ষষ্ঠীর জন্য বাজার
নমস্কার বন্ধুরা। আশা করছি সকলে সুস্থ আছেন। আজ ভাবলাম শেয়ার করি কিছুদিন আগে অর্থাৎ বুধবার জামাই ষষ্ঠী হলো,তার আগের দিন বাজার করতে গিয়েছিলাম, সেই মুহূর্তগুলো।
আমার মামার বাড়ি আমার বাড়ি থেকে অনেক দূরে। কৃষ্ণনগর থেকে রায়গঞ্জের দূরত্ব অনেকটা। এখন না হয় রাস্তা ভালো হয়েছে, কিন্তু যখন রাস্তা খারাপ ছিল । প্রাণ বেরিয়ে যেত কৃষ্ণনগর থেকে রায়গঞ্জ যেতে। মোটামুটি ২৯৩ কিলোমিটার লাগে কৃষ্ণনগর থেকে রায়গঞ্জ। ছোটবেলায় যখন আমাদের গাড়ি কেনা হয়নি। আমি বাসে যেতাম বাবা মার সাথে। প্রায় ১০ ঘন্টা লেগে যেত।তারপর আমি যখন একটু বড় হয়েছি, বাবা গাড়ি নিল ।তারপর থেকেই গাড়িতে যাতায়াত করা হয়।
নিজস্ব গাড়ি থাকলে বেশিক্ষণ সময় লাগে না। বাসগুলো মাঝেমধ্যে দাঁড়ায়। তাই জন্য সময় বেশি লাগে। লাস্ট আমি কবে বাসে করে মামার বাড়ি গিয়েছি আমার নিজের খেয়াল নেই। তবে গাড়ি কেনার পর থেকে গাড়িতেই যাওয়া হয়। গাড়িতে যেতে আমাদের সাত ঘন্টা সময় লেগে যায়। কিন্তু এখন রাস্তা অনেক ভালো হয়েছে। সব থেকে বড় কথা মালদা বাইপাস হওয়াতে যেতে খুব কম সময় লাগে। মাত্র চার পাঁচ ঘন্টার মধ্যেই মামার বাড়ি পৌঁছে যাওয়া যায়।
বাবা মার বিয়ে হয়েছে অনেক বছর হল। মোটামুটি ২৯ বছর তো হবেই। এই এতগুলো বছরে এত দূরত্ব থাকার জন্যই বাবা জামাইষষ্ঠী করতে গিয়েছে মাত্র পাঁচ বার। এত দূরে গরমের মধ্যে বাবা যেতেও চায় না। তাছাড়া কাজের প্রেসার তো থাকেই। ব্যবসার বাড়িতে কখন কি প্রেসার আসবে ঠিক বলে বোঝাবার নয় ।তাই কখনো কখনো জামাইষষ্ঠীর জন্য প্ল্যান করলেও যাওয়া হয়ে ওঠেনি। বাবার এই নিয়ে খুবই দুঃখ।
সবাই যখন শ্বশুর বাড়ি জামাইষষ্ঠী খেতে যায়। বাবাকে তখন কৃষ্ণনগরেই থাকতে হয়। তাও গতবার জামাইষষ্ঠীতে যাওয়া হয়েছিল। কিন্তু এবারে সেটা সম্ভব হয়নি। যেবার যেবার বাবা যেতে পারে না ,মা বাড়িতেই বাবার জন্য ভালো ভালো রান্নার ব্যবস্থা করে এবং ষষ্ঠীর দিনে খাওয়া-দাওয়া একটু অন্যরকম ভাবেই হয়।
যেহেতু ষষ্ঠীর দিন অনেকের বাড়িতেই মায়েরা ষষ্ঠীর উপোস করে থাকে ,তাই সেদিন নিরামিষ হয়। আমার মাও ষষ্ঠীর দিন উপোস করে। তাই ষষ্ঠীর দিন নিরামিষ খেয়ে তার পরের দিন আমরা আমিষ রান্না করে খাই। অথবা কোথাও খেতে যাই। কিন্তু সকালবেলায় বাবাকে সাজিয়ে গুছিয়ে মা চিরে ,খই এবং ফল ,মিষ্টি খেতে দেয়। যেভাবে জামাইকে দেওয়া হয় ।
এই সমস্ত টুকিটাকি জিনিসপত্রের বাজার করতেই সেদিন চলে গিয়েছিলাম মায়ের সাথে সন্ধ্যেবেলায় গোয়ারি বাজারে। আমার পোষ্টের মাধ্যমে অনেকেই গোয়ারী বাজারের নাম শুনেছেন ।আমাদের এখানকার অনেক পুরনো বাজার ।সেটাও হয়তো আপনারা জানেন। বাজারে ঢুকে দেখি প্রচণ্ড ভিড়। সাথে দোকানে দোকানে নতুন নতুন জিনিসপত্র। ফলের দাম তো আকাশছোঁয়া।
১৩০ টাকা করে কেজি আম, ৪০ টাকা শ জাম। ১০০ গ্রাম লিচুর দাম কুড়ি টাকা। এরকম ফল গুলোর দাম খুবই বেশি। আসলে অনুষ্ঠানের আগে বাজারের দর খুবই বেশি হয়। প্রথমে কিছু ফল কেনার পরে আমরা চলে গেলাম মিষ্টির দোকানে। তারপর মিষ্টি কিনে বাড়ি ফিরেছি। সেদিন মায়ের সাথে গিয়েছিলাম কেনাকাটা করতে।
মায়ের কোনরকম প্ল্যান ছিল না সন্ধ্যেবেলায় ওরকম হুট করে বাজার যাওয়ার ।কিন্তু মায়ের মনটা খারাপ লাগছিল কারণ এ বছর মামার বাড়ি যাওয়া হলো না জামাইষষ্ঠীতে। তাই আমি বললাম চলো তোমাকে ঘুরিয়ে নিয়ে আসি ।আর সাথে বাজারগুলো করে নিয়ে আসি। মা-মেয়েতে বাজার করে খুব তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরেছিলাম সেদিনকে।
বাজারের পাশেই থাকে রাধামাধবের একটি মন্দির। গৌড়ীয় মঠ ।ভেবেছিলাম একটু মন্দিরে ঢুকে ঠাকুরের দর্শন করব ।কিন্তু মন্দিরের দরজা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল রাত হওয়াতে। তাই দর্শন হয়নি।এই মন্দিরটিও অনেকটাই পুরোনো ।হয়তো মন্দিরের আদল দেখলেই আপনারা বুঝতে পারবেন।
আমার মা বেশি বাড়ি থেকে বের হয় না ।কিন্তু সেদিনকে মাকে বার করতে পেরে আমার নিজেরও খুব ভালো লেগেছে।আজ এখানেই শেষ করছি। সকলে ভালো থাকুন।
হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের একটি বড় অনুষ্ঠান জামাই ষষ্ঠী। মেয়ের জামাইদের শ্বশুড় বাড়ি থেকে জামাই আদর লরে খাওয়ানো হয়। আপনার মামা বাড়ি অনেক দূরে হওয়ায় আপনার বাবা প্রায় জামাই ষষ্ঠীতে যেতে পারেন না। তাই আপনার মা ই বাসায় রান্না করে খাওয়ান। বিষয়টা খুবই ভালো লাগলো। মায়ের মন খারাপ দেখে মা কে নিয়ে বাজার করতে চলে গিয়েছেন। খুব ভালো কাজ করেছেন। কোন কারণে যদি মায়ের মন খারাপ হয় তখন আমিও এমন কিছু করার চেষ্টা করি। বাইরে গেলে মন ভালো হয়ে যায়। ধন্যবাদ আপনাকে সুন্দর একটি পোস্ট শেয়ার করার জন্য।