কৃষ্ণনগর বইমেলা ২০২৪ ( বই এর মতো বন্ধু এ জগতে আর নেই)

in Incredible India5 days ago

নমস্কার বন্ধুরা। আচ্ছা আবার চলে এসেছি আপনাদের সঙ্গে নতুন একটি গল্প শেয়ার করে নেওয়ার জন্য। আশা করছি আপনাদের সকলের খুব ভালো লাগবে।

কথাতেই আছে, "বাঙালির বারো মাসে, তেরো পার্বণ।" এই কথাটিকে একেবারেই অস্বীকার করা যায় না। তবে এই পার্বণের হাত ধরেই আসে মেলার সমারোহ। আমাদের শহরে এই মেলা যেন শেষই হয় না। একটি মেলা গেল তো আর একটির আগমন, মেলা যেন চলতেই থাকে। কয়েকদিন আগেই আমি আমার পোস্টে শেয়ার করেছিলাম আমাদের শহরের হস্তশিল্প মেলা সম্পর্কে। সেই মেলাটি শেষ হলো ১৬ ই ডিসেম্বর। আর ১৮ই ডিসেম্বর থেকে শুরু হয়ে গেল কৃষ্ণনগরের বইমেলা। আবার এই বইমেলায় শেষ হতে না হতেই শুরু হয়ে যাবে বড়দিনের মেলা। সব মিলিয়ে আমাদের শহরে সারা বছরই কোনো না কোনো মেলা চলতেই থাকে। বেশ মজার ব্যাপার না?

1000127655.jpg

মেলা আমাদের সংস্কৃতির একটি প্রাণকেন্দ্র। এই মেলা হল মানুষের একটি মিলনস্থল, যেখানে জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সব ধরনের মানুষের সমাবেশে ঘটে। সারা বছর ধরেই আমরা বিভিন্ন ধরনের মেলা দেখে থাকি। এই সকল মেলার মধ্যে বইমেলাও একটি অন্যতম মেলা। আমাদের জ্ঞানের প্রসার ঘটাতে বইয়ের অবদান অনস্বীকার্য। শুধু আমাদের দেশেই নয় আমাদের দেশের বাইরে অন্যান্য দেশেও বই মেলার মতোই বইয়ের প্রদর্শনী উৎসব হয়। শিক্ষিত মানুষদের জ্ঞানের ভান্ডার আরো বিকশিত করতে এই মেলা বিশেষ ভূমিকা গ্রহণ করে। ছোটো থেকেই আমরা পড়ে এসেছি বইয়ের মত বন্ধু মানুষের আর একটিও নেই। আমাদের নিঃসঙ্গ, অবসন্ন দিনগুলিতে এই বই আমাদের আনন্দে ভরিয়ে রাখতে পারে, একাকিত্বের যন্ত্রণা ভোলাতে পারে। এই বইকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা বইমেলা শিক্ষিত জনসমাজকে বেঁচে থাকার রসদ জোগায়।

1000127652.jpg

বইমেলায় বিভিন্ন প্রকাশনীর বই পাওয়া যায় এবং বই বিক্রেতারা বিভিন্ন ভাষার এবং বিভিন্ন ধরনের বই ক্রেতাদের সামনে তুলে ধরেন। বইমেলা একটি উৎসবমুখর মেলা যা বইপ্রেমী মানুষের হৃদয়ে স্পন্দন জোগায়। কলকাতার বইমেলা আমাদের রাজ্যের সবচেয়ে বড় বইমেলা। যেখানে বিভিন্ন প্রকাশক , লেখক, কবি, সাহিত্যিকের সমাবেশ ঘটে। মেলার বেশ কিছুদিন তারা সেই মেলায় আসেন এবং তাদের লেখা বইতে নিজেদের হস্তাক্ষরও দিয়ে যান। যদিও আমার কখনো কলকাতার বইমেলায় যাওয়ার সৌভাগ্য হয়নি তবে আমাদের শহরে যে বইমেলা হয় সেখানে বেশ কয়েক বছর ধরে আমি যাই।

1000127658.jpg

গতকাল আমি এবং আমার প্রিয় বন্ধুটি চলে গিয়েছিলাম আমাদের শহরে সরকারি উদ্যোগে আয়োজিত বইমেলায় নতুন নতুন বইয়ের সাথে নিজেদের পরিচয় করানোর জন্য।বই আমার ভীষণ ভালো লাগে তাই আমিও সারা বছর অপেক্ষা করে থাকি এই মেলার জন্য। বইমেলায় গিয়ে বই কেনার একটি সুবিধা হল এখানে একই সাথে অনেক স্টল থাকে এবং বিভিন্ন ধরনের বইয়ের বিশাল সম্ভার দেখার সুযোগ থাকে। এখানে বিশেষত বাংলা এবং ইংরেজি বইয়ের সমাহার বেশি থাকে তবে এছাড়াও অন্যান্য ভাষার বই খুঁজলেও হয়তো পাওয়া যেতে পারে। আমি যেহেতু বাংলা কিংবা ইংলিশ বই কিনি সেহেতু এই দুই ভাষার বইয়ের প্রতিই আমার নজর থাকে বেশি। তাই অন্য কোন ভাষার বই তেমন পাওয়া যায় কিনা আমার সেভাবে দেখা হয়নি।

1000127649.jpg

এখানে বিভিন্ন পাবলিকেশনের বইয়ের সম্ভার দেখতে পাওয়া যায়। প্রত্যেকটি পাবলিকেশনের এক একটি করে স্টল এখানে চোখে পড়বে। আমরা প্রায় প্রতিটি স্টলই ঘুরে ফিরে দেখেছিলাম। যেহেতু সবে মেলাটি বসছে তাই গতকাল খুব একটা ভিড় ছিল না। যার ফলে আমরা খুব ভালোভাবে বিভিন্ন বই দেখার সুযোগ পেয়েছি। এখানে বিভিন্ন ধরনের বইয়ের কালেকশন ছিল। যেকোনো বয়সের মানুষেরাই এখানে নিজেদের রুচি অনুযায়ী বই পেয়ে যাবে। পশু-পাখি, ভূত-পেত্নী, রাজা-রানি, নন্টে-ফন্টে, ঠাকুমার ঝুলি ইত্যাদি বইগুলো বাচ্চাদের অনেক বেশি পছন্দের হয়। এছাড়াও এখানে রয়েছে বিভিন্ন অ্যাডভেঞ্চারের বই, রান্নার বই, ড্রইং এর বই, শরীর চর্চার বই, গাছগাছালি চর্চার বই আরও কত কি। সব হয়তো আমি বলে শেষ করতে পারবো না।

1000127656.jpg

অনেক মানুষ আছেন যাদের বই কেনার মত সামর্থ্য থাকে না তবে তারাও কিন্তু এই মেলায় যেতেই পারেন। বই দেখলেই যে কিনতে হবে এমন তো নয়। এখানে যেহেতু বিভিন্ন ধরনের এবং বিভিন্ন রুচির বই পাওয়া যায় সেক্ষেত্রে তারা বিভিন্ন বই এর সাথে পরিচিত হতে পারে। কত নতুন নতুন বইয়ের নাম জানতে পারে। এতে তাদের জ্ঞান ভান্ডার বিকশিত হয় বলেই আমি মনে করি।

1000127655.jpg

এই মেলায় শুধু যে বই বিক্রি হচ্ছিল তা নয়। এখানে কিন্তু একটি সংস্কৃতিক অনুষ্ঠানেরও আয়োজন করা হয়েছিল। গতকাল এখানে নাচ, গান, আবৃত্তি ইত্যাদি প্রোগ্রাম হয়েছিল। আমরা যখন গিয়েছিলাম তখন গানের অনুষ্ঠান চলছিল। তার আগে নাচের অনুষ্ঠান হয়ে গিয়েছিল। আমরা সেখানে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে গান শুনছিলাম। শিল্পী খুব সুন্দর গান গাইছিলেন। ওনার গান পুরো মেলাটি কে আরো বেশি প্রাণবন্ত করে তুলেছিল।

1000127650.jpg

প্রতিবছর আমার মা আমাকে আমার জন্মদিনে আমার পছন্দেরই কিছু বই কিনে দেয়। তবে এই বছর মা যেহেতু জন্মদিনের সময় বাড়িতে ছিল না তাই মা আমাকে বই কেনার টাকা পাঠিয়েছিল। তবে সেই সময় আর বই কেনা হয়নি। গতকাল সেই টাকার সঠিক ব্যায় করা হলো। আমি আমার পছন্দের চারটি বই কিনেছিলাম। সেগুলি হল-- 'ইছামতী' (বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়), 'তিতাস একটি নদীর নাম ' (অদ্বৈত মল্লবর্মণ), 'পুতুল নাচের ইতিকথা' (মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়), 'আদর্শ হিন্দু হোটেল ' (বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়)। এই বইগুলো বহুদিন ধরে আমার কেনার খুব ইচ্ছে ছিল। তবে যেকোনো কারণেই হোক আমার আর বইয়ের দোকানে গিয়ে কেনা হয়ে ওঠেনি। তাই এই বিশাল বইয়ের সমুদ্রের মধ্যে এই বইগুলোকে আমি ঠিকই খুঁজে পেয়ে গিয়েছিলাম। তাই আর বিশেষ ভাবনা চিন্তা করতে হয়নি। চটপট এই বইগুলো আমি কিনে নিয়েছিলাম।

1000127647.jpg

এই মেলাতেই একটি বই দেখেছিলাম যেটি আমার বেশ ভালো লেগেছিল সেটি হল, আমাদের শহরের রাজা কৃষ্ণচন্দ্র সংক্রান্ত একটি বই যেখানে তৎকালীন সমাজব্যবস্থা সম্পর্কে অনেক তথ্য উল্লেখ করা রয়েছে। গতকাল এই বইটিকে না হয়নি তবে পরবর্তী যেদিন মেলায় যাব সেই দিন এই বইটি কেনার ইচ্ছে রয়েছে।

1000127646.jpg

এরপরে আসি আমার বন্ধুটি যে বই কিনেছিল সেই বইটির ব্যাপারে। সেও বই পড়তে ভালোবাসে তবে বই টই বিশেষ কেনে না। আমার কাছে যে কালেকশন আছে সেখান থেকেই একটা একটা করে নিয়ে পড়ে। তবে বউয়ের প্রতি ইন্টারেস্ট আছে। আমি যেহেতু চারটে বই কিনেছিলাম তাই নতুন করে আবার অন্য কোন বই কেনার ইচ্ছে তার ছিল না কারণ সে জানে আমার কাছ থেকে সে এই বইগুলো পড়তে পারবে। তবে অনেক ঘোরাফেরার পর তার একটি বই খুব পছন্দ হয়েছিল। সেটি হল একটি ধ্যানের বই। ধ্যানের বই নিয়ে সে কি করবে আমার জানা নেই। আমি অনেকবার বারণ করেছিলাম না নেওয়ার জন্য। আমি জানি কোন বই পড়ায় অর্থহীন নয় তবে সেটাকে তো কাজে লাগাতে হবে। ওই বইটা যে বুক সেলফের এক কোনায় পড়ে থাকবে সে আমি খুব ভালো করেই জানি। তাই বলছিলাম অন্য কোন বই কিনতে। তবে তার এই বইটি এতই ভালো লেগেছিল যে সে কিনেই নিল। এবার দেখার পালা এই বইটা পড়ে তিনি কি করেন। এই বই পড়ে তিনি কতটা ধ্যান শিখলেন তার আপডেট না হয় আপনাদের অন্য কোন পোস্টে দেবো 🤣।

1000127648.jpg

এইভাবেই সব স্টল গুলিই ঘোরাফেরা করে অনেক অনেক বইয়ের সম্ভার দেখে এবং কিছু কিছু বই হাতে নিয়ে এর উল্টে পাল্টে দেখার পর এই পাঁচটি বই কিনে আমরা বাড়ি ফিরেছিলাম। বাড়ি ফেরার পথে অবশ্য মোমো খেয়ে একটু পেট পুজোও করেছিলাম। এভাবেই একটা সুন্দর সন্ধ্যা আমরা কাটিয়েছিলাম।

1000127654.jpg

আজ তাহলে এখানেই শেষ করছি। আগামী কাল আবার অন্য কোন গল্প নিয়ে আপনাদের সামনে হাজির হব ‌। আপনারা সকলে ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন।

Sort:  
Loading...
 3 days ago 

ডিসেম্বের মানেই উৎসবের মাস। আর এসময় যদি বই মেলা হয় তাহলে তো আরো সোনায় সোহাগা। কৃষ্ণনগর সম্পর্কে আগে আমার জানা ছিল এখানে ভালো পুতুল তৈরী হয়। তবে ইদানিং আপনিসহ আমাদের কমিউনিটির বেশ কয়েকজনের লেখার মাধ্যমে এই জায়গা সম্পকে আগ্রহ বেড়েই চলেছে আমার।
ধন্যবাদ এতো সুন্দর একটা লেখা উপস্থাপন করার জন্য।