গুড়ের নাড়ু তৈরির রেসিপি
নমস্কার বন্ধুরা। আশা করছি আপনারা সকলে সুস্থ আছেন। বেশ অনেকদিন পরে আজকে আমি আপনাদের সাথে শেয়ার করতে চলেছি একটি রেসিপি। আজকে আমি আপনাদের সাথে শেয়ার করতে চলেছি কিভাবে নারকেলের নাড়ু তৈরি করতে হয়। নারকেলের নাড়ু বাঙালির অত্যন্ত বিখ্যাত একটি মিষ্টি জাতীয় খাবার।
বিশেষ করে দুর্গা পুজোর পর বিজয়ার সময় থেকে বাঙালির ঘরে ঘরে নাড়ু তৈরি করা শুরু হয়ে যায়। কারণ বিজয়া দশমীতে সকলে ই সকলের বাড়িতে বিজয়ার শুভেচ্ছা জানাতে উপস্থিত হয়। এ কারণে সকলের মধ্যে মিষ্টিমুখ করার রীতি রয়েছে। বড়দের সকলকে প্রণাম জানিয়ে এবং ছোটদের ভালোবাসা জানিয়ে বিজয়া দশমীর শুভেচ্ছা বার্তা দেওয়া হয়। ঘরে ঘরে সকলে এই সময় নারকেলের দুই রকম নাড়ু, সাথে মুড়ির মোয়া, চিরের মোয়া, খইয়ের মোয়া, তীলের নাড়ু আরো কত কিছু আগত অতিথিদের খাওয়ায়।
এর সাথেই কোজাগরী লক্ষ্মী পূর্ণিমা অর্থাৎ লক্ষ্মীপুজোর দিন সকলে ঠাকুরের উদ্দেশ্যে এই নাড়ু এবং মোয়া ভোগ দিয়ে থাকেন। তাই বাঙালির ঘরে ঘরে নারু তৈরির ধুম পুজোর সময় আসতে না আসতেই লেগে যায়। আমি ছোট থেকেই দেখে এসেছি আমার দিদা নাড়ু তৈরি করত। তারপরে আমার নিজের ঠাকুমাকে এবং মাকেও দেখে এসেছি নাড়ু তৈরি করতে। যখন ছোট ছিলাম নাড়ু হয়ে যাওয়ার পরে মা যখন নারুর মিশ্রণটি একটি থালার ওপর ঢেলে রাখত, আকৃতি দেওয়ার জন্য। আমি তখন আকৃতি দেওয়ার নাম করে মাঝেমধ্যে দুই একটা নাড়ু খেয়ে নিতাম।
দিদার বাড়িতে কে কে নাড়ু তৈরি করতে বসবে, তাই নিয়ে ঝগড়া লাগতো আমাদের বোনদের মধ্যে। আর আমরা যারা যারা নাড়ু তৈরি করার সুযোগ পেতাম, তাদের তো সোনায় সোহাগা। নাড়ু তৈরি করতে করতে টপাটপ মুখে ভরতে থাকতাম। ছোট থেকেই তাই আমার নাড়ু তৈরি করতে খুব ভালো লাগে। সব থেকে বেশি আমি গুড়ের নাড়ু খেতে পছন্দ করি। তবে চিনির নারু আমার ঠাকুমার হাতে ছাড়া আমার আর কারোর হাতে পছন্দ হয়নি। কিন্তু এই লক্ষ্মীপুজোতে আমার এক মিষ্টি কাকিমা আমার জন্য নাড়ু পাঠিয়েছিল। অনেকদিন পর মনে হলো একদম ঠাকুমার মতো তৈরি নাড়ু খাচ্ছি।
লিংক
যাইহোক, এবার আমার পছন্দের নাড়ু আমি নিজেই বানিয়েছি।চলুন আপনাদের সাথে এবার ধাপে ধাপে সমস্তকিছু শেয়ার করি।এর সাথেই আমি প্রত্যেক রেসিপি পোষ্টের মতো আজকেও ভিডিও লিংক দিয়ে দিচ্ছি। আপনাদের সুবিধার্থে এই রেসিপির আমি ভিডিও করেছি।
এবার উপকরণগুলো প্রথমে দেখিয়ে দিই।
নং | সামগ্রী | পরিমাণ |
---|---|---|
১ | নারকেল | তিনটে |
২ | আখের গুর | ৩০০ গ্রাম |
৩ | নারকেল জল | এক গ্লাস |
৪ | এলাচ | তিনটে |
প্রথমেই আমি এখানে তিনটে নারকেল নিয়েছি। নারকেল গুলোকে কুড়িয়ে নিয়েছি। কত সুন্দর ঝুড়ো নারকেলের কুচি।
এবার একটি কড়াইয়ে এই নারকেল কোরা নিয়ে নিলাম। তাতে দিয়ে দেব গুর। অবশ্যই আখের গুর। এবার ভালোভাবে হাত দিয়ে মেখে নেব।
নারকেল ভাঙ্গার পরে এক গ্লাস জল বার হয়েছিল। সেটাও কড়াই এ দিয়ে দিলাম।তারপর গ্যাস অন করে আমি কড়াই বসিয়ে দিলাম। মিডিয়াম আঁচে গরম হতে দেব।
কিছুক্ষণ পর জল শুকিয়ে আসবে, আর খুন্তির সাহায্যে এই সময় নাড়াচাড়া করা শুরু করতে হবে। ক্রমাগত খুন্তি চালিয়ে যেতে হবে।যাতে নারকেল কড়াইয়ে না লেগে যায়।
যখন পুরো মিশ্রণটাতে একটা পাক ধরবে। ওই সময় তিনটে এলাচ গুড়ো করে ওর মধ্যে দিয়ে দিতে হবে। আপনারা হাত দিয়ে দেখে নেবেন অল্প করে মিশ্রণটা তুলে যে হাতের তালুতে গোল পাকছে কিনা। গ্যাসের ফ্লেম হাই করে রেখে ক্রমাগত খুন্তি দিয়ে নাড়াচাড়া করলেই এরকম একটা পাক তৈরি হবে।
এবার ওভেন বন্ধ করে একটা থালার মধ্যে মিশ্রণটা ঢেলে নিলাম। হাতের তালুতে সরষের তেল মাখিয়ে নিয়ে অল্প অল্প করে নাড়ু পাকাতে লাগলাম। নারুর সাইজ কতটা ছোট বড় করবেন তা একেবারেই আপনার ইচ্ছার ওপর।
এভাবেই খুব সহজে খুবই অল্প উপকরণ তৈরি হয়ে যাবে, এত সুন্দর একটা খাবার। নাড়ু তৈরি করার পর আপনারা একটি এয়ার টাইট কন্টেনারে অনেক দিনের জন্য রাখতে পারেন। অথবা চাইলে ফ্রিজেও রাখতে পারেন। যেহেতু শীতের দিকে বেশির ভাগ সময় তৈরি করা হয়। তাই নাড়ু ঠিকঠাকই থাকে।
এই প্রসেসে নাড়ু তৈরি করলে অবশ্যই অনেক সুন্দর নাড়ু তৈরি হবে। পরবর্তীকালে ইচ্ছা আছে চিনির নাড়ু আপনাদের সাথে শেয়ার করার।আজকে এখানেই শেষ করছি। সকলে ভালো থাকবেন।
বাঃ! দারুন বানিয়েছিস। টেস্ট করতে যাবো নাকি?🤤