বাস্তবতার সাথে লড়াই করতে কখনো কখনো মানসিক শান্তি বড্ড জরুরি হয়

in Incredible India3 days ago
IMG_20240331_121849.jpg
"আমার প্রিয় বান্ধবী রাখী"

Hello,

Everyone,

"গল্পটা গতকালের।"

আজ বেশ সকালবেলাতেই ঘুম থেকে উঠেছি। অন্যান্য রবিবার যদিও একটু বেলা করে উঠি, তবে আজ সকালে ঘুম ভেঙেছিল প্রিয় বান্ধবীর ফোন পেয়ে।

অনেকদিন যাবৎ আমরা কোথাও ঘুরতে যাওয়ার প্ল্যান করছিলাম, কিন্তু এই প্রচন্ড গরমের কারণে আর সাহস করে উঠতে পারছিলাম না। আর এখন শশুর মশাইয়ের অসুস্থতার কারণে হয়ে উঠছে না।

যাইহোক সকালে ওর ফোন পাওয়ায় বেশ টেনশনে পড়ে গিয়েছিলাম। কারণ এতো সকালে ওর ফোন করার কোনো কারণ ছিল না। যাইহোক ঘুম চোখে ফোনটা তুললাম। ও ওপার থেকে আমায় বলল, - "দাদার অফিস তো আজ ছুটি, চল কোথাও থেকে ঘুরে আসি।"

একটু অবাক হলাম, তারপরে বললাম কেন কি হয়েছে?

ও বলল না কিছু ভালো লাগছে না, চল ঘুরে আসি। তখন আমি ওকে জানালাম, - মাত্র কয়েকদিন আগে দিদি বাড়ি থেকে এসেছি। এখন কোথাও যেতে ইচ্ছা করছে না। ও আর বেশি কিছু না বলে ফোনটা রেখে দিলো। পরে ঘুম থেকে উঠে, আমি বিষয়টাই ভুলে গিয়েছিলাম। যথারীতি আমার নিত্যদিনের কাজেই ব্যস্ত হয়ে পড়লাম।

মাসের শেষ, তাই শুভকে অফিসে যেতে হয়েছে। তাই ও বেরিয়ে যাওয়ার পর, যে রকম ভাবে আমি কমিউনিটির কাজ নিয়ে বসি, তেমন ভাবে কাজ করছিলাম। হঠাৎ সেই বান্ধবীর বাবার ফোন থেকে আমার ফোনে কল এলো। আমি ভাবলাম বোধহয় ওর ফোনে ব্যালেন্স নেই, তাই বাবার ফোন থেকে আবার ফোন করেছে।

ফোনটা তুলে কথা বলতে যাবো, ঠিক তখনই দেখলাম ওর বাবাই কথা বলছে। আমাকে জিজ্ঞাসা করল, - রাখি আমাদের বাড়িতে পৌঁছেছে কিনা। আমি তো শুনে অবাক। ভাবলাম হয়তো সকালে ঘুমের ঘোরে আমি ভুল শুনেছি। ও হয়তো আমাদের বাড়িতে আসার কথাই বলছিলো। আমি ওর বাবাকে জিজ্ঞেস করলাম, - ও কখন বাড়ি থেকে রওনা করেছে? কারন তখনও পর্যন্ত আমাদের বাড়িতে এসে পৌঁছায়নি।

IMG_20240701_092244.jpg
"দীঘায় ঘুরতে গিয়ে তোলা ছবি"

ওর বাবা বলল অনেক সকালেই বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেছে। বাড়ি থেকে বলে এসেছে কোথাও ঘুরতে যাচ্ছে। আর সবাই জানে ও কোথাও গেলে আমি ওর সাথেই যাই। এই কারণে ওর বাবা আমাকে ফোন করেছে। হয়ত আমরা দুজন কোথায় একসাথে যাবো, এমনটা ভেবে।

আমি বললাম না সকালে আমাকে ফোন করেছিল কিন্তু আমি ওকে বলেছিলাম কোথাও যাবো না। তাহলে হয়তো অন্য কারো সাথে যেতে পারে। তুমি একবার ফোন করে দেখো। তখন ওর বাবা জানালো, - ও ফোন তুলছে না। আর গতকাল রাতে দাদার সাথে বাড়িতে একটু ঝামেলা হয়েছে, যে কারণে ওর মনটা বেশ খারাপ।

এ কথা শোনার পর থেকেই আমি টেনশনে পড়ে গেলাম এবং ওকে ফোন করতেই থাকলাম। ওর বাবার কথা শুনে মনে হচ্ছে ওকে নিয়ে যথেষ্ট চিন্তায় রয়েছে। যেটা খুব স্বাভাবিক। কিন্তু ফোন তোলেনি শুনে আমারও টেনশন আরো বেড়ে গেলো। আমিও একসাথে প্রায় আট দশবার ফোন করেছি ওকে, কিন্তু নো রেসপন্স।

এরপর বেশ কিছুক্ষণ অপেক্ষা করলাম এবং ওর বাবাকে ফোন করে জানালাম আমার সাথে কোনো রকম যোগাযোগ হলে আমি ওনাকে জানিয়ে দেবো। উনি যেন চিন্তা না করে। এরপর প্রায় ঘন্টা খানেক অতিক্রম হয়ে গেলেও, আমি মাঝেমধ্যে ওকে একবার করে কল করছিলাম ঠিকই, কিন্তু কিছুতেই ফোন তুলছিল না।

IMG_20240701_092040.jpg
"দুজনে একসাথে দক্ষিনেশ্বর ভ্রমণ"

দু ঘন্টা বাদে হঠাৎ করে ফোন করলো। ফোনটা তুলেই আগে আমি ওকে খানিক বকা দিলাম, আমার ফোন না তোলার জন্য। এরপর ও আমাকে জানাল ও দক্ষিণেশ্বরে গিয়েছে। সেখানে ফোন বাইরে জমা রেখে ভেতরে গিয়েছিল বলে, ফোন তুলতে পারে নি। জিজ্ঞাসা করলে ওর সাথে কে আছে।

বলল একাই গিয়েছে আমি প্রথমে বিশ্বাস করিনি। পরে ও আমাকে বলল আমাকে ফোন করার পরে আরো দুজন বান্ধবীকে ফোন করেছিলো। তবে তারা কেউই যেতে রাজি হয়নি। তাই একাই রেডি হয়ে বেরিয়ে পড়েছে। অন্য কোথাও না গিয়ে একাই দক্ষিণেশ্বর চলে গিয়েছে।

এরপর কথায় কথায় জানতে পারলাম গতকাল রাতে দাদার সাথে খুঁটিনাটি বিষয় নিয়ে ঝামেলা হয়েছে। আসলে মেয়েটি বরাবরের খুবই চাপা স্বভাবের, তাই ওর সমস্যা গুলো ও কাউকে বলতে চায় না ঠিকই, তবে আমি ওর কষ্টের জায়গা গুলো খুব ভালোভাবে অনুভব করতে পারি।

ওর মা মারা যাওয়ার পর বাড়ির সমস্ত দায়িত্ব ও উপরে। দুইবার চাকরির পরীক্ষায় পাশ করেছে কিন্তু ইন্টারভিউ এর জন্য ডাক পায়নি আজও। আমার থেকে বয়সে দুবছরের বড় অথচ এখনো পর্যন্ত বিয়ে হয়নি। আর ওর বোনদের বিয়ে হয়ে গেছে আরো অনেক বছর আগেই। এই সমস্ত কিছু মিলিয়ে ওর মানসিক কষ্টের জায়গা গুলো আমি বুঝতে পারি।

অনেকে আমাকে বলেছে যে, কোনো ছেলে দেখে যেন ওর বিয়ের ব্যবস্থা করি। কারণ ওকে বিয়ে না দিয়ে ওর দাদাও বিয়ে করতে পারছে না। কিন্তু বিশ্বাস করুন, আমার মনে হয় বিয়ে কোনো ছেলে খেলা নয়, যে হঠাৎ ইচ্ছে হলো যে কোনো কারো সাথে করে নিলাম।

IMG_20240701_092859.jpg
"অনেক পুরোনো ছবি,তখন বাস্তবতার সাথে পরিচয় হয়নি আমাদের"

মানুষ দীর্ঘ বছর মেলামেশা করার পরেও বিয়ের পর সমস্ত কিছু পরিবর্তন হতে দেখে। আর সেখানে একটা নতুন পরিবেশে মেলামেশা না করে একটা মেয়েকে জোর করে দিয়ে দিলেই জীবনের সব সমস্যার সমাধান হয় না। বরং নতুন সমস্যা যুক্ত হয়। তবে অনেকেই এই সাধারণ কথাগুলো বুঝতে পারে না।

রাখিকে আমি বরাবরই একটাই কথা বলি চাকরির পরীক্ষাটা যেমন দিচ্ছে দিতে থাকুক, কারণ ঈশ্বর বারংবার নিরাশ করে না। কিন্তু ওই যে কথা আছে সহ্য করার একটা সীমা থাকে। ওর উপরে যে মানসিক চাপ থাকে সেগুলো আমি বুঝতে পারি এবং এই কারণে মাঝে মধ্যে ও বাড়ি থেকে বের হতে চায়। একটু ভালো সময় কাটাতে চায়। যাতে একটু রিফ্রেশ হতে পারে।

তবে ঐদিন ওকে অনেক বকেছি এবং বুঝিয়েছি। ওর বাবারও বয়স হচ্ছে, হঠাৎ করে যদি এইভাবে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায় এবং কোনো খোঁজ খবর পাওয়া না যায়, তাহলে আমরা যারা ওকে ভালোবাসি, তারা ঠিক কতখানি টেনশনে পড়ে যাই।

ওর মনটা খুব খারাপ সেটা কথা বলি বুঝতে পেরেছি। অনেকবার আমাদের বাড়িতে আসতে বললাম কিন্তু রাজি হলো না। বললো, বাড়ি ফিরে যাই বাবা টেনশন করবে।

আমি জানি ও বাড়িতে গিয়েও চুপচাপ থাকবে। কারো সাথে কোনো কথাই বলবে না। এমনই মন খারাপ করবে ৩-৪ দিন।তারপর ধীরে ধীরে আবার সব ঠিক হবে।

এরকম ভাবেই বোধ হয় অর্ধেকের বেশি মানুষ প্রতিদিন নিজের জীবন যাপন করে। আমি নিজেও তার মধ্যে একজন।মেনে নেওয়া আর মানিয়ে নেওয়া এই দুটির বাইরে আসলে আলাদা করে আমাদের তেমন কিছু করার সাধ্য নেইস। আমরা চেষ্টা করতে পারি, কিন্তু তার ফলাফল কতখানি পাওনা হবে সে সিদ্ধান্ত উপরওয়ালার হাতে।

তবে আজকের ঘটনায় আমি বুঝলাম, মানুষ পরিস্থিতির শিকার হলে অনেক কিছুই করতে পারে। যে রাখি কাউকে ছাড়া বাজারে পর্যন্ত যায় না, সে আজ বাড়ি থেকে কতটা দূরে একা একা পৌঁছে গেছে শুধু একটু মানসিক শান্তি খুঁজে পেতে।

সত্যিই জীবনে সব পরিস্থিতি মানিয়ে নেওয়াটা অনেক কঠিন। তবে কঠিনকে জয় করেই হাজার হাজার মানুষ প্রতিদিন এই পৃথিবীতে বেঁচে থাকে। হয়তো এরই নাম জীবন।

"সবকটি ছবিই আমি পূর্বে আমার পোস্টে ব্যবহার করেছি"
Sort:  
Loading...
 3 days ago 

আসলে সন্তানের জন্য বাবার অনেকটাই টেনশন হয় যেমনটি আপনি আপনার বান্ধবীর বাবার কথা এই পোস্টের মধ্যে জানিয়েছেন।

যে আপনার বান্ধবী ফোন না ধরার কারনে আপনার বান্ধবীর বাবা খুব টেনশনে ছিল, এটা স্বাভাবিক যে একটি বাবা একটি সন্তানের জন্য অবশ্যই টেনশন করবে, আরো যদি বাড়ি থেকে রাগারাগি করে আসে তাহলে তার কথাই নেই।
যাইহোক আজকে আপনি আপনার বান্ধবী সম্পর্কে যে কথাগুলো শেয়ার করেছেন সেগুলো আসলেই চিন্তার ছিল।

 3 days ago 

প্রত্যেকের জীবনেই কিছু না কিছু দুঃখ থাকে। কেউই সুখী নয়। কিন্তু এই বাস্তবতার যুদ্ধ থেকে একটু প্রশান্তির খোঁজে মানুষ তার ভালো লাগার কাজ গুলো করে থাকে। কোথাও ঘুরতে যাওয়াটাও এর মধ্যে পড়ে। এজন্য কেউ যদি মানসিকভাবে বা শারীরিক ভাবেও ভেঙে পড়ে তাহলে ডাক্তার পরামর্শ দেন হাওয়া বদলের জন্য। আপনার বান্ধুবীর মতন আমিও আগে এভাবে কয়েকবার বেরিয়ে গিয়েছি। কিন্তু বেশী দূরে যাইনি। কাছাকাছিই ছিলাম। আমি যখন ফোন করে কোন বন্ধুকে বাইরে যাওয়ার জন্য রাজী করাতে পারিনা। তখন একাই বেরিয়ে পড়ি। রেস্টুরেন্টেও কত যে একা একা খেয়েছি। নিজেকে নিজে খুশী রাখতে পারলেই সব ঠিক। যদিও হুট করে এভাবে বেরিয়ে যাওয়া ঠিক না। কাছের মানুষজন দুশ্চিন্তা করবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু এতে একটু হলেও মানসিক শান্তি পাওয়া যায়।

TEAM 5

Congratulations! This post has been upvoted through steemcurator07 We support quality posts, good comments anywhere, and any tags.


SEARCH_team.webp

Curated by : @damithudaya

 3 days ago 

আমরা বেশিরভাগ মানুষই আসলে জীবন যাপন করে থাকি। সব কিছুর সাথে নিজেকে মানিয়ে নেয়ার চেষ্টা করি। এর ফলে নিজের ভালোলাগার অনেক কিছুই ছাড় দিয়ে থাকি।
আমি ব্যাক্তিগত ভাবে একটা জিনিস খেয়াল করেছি ,বিয়ে না করলেই একটা মেয়ে যেন পরিবারের খানিকটা বোঝা হয়ে উঠে। এটা আমাদের দেশের পরিপ্রেক্ষিতে বলছি ,আপনাদের ঐখানে এমনটা না'ও হতে পারে।
বিয়ে করলেই যেনো সব সমস্যার সমাধান। পরিবার যেন অনেকটাই হাপ ছেড়ে বাঁচে। খারাপ লাগলো আপনার বান্ধবীর কথা কথা জেনে। প্রার্থনা করি সব কিছু ঠিক হয়ে যেন যায়।

 2 days ago 

একদম অতি সত্য কথা এই ব্যস্ত সময়ের মধ্য নিজেকে একটু মানসিক শান্তি পাওয়া অনেক জরুরী। এবং বিশেষ করে আমি যতটুকু জানি আপনি সব সময় অনেক সমস্যার মধ্য দিয়ে গিয়েছেন। এবং আপনার শ্বশুর মশাই অনেক অসুস্থ এবং তার দেখাশোনা আপনি করেন।

একটি মানুষ যখন অসুস্থ থাকে তখন তার পেছনে অনেক সময় দিতে হয়। এটা আমরা সবাই অনুভব করতে পারি। যাই হোক আপনার বান্ধবীর সাথে ঘুরতে যাওয়ার কিছুটা আনন্দর মুহূর্ত আমাদের সাথে শেয়ার করেছেন এটা দেখে অনেক ভালো লাগলো।

 2 days ago 

একটা সংসার চালানো এতটা ও সহজ নয়। আপনি একটা সংসার চালান আপনি বেশ ভালোভাবেই জানেন, কতটা ব্যস্ততা আর কতটা কষ্টের মাধ্যমে পরিচালনা করতে হয়। যে মানুষটার মা নেই এবং দাদার সাথে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে মাঝে মাঝেই হয়তোবা সমস্যা হয়। সেই মানুষটার মন মানসিকতা কতটা ভালো হবে, সেটা আমি একটু হলেও অনুধাবন করতে পারি।

অনেকেই আপনাকে বলে তাকে বিয়ে দেয়ার জন্য। তবে আপনি একেবারেই ঠিক বলেছেন। বিয়ে কোন ছেলের খেলা নয়। হয়তোবা ভালো হতে পারে আবার খারাপ হতে পারে। তবে দেখে শুনে একজন ভালো ছেলে দেখে তাকে বিয়ে দেয়াটা উত্তম হবে। কেননা উনার মা নেই অন্তত ওনার স্বামী যেন উনার কষ্টটা বুঝতে পারে। এরকম একটা ছেলে খুঁজে বের করতে হবে।

এটা একেবারেই বাস্তব মানুষের মন খারাপ হলে মানুষ নিজের ইচ্ছামত যে কোন জায়গায় চলে যায়। তিনিও হয়তো বা তার মনের কষ্টগুলো দূর করার জন্য, দক্ষিণেশ্বর গিয়েছেন। আমি ঠিক জানিনা তিনি বর্তমান সময়ে কেমন আছেন। তবে সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করি। সৃষ্টিকর্তা যেন উনাকে সব সময় ভালো রাখে। ধন্যবাদ আপনার বান্ধবীর বিষয়টা আমাদের সাথে উপস্থাপন করার জন্য। ভালো থাকবেন।