আজ ভাবি নি দিনটি, এভাবে শেষ করব ।
প্রিয় বন্ধুরা আশা করছি সবাই ভালো আছেন। আমিও আলহামদুলিল্লাহ, বেশ ভালো আছি। আজ আমি আপনাদের সাথে আমার আজকের কিছু মুহূর্ত শেয়ার করবো,,,।
প্রত্যেক টা মায়ের কাছে তার সন্তান অনেক বেশি ভালোবাসার, আমি যেমন আমার মায়ের কাছে ঠিক তেমনি আমার সন্তানও আমার কাছে,যদিও ছোটবেলা থাকতে এই ভালোবাসা বোঝার ক্ষমতা থাকে না কিন্তুু বড় হওয়ার সাথে সাথে আমরা সবাই বুঝতে পারি।আর যখন মাকে ছেড়ে দূরে থাকি তখন তো আরো বেশি অনুভব করা যায়।
আজ সকাল বেলা থেকেই মনটা যেন কেমন অস্থির অস্থির লাগছিলো,মানে ভালো কথা ও জেনো ভালো লাগছিল না,আর সকাল থেকেই কেন যেন আম্মু কথা একটু বেশি মনে পড়ছিলো। মা কে নিয়ে তো সব সময় ভাবতে থাকি তবে আজ কেন যেন একটু বেশি এই চিন্তা করছিলাম। সকাল থেকে উঠে রান্না না করে বসে ছিলাম কারন,ভালো লাগছিলো না,তবে মন ভালো নেই বলে তো আর খাবার খাওয়া বন্ধ হবে না। খাবার তো খেতেই হবে সবার। গত কালকের ভাত ছিল হাজবেন্ড নিজেই গরম করে খেয়ে গিয়েছে অফিসে, আর আমি রুটি ও ডিম সিদ্ধ খেয়ে নিয়েছিলাম।
ভাবছি দুপুরে রান্না টা একটু তাড়াতাড়ি করে নিবো।তাই বারান্দায় গিয়ে মেয়েকে নিয়ে আমি একটু সবজি কাটছিলাম এবং আমার মেয়ে দোলনায় দুলছিলো,বেশ ভালো কথা কিন্তুু একটা সময় খেয়াল করলাম বারান্দার গিরিল ধরে ধরে উপরে উঠছে, এত দুষ্টামি করে একটুও ভয় নাই । আমি নিষেধ করাতে প্রথমে নেমে গেলেও পরবর্তীতে আবার উঠতে ছিলো।
এমনিতে এই ভালো লাগছিল না, তার উপরে আবারও সবজি কাটতেছি এর পাশ দিয়ে লাফালাফি শুরু করছে। তাই আমি একটু রাগান্বিত চোখে রাগ করলাম,,আর তো সেই কান্না কে দেখে ,,, এত যে বলি এখন থামো,কিন্তুু এ কথা বলতে আরও বেশি চিৎকার করে কাঁদতে ছিলো।
এরপরে ওকে নিয়ে অনেক টা সময় কেটে যায় থামানোর জন্য, এবং ওর কিছু কথা শুনে আমি হাঁসতে ছিলাম, আমার মেয়ে বলতে ছিলো আমি নাকি তাকে অনেক বেশি অপমান করেছি। এবং তিনি মাইন্ড করেছেন, এ কথা শুনে তো আমি রীতিমতো হাঁসতে ছিলাম। যাইহোক এভাবে ওর সাথে আমার সময় কেটে গিয়েছিলো।
কিন্তুু মনের ভিতর কেমন যেন একটা অস্থির বোধ কাজ করছিল আমার।তাই আম্মুকে কল করছিলাম কিন্তু কিছুতেই কলটা ধরছিল না। এরপরে আমি দুপুরে রান্নাটা শেষ করি আজ খুব একটা বেশি কিছু রান্না করিনি। পোলাও এবং রোস্ট রান্না করেছি সাথে সবজি ছিলো,,,, রান্না শেষে মেয়েকে খাবার দিয়ে গোসল করতে গেলাম।
এবং গোসল শেষে করে এসে দেখলাম আমার হাজব্যান্ড চলে এসেছে, এবং এসে আমাকে দেখে বললো আমি আম্মুর সাথে কথা বলেছি কি না, কথাটা শুনে আমি একটু অবাক হলাম জিজ্ঞেস করলাম কেন? সে বলল আম্মুর নাকি আজ পা ভেঙ্গে গিয়েছে তাই হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
মুখে আমি এমন কথা আশাই করিনি,, আমার মাথায় যেন একটা আকাশ ভেঙ্গে পড়লো আমি সাথে আর কোন কথা না বলে, আমি সাথে সাথে আম্মু কে ফোন দিলাম। এবং জানতে পারলাম রান্নাঘর থেকে লাকড়ি সরাতে গিয়ে পায়ের ওপরে এসে পড়েছে, এবং পায়ের আঙুল একটা ভেঙ্গে গিয়েছে।
আমরা এক ভাই এক বোন ভাই পড়ার জন্য বাড়ির বাহিরে থাকে, আর আমি তো এই মহা সংসারের নিয়োজিত গৃহিণী হয়ে গিয়েছে, আর আমার আব্বু ব্যবসার জন্য সে ও বাড়ির বাহিরে থাকে, সপ্তাহে এক বার আসে বাসায়,আম্মুর কাছে এখন আমার কাকিরা ছাড়া আর কেউ নেই ,, তখন আম্মুর সাথে কথা বলে আমার মনে হয়ে ছিলো পাখির মতো যদি উড়ে যেতে পারতাম। তাহলে মনে হয় মনের শান্তি মিলতো।
আমার দাদী একটা কথা বলতো সন্তানের যদি কিছু হয় সবচেয়ে আগে ছুয়ে যায়, এবং মা বাবার যদি কিছু হয় সন্তানের মন আগে হতে পারে, আজ সকাল থেকে আমার কেন জানি খুব খারাপ লাগছিলো যে টা প্রথমেই বলছি।
কিন্তুু দুর্ভাগা আমি যে, আমার আম্মুর এই অবস্থা শুনেও আমি তার কাছে যেতে পারলাম না, খুবই খারাপ লাগছে, যে খারাপ লাগাটা হয়তো লিখে ভাষা দিয়ে বোঝানো সম্ভব নয়। এরপর আম্মুর সাথে অনেক টা সময় কথা বললাম, আর তার সাথে কথা বলার সময়টা তে আমার আরো বেশি কষ্ট হয়ে ছিলো,,যখন শ্বশুর বাড়িতে ছিলাম আমার আম্মুর কথা মনে পড়লেই হুটহাট বাবার বাড়ি চলে আসতাম।
শুধু একবার শাশুড়ি আমার কাছে বলতে পারলেই হতো,, তার অনুমতি দেওয়ার আগেই,আমি রেডি হয়েই চলে আসতাম। মায়ের কাছে একটা রাত ঘুমাতে পারলে কি যে শান্তি লাগতো তখন। সেটা আর কি ভাবে বুঝাই। আর এখন এতই দূরে আছি যে বিপদের কথা শুনেও সাথে সাথে কাছে যেতে পারি না।
নিজেকে আর না বোঝাতে পেরে আম্মুকে বললাম। কোন ভাবে একটা গাড়ি ঠিক করে আমার বাসায় চলে আসার জন্য। কিন্তুু ঐ যে মায়ের মন নিজে যতই অসুস্থ হোক না কেন, সংসারের প্রতি তার টান থেকেই যাবে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত। সে তার সংসার ছেড়ে আসতে রাজি নয়।
মায়ের এই খবর নিতে নিতে কথা বলতে বলতে দুপুর যেন শেষ হয়ে গেলো,হাসবেন্ড বারবার বলছিলো দুপুরে খাবারের জন্য কিন্তুু খাওয়ার ইচ্ছা বা আগ্রহ কোনটাই ছিল না। তাই দুপুরে খাওয়াও হলো না আমার। আমার আবার একটা অভ্যাস আছে, আমি একদমই কোন বিষয় নিয়ে টেনশন করতে পারি না ।
তাহলেই আমার প্রচন্ড ভাবে মাথা যন্ত্রণা শুরু করে আর যেমনটা আজ হয়েছিলো,সারাদিন শেষে এত বেশি মাথা ব্যথা করছিলো,ঠিকঠাক ভাবে চোখ দুটো বন্ধ করেও থাকতে পারছিলাম না । খুবই বাজে একটা দিন কেটেছে আজ আমার। আমি ভাবিনি আমার আজকের দিনটা এভাবে কাটবে। তবে, দিন শেষে আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করি তিনি যা করেছেন হয়তো আমাদের ভালোর জন্যই করেছেন।
বিপদ বলে আসে না হয় তো এর থেকে বড় বিপদ ও আসতে পারতো, সবাই দোয়া করবেন আমার আম্মুর জন্য তিনি যেন খুব দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠেন আবার আগের মতোন, আজ আর লিখব না এখানেই শেষ করলাম, সবাই ভালো থাকবেন আল্লাহ হাফেজ।
বাচ্চাদের মুখে এমন কথা শুনলে আসলে হাসি লাগে শাসন করাতেই মনে করছে যে তাকে অপমান করে কথা বলা হচ্ছে। আপনার লেখা পড়েছিলাম আর আমিও তো হাসছিলাম।
শরীর অসুস্থ থাকলে আসলে কোন কিছু ভাল লাগেনা বিশেষ করে মাথা যন্ত্রণা করলে মনে হয় দুনিয়া উল্টে যাচ্ছে ঘুমিয়েও শান্তি হয় না। যাইহোক আপনার জন্য দোয়া রইল ভালো থাকবেন।
বাবা-মা এমন একটি জিনিস কাছে থাকতে হয়তো বা আমরা মূল্যায়ন করতে পারি না। কিন্তু তাদের কাছ থেকে দূরে গেলে তাদের সবচেয়ে বেশি মনে পড়ে আমাদের। এবং আমরা যতই বড় হয়ে না কেন বাবা মায়ের কথা আমাদের মনে পড়বে। তাদের কথা কখনো আমরা ভুলতে পারবো না ।এবং বিশেষ করে মা হারানোর পরে আমি আমার মাকে অনেক বেশি মিস করি। এবং তার কথা ভাবি এবং কান্না পাই আপনি মাকে ছাড়া কিছু দুরে আছেন বলে আপনার মায়ের কথা অনেক মনে পড়ে। আমার মা আমাকে ছেড়ে কোথায় চলে গিয়েছে জানা নেই। তবে মা কখনো আর ফিরে আসবেনা তার কথা যখন মনে পড়ে তখন সবচেয়ে বেশি বুকটা ফেটে যায় আমার।