"মোক্ষদা একাদশী"

in Incredible India8 days ago
IMG_20241212_005900.jpg
"একাদশী উপলক্ষ্যে বিভিন্ন মন্দিরে রাধাকৃষ্ণের সাজ"

Hello,

Everyone,

আশাকরি আপনারা সকলে ভালো আছেন, সুস্থ আছেন এবং আপনাদের প্রত্যেকের আজকের দিনটি খুব ভালো কেটেছে। আমার দিনটিও আজ বেশ ভালো কেটেছে। আজ ছিলো মোক্ষদা একাদশী। প্রতি মাসে দুটি একাদশী থাকে এবং প্রত্যেকটি একাদশীর ভিন্ন নাম। এটি অগ্রহায়ণ মাসের শুক্লপক্ষের একাদশী, যা মোক্ষদা একাদশী নামে পরিচিত।

আগের একটা পোস্টে আমি আপনাদেরকে জানিয়েছিলাম, মা মারা যাওয়ার পর একটা বছর আমি একাদশীর ব্রত পালন করেছিলাম। কিন্তু সত্যি কথা বলতে, সেই সময় একাদশীর মাহাত্ম্য ততখানিও অনুভব করিনি। এটা বোধহয় বয়সের কারণেই।

IMG-20241211-WA0008.jpg

একটা বয়সের পর নিজের ইচ্ছায় বোধহয় আমরা এই জিনিসগুলোকে জানার চেষ্টা করে থাকি। আমি অবশ্য আমার দিদিকে দেখে বেশ কিছুটা অনুপ্রাণিত হয়েছি। দাদার অ্যাক্সিডেন্টের পর থেকে দিদি বিভিন্ন ব্রতের পাশাপাশি একাদশী ব্রত পালন শুরু করে। ধীরে ধীরে সবটাই ওর জীবনের অঙ্গ হয়ে উঠেছে।

তবে হ্যাঁ আমি নিজের ইচ্ছাই এই ব্রত পালন শুরু করেছি। দিদি কোনোরকম ভাবেই আমাকে জোর করেনি। ওর কাছ থেকে বিষয়গুলো শুনতে শুনতে, একাদশী পালনের নিয়ম গুলো জানতে জানতে, মনের কোণে কোথাও যেন সত্যি বাসনা জন্মেছে এই ব্রত পালন করার।

IMG-20241211-WA0009.jpg

আসলে সমস্তটাই আমাদের মনের বিষয়, মন থেকে না চাইলে কোনো কিছুই করা উচিত না। মাঝে এতগুলো বছর হয়তো মন থেকে ইচ্ছা করেনি বলেই আর একাদশীর উপবাস করা হয়নি। তবে এখন আবার নতুন করে শুরু করেছি। ঈশ্বর কৃপা করলে এইভাবেই পালন করে যেতে চাই আজীবন।

সত্যি কথা বলতে এটা এক প্রকার মানসিক প্রশান্তি দেয় আমাকে। এমনটা যে হবে এটা দিদি আমাকে পূর্বেই বলেছিলো। তবে মন থেকে করলেই কেবল মাত্রই প্রশান্তি অনুভব করা যায়। দিদিদের একটা হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ আছে, যেখানে এই একাদশীর দিনে বিভিন্ন মন্দিরে শ্রীকৃষ্ণের সাজ সজ্জার ছবি সকলে পাঠান। আর দিদিও সেই ছবিগুলো আমাকে হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে পাঠায়, যেগুলো আজ আমি আপনাদের সাথে এই পোস্টটির মাধ্যমে শেয়ার করলাম।

IMG-20241211-WA0000.jpg

আজকের একাদশী কেন মোক্ষদা নামে পরিচিত হলো, তার পিছনে একটি অলৌকিক কাহিনী রয়েছে। সেটা আমি নিজের মতো করে উপস্থাপন করার চেষ্টা করবো। চলুন তাহলে শুরু করি, -

মোক্ষদা একাদশীর দিনে প্রধান পু্জিত দেবতা হলেন শ্রীদামোদর। শাস্ত্রবিধি অনুসারে এই শ্রীদামোদরের পুজো করতে হলে, তুলসি পাতা, তুলসী মঞ্জুরী, ধুপ- দীপ ইত্যাদি উপাচার প্রয়োজন হয়। এই একাদশীর দিনে স্তব-স্তুতি করতে করতে রাত্রি জাগরণ করা উচিত।

"মোক্ষদা একাদশীর কাহিনী"

তবে এই একাদশীর পিছনে একটা অলৌকিক কাহিনীও রয়েছে সেটি হলো-

কোনো এক সময় চম্পক নগরে বৈখানস নামে একজন রাজা ছিলেন। তিনি একজন প্রকৃত বৈষ্ণব ছিলেন এবং তিনি তার রাজ্যের সমস্ত প্রজাগণদের নিজের সন্তানের মতন পালন করতেন। তার সেই রাজ্যে অনেক জ্ঞানীগুণী ব্রাহ্মণগণও বাস করতেন।

একদিন রাতে রাজা স্বপ্ন দেখলেন যে, তার পিতা নরকে বসবাস করছেন, ও তিনি অনেক কষ্টে আছেন। পরের দিন তিনি তার রাজ্যের বিশিষ্ট ব্রাহ্মণ গনকে ডেকে, তার রাতের স্বপ্নের কথা জানান। তার সাথে সাথে এটাও জানান যে স্বপ্নটি দেখার পর তিনি যথেষ্ট কষ্টে রয়েছেন। তার মনে হয়েছে তার পিতা যেন তার কাছে অনুরোধ করছে, ওনাকে এই নরক থেকে উদ্ধার করার জন্য।

কোনো দিশা না পেয়ে তিনি সকল ব্রাহ্মণগণকে ডাকেন এবং তাদের কাছ থেকে জানতে চান, কি উপায়ে তিনি তার পূর্বপুরুষদের মুক্তি দিতে পারেন। তখন ব্রাহ্মণগণ রাজাকে জানান, তার রাজ্যের কাছেই মহর্ষি পর্বত মুনির আশ্রম রয়েছে। তার কাছে যদি মুক্তির উপায় জানতে চাওয়া হয়, তিনি হয়তো বলতে পারবেন।

তখন রাজা ব্রাহ্মণদের নিয়ে সেই পর্বত মুনির আশ্রমে যান। তারা ঋষিবরকে প্রণাম করেন। রাজা তাকে তার স্বপ্নের কথা জানান এবং কি উপায়ে তিনি তার পিতাকে মুক্তি দিতে পারবেন তা জানতে চান। তখন পর্বত মুনি ধ্যনস্ত হওয়ার পর তাকে জানান, পূর্বজন্মে রাজার পিতা একজন অত্যন্ত কামাচারি ব্যক্তি ছিলেন, অনেক পাপ করেছিলেন জীবদ্দশায়।এই কারণেই তার ঐরূপ অধোগতি লাভ হয়েছে।

তাই ওনার সেই পাপ থেকে মুক্তির উপায় হিসেবে মুনি রাজাকে বলেন, অগ্রহায়ণ মাসের শুক্লপক্ষে রাজাকে মোক্ষদা একাদশী পালন করতে হবে এবং সেই পূর্ণ ফল তার পিতার উদ্দেশ্যে দান করে দিলে, তার পিতা নরক থেকে উদ্ধার পাবেন।

এরপর রাজা বাড়িতে ফিরে এলেন এবং এই মহাতিথির জন্য অপেক্ষা করলেন। যখন অগ্রহায়ণ মাসের শুক্লপক্ষ এলো, তখন তিনি স্ত্রী পুত্রাদি সহ সব নিয়ম মেনে এই একাদশীর ব্রত পালন করেন। তার পূণ্যফল পিতার উদ্দেশ্যে প্রদান করলেন। আর সেই মুহূর্তেই বৈখানস রাজার পিতা নরক থেকে মুক্ত হয়ে স্বর্গে গমন করেন।

IMG-20241211-WA0005.jpg

তখন থেকেই এই ব্রতের প্রচলন। যে ব্যক্তি এই মোক্ষদা একাদশী ব্রত পালন করেন, তার সমস্ত পাপ দূর হয় এবং মৃত্যুর পরে তিনি মুক্তি লাভ করে। এটাই হলো আজকের একাদশীর অর্থাৎ মোক্ষদা একাদশীর মাহাত্ম্য। আপনারা সকলেই এটি ইউটিউব বা অনলাইনে পেয়ে যাবেন, তাই যারা আরও বিস্তারিত জানতে চান অবশ্যই সেখানে পড়তে পারেন।

আজ মোক্ষদা একাদশীর পাশাপাশি গীতা জয়ন্তীও ছিলো। যেটা সম্পর্কে আমি আপনাদের সাথে পরবর্তী একটি পোস্টে আলোচনা করবো। আজকের মতো এখানেই শেষ করছি। আপনাদের কেমন লাগলো পোস্টটি পড়ে, অবশ্যই জানাবেন। ভালো থাকবেন সকলে। শুভ রাত্রি।

"পোস্টে ব্যবহৃত সবকটা ছবি হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে দিদির থেকে নেওয়া"

5c08ed51-26dc-462f-94f6-6f9e6e0fa2b4.gif

Sort:  
Loading...
 7 days ago 

আপনার পোস্টটি পড়ে খুবই ভালো লাগলো। একাদশীর মাহাত্ম্য এবং এর সাথে জড়িত ঐতিহাসিক কাহিনী সত্যিই ভাবনায় ফেলার মতো। এটি স্পষ্ট যে আপনি একজন নির্ভীক আত্মা, যারা ধর্মীয় কর্মকাণ্ডে নিজের বিশ্বাস এবং ইচ্ছায় পুরোপুরি আবদ্ধ। এই পোস্টে আপনার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা এবং আপনার দিদির অনুপ্রেরণার গল্প খুবই হৃদয়স্পর্শী।

আমার ইসলাম ধর্মে, যদিও এই ধরনের পূজাপাঠের প্রচলন নেই, তবে ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানগুলো যে ব্যক্তি বা সম্প্রদায়ের জীবনে শান্তি এবং মানসিক প্রশান্তি নিয়ে আসে, তা আমি সম্মান করি। আপনার এই অনুসন্ধানী মনোভাব এবং আন্তরিকতা সত্যিই প্রশংসনীয়।

আশা করি, আপনার এ পথচলা আরও সুন্দর হবে এবং আপনি মানসিক শান্তি এবং আত্মতৃপ্তি পেতে থাকবেন। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন।