বন্ধুদের নিয়ে কিছু কথা (প্রথম পর্ব)
কেমন আছেন বন্ধুরা? আল্লাহ্র অশেষ মেহেরবানীতে আমি সুস্থ্য এবং ভালো আছি। সুস্থ্যতা আল্লাহ্ তা’লার সবচেয়ে বড় নিয়ামত। আর এই নিয়ামত পেয়ে আমি অনেক খুশি।
আজ আমি আপনাদের মাঝে “বন্ধুদের নিয়ে কিছু কথা (প্রথম পর্ব)” শীর্ষক একটি লিখনি তুলে ধরছি। তাহলে শুরু করা যাকঃ-
বন্ধু, আমাদের সকলের জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ নাম। কেননা বন্ধুদের সাথে আমরা জীবনের অনেকটা সময় ব্যায় করি। সুখ, দুঃখ সব ভাগ করি। বিপদে পরলে বন্ধুর কাছে সাহায্য চাই।
জীবনে ভালো কিছু অর্জন করলে তার কৃতিত্ব বন্ধুকে দেই। তাই বলা যায় বন্ধু ছাড়া আমাদের জীবন মূল্যহীন।
কেউ যদি আপনাকে প্রশ্ন করে আপনার কী কোন বন্ধু আছে? আপনি যদি উত্তরে বলেন না তাহলে প্রশ্নকর্তা আপনার সম্পর্কে সত্তর ভাগ ধারণা পেয়ে যাবে যে আপনি আসলে কেমন। আমার মতে যার বন্ধু নেই তার জীবন ষোল আনাই বৃথা।
যাইহোক আজ আমার জীবনে এমন কিছু বন্ধুর কথা আপনাদের সাথে তুলে ধরবো যাদের সাথে রয়েছে আমার আত্মীক সম্পর্ক। এখনো সময় পেলে সকলে একত্রিত হয়ে খুব ভালো সময় পার করি।
যতদূর মনে পরে প্রথম শ্রেণি এবং দ্বিতীয় শ্রেণিতে আমার খুব ভালো বন্ধু ছিলো আমার চাচাতো ভাই। একসাথে দুজনে বিদ্যালয়ে যেতাম এবং একসাথে একই বেঞ্চে বসতাম।
যখন তৃতীয় শ্রেণিতে উঠলাম তখন আরো অনেক বন্ধু হলো। তার মধ্যে অন্যতম ছিলো ইশতিয়াখ নামের একজন ছেলে। ছেলেটির গড়ন ছিলো আমাদের সকলের চেয়ে একটু আলাদা।
তার চেহারা একটু বেশি ছিলো জন্যে অনেকেই তাকে বিভিন্ন নাম ধরে ডেকে ক্ষেপাতো। সেও মন খারাপ করে শেষ বেঞ্চের এক কোণায় গিয়ে বসে থাকতো। অথচ সে অনেক ভালো ছাত্র ছিলো।
কিন্তু সে একটু মোটা ছিলো জন্যে কেউ তার সাথে মিশতে চাইতো না। ইশতিয়াখের সাথে আমার বন্ধুত্ব হয় টিফিন ভাগ করার মধ্য দিয়ে। একদিন ক্লাস শেষে সবাই যে যার মত করে টিফিন খেতে শুরু করেছিলো।
আমি সেদিন টিফিন নিয়ে যাইনি। তাই সবার থেকে আলাদা হয়ে দরজার কাছে বসে ছিলাম। এমন সময় ইশতিয়াখ এসে আমাকে বলে তুমি আসো আমার সাথে। আমার সাথে আজ টিফিন খাবে।
এত খাবার আমি খেতে পারি না। সেই থেকেই তার সাথে আমার বন্ধুত্বের শুরু। এরপর টানা এক বছর আমরা এক সাথে বসেছি, টিফিন খেয়েছি, বাইরে খেলাধুলা করেছি।
যখন চতুর্থ শ্রেণিতে উঠলাম তখন ইশতিয়াখ চলে গেলো ক শাখায় আর আমি চলে গেলাম খ শাখায়। সে পড়ালেখায় অনেক ভালো ছিলো জন্যে ক শাখায় তার নাম উঠেছিলো। যাইহোক চতুর্থ শ্রেণিতে উঠে আবারো খুব একা হয়ে গিয়েছিলাম।
কদিন ইশতিয়াখের সাথে টিফিন সময়ে দেখা করতে গেলেও ধীরে ধীরে সেটিও কমে যেতে লাগলো। এক মাস কেটে যাওয়ার পর নতুন ক্লাসে আবার আমার কিছু বন্ধু হলো। তার মধ্যে সবথেকে কাছের ছিলো তিনজন। দুজন ছেলে আরেকজন মেয়ে।
ছেলে দুজনের নামই ছিলো শুভ আর মেয়েটির নাম ছিলো মারুফা। আমাদের ক্লাসে মারুফার ছিলো এক রোল, শুভ নামের একজনের ছিলো তিন রোল, আরেকজন শুভ যে ছিলো তার ছিলো চার রোল আর আমার পাঁচ রোল।
মাঝে যার দুই রোল ছিলো সে বেশি বিদ্যালয়ে আসতো না। দুই শুভর মধ্যে একজন শুভ ছিলো ভিডিও গেমের পাগল। সে সময় বাজারে কিছু খেলনা জাতীয় ভিডিও গেম পাওয়া যেতো। নাম আমার ঠিক মনে নেই।
শুভ বাসায় গেম খেলতো আর ক্লাসে এসে আমাকে এসবের গল্প শোনাতো। এরপর সে বই এবং খাতায় গেমের চরিত্র গুলো এঁকে কলম দিয়ে আমাকে বুঝিয়ে দিতো এবং কলম ব্যবহার করেও সে গেম খেলতো।
বই এবং খাতার এমন কোন পৃষ্টা ফাঁকা ছিলো না যে সে গেমের চরিত্র গুলো আঁকতো না। আমারো বেশ ভালোই লাগতো এগুলো দেখতে। আরেকজন যে শুভ নামের ছিলো সে খুব দুষ্টু ছিলো।
প্রতিদিন ক্লাসে এসে বিভিন্ন জনের সাথে গন্ডগোল পাকাতো এবং মারামারি করতো। আমি সবসময় সেই মারামারি ভেঙ্গে দিতাম। প্রতিদিন কম বেশি শুভ ম্যামের বেতের বারি খেতো।
আর একটি কমন বিষয় ছিলো, সেটি হলো শুভর শার্টের বোতাম প্রতিদিন ছিঁড়ে যেতো। যেহেতু সে মারামারি করতো তাই এমনটা হতো। তার সাথেও আমার বেশ সখ্যতা ছিলো।
এরপর আসি মারুফার কথায়। মারুফা খুব শান্ত এবং সরল একটি মেয়ে ছিলো। কথা কম বলতো। প্রচণ্ড রকমের মেধাবী ছিলো সে। তার সাথে পড়াশোনা নিয়ে প্রায় কথা বলতাম। টিফিনের সময়ে দুই শুভ আর আমি মিলে মারুফার টিফিন খেতাম।
তার খাবারে বেশ অনিহা ছিলো। এছাড়াও মারুফা আমাদের বিভিন্ন রকমের খেলা শিখাতো। এর মধ্যে অন্যতম ছিলো গুটি খেলা।
সে বিভিন্ন রকমের ছোট ছোট পাথর নিয়ে আসতো আর হাতের বিভিন্ন কারিশমা দেখিয়ে এবং পাথরগুলো ব্যবহার করে বিশেষ এক ধরনের খেলা খেলতো।
আমাদের এখানে স্থানীয় ভাষায় যেটিকে বলে ‘ধাপ্পু”। যদিও খেলাটি মেয়েদের ছিলো তবুও বন্ধুরা মিলে খেলতাম। বেশ মজা হতো। এভাবেই চতুর্থ শ্রেণি পার করে পঞ্চম শ্রেণিতে উঠি। পঞ্চম শ্রেণিতে সব বন্ধু একসাথেই ছিলাম।
তবে তখন আমাদের সাথে আরেকজন বন্ধু যুক্ত হয়েছিলো যার নাম ছিলো মমিন। মমিন আমাকে ছাড়া কিছুই বুজতো না। ক্লাসে এক বেঞ্চে সবসময় বসতাম আমরা। একদিন আমি ক্লাসে আসতে দেড়ি করি।
এসে দেখি মমিন আমার জন্য দ্বিতীয় বেঞ্চে যায়গা করে রেখেছে। অন্য কাউকে বসতে দেয়নি। আমি খুব খুশি হয়েছিলাম বিষয়টি দেখে। কিন্তু কেউ একজন ক্লাস টিচারের কাছে এই বিষয়টি নিয়ে নালিশ করেছিলো।
পরে ম্যাম মমিনকে শাস্তি দিয়েছিলো। কান ধরিয়ে প্রায় অনেক্ষন দাঁড় করে রেখেছিলো এবং ম্যাম বলেছিলো যে আগে আসবে সে আগে বসবে। কখনই কারোর জন্যে কেউ যায়গা দখল করে রাখতে পারবে না।
যাইহোক পঞ্চম শ্রেণিতে প্রথম ছয় মাস ভালোই মজা করতাম সকল বন্ধুদের নিয়ে। কিন্তু ছয় মাস কেটে যাওয়ার পর বৃত্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি স্বরুপ পড়ালেখায় আমাদের মন দিতে হয়েছিলো।
তখন বেশি খেলাধুলার আর সুযোগ পাইনি। বন্ধুরা এই ছিলো বন্ধুদের নিয়ে আমার প্রথম পর্বের লিখা।
পরবর্তী পর্বে আমি হাই-স্কুল জীবনের বন্ধুদের নিয়ে ব্যক্তিগত কিছু কথা এবং ঘটনা আপনাদের উপহার দেবো। সেই পর্যন্ত সবাই ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন।
আজ আর নয় বন্ধুরা। ভালো থাকবেন সকলে। আল্লাহ্হাফেজ।
X-promotion link: https://x.com/AlRiaz76338/status/1799492820652511629
You've got a free upvote from witness fuli.
Peace & Love!
বন্ধুদের নিয়ে কিছু কথা শেয়ার করেছেন আপনি দেখে আজ মনটা ভরে গেল এবং আমারও কিছু বন্ধুর কথা আপনার পোস্ট পড়তে পড়তে মনে পড়ে গেলো।
জীবনে প্রথম শ্রেণী থেকে বন্ধু তৈরি হয়ে যায় এবং যত বড় হতে শুরু করি তত বন্ধু আমাদের জীবনে আসে তার ভেতরে সবাই আমাদের বন্ধু হয় না। কিন্তু কিছু বন্ধ হয়ে থাকে তাদেরকে কখনো ভুলা যায় না। বন্ধু শব্দ অনেক ছোট কিন্তু বন্ধুর ভেতরে অনেক কথা লুকিয়ে আছে অনেক ভালোবাসা লুকিয়ে আছে।
আপনার এই কথার সাথে আমি পুরোপুরি সহমত পোষণ করতে পারলাম না। কেননা বর্তমান সময়ে সঠিক বন্ধু পাওয়া খুব দুঃসাধ্য কর ব্যাপার হয়ে গেছে। প্রত্যেকটা মানুষ চেষ্টা করে একজন আরেকজনকে ঠকিয়ে দেয়ার জন্য এবং দিনশেষে দেখা যায়, বন্ধু নামক সেই শব্দটাও আজকাল কলঙ্কিত হয়ে গেছে। বন্ধু নামক শব্দটা দিয়ে মানুষ মানুষের ক্ষতি করে এটা করা আদৌ কি ঠিক।
তবে হ্যাঁ এটা অবশ্যই আমাদেরকে মানতেই হবে। এখনো পর্যন্ত এই পৃথিবীতে কিছু ভালো মানুষ আছে। তাই তো এই পৃথিবীর প্রত্যেকটা মানুষ ভালোভাবে বেঁচে থাকতে পারছে। বন্ধুত্ব যেমন খুব গভীর এবং ছোট একটা শব্দ। এর মাঝে লুকিয়ে থাকে অনেক মূল্যবান ভালোবাসা। আবার বন্ধুত্বের কারণেই মানুষ তার জীবনের মূল্যবান সম্পদ হারিয়ে ফেলে। কিছু কিছু বন্ধু রয়েছে যারা জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত তার বন্ধুকে সাহায্য করার চেষ্টা করে। ধন্যবাদ বিষয় নিয়ে আলোচনা করার জন্য। ভালো থাকবেন।
সত্যিই ভাই! বন্ধু নিয়ে কোন কিছু বলতে গেলেই মনে হবে কম বলে ফেললাম। এই বন্ধু শব্দটির মাঝে রয়েছে হাজারো স্মৃতি। আপনি আজকে বন্ধুকে নিয়ে পোস্ট শেয়ার করেছেন। সত্যিই আপনার পোষ্টটি পড়ে সেই ছোটবেলার স্মৃতিগুলো মনে পড়ে গেল। কতই না একসাথে দিন পার করেছি। অথচ এখন একেক জন, একেক শহরে।
বন্ধুদেরকে নিয়ে সুন্দর একটি পোস্ট শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।