"পরিস্থিতি বদলাতে একটি মুহুর্তই যথেষ্ট"

in Incredible India15 days ago (edited)
IMG_20240921_034030.jpg
"একটি খারাপ দিনের কিছু মুহুর্ত"

Hello,

Everyone,

পড়েছিলেন তারা প্রত্যেকেই হয়তো খেয়াল করেছেন, সাপ্তাহিক রিপোর্ট শেয়ার করার পূর্বে আমি জানিয়েছিলাম যে, গতকাল দিনের শেষ অংশ আমার খুবই খারাপ ভাবে কেটেছে।

গত প্রায় এক বছর যাবত মাঝে মধ্যেই আপনারা আমার লেখার মাধ্যমে আমার শ্বশুরমশাইয়ের শারীরিক অসুস্থতার কথা জেনে থাকেন। এর মধ্যে তাকে হসপিটালে ভর্তিও করতে হয়েছিলো। সেই বিষয়েও আপনাদেরকে জানিয়েছিলাম।

গত দুদিন ধরে তার ইউরিন ইনফেকশনের কারণে কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসছিলো। তার সাথে গতকাল সকাল থেকে তিনি বমি করছিলেন। যদিও আগের দিন রাতে কিছু খেতে পারেন নি কারণ, যেটাই খাওয়ানো হচ্ছিলো, সেটাই বমি হয়ে যাচ্ছিলো।

বিষয়টি ওনার ডাক্তারকে হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে জানিয়েছিলাম। কারণ প্রতি মঙ্গলবার সেই ডাক্তার আমাদের এখানে বসেন। বাকি দিনগুলোতে বেশ কিছুটা দূরের চেম্বারে নিয়ে যেতে হয়।

তবে শশুর মশাইকে নিয়ে এই মুহূর্তে ডাক্তার দেখাতে যাওয়াটা বেশ কঠিন। তার উপরে গত দুইদিন যাবত শরীরটা আরও বেশি খারাপ ছিলো বলে, শারীরিক অবস্থার কথা মেসেজের মাধ্যমে ডাক্তারকে জানিয়েছিলাম।

IMG_20240919_030634.jpg
"সকালবেলা ছাদে পিকলুর ঘোরাঘুরি "

সকাল থেকে দিনের বেশিরভাগ অংশ ওনাকে নিয়ে ব্যস্ততার মধ্যেই পার হয়েছিলো। তবে এর মধ্যেই প্রতিদিনকার সাংসারিক দায়িত্ব গুলেও পালন করতে হয়েছিল। শুভকে সময় মত অফিসের জন্য সমস্ত রান্না করে দেওয়ার পর, ও অফিসে বেরিয়ে গিয়েছিলো। ব্রেকফাস্টে শ্বশুর মশাই কিছু খাননি বলে আমি আর রুটি করিনি।

IMG_20240919_194024.jpg
"আমার সকালের চা"

আমি এবং শাশুড়ি মা দুজনেই চায়ের সাথে বিস্কুট খেয়ে নিয়েছিলাম। আসলে বাড়িতে কেউ বেশি অসুস্থ থাকলে খাওয়ার মন মানসিকতা একেবারেই নষ্ট হয়ে যায়। কিছুক্ষণ বাদে শুভর মামা বাড়ি থেকে ফোন এলো যে, শুভর ছোট মাসি আসছে আমাদের বাড়িতে।

ভেবেছিলাম আর কিছু রান্না করবো না। আমি এবং শাশুড়ি মা দুজনেরই দুপুরবেলায় কোনো রকমে ভাত খেয়ে নেবো। কারণ আগের দিনের তরকারির ফ্রিজে ছিলো। তাই আলাদা করে আর কিছু রান্না করবো না। কিন্তু যেহেতু শুভর মাসি আসছে, তাই অগত্যা শাশুড়ি মা বাধ্য হয়ে রান্না করতে গেলেন।

IMG_2024091_030705.jpg
"বৃহস্পতিবারে পুজোর আয়োজন"

বৃহস্পতিবারে পুজোর কাজ অন্যান্য দিনের তুলনায় একটু বেশিই থাকে। তাই আমিও মোটামুটি ঘরের কাজ শেষ করে স্নান করতে যাবো, এমন সময় শুভর মাসি এসে পৌছালো।
এরপর ওনার সাথে একটু কথা বলে, তারপর স্নান করতে গেলাম এবং স্নান করে পূজা দিতে বসলাম।

পুজো দেওয়া প্রায় শেষ পর্যায়ে, এমন সময় হঠাৎ করে শাশুড়ি মায়ের ডাক শুনে হন্তদন্ত হয়ে শ্বশুরমশাইয়ের রুমে গিয়ে দেখলাম শাশুড়ি মা বেশ কিছুটা অবাক হয়েছেন শ্বশুরমশাইয়ের বমি দেখে। বিষয়টা বুঝতে না পেরে যখন আমিও দেখলাম, এক মুহূর্তের জন্য সমস্ত কিছু স্তব্ধ হয়ে গেলো।

যেহেতু আগের দিন থেকে কিছুই খান নি, তাই ওনার পেটে কিছুই ছিল না। শুধুমাত্র জল বমি করবেন এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু ভয়টা পেয়েছি যখন কালো জল দেখলাম। এর পূর্বে এমন অভিজ্ঞতা আমার কখনোই হয়নি। তবে লোকমুখে বহুবার শুনেছি কালো বমি খুবই খারাপ।

আর যেহেতু শশুরমশাইয়ের লিভারের কন্ডিশন খুব বেশি ভালো নয়। সেখানে একটা টিউমার ধরা পড়েছে, যেটার ট্রিটমেন্ট ওনার বয়সের কারণে করানো সম্ভব নয়। তাই কালো রঙের বমি দেখে বিষয়টাতে আরো বেশি ভয় পেয়েছিলাম।

সেই মুহূর্তে কি করবো বুঝতে পারছিলাম না। প্রায় দিশেহারা অবস্থা। তাই প্রথম ফোনটাই করেছিলাম আমি আমার দিদিকে। দিদি জানালো যেহেতু উনি দুদিন কিছুই খাচ্ছেন না, তাই সেলাইন অবশ্যই দিতে হতে পারে। তার পাশাপাশি ঐ রকম বমি হওয়াটাও খুব খারাপ। তাই ওনাকে হসপিটালে নিয়ে যাওয়াটাই উচিত হবে।

সেই মুহূর্তে ওনার গা জ্বলে পুড়ে যাচ্ছিলো। কি করব কোনো কিছু বুঝতে না পেরে, ওনাকে প্রথমে একটা প্যারাসিটামল দিয়েছিলাম, যাতে অন্তত জ্বরটা ছেড়ে যায়। এরপর ওনার সমস্ত কাগজপত্র, ওষুধ এবং ডাক্তারের কাছে দেখানোর প্রেসক্রিপশন গুলো গুছিয়ে নিয়েছিলাম। কোথায় কোনটা প্রয়োজন হয় তার ঠিক নেই। তাই কোনটা যাতে তুলে না যাই, সেই কারণে কাগজপত্র গুছিয়ে নিলাম।

IMG_20240919_173303.jpg
"যাওয়ার সময় অ্যাম্বুলেন্সে বসে তোলা ছবি"

এর ফাঁকেই শুভকে এবং আমার ননদকে ফোন করে দিয়েছিলাম। শুভ অফিস থেকে একটা অ্যাম্বুলেন্সকে ফোন করে দিয়ে বাড়িতে চলে এসেছিল। এই সব কিছু করতে করতেই অ্যাম্বুলেন্স চলে আসলে, শ্বশুর মশাইকে কোনোক্রমে তুলে নিয়ে রওনা হলাম কল্যাণী এইমস হসপিটালের উদ্দেশ্যে।

কল্যাণী পৌঁছানোর পথটা এতো খারাপ ছিল যে, অ্যাম্বুলেন্সে স্থির হয়ে বসে থাকাটা একেবারেই অসম্ভব ছিলো। কিছুক্ষণ বাদে শ্বশুরমশাইয়ের শরীরে প্রচন্ড ঘাম দিয়ে জ্বর ছেড়ে গেলো এবং জ্বরটা কমে যাওয়ার পরে উনি একটু সুস্থ বোধ করছিলেন। এইমস এ পৌঁছে জানা গেলো সেখানকার চিকিৎসা পদ্ধতি অনুযায়ী, পেশেন্ট যদি ভীষণ সিরিয়াস কন্ডিশনে না থাকেন, তাহলে সেখানে ভর্তি করানো হয় না।

IMG_20240919_183737.jpg
"এইমস এর এমারজেন্সি গেটের সামনে"

তাছাড়া মেডিসিন বিভাগের মেল সেকশনে সেই মুহূর্তে কোনো বেড খালি ছিল না। সেই কারণে ওনাকে ওখানে ভর্তি করানো যায়নি। ওখানকার ডাক্তারদের সাজেশন অনুযায়ী আমরা কল্যাণীর জেএনএম হসপিটালে পৌঁছালাম এবং এমার্জেন্সি বিভাগে দেখানোর ব্যবস্থা করা হলো।

IMG_20240919_183558.jpg
"এইমস থেকে বেড়োনোর সময় তোলা,লেখা ছিলো- WE ❤ AIIMS KALYANI"

সেখানে গিয়ে উনি এত বেশি বিরক্ত করছিলেন যেটা ভাষায় বোঝানো সম্ভব নয়। তবে যেহেতু উনি ওনার অসুস্থতার কারণে অমন করছিলেন, তাই বিরক্ত হওয়ার থেকেও খারাপ লাগছিল বেশি। ওখানকার ডক্টর সমস্তটা জেনে ওখানে ওনাকে ভর্তি করার কথা বললেন। তবে ওই হসপিটালটা আমাদের বাড়ি থেকে এতটাই দূরত্বে যে, প্রতিদিন সকলের পক্ষে যাতায়াত করাটা সম্ভব না।

IMG_20240919_182811.jpg
"অন্য হসপিটালে যাওয়ার সময় তোলা"

ডাক্তারের সাথে আলাদা করে কথা বলে এবং রিপোর্টগুলো দেখিয়ে যেটা আমরা জানতে পারলাম, আসলে লিভারের সমস্যার কারণে হতে পারে। হয়তো ওনার লিভারের ভেতরে থাকা টিইউমারটি অনেকটা বেশি ছড়িয়ে পড়েছে, যে কারণে এই ধরনের উপসর্গ দেখা দিচ্ছে।

বাড়ির বাকিরা মিলে সিদ্ধান্ত নিলো শ্বশুরমশাইকে ঐ হসপিটালে ভর্তি করবেন না। যদি খুব প্রয়োজন হয় তাহলে আমাদের কাছাকাছি থাকা হসপিটালে ভর্তি করা হবে। তাই তাদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সেখান থেকে আবার পুনরায় আমরা বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা করলাম।

পরিস্থিতি সেই সময় কিছুটা স্থিতিশীল ছিলো। শশুর মশাইকে যে ডাক্তার নিয়মিত দেখানো হয়, মেসেজ করার পর তিনি কিছু মেডিসিন আমাদেরকে হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে জানিয়েছিলেন। তাই বাড়ির সকলে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল সেই ওষুধ গুলোই এখন চলবে। শরীর কিছুটা ঠিক হলে যদি প্রয়োজন হয় বাকি টেস্টগুলো করানো হবে।

IMG_20240919_030927.jpg
"ডাক্তারের পাঠানো ওষুধের নাম- হোয়াটসঅ্যাপ থেকে নেওয়া স্ক্রিনশট"

তবে যেমনটা আপনাদের আগেই জানালাম, ওনার শারীরিক কন্ডিশন ততটা ভালো নয় যে, লিভারের টিউমারের জন্য যে ট্রিটমেন্ট প্রয়োজন সেটা করানো সম্ভব হবে। তাই ওষুধের মাধ্যমে যতদিন সুস্থ রাখা যায়, আমাদের প্রচেষ্টা শুধু সেটাই।

সত্য কথা বলতে এই বিষয়গুলি সম্পর্কে আমরা হয়তো কম বেশি আন্দাজ করেছিলাম। কিন্তু হঠাৎ করে এরকম বমি হওয়াতে ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। হয়তো আগামী দিনে এই জিনিসটা আরো বেশি পরিমাণে হবে, যেমনটা ডাক্তার বললেন।

তবে নিজের কাছের মানুষকে প্রতিদিন এইরকম অবস্থায় দেখতে সত্যিই খুব খারাপ লাগে। তবে জীবনের বাস্তবতা এটাই, যেটা থেকে পালানোর কোনো উপায় নেই, সবটাই আমাদেরকে সহ্য করতে হয়, ইচ্ছা না থাকা সত্ত্বেও।

গতকাল বিকেলের ওই পাঁচ থেকে ছয় ঘন্টা আগে কিভাবে পার করেছি সেটা সত্যিই লিখে বোঝানো কঠিনস। তবে বাড়ি ফিরে শরীর ভীষণ ক্লান্ত ছিলো। কারণ গত দুদিন অনেক গরম পরছে, তার মধ্যে জার্নি করা আসলেই অনেক কষ্টকর।

যদিও এই মুহূর্তে আমি আমার দিদি বাড়িতে বসেই পোস্ট লিখছি, কারণ আজ আমি দিদি বাড়িতে এসেছি। আগামীকাল আবারও হাসপাতালে দৌড়াতে হবে দাদাকে নিয়ে। এইভাবে কেটেছিল গতকালের দিন এবং আগামীকাল দিনটিও আবার কিভাবে কাটবে সত্যিই জানিনা।

যাইহোক সকলে একটু প্রার্থনা করবেন যাতে শ্বশুরমশাই এবং দাদা সুস্থ থাকে। যদিও সম্পূর্ণ সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা শ্বশুরমশাইয়ের ক্ষেত্রে কম, তবে তারা যথেষ্ট হয়েছে। তাই সে বিষয়ে যতটা না চিন্তিত, তার থেকে অনেক বেশি চিন্তিত দাদার এই দ্বিতীয় অপারেশনের জন্য।

কারন, আপনারা হয়তো ছবির মাধ্যমে দেখেছেন দিদির বাচ্চা দুটো খুবই ছোটো। তাই ওদের মাথার উপর থেকে বাবার ছায়া নিশ্চয়ই ঈশ্বর এত তাড়াতাড়ি কেড়ে নেবেন না। এই বিপদ সকলে মিলে আমরা ঠিক কাটিয়ে উঠবো। আপনাদের সকলের আশীর্বাদ প্রার্থনীয়।

আমিও সকলের সুস্থতা কামনা করেই, আজকের শেষ করুক ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন। শুভরাত্রি।

Sort:  
 14 days ago 

প্রথমেই আপনার শ্বশুর মশায়ের সুস্থতা কামনা করছি, আমাদের শরীর অসুস্থ হলে অনেক সময় আমরা বিভিন্ন আবোলতাবোল কথা বলতে থাকি, যেগুলো অন্য মানুষের জন্য বিরক্তিকর এবং কষ্টকর হয়ে যায়, আশা করি আপনার শ্বশুরমশাই এবং দাদার অবস্থা স্বাভাবিক হবে, সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করি তিনি যেন তাদের দ্রুত সুস্থ করে দেন, ধন্যবাদ সুন্দর উপস্থাপনার জন্য।

Loading...
 14 days ago 

একদম ঠিক কথা দিদি পরিস্থিতি বদলাতে মানুষের একটুকুও সময় লাগে না। আপনার শশুর মশাই অসুস্থ এই কথাটা শুনেছিলাম। বাড়িতে এরকম অসুস্থ মানুষ থাকলে বাড়ির লোকের খুব কষ্ট হয়। ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করি, আপনার শ্বশুরমশাই তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে উঠুক।

CONGRATULATIONS!!

Your post has been supported by TEAM SHINING STARS. We support quality posts, good comments anywhere, and any tags.


1000152665.gif

Curated by : @wilmer1988