সত্যিকারের ভালোবাসা কখনো ছেড়ে যায় না

in Incredible India4 days ago (edited)
pexels-asadphoto-1024960.jpg
Source

Hello,

Everyone,

আশা করি সৃষ্টিকর্তার অশেষ কৃপায় সকলেই ভালো আছেন এবং সুস্থ আছেন ।আমিও সকলের আশীর্বাদ নিয়ে ভালো আছি। এই আধুনিক বিশ্বে যেখানে প্রতিদিন পোশাক পরিবর্তন করার সাথে সাথে মানুষের ভালবাসাগুলো পরিবর্তন হয়ে যায় সেখানে আমার দেখা ওদের এই ভালোবাসাটা সত্যি অবাক করেছে । আমি আজ আপনাদের সাথে ওদের ভালোবাসার সুখের গল্পো শেয়ার করছি ।

আমরা দেখি যেখানে কথায় কথায় ভালোবাসা ব্রেকআপ হয়ে যায় ।এমনকি ভালোবাসা বিয়েতে পরিণত হলেও কিছু বছর পরে তা আর টিকে থাকে না। কিছু ভালোবাসা হয়তো টিকে থাকে কিন্তু তাদের সেই সম্পর্কটাকে টিকিয়ে রাখতে হলে তোদের অনেক বাধা-বিপত্তি অতিক্রম করতে হয়।

সেখানে লিপির ভালোবাসা সত্যি প্রশংসনীয় ।লিপির সাথে আমার পরিচয় হয় খাগড়াছড়ি ক্যান্টনমেন্ট থাকাকালীন ।লিপি হলো ভাবির প্রথম সন্তান । আমার ও লিপির বয়স প্রায় কাছাকাছি। আমরা জন্ম একই সালে । ওর থেকে আমি শুধু তিন মাসের বড়। সে জন্য ভাবি আমাকে মেয়ের মত ভালবাসতেন আর লিপিও আমাকে তার আন্টি থেকে আপু হিসেবে মনে করতেন ।

ভাবি আমাকে অনেক কাজ শিখিয়েছেন, বাজার করা, রান্নাবান্না অনেক তার কাছ থেকে শিখেছি আমি। তিনি অনেক ভালো মনের একজন মানুষ। খাগড়াছড়ি থাকাকালীন লিপির বিয়ে হয় ওর খালাতো ভাইয়ের সাথে । খালাতো ভাই বিধায় লিপি প্রথমে রাজি ছিল না ।এমনকি ভাবিও প্রথমে রাজি ছিলেন না । দুই বোন আবার দুই বেয়াইন হবে তাই ভাবি চাচ্ছিলেন না। প্রথম সন্তানকে তার আত্মীয়ের ভিতরে না রেখে নতুন কোন পরিবারের সাথে বিয়ে দিতে চেয়েছিলেন।

pexels-pixabay-301977.jpg
Source

খালার দুটি মেয়ে সন্তান ও একটি পুত্র সন্তান ছিল আর যেহেতু একমাত্র পুত্র সন্তান তাই তার ইচ্ছের কাছে বাবা মা হার মেনে যায় ।লিপির আম্মুকে অনেক অনুরোধ করার পরে তিনি ওদের বিয়ের জন্য রাজি হন। লিপি কখনো কল্পনা করেনি যে, খালাতো ভাই তার জীবনসঙ্গী হবে।

দুই পরিবার থেকে বিয়ে দেয়া হয়েছিল। সেদিন লিপির বর লিপিকে কথা দিয়েছিলেন, সারা জীবন সঙ্গী হয়ে থাকবেন এবং সকল বিপদে তার পাশে থাকবেন। ওদের সংসার জীবন ভালই ছিল ।ভাবী পড়াশোনার জন্য মেয়েকে কিছুদিন তার নিজের কাছে রেখেছিলেন।

pexels-trungnguyenphotog-1751681.jpg
Source

লিপির বর বিমানবন্দরে চাকরি করেন ।কিছুদিন পরে লিপি বরের সাথে কোয়ার্টারে চলে আসে ।তাদের ছোট্ট সংসার শুরু হয়। কোয়ার্টারে আসার ছয় মাস পরে তাদের পরিবারে নতুন সুখের সংবাদ আসে। লিপি মা হতে চলেছে কিন্তু তাদের এই সুখের সংসারে হয়তো কারো নজর লেগেছিল, কোন কালো ছায়া পরেছে ।

প্রথম আল্ট্রাসনোগ্রাফি করার পরে রিপোর্ট দেখে ডাক্তার বললেন , তিন মাসের সন্তানের পাশাপাশি তার পেটে টিউমার ধরা পরেছে । যা এমন পরিস্থিতি ছিল যে দ্রুত অপারেশন করতে হবে। যার জন্য তাদের সন্তানকে টিকিয়ে রাখা একদমই সম্ভব হয়নি। লিপি টিউমার থেকে মুক্তি পেলেও তার সন্তানটিকে হারিয়ে ফেলে। এভাবে চলতে লাগলো তাদের অনেকটা বছর।

আমাদের পোস্টিং হয়েছে ঢাকাতে আসি এবং লিপির বাবার পোস্টিং হয় কুমিল্লাতে চলে যায় তাই অনেকটা বছর ওদের সাথে আমার যোগাযোগ ছিল না ।হঠাৎ ২০১৬ সালে ভাইয়ের পোস্টিং আবার ঢাকাতে হয় । তখন আবার ভাবির সাথে দেখা হয়। লিপির সাথে দেখা হয় আবার ।আমরা দুই বান্ধবীর মতই ছিলাম। বিকেলে হাটতে বের হওয়া, মার্কেটে যাওয়া।

আমার এই ফ্ল্যাট করা সম্ভব হয়েছিল আমাদের দুজনের চেষ্টায় ।লিপি বলতো ,যেহেতু আমাদের বারবার দেখা হচ্ছে চলোনা আমরা একত্রে কিছু করি যেন আমরা কাছাকাছি থাকতে পারি। সেই থেকে আমাদের একত্রে বাড়ি করার চেষ্টা। কিছু আর্মি পারসন ভাইদের সাথে আমাদের এই বাড়িটি করা।

কাল লিপি আমার বাসায় এসেছিল। আমরা অনেকক্ষণ গল্প করেছিলাম । ও কেন মা হতে পারেনি এবং ওর প্রতি ওর স্বামীর এতটা ভালোবাসা । লিপির কথাগুলো শুনে আমি স্তব্ধ হয়ে যাই। এইটুকু বয়সে ওর পাঁচটি অপারেশন হল । সৃষ্টিকর্তা বোধহয় ওকে দয়া করে বাঁচিয়ে রেখেছে এতদিন ।তার সাথে ওর স্বামীর ভালোবাসা ওকে বেঁচে থাকার সাহস জোগাচ্ছে।

যেখানে এমন কিছু পুরুষ আছে যারা সুন্দরী স্ত্রী, সন্তান রেখেও পরক্রিয়া করে সেখানে লিপি অসুস্থ এবং এত সমস্যা থাকার সত্বেও সে আজও লিপির হাত ধরে আছে ।অবশ্য তার বোনেরা তাকে অনেক বার বলেছিল, ভাই এবার একটা বিয়ে কর। আমাদের বংশ তো রক্ষা করতে হবে ।কিন্তু লিপির স্বামী সব সময় লিপিকে সাহস দিয়ে এসেছে এবং তার বোন ,মা-বাবাকে বুঝিয়েছেন তিনি আর বিয়ে করবেনা । বংশ রক্ষা করার জন্য আমার সন্তান না থাক তোদের সন্তান তো আছে, ওরাই আমার সন্তানের মতন। সত্যি তার এই কথাগুলো খুব কম স্বামীদের মুখ থেকে শোনা যায় ।

যে তার বাবা-মাকে ভালো রাখতে চেষ্টা করে এবং তার প্রিয়তমা স্ত্রীকে ভালোবেসে তার সাথে সারাজীবন থাকতে চায়। কিছু দিন আগে লিপির ৫ নম্বর অপারেশন হলো তখন লিপির স্বামী পাশে ছিল। অপারেশন যেন সফল হয় এবং ও যেন সুস্থ থাকে তার জন্য সে পাঁচটি রোজা রেখেছিল। সন্তানের জন্য মা-বাবা রোজা রাখে সেটা বিশ্বাস করি কিন্তু স্ত্রীর মঙ্গল কামনায় যে স্বামীরা রোজা রাখে আমি এই প্রথম শুনলাম। সত্যি যতই লিপির স্বামীর কথা শুনি ততই তার প্রতি আমার শ্রদ্ধা বেড়ে যায়।

আমরা জানি ভালো-মন্দ মিলিয়ে মানুষ হয় । তিনি ভাবীর বড় জামাই থেকে বড় ছেলে হয়ে উঠেছে বেশি তেমনি তার বাবা-মাকেও সে সমান ভাবে ভালোবাসছেন। যেখানে বর্তমান সময় ঘর বাধার থেকে ঘর ভাঙ্গে বেশি সেখানে এমন মিষ্টি দাম্পত্য জীবন সত্যি ভাবা যায় না ।লিপি এখনো তার স্বামীকে একটি বিয়ে করার জন্য বললেও তার স্বামী এই প্রসঙ্গ একদমই পছন্দ করেন না ।তাইতো লিপির ননদের ছেলে-মেয়ে নিয়ে এসেছে ।তারা ওদেরকে বাবা-মা ডাকে এবং ওদের ভালবাসা নিয়ে বাকিটা জীবন পার করতে চায় ।

সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করি ওদের বাকিটা জীবন এভাবে সুখে কাটুক ।ভালো থাকুক এবং সুস্থ থাকুক সকল পরিবার ।প্রতিটা পরিবারে স্বামী-স্ত্রীর ভালোবাসা অটুট থাকুক । অনেকাঙ্খিত দ্বিতীয় কোন ব্যক্তি না আসুক। আজ এখানেই বিদায় নিচ্ছি । ভালো থাকবেন এবং সুস্থ থাকবেন ।

Sort:  
Loading...
 4 days ago 

আসলে এখন ভালোবাসা বলে কিছুই নাই, আপনি যাকে মন দিয়ে ভালোবাসবেন কিংবা যে যাকে মন দিয়ে ভালবাসবে, ভালোবেসে হয়তো বিয়েও করবে কিন্তু এই বিয়ে বেশিদিন যায় না দেখবেন তাদের ভিতরে টুকটাক কিছু গন্ডগোলের কারণে কিছুদিন যাওয়ার পরেই সেই বিয়ে ভেঙে যায়।

অর্থাৎ একজন আরেকজনের সাথে ডিভোর্স হয়ে যায় এর কারণ শুধুমাত্র হলো অতিরিক্ত ভালোবাসা এবং তাদের মনের ভিতর সান্ধ্য থাকার কারণ সত্যিকারের ভালবাসলে মনের ভিতরে কোন সন্দেহ থাকলে চলবে না আর যদি সন্দেহ থাকে সেই ভালোবাসার কোন দাম নাই।

যাইহোক আজকে আপনার পোস্টটি অনেক সুন্দর ছিল যেটা আপনি আমাদের মাঝে শেয়ার করেছেন।

 4 days ago 

খুবই খুবই ভালো লেগেছে আপনার আজকের পোস্টটি।। লিপি আপু সত্যি ভাগ্যবান একটি মেয়ে তা না হয় এত ভালো মনের মানুষ কখনোই পেত না।। তো অপারেশন করার পরও সৃষ্টিকর্তা আপুকে বেঁচে রেখেছে সেই জন্য শুকরিয়া।। আর আজ পর্যন্ত আমিও কখনো শুনিনি স্ত্রীর জন্য স্বামী রোজা রাখে।।

আজকাল সমাজে দেখা যায় স্ত্রীর সন্তান না হলে স্বামী আর একটা বিয়ে করার জন্য পাগল হয়ে যায়।। আর যেখানে স্ত্রীর এত অসুস্থতার পরও তার পাশে রয়েছে এটা সত্যিই প্রশংসনীয়।।

 4 days ago 

আপনি ঠিকই বলেছেন সত্যি কারের ভালোবাসা কখনোই ছেড়ে যায়না। লিপির গল্পটা পড়ে সত্যিই খুব ভালো লাগলো। এখনকার যুগে এই রকম স্বামী পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার। প্রত্যেকটা প্রত্যেকটা মেয়েরাই চায় তার স্বামী এই ভাবেই তাদের পাশে থাকুক। কিন্তু এখনকার যুগে বেশিরভাগ মেয়েরা স্বামীর অবহেলা ছাড়া আর কিছুই পায় না। ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করি লিপি সুস্থ থাকুক।ভালো থাকুক।

 4 days ago 

আমরা দেখি যেখানে কথায় কথায় ভালোবাসা ব্রেকআপ হয়ে যায়

আপনার এই শব্দটা খুবই বাস্তব সম্মত কারন এখন এমন চিত্র আমাদের সামনে সব সময় পড়ে। আপনি ঠিকই বলেছেন, সত্যিকারের ভালবাসা কাখনও ছেড়ে যাই না। শত বাঁধা সামনে আসলে দুজন মিলে সেটা দূর করার চেষ্টা করে তবে ছেড়ে যাওয়ার কথা বলে না।

কথা দেওয়ার সময় সবাই দিতে পারে তবে রাখতে পারে কয়জন। মানুষের যে কার কি সমস্যা হয় সেটা বলা মুশকিল । আপনি যে গল্পটা শেয়ার করলেন ভালোও লাগলো আবার খারাপ লাগলো। স্ত্রীর প্রতি এমনই ভালোবাসা থেকে প্রয়োজন। ভালো থাকবেন।

 4 days ago 

স্বামী স্ত্রীর মধ্যে যদি সত্যি ভালোবাসা থেকে থাকে তাহলে তাদের মধ্য হাজারো সমস্যা সমাধান করে নেয়ার চেষ্টা করেন। এবং আমি মনে করি লিপি অনেক ভাগ্যবান একটি মানুষ তিনি এমন একটি স্বামী পেয়েছেন যে তাকে অনেক ভালোবাসে। লিপি অনেকদিন যাবত অসুস্থ আছে এবং লিপির ননদে তাকে আরো একটি বিয়ে করার কথা বললেও তিনি বিয়ে না করে আছেন এবং লিপির হাত ধরে আছেন এটা আসলেই লিপির জন্য অনেক বড় একটা চাওয়া পাওয়া বলে আমার মনে হয়।