যীশু খ্রীষ্টের ক্রুসিফিকশনের কিছু দৃশ্য ও শহরের সবচেয়ে বড়ো চার্চের মেলা
নমস্কার বন্ধুরা। আপনারা সকলে কেমন আছেন? আজ আবার চলে এসেছি আপনাদের সঙ্গে নতুন কিছু গল্প শেয়ার করে নেওয়ার জন্য। আশা করছি আপনাদের সকলের ভালো লাগবে
আগেই জানিয়েছি আমাদের শহরে সারা বছরই নানা রকমের মেলা চলতেই থাকে। আমার পোস্ট যারা আগে পড়েছেন তারা জানেন এই এক মাসের মধ্যেই আমাদের শহরে তিনটি মেলা আয়োজিত হয়েছিল--- হস্তশিল্প মেলা, বইমেলা এবং এখন যে মেলাটি চলছে অর্থাৎ বড় দিনের মেলা। একটি মেলা শেষ হচ্ছে আর আরেকটি মেলার আগমন। হস্তশিল্প মেলা এবং বইমেলার অভিজ্ঞতা আমি আপনাদের সঙ্গে পূর্বেই শেয়ার করেছি। আর চলে এসেছি বড়দিনের মেলার অভিজ্ঞতা আপনাদের সাথে শেয়ার করব বলে।
মেলায় ঢোকার মুখেই চোখে পড়বে প্রবেশদ্বারে লেখা আছে "Krishnanagar Cathedral" । এই প্রবেশদ্বার থেকেই রাস্তা দুই ধারে প্রচুর দোকান বসে। তাই এই ঢোকার মুখ থেকেই অনেক ভিড় হয়। সেই ভিড় ঠেলে ধীরে ধীরে মেলার মধ্যে প্রবেশ করেছিলাম। কিছুদূর এগিয়ে যাওয়ার পর আমরা চলে গিয়েছিলাম চার্চের যেখানে যিশু খ্রীষ্ট কে crucified করার সম্পূর্ণ ঘটনাটি মূর্তির মাধ্যমে বর্ণনা করা হয়েছে সেটি পরিদর্শন করতে। এখানে যে স্ট্যাচু বা ফিগার গুলি ছিল সেগুলো কিন্তু বড় বড় শিল্পীদের দ্বারা তৈরি। স্ট্যাচুর পাশাপাশি সেখানে একটি সাইনবোর্ডে যীশু খ্রীষ্ট কে crucified করার সম্পূর্ণ ঘটনাটি বিস্তারিত বর্ণনা করা ছিল।
এই বর্ণনার দ্বারা সাধারণ দর্শনার্থীরা বা যারা খ্রিস্টান নন সেই সমস্ত মানুষেরাও পড়ার মাধ্যমে সম্পূর্ণ ঘটনাটি বিস্তারিত জানার সুযোগ পান। কলেজে গ্রাজুয়েশনের সময় প্রথম বর্ষের সিলেবাসে যীশুখ্রীষ্ট এর crucifixion এর ওপর একটি পাঠ ছিল যার জন্য এই ব্যাপারে আমার কিছুটা জানা ছিল। তবে স্ট্যাচু গুলি দেখার পাশাপাশি সাইনবোর্ড এর লেখাগুলো পড়ে আমি অনেক কিছু জানতে পেরেছি।
এরপর চোখে পড়েছিল যীশু খ্রীষ্ট কে ক্রুসিফাইড করার পরের সেই মূর্তি টি । এই মূর্তিটি চোখে পড়তেই মনে পড়ে গেল কলেজে পড়ার সময় পড়া সেই যীশু খ্রীষ্টের ক্রুসিফিকশনের সেই ঘটনাটি। যীশুখ্রিস্টের সাথে এত কিছু হওয়ার পরেও কিন্তু উনি শেষ মুহূর্তে বলে গিয়েছিলেন ----"ভগবান ওদের মাফ করে দিও, ওরা জানে না ওরা কি করছে।" দেবতা স্বরূপ না হলে হয়তো এ কথা কোন সাধারণ মানুষের পক্ষে বলা সম্ভব নয়।
এরপর আমরা মেলা টাকে ঘুরে ফিরে দেখছিলাম। আর মেলায় গিয়ে কেনাকাটি হবে না তাতো হয় না। সব দোকান ঘুরেফিরে বেশ কিছু প্রয়োজনীয় জিনিস আমরা কিনে নিয়েছিলাম। এই মেলার মধ্যেই প্রতিবছর একটি ফটো ফ্রেমের দোকান বসে। সেখানে এত সুন্দর সুন্দর ফটো ফ্রেম পাওয়া যায় কি বলবো। খুব সুন্দর সুন্দর আর্টিস্টিক ফটো। যে কারোরই একবার দেখলেই পছন্দ হবে। সেখান থেকে পছন্দমত দুটো ফটো ফ্রেম কিনে নিয়েছিলাম।
আমাদের পিছন ঘুরে পোড়া মাটির গলার হার , কানের দুল ইত্যাদির খুব চল রয়েছে। বিশেষ করে পুতুল পট্টিতে এই ধরনের জিনিস বেশি পাওয়া যায়। আর আমার এই মাটির হাড় ভীষণ পছন্দ হয়। যেহেতু আমি শাড়ি পরতে ভীষণ ভালোবাসি তাই বিভিন্ন শাড়ির সাথে ম্যাচ করে এই গলার হার গুলো আমি পরি। এই মেলায় এই গলার হারের একটি স্টল ছিল সেখান থেকেই আমি চারটে গলার হার কিনে নিয়েছিলাম। দেখুন তো আপনাদের কেমন লাগলো।
এরপর আমরা চলে গিয়েছিলাম চার্চের প্রেয়ার হলে। সেখানে কিছুক্ষণ সময় কাটিয়ে আমরা বেরিয়ে এসেছিলাম। প্রেয়ার হল থেকে বেরোতেই ডান দিকে চোখে পড়েছিল আর্ট এক্সিবিশন এর একটি সাইনবোর্ড । তারপর সেখানে গিয়ে কি কি ছবি দেখেছিলাম তা তো আপনাদের সাথে আগেই শেয়ার করেছি।
সেই এক্সিবিশন হল থেকে বেরোনোর পর দেখলাম সেখানে একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হচ্ছে। একজন শিল্পী তখন গান গাইছিলেন। কিন্তু খানিক দুঃখও হয়েছিল কারণ সেই অনুষ্ঠানটি এতটাই ভিতরে দিকে হচ্ছিল যে সমস্ত দর্শনার্থীরা হয়তো সেই আর্ট এক্সিবিশন হল কিংবা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান কোনটিই দেখার জন্য অতটা ভিতরের দিকে যাননি। যে শিল্পী গান গাইছিলেন তিনি কিন্তু অসাধারণ গান গাইছিলেন।
এরপর দেখেছিলাম একই জায়গায় তৈরি করা হয়েছে জেরুজালেমের সেই জায়গাটি যেখানে যীশু খ্রীষ্ট জন্ম গ্রহণ করেছিলেন।
মেলায় তো খাবারের স্টলের অন্ত নেই। যত হেঁটে চলবে চারিপাশে তত বেশি খাবারের স্টল চোখে পড়বে। তবে সবকিছু তো আর খাওয়া যায় না। তাই আমরা বেশ কিছু খাবার খেয়েছিলাম। প্রথমেই আমরা খেয়েছিলাম ফুচকা, যেটা ছাড়া মেলা ঘোরা সম্পূর্ণই হয় না। এরপর আমরা খেয়েছিলাম ভাপা পিঠে। এই ভাপা পিঠে খেতে আমাদের ভালো লাগে। যেহেতু বাড়িতে এই পিঠে তৈরি করা হয় না তাই মেলাতে গেলেই আমি এই পিঠে খাই । যেহেতু বেশ কিছুক্ষণ আমরা মেলাতে কাটিয়েছিলাম তাই মেলায় ঘুরতে ঘুরতে আমাদের বেশ খিদে পেয়ে গিয়েছিল তাই আমরা পরে খেয়েছিলাম এগ রোল। এরপর বাড়ির জন্য জিলিপি, বাদাম আর মথুরা কেক কিনে আমরা বাড়ি ফিরে এসেছিলাম।
এই ভাবেই আমরা একটা সুন্দর সন্ধ্যা কাটিয়েছিলাম। আজ তাহলে এখানেই শেষ করছি। আগামীকাল আবার অন্য কোন গল্প নিয়ে আপনাদের সামনে হাজির হব। সকলে সুস্থ থাকবেন, ভালো থাকবেন।
আপনার এই পোস্টটি পড়ে যেন পুরো বড়দিনের মেলা ঘুরে এলাম। যিশু খ্রিস্টের ক্রুসিফিকশনের মূর্তি এবং সেই ঘটনাগুলো খুব সুন্দরভাবে বর্ণনা করেছেন, যা মন ছুঁয়ে গেল। মাটির গলার হার এবং ফটো ফ্রেমের কেনাকাটার অংশটাও বেশ আকর্ষণীয় ছিল। আর মেলার খাবারের বর্ণনা পড়ে তো মুখে জল এসে গেল! বিশেষ করে ভাপা পিঠে আর ফুচকার কথা শুনে মনে হলো আমিও যদি সেখানে থাকতে পারতাম।আমাদের সাথে সুন্দর বর্ণনা আর অভিজ্ঞতা ভাগ করে নেওয়ার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।