টমেটোর চাটনির রেসিপি

in Incredible India2 months ago

নমস্কার সকলকে। সকলে কেমন আছেন ।আশা করছি সকলে সুস্থ আছেন ।আমি বেশ কিছুদিন হল ব্যস্ত রয়েছি ভীষণ পরিমাণে কারণ আমার পরীক্ষা রয়েছে সামনের মঙ্গলবার। এ কারণে আমি ঠিকভাবে কোন কাজই করতে পারছি না ।সারাক্ষণ পড়াশোনা নিয়ে ব্যস্ত থাকতে হচ্ছে। আপনাদের কাছে পোস্ট শেয়ার করতে কত দেরি হয়ে গেল। গতকাল ভেবেছিলাম পোস্ট করব ,কিন্তু পড়াশোনার প্রেসারে আর করে উঠতে পারিনি। তাই তাড়াতাড়ি আজকে লিখতে চলে আসলাম।পোস্ট লেখা সত্যিই একটি অভ্যাসে দাঁড়িয়ে গেছে।

আজকে ভাবলাম আপনাদের সাথে শেয়ার করি আমার পছন্দের একটি রেসিপি ।আমি চাটনি খেতে ভীষণ পরিমাণে ভালোবাসি ।আমার বাড়িতে আমার জন্য অন্তত প্রত্যেকদিন ফ্রিজে চাটনি থাকে ।মা বেশি করে চাটনি করে এবং এক সপ্তাহের জন্য ফ্রিজে স্টোর করে রেখে দেয়।

চাটনি তো অনেক কিছুরই হয়। আমার মা অনেক ধরনের চাটনি বানাতে পারে। আর তাই দেখে দেখে আমিও শিখিয়ে গিয়েছি। তার মধ্যে তিলের টক ,টক পালং এর চাটনি ,আমের চাটনি, টমেটোর চাটনি ,আমড়ার চাটনি , পেঁপের চাটনি , ফ্রুট চাটনি আমার খুব পছন্দ।

খাবার শেষে চাটনি না হলে আমার চলেই না। যদিও সেটা শুধুমাত্র দুপুর বেলার ক্ষেত্রেই ।রাতের বেলা মা আমাকে চাটনি খেতে দেয় না। রাতের বেলা চাটনি খেলে কি হয় কে জানে। মা বলে রাতের বেলায় চাটনি খেতে নেই। কিন্তু বিয়ে বাড়ির যখন নিমন্ত্রণ থাকে ,তখন তো রাতের বেলায়ও চাটনি খাই। যাইহোক এই নিয়ে বেশি তর্কাতর্কি করতেও যাই না, কারন আমার মা এমনিতেও খুব রাগী। তাই মা যা বলে চুপচাপ শুনে নিই।

তাই বলে আমি বেশি পরিমাণে চাটনি খাই না ।খাবার শেষে হয়তো দু তিন চামচ ।মা যখন চাটনি করতে ভুলে যায়, আমি নিজেই বাড়িতে যা থাকে সেগুলো দিয়ে বানিয়ে ফেলি। আমার সবথেকে বেশি ভালো লাগে টমেটোর চাটনি। আর আজকে আমি সেই চাটনির রেসিপি আপনাদের সকলের সাথে শেয়ার করবো।

20240325_131323.jpg

তাহলে চলুন আমার পছন্দের টমেটোর চাটনি রেসিপিটা আপনাদের শেয়ার করি। সেদিন মা বাড়িতে ছিল না। তাই আমি নিজের হাতে চাটনি বানিয়েছিলাম নিজের জন্য। বেশ অনেকটাই বানিয়েছিলাম যাতে ৪-৫ দিন মতো খেতে পারি। প্রথমে উপকরণগুলো দেখে নেওয়া যাক।

উপকরণ
নংসামগ্রীপরিমাণ
টমেটো৫০০
চিনিহাফ কাপ
হলুদ গুড়োহাফ চামচ
লবণএক চামচ
পাঁচফোড়ন১ চামচ
শুকনো লঙ্কাতিনটে
কাজু কিসমিসপরিমাণ মতো
ভাজা ধনে ও জিরের গুড়োহাফ চামচ
ভাজা পাঁচ ফোড়ন গুড়োহাফ চামচ
১০সরষের তেল৫ চামচ
প্রথম ধাপ

1000083353.jpg

প্রথমে টমেটোগুলো আমি ভালোভাবে কেটে নিয়েছি।

দ্বিতীয় ধাপ

1000083354.jpg

ওভেনে বসিয়ে দিয়েছি একটি কড়াই। কড়াই গরম হয়ে গেলে তাতে দিয়ে দিয়েছি তেল। তেলটাও গরম করে নেব। দিয়ে দেবো তাতে শুকনো লঙ্কা।

তৃতীয় ধাপ

1000083355.jpg

শুকনো লঙ্কা কয়েক সেকেন্ড ভেজে নিয়ে, দিয়ে দেবো তাতে পাঁচফোড়ন। পাঁচফোড়নটাও হালকা ভেজে নেব।

চতুর্থ ধাপ

1000083356.jpg

কেটে রাখা টমেটোগুলো দিয়ে দিচ্ছি। টমেটোগুলো দেয়ার সাথে সাথে লবণ আর হলুদ দিয়ে নেব। সবকিছু ভালোভাবে মিশিয়ে নেব।

পঞ্চম ধাপ

20240325_125045.jpg

এবার কয়েকবার নাড়াচাড়া করে মিডিয়াম আঁচ রেখে কড়াই ঢাকা দিয়ে রেখে দেবো এবং ভেতরে টমেটো গুলো সিদ্ধ হতে থাকবে।

ষষ্ঠ ধাপ

20240325_130321.jpg

প্রায় ১৫ মিনিটের মধ্যে সিদ্ধ হয়ে গিয়ে টমেটোগুলো থেকে যখন জলটা ছেড়ে দেবে, আপনারা নিজেরাই বুঝতে পারবেন। এই ১৫ মিনিটের মধ্যে দু-তিনবার ঢাকনা খুলে খুলে আপনারা একটু নাড়াচাড়া করে নেবেন। টমেটোগুলো যখন সিদ্ধ হওয়ার জন্য ঢাকনা দিয়ে রেখেছিলেন ,ওই সময় এক কাপ জল দিয়েও আপনারা করতে পারেন ।কিন্তু আমার মতে বলে ওই সময় জল দেবেন না। দরকার পড়লে ঢাকনা খুলে তারপর অল্প জল ব্যবহার করতে পারেন। কিন্তু আমি এক্ষেত্রে জল ব্যবহার করিনি ।

সপ্তম ধাপ

1000083357.jpg

প্রথমেই দিয়ে দেবো এবার চিনি। আমি এখানে হাফ কাপের একটু বেশি চিনি ব্যবহার করেছি ।আপনারা আপনাদের পছন্দমত চিনি দিতে পারেন।

অষ্টম ধাপ

1000083358.jpg

চিনির পর , দিয়ে দেবো কাজু কিসমিস ।আপনারা এই সময় খেজুরও ব্যবহার করতে পারেন অথবা আমসত্ত্ব ।আমার বাড়িতে সেদিনকে শুধু কাজু কিসমিস থাকায়, আমি সেটাই ব্যবহার করেছি।

নবম ধাপ

1000083359.jpg

চি নি যখন একেবারে গলে যাবে, চাটনিটা বেশ ঘন হয়ে যাবে ,তখনই এর মধ্যে দিয়ে দেবো ভেজে রাখা ধনে এবং জিরের গুঁড়ো এবং ভালোভাবে মিশিয়ে নেব। এই মশলাগুলো দেওয়ার সময় গ্যাসের ফ্লেম একেবারে লো-তে দিয়ে রাখবো।

দশম ধাপ

1000083360.jpg

এবার দিয়ে দেব ভেজে রাখা পাঁচফোড়ন গুড়ো। এই মশলাটা হল চাটনির মেন জিনিস। পাঁচফোড়নের গুড়ো ছাড়া চাটনি করে দেখবেন এবং পাঁচফোড়ন গুড়ো দিয়ে করে দেখবেন। আকাশ পাতাল তফাৎ হবে। এই কারণেই আমার মায়ের হাতের চাটনি এত সুন্দর হয়। মা চাটনির শেষে অল্প করে পাঁচফোড়নের গুঁড়ো দেয়। সমস্ত ভালোভাবে মিশিয়ে নেব এবং তৈরি হয়ে যাবে টমেটোর চাটনি।

শেষ ধাপ

20240325_131326.jpg

এবার আপনারা গরম গরম সার্ভ করতে পারেন অথবা ঠান্ডা করে নিয়ে ।ফ্রিজে রেখেও ঠান্ডা করে নিতে পারেন। তারপরে সার্ভ করতে পারেন। ফ্রিজে রেখে ঠান্ডা করে নিলে চাটনির টেস্ট আরো খেতে ভালো লাগে। আমার কাছে তাই মনে হয়।


চাটনি করা খুবই সহজ ।আমার ইচ্ছা আছে বাকি জিনিসগুলোর চাটনিও আমি আপনাদের সাথে শেয়ার করব অন্য কোনদিন। টমেটো চাটনি দেখতে যেমন হয় ,খেতেও সেরকমই হয়, একেক জন একেক রকম ভাবে করে থাকে। কিন্তু আমার নিজের মায়ের হাতের চাটনি সবথেকে বেশি ভালো লাগে। আর মা যবে থেকে আমাকে শিখিয়ে দিয়েছে ,আমার নিজের হাতের তৈরি চাটনিও খুব সুন্দর হয়। যাই হোক আজকে এখানেই শেষ করছি। নতুন কোন পোস্ট নিয়ে পরের দিন হাজির হব।

Sort:  
Loading...

Copy_of_Curation_Guidelines_20240529_204831_0000.png

We invite you to continue publishing quality content. In this way you could have the option of being selected in the weekly Top of our curation team.

 2 months ago 

আসলে রাতের বেলা চাটনি খাওয়া যাবে না,এটা একটা কুসংস্কার। এরকম অনেক কুসংস্কার আমাদের সমাজে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে।যাই হোক আপনার টমেটো চাটনি রেসিপিটি দেখে আমার জিভে জল এসে গেলো।প্রতিটি দ্রব্যের পরিমান সুন্দরভাবে উল্লেখ করেছেন আর প্রতিটি ধাপ খুব ভালোভাবে ব্যাখ্যা করেছেন।আপনার মূল্যবান রেসিপিটি আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ জানাই।

 2 months ago 

টমেটোর চাটনি আমার খুবই পছন্দের। আম্মু প্রায়ই এটি করে এবং বানিয়ে ফ্রিজে রেখে দেয় কয়েকদিন ধরে খাওয়ার জন্য। আমি যদিও কখনো এর রেসিপি সম্পর্কে জানতে চাইনি। তবে আজ আপনার পোস্ট পড়ে সুন্দরভাবে বিষয়গুলো বুঝতে পারলাম। একদম ১১ টি ধাপে খুবই ভালো করে বুঝিয়েছেন। আশা করি যে কেউ এই পোস্ট দেখে চাটনি বানাতে পারবে। দেখেই বোঝা যাচ্ছে অনেক সুস্বাদু হয়েছে। ধন্যবাদ আপনাকে টমেটো তৈরীর রেসিপি আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য।

 2 months ago 

বিভিন্ন রকমের চাটনি খেতে আপনি অনেক বেশি পছন্দ করেন। তবে আজকে আপনি আমাদের সাথে টমেটো দিয়ে কিভাবে চাটনি তৈরি করা হয়। সেই বিষয়টা আলোচনা করেছেন। আসলে আমাদের মা সবসময় চায় আমরা ভালো থাকি। তাই হয়তো বা রাত্রি বেলা আপনাকে চাটনি খেতে দেয় না। বিয়ের সময় খেয়ে থাকেন সেটা হচ্ছে আলাদা বিষয়, শুধুমাত্র একটা দিনের জন্য তাতে হয়তোবা তেমন একটা ক্ষতি হতো না।

আপনার তৈরি করার পদ্ধতি এবং আপনার টমেটোর চাটনি দেখে বেশ লোভনীয় দেখাচ্ছে। ইনশাল্লাহ অবশ্যই আপনার পদ্ধতি অবলম্বন করে একদিন তৈরি করার চেষ্টা করব। ধন্যবাদ চমৎকার চাটনি তৈরি করার পদ্ধতি আমাদের সাথে উপস্থাপন করার জন্য। ভালো থাকবেন।

 2 months ago 

চাটনি আমিও আপনার মায়ের মতোই বানিয়ে ফ্রিজে রেখে দেই।রাতে চাটনি খাওয়া যাবো না, এমন অনেক কিছুই আমাদের সমাজে প্রচলিত আছে।যেমন,রাতে শাক খাওয়া যাবে না এটা ছোট থেকেই দেখে এসেছি।আমি রাতে অনেকবারই খেয়েছি কিন্তু কিছুই হয় নাই।
আপনি ধাপে ধাপে খুব সহজ ভাবে টমাটোর চাটনি তৈরির পদ্ধতি আমাদের সাথে শেয়ার করেছেন। এর ফলে খুব সহজেই সবাই এই চাটনি বানাতে সক্ষম হবে।
চমৎকার এই রেসেপিটা আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। ভালো থাকবেন।

 2 months ago 

তোমার চাটনি বানানোর রেসিপি টা দেখে জিভে জল চলে আসছে।কখন ঘরের মধ্যে একা একা বানালে একা একাই খেলে। বৌদিকে একটু দিলেও না। তোমার রেসিপি টা দেখেই আমি বাড়িতে একদিন বানিয়ে তোমাকে খাওয়াবো।

 2 months ago 

এটা তো হোলির দিন বানিয়ে ছিলাম । কেউ ছিল না সেদিন। আচ্ছা খাইও।

 2 months ago 

বাহ খুব সুন্দর ভাবে উপস্থাপনা করছেন কিভাবে টমেটোর চাটনি বানানো যায় দেখেই তো জিভে জল চলে আসছে।

আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ খুব সুন্দর একটি রেসিপি আমাদের মাঝে উপস্থাপনা করার জন্য আপনারা যদি এভাবেই নিত্য নতুন রেসিপি আমাদের কাছে শেয়ার করেন তাহলে তা থেকে আমরা অনেক উপকৃত হতে পারব।