সরিয়ে আবার নতুন জিনিস আমাদের ঘরে জায়গা করে বসে। সেটা আমাদের মনের ঘর হোক অথবা এই সংসারের। এই প্রকৃতির কোলেও প্রত্যেকটা জিনিস নির্দিষ্ট সময়ের জন্য থাকে। তারপর আবার নতুন কিছু আসে। নতুনটাও কোন এক সময় পুরাতন হয়। আবারো নতুনের আগমন হয়। পুরনো না হলে হয়তো নতুন আসতো না। আর নতুন আসে বলেই পুরনো আসে।

পৃথিবীর কি অবাক লীলা। আমি একবার আমার একটি কবিতা একটা লাইন ব্যবহার করেছিলাম। সে কবিতায় লিখেছিলাম - মানুষের প্রয়োজন ফুরায় না, তাইতো পৃথিবীতে সব কিছু সীমিত।

এই সীমিত বলেই হয়তো প্রত্যেকটা জিনিসের কদর রয়েছে। যদিও আজকালকার যুগের মানুষ কোন কিছুরই কদর দিতে জানে না। হারিয়ে যাওয়ার ভয় নেই মনে। ভয় নেই কোন জিনিস হারিয়ে ফেলার। পরিবর্তন যুগের নিয়ম। এই ছোট্ট সাজির মতন সবকিছুই পরিবর্তন হয়। কোন কিছুই থেমে থাকে না। যে যার সময় মতো চলে যায়। আর যে যার সময় মতো এসে হাজির হয়।

Sort:  
Loading...
Loading...