বৃক্ষরোপণ উৎসব আর তার সাথে পিকনিক
নমস্কার বন্ধুরা। আজকে আবারো চলে এসেছি আপনাদের সঙ্গে নতুন একটি গল্প শেয়ার করে নেওয়ার জন্য। আপনারা সকলে ভালো আছেন তো? সকলে সুস্থতা কামনা করে আমি আমার আজকের ব্লগটি শুরু করছি।
শীতকাল তো পড়েই গেছে। আমি আগেই জানিয়েছিলাম শীতকাল আমার একেবারেই পছন্দের ঋতু নয়। তবুও শীত কালকে, সিজন থেকে বাদ দেওয়ার মত সুপ্রিম পাওয়ার তো আমার নেই। তাই ভালো না লাগলেও অনেক কিছুই আমাদের accept করতে হয়। শীতকালের অনেক কিছু ভালো না লাগলেও বেশ কিছু জিনিস আবার বেশ ভালোই লাগে, যেমন ধরুন--- নলেন গুড়, নতুন নতুন সবজি, যেমন -- ফুলকপি, বাঁধাকপি, নতুন আলু, মটরশুঁটি ইত্যাদি । এই জিনিসগুলো আবার বছরের অন্যান্য সময়ে তেমন পাওয়া যায় না। আর এগুলোর সাথে আরো একটা জিনিস বেশ ভালো লাগে সেটা হল শীতকালের পিকনিক। শীতকালে পিকনিক না করলে চলে না।
আমরা সবাই |
---|
প্রত্যেক বছরই শীতকালে আমাদের বেশ কয়েকটা পিকনিক করা হয়। যেমন-- বন্ধু-বান্ধবদের সাথে, পড়ার ব্যাচের সকলের সাথে, পাড়ার কয়েক ঘর মিলে। এইভাবেই বেশ কয়েকটা পিকনিকে আমরা খুব মজা করি। দুপুরবেলায় সবার কাছ থেকে চাঁদা তোলা, তারপর খাবারের মেনু অনুযায়ী ফর্দ তৈরি করা, বাজারে যাওয়া, সমস্ত সবজি এবং মুদিখানা জিনিসপত্র কিনে আনা এবং তারপর সন্ধ্যে থেকে রান্নায় হাত লাগানো। তার সাথে চলে গান বাজনা। এই সব মিলে শীতের পিকনিক বেশ জমে ওঠে।
আজকে আমি সেই রকমই একটি পিকনিকের গল্প আপনাদের সাথে শেয়ার করতে চলে এসেছি। গ্রাজুয়েশন কমপ্লিট করার পর পরই আমি এবং আমার বেশ কিছু বন্ধুবান্ধব কোচিং সেন্টারে ভর্তি হই। হাঁ, সেই কোচিং সেন্টারে প্রতিবছরই শীতকালে পিকনিকের আয়োজন করা হতো। ২০২০- ২০২২ সালে আমাদের পিকনিক সেই কোচিং সেন্টারের ছাদের উপরেই ছোট করে করা হতো। যদিও ২০২২ সালের পর থেকে অন্য কোন পিকনিক স্পট ঠিক করে সেখানে করার ব্যবস্থা হতো। আজকে আমি ২০২২ সালের একটি শীতের দিনে পিকনিক দিয়ে আপনাদের সাথে গল্প করবো।
ফটোশুট |
---|
যেহেতু অনেক ছেলেমেয়ে অনেক দূর থেকে ওই সেন্টারে পড়তে আসতো তাই আমাদের পিকনিকের আয়োজন করা হয়েছিল দুপুর বেলা। শুধু পিকনিক নয় সেই দিন আমাদের কোচিং সেন্টার থেকে আরও একটি সুন্দর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। সেটি হল বৃক্ষরোপণ। সকালবেলায় কোচিং সেন্টারের স্যারেরা এবং কাছাকাছি যাদের বাড়ি, সেই সকল স্টুডেন্টরা কোচিং সেন্টারে এসে হাজির হয়েছিল। তারপর সকলে মিলে নার্সারিতে গিয়ে সেখান থেকে কিছু ফলের গাছ কিনে এগুলোকে রাস্তার দুই ধারে লাগানোর ব্যবস্থা করেছিল। শুধু গাছ লাগানো নয়, গাছগুলো যাতে ঠিকভাবে পরিচর্যা পাই সেই জন্য সেই অঞ্চলের লোকদের সচেতন বার্তাও দেওয়া হয়েছিল। সব মিলিয়ে এটা ছিল আমাদের কোচিং সেন্টারের দারুণ একটি উদ্যোগ। যেহেতু আমার বাড়ি কোচিং সেন্টার থেকে বেশ কিছুটা দূরে ছিল তাই আমি সকালবেলায় যেতে পারিনি।
CCM কোচিং সেন্টার |
---|
বৃক্ষরোপণ পর্ব শেষ করে পিকনিকের কাজকর্ম শুরু হয়েছিল সকাল দশটা থেকে। আমি চলে গিয়েছিলাম সকাল দশটার মধ্যে কোচিং সেন্টারে। সেখানে গিয়ে দেখি সমস্ত বাজার করা কমপ্লিট হয়ে গেছে। ছেলেমেয়েরা একসাথে গোল করে বসে সবজি কাটছে এবং রান্নার আয়োজন করছে। আমিও বসে পড়লাম তাদের সাথে সবজি কাটতে। গল্প করতে করতে আমাদের সমস্ত সবজি কাটা কমপ্লিট হয়ে গেল। এরপর এলো রান্নার পালা। রান্না করেছিল আমাদেরই এক বান্ধবী। আমরা সকলে মিলে তাকে হেল্প করেছিলাম। ওই বান্ধবীটি খুব ভালো রান্না করে। আমাদের সেইদিনকের মেনু ছিল -- ভাত, ডাল, পটল চিংড়ি, চিকেন, চাটনি, পাপড় ও মিষ্টি। আমাদের ওই বান্ধবীটি খুব ভালো রান্না করেছিল। সমস্ত খাবারের টেস্টই দারুণ হয়েছিল।
আমাদের রাধুনী (বান্ধবী) |
---|
সকালে তারা বৃক্ষরোপণ অনুষ্ঠানে গিয়েছিল তারা পিকনিকে এসেছিল একটু দেরি করে। কারণ সকালে তাদের অনেক রকমের কাজ করতে হয়েছে যার ফলে তারা হয়তো একটু ক্লান্ত হয়ে পড়েছিল। এরপর দুপুর দুটোর মধ্যে সকলে এসে হাজির হয়েছিল। আমরা সবাই মিলে খুব মজা করেছিলাম। আর তার সাথে অনেক অনেক ছবি তুলেছিলাম।
সেলফি |
---|
ছাদ থেকে দূরে চোখ রাখতেই একটা দারুন জিনিস দেখেছিলাম। মোবাইলে ক্যাপচার করে রেখেছিলাম তাই ভাবলাম আপনাদের সঙ্গেও শেয়ার করি। আমাদের সকলেরই বিভিন্ন রকমের ইচ্ছে থাকে। ঠিক তেমনি কোনো একটি বাড়ির মালিকের ইচ্ছে হয়েছে তার ছাদে প্লেন ল্যান্ড করাতে। তাই তিনি বাড়ির ছাদে এরোপ্লেনের আকারে একটি জলের ট্যাঙ্ক তৈরি করেছেন। ব্যাপারটা কিন্তু দারুণ লেগেছিল। যদিও এটা আমি প্রথমবার দেখেছি এমন নয়, তবে বাড়ির মালিকদের এই সমস্ত আইডিয়া বেশ ভালোই লাগে।
বাড়ির ছাদে প্লেন |
---|
এরই মাঝে আমাদের স্যার এসে বললেন --"সবাই বস। আমাদের বেড়ারসহ একটা ফটো তোলা হোক।" আমরা সকলে বসে পড়লাম। এরপর বেশ কিছু ফটো তোলা হলো। এখন আর সেই ব্যাচে পড়তে যাওয়া হয় না, যার ফলে এই ফটোতে থাকা কারো সাথেই আর যোগাযোগ নেই। তবে ফটোগুলো দেখলে সবার কথা মনে পড়ে। তাই আমার মনে হয় আমাদের প্রচুর প্রচুর ফটো তোলা উচিত। আমরা তো সময়টাকে ধরে রাখতে পারি না তবে এই ফটোর মাধ্যমে মুহূর্তগুলোকে আমরা কিছুটা হলেও ধরে রাখতে পারি।
হৈ হুল্লোড় |
---|
এরপর দেখতে দেখতে সমস্ত রান্নাবান্না সম্পন্ন হল। আমরা সবাই বসে পড়লাম খেতে। একে একে পাতে ভাত, ডাল, মাংস, চাটনি, পাপড়, মিষ্টি সবই পড়ে গেল। আমরা সবাই মিলে খুব আনন্দ করে আমাদের মধ্যাহ্ন ভোজন সারলাম। বন্ধুবান্ধবরা একসাথে বসে খাওয়ার মজাটাই যেন অন্যরকম।
মধ্যাহ্নভোজন |
---|
খাওয়া-দাওয়া শেষ করে আমাদের চলল গানের লড়াই। সমস্ত স্টুডেন্টরা দুটি দলে ভাগ হয়ে গেল। তারপর সে এক দারুন লড়াই চলল। প্রসঙ্গত আমরা কিন্তু সেদিন হেরে গিয়েছিলাম। তবে এই হেরে যাওয়াতে আমাদের কারোরই দুঃখ হয়নি। আমরা সেই দিন গিয়েছিলাম মজা করতে। তাই এই সামান্য হেরে যাওয়াতে দুঃখ করার কোনো কারণ ছিল না। আমরা খুব আনন্দের সাথে সেই দিনটা উপভোগ করেছিলাম। আজ গ্যালারি ঘাটতে ঘাটতে এই ছবিগুলো চোখে পড়তেই ভাবলাম আজকে সেই দিনটির স্মৃতি রোমন্থন করা যাক।
আশা করছি আপনাদের সকলের আমার আজকের লেখা ভালো লাগবে। আর তাহলে এখানেই শেষ করছি। আগামীকাল আবার অন্য কোন গল্প নিয়ে আপনাদের সামনে হাজির হব। আপনারা সকলেই ভাল থাকবেন।
প্রথমে আপনাকে ধন্যবাদ জানাই, আমাদের সাথে এত সুন্দর একটা পোস্ট শেয়ার করার জন্য। এই শীতকালে বেশিরভাগ মানুষরা পিকনিক করে থাকে। আমিও প্রতিবছরে পিকনিক করি, কিন্তু এই বছরে কবে যে বন্ধুবান্ধব, বলবে চল সবাই মিলে পিকনিক করি। এই আশায় আছি। আপনাদের পিকনিক দেখে আরো আগ্রহটা বেড়ে গেল। এই পিকনিকের একটা বিষয় সবচাইতে বেশি আকর্ষণ ছিল , আপনারা সবাই মিলে বৃক্ষরোপণ করেছেন। এটা খুব ভালো কাজ, কেননা আপনারা যে বৃক্ষরোপণ করেছেন, এই গাছগুলো একসময় অনেক বড় হবে, অনেক মানুষের উপকারে আসবে।অনেক পশুপাখির আশ্রয়ের স্থান হয়ে থাকবে এই গাছ টা। মানুষ চিরস্থায়ী নয় এই পৃথিবীর বুকে, যখন আপনারা কেউ এক জন থাকবেন না এই পৃথিবীর বুকে। এই গাছটি তার স্মৃতি হিসেবে রয়ে যাবে,এই গাছটিকে যখন আপনারা দেখবেন তখন হয়তোবা আপনার সেই বন্ধুর কথা মনে পরবে।