দানাশস্য (চাল, ডাল, ধান) সাবু দানা, বীজ, গোটা মশলা দিয়ে তৈরি স্কুলের বাচ্চাদের হাতের কাজ
নমস্কার বন্ধুরা। নতুন বছরের এই দুই দিন আপনাদের কেমন কাটলো? আশা করছি নতুন বছর আপনাদের সকলের খুব ভালো কেটেছে। ভগবানের কাছে প্রার্থনা করব ২০২৫ সালটা যেন আপনার জীবনের সবচেয়ে স্মরণীয় বছর হয়ে থাকে এবং খুব শান্তিপূর্ণ হয়। এই শুভকামনা নিয়ে আমি আমার আজকের লেখাটি শুরু করছি।
২০২৪ এর নভেম্বর মাসের ১৬ তারিখ থেকেই আমাদের ডি.এল.এড এর দ্বিতীয় বর্ষের ইন্টার্নশীপ শুরু হয়ে গেছে। এই বিষয় নিয়ে আপনাদের সঙ্গে কোন পোস্ট লেখা হয়নি। ইন্টার্নশিপের একটি পোস্ট অবশ্য আমি করেছিলাম তবে সেটি ডি .এল. এড এর প্রথম বর্ষের প্রথম দিনের অভিজ্ঞতা ছিল। দ্বিতীয় বর্ষের ইন্টার্নশীপের ব্যাপারে আজ প্রথমবার লিখছি। প্রথম বর্ষের ইন্টার্নশীপ একটু ভিন্ন রকম ছিল। কারণ সেই সময় আমরা সকলেই গিয়েছিলাম নতুন কিছু শিখতে। বাচ্চাদের কিভাবে ক্লাস নিতে হয়, তাদের সাইকোলজি কিছুটা বোঝা, ক্লাস অ্যারেঞ্জমেন্ট, অ্যাটেনডেন্স খাতা মেইন্টেন করা, মিড ডে মিলের ব্যাপারে খোঁজখবর নেওয়া ইত্যাদি বিষয়গুলো বুঝতে আমরা প্রথম বছরের ইন্টার্নশীপে গিয়েছিলাম। তাই সেই সময় আমাদের বিশেষ চাপ নিতে হয়নি। এই হাসি মজা করে বাচ্চাদের সাথে পড়াশোনা এবং খেলাধুলা করে আমাদের ইন্টার্নশীপের পর্বটা বেশ ভালোভাবেই সম্পন্ন হয়েছিল।
তবে দ্বিতীয় বর্ষে আমাদের ক্লাসে বাচ্চাদের রিয়েল টিচিং দিতে হয়। আমাদের কলেজের স্যার ম্যামেরাও মাঝে মাঝে এসে দেখে যাই আমরা ঠিকঠাকভাবে সমস্ত দায়িত্ব পালন করছে কিনা। শুধু তো ক্লাস নেওয়া নয়, তার আগেও আমাদের বিভিন্ন বোর্ড ওয়ার্ক করতে হয়। বোর্ডে তারিখ, বিষয়, একক, উপ একক, আজকের পাঠ----ইত্যাদি বিষয়গুলো পরিষ্কারভাবে উল্লেখ করতে হয়। পরিদর্শকরা সেগুলোও খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখেন। কি সমস্ত কিছুর উপরেই আমাদের কিছু নম্বর ধার্য্য থাকে। ১৬ই নভেম্বর থেকে আমাদের এই দ্বিতীয় বর্ষের ইন্টার্নশিপ শুরু হয়েছে। ইন্টার্নশিপ চলবে জানুয়ারি মাসের ৩১ তারিখ পর্যন্ত। নভেম্বরের ২ সপ্তাহ ক্লাস করানোর পরেই বাচ্চাদের বার্ষিক পরীক্ষা শুরু হয়ে যায়। এই পরীক্ষার সময়েও আমাদের রোজ যেতে হতো। আর বাচ্চারা যেহেতু স্কুলের স্যার ম্যামদের থেকে আমাদের একটু কম ভয় পেত তাই প্রশ্নপত্র পাওয়ার সাথে সাথে এদিক ওদিক থেকে ছুটে আসতো, "ম্যাম এই কোশ্চেনটা কি হবে? ম্যাম এটা একটু বলে দেন। ম্যাম এই বানানটা কি হবে?" এরকম নানা প্রশ্ন। সেই সমস্ত কিছু আমাদেরকেই সামাল দিতে হয়েছিল।
এক এক করে সমস্ত মেইন সাবজেক্ট গুলো পরীক্ষা হয়ে যাওয়ার পর শেষে ছিল স্বাস্থ্য ও শারীর শিক্ষা পরীক্ষা, ড্রয়িং পরীক্ষা এবং কর্মশিক্ষা পরীক্ষা। বাচ্চারা দেখলাম মেইন পরীক্ষা গুলোর থেকেও এইসব সাবজেক্টগুলোর প্রতি বেশি ইন্টারেস্টেড ছিল। স্বাস্থ্য ও শারীর শিক্ষা পরীক্ষাতে বাচ্চারা বিভিন্ন রকমের ব্যায়াম করে দেখিয়েছিল। বাচ্চারা যেহেতু অনেকটাই ফ্লেক্সিবল হয় তাই তারা ব্যায়ামগুলো বেশ ভালোই করেছিল। আর তাছাড়া সে বিদ্যালয়েই একজন পার্মানেন্ট টিচার রয়েছেন যিনি বাচ্চাদের বিভিন্ন রকম ব্যায়াম শিখিয়েছিলেন। এরপর ছিল ড্রয়িং পরীক্ষা। সেখানেও দেখলাম বাচ্চারা রং নিয়ে আঁকিবুকি করতে বেশ ভালোবাসে। সকলেই খুব সুন্দর সুন্দর ছবি এঁকেছিল। সবশেষে এলো কর্মশিক্ষা পরীক্ষা। এই কর্মশিক্ষা পরীক্ষায় বাচ্চাদের কিছু ইউনিক জিনিস বানিয়ে আনতে বলা হয়েছিল। ক্লাসে অবশ্য দুই একদিন বাচ্চাদের বোঝানো হয়েছিল কিভাবে তারা সেই জিনিসগুলো তৈরি করবে।
এবারের বিষয় ছিল প্রত্যেককে চাল, ডাল, বিভিন্ন মসলা, ধান, গম, দেশলাই কাঠি বা বিভিন্ন বীজের ব্যবহার করে কিছু তৈরি করে আনতে হবে। সত্যি কথা বলতে গেলে সব বাচ্চাগুলোই খুব ইউনিক ইউনিক ভাবে এই বিষয়টাকে রিপ্রেজেন্ট করেছিল। যেহেতু বাড়ির থেকে তৈরি করে আনতে বলা হয়েছিল তাই প্যারেন্টস অফ হেল্প করেছে সেটা তো মানতেই হবে। তৎসত্ত্বেও সবগুলোই আমার বেশ মন কেড়েছিল। তবে পরীক্ষার হলে তো আর মোবাইল ইউজ করা যায় না তাই কোনো ছবি আমার পক্ষে সেইদিন তোলা সম্ভব হয়নি।
বাচ্চাদের পরীক্ষা শেষ হয়ে যাওয়ার পর ডিসেম্বর মাসের বাকি দিনগুলো আমাদের ছুটি ছিল। জানুয়ারি মাসের ২ তারিখ মানে আজকে থেকে আবার বিদ্যালয় শুরু হয়। আজকে বিদ্যালয়ে যেতেই চোখে পড়লো সেই বাচ্চাদের তৈরি হাতের কাজ গুলি । তবে এতগুলো দিন ঘরবন্দি অবস্থায় জিনিসগুলো থাকার ফলে আরেকটা ধুলো মলিন হয়ে গিয়েছিল আর তার সাথে যেহেতু সেগুলো আঠা দিয়ে মারা ছিল তাই কোন কোন ছবিতে বীজগুলি পোকাতে খেয়েও নিয়েছিল। তবুও সকলে এত পরিশ্রম করে জিনিসগুলো বানিয়েছিল তাই আমি বেশ কিছু ফটো আমার মোবাইলে তুলে নিয়েছিলাম। আর সেগুলোই আমি আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করছি
উপরের ছবিটি তৈরি করা হয়েছে কুমড়োর বীজ, তরমুজের বীজ, হলুদ সর্ষে, কালো সর্ষে ইত্যাদি দিয়ে। কি সুন্দর ভাবে পাখির গায়ের রং ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। আর নিজেদের ছবিটি রয়েছে সেটি তৈরি করা হয়েছে কালো জিরে ও চাল দিয়ে। জেব্রার গায়ের কালো সাদা ডোরাকাটা দাগ কিন্তু এই দুটো উপাদান দিয়েই তৈরি করা হয়েছে। আমার তো বেশ ভালো লেগেছে। আপনাদের কেমন লাগলো অবশ্যই কমেন্টের মাধ্যমে জানাবেন।
এরপরে একটি বাচ্চা তৈরি করেছিল একটি সুন্দর খরগোশ। এই খরগোশটির সাদা অংশ তৈরি করা হয়েছিল সাবু দিয়ে। আর তার সাথে ছিল সাদা সরষে ও
কালো সর্ষে দানা।
এরপরে ছিল একটি সুন্দর কাঠবিড়ালি। অনেকগুলো বাচ্চাই কাঠবিড়ালি তৈরি করেছিল। সবগুলোর মধ্যে কিন্তু এই কাঠবিড়ালিটা ও আরো একটি কাঠবিড়ালি আমার সবচেয়ে ভালো লেগেছিল। প্রতিটা ছবি তোলার যেহেতু সময় ছিল না তাই এই দুইটি ছবিই তুলে নিয়েছিলাম।
এরপরে একটি বাচ্চা দেশলাই কাঠি দিয়ে একটি প্রজাপতি ও একটি ফুল বানিয়েছিল।
এরপর দেখে নেব একটি পাখি। এই পাখিটির লেজের আলোগুলো তৈরি করা হয়েছে কুমড়োর বীজ দিয়ে এবং শরীরের আলো তৈরি করা হয়েছে কালোজিরা, কালো সর্ষে ইত্যাদি দিয়ে।
সব বাচ্চাদের মধ্যে একটি বাচ্চাই এই মাছটি তৈরি করেছিল। যখন বানিয়েছিল তখন অনেকটা সুন্দর দেখতে ছিল। দুই সপ্তাহ পরে ফুলে গিয়ে দেখি অর্ধেক দানা খুলে পড়ে গেছে।
এরপরে আরো বেশ কিছু ছবি আপনাদের সাথে শেয়ার করে নেব। আপনারা দেখুন আপনাদের কেমন লাগলো।
আজ তাহলে এখানেই শেষ করছি। আমাদের স্কুলের বাচ্চাদের হাতের কাজ আপনাদের কেমন লাগলো অবশ্যই জানাবেন। আগামীকাল আবার অন্য কোন লেখা নিয়ে আপনাদের সামনে হাজির হব। সকলে ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন।
Thank you so much for supporting my post.
আমি তো বলব বাচ্চাদের হাতের কাজগুলো এক কথায় অসাধারণ লেগেছে কি সুন্দর নিখুঁতভাবে কাজ করেছে বাচ্চারা।
আমার কাছে প্রত্যেকটা ছবি সুন্দর ছিলো এক কথায় দেখার মত, হরিণ খরগোশ প্রজাপতি পেঁচা ফোনটা রেখে কোনটা বলবো,
কয়েকটা ছবি স্ক্রিনশট মেরে রেখে দিলাম কখনো সময় হলে নিজের বাসাতে তৈরি করব শষ্যদানা দিয়ে খুব সুন্দর সুন্দর পশুপাখির ওয়ালমেট। ধন্যবাদ পোস্টটা শেয়ার করার জন্য।
আপু, সত্যিই আপনার এই পোস্টটা অসাধারণ লাগলো! বাচ্চাদের সৃজনশীলতায় এত সুন্দর আর ইউনিক জিনিসগুলো দেখে মুগ্ধ হলাম। চাল, ডাল, মসলা, এবং বীজের এত দারুণ ব্যবহার তারা শিখেছে এটা সত্যিই প্রশংসার যোগ্য। প্রতিটি কাজেই পরিশ্রম আর সৃজনশীলতার ছাপ স্পষ্ট। বিশেষ করে পাখি, খরগোশ, আর জেব্রার ডিজাইনগুলো তো অসাধারণ! বাচ্চাদের প্রতি আপনার ভালোবাসা আর দায়িত্বশীলতাও অনুপ্রেরণাদায়ক। এভাবে তাদের প্রতিভা ফুটিয়ে তোলার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। ভবিষ্যতেও এরকম চমৎকার কাজ দেখার অপেক্ষায় রইলাম।
সত্যিই দিদি স্কুলের বাচ্চাদের হাতের কাজ প্রশংসনীয়। হাতের কাজ গুলো অনেক সুন্দর হয়েছে। সাবু দানা, বীজ,গোটা মশলা দিয়ে যে এতো সুন্দর ছবি তৈরি করা যায় আমার আগে জানা ছিল না। পারসোনালি আমার কাছে দুটি পাখি তৈরি করা বেশ ভালো লেগেছে।
দিদি আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ বাচ্চাদের এতো সুন্দর একটি প্রতিভা আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য। ভালো থাকবেন।
বাচ্চাদের কি চমৎকার অংকন যদি টিচার ভালো হয় তাহলে বাচ্চাদের সবকিছু তো ভালোই হবে।। আজকে আপনি স্কুল সম্পর্কে ও বাচ্চাদের নিয়ে অনেক তথ্য আমাদের মাঝে তুলে ধরেছেন।। আর সেখান থেকে আমরা অনেক কিছু জানতে পারলাম।। ধন্যবাদ এত সুন্দর একটি বিষয় নিয়ে আমাদের মাঝে পোস্ট করার জন্য।।