দিদির সাথে ভবতারিণী মায়ের দর্শন- প্রথম পর্ব
|
---|
Hello,
Everyone,
আশাকরি আপনারা সকলে ভালো আছেন, সুস্থ আছেন এবং আপনাদের প্রত্যেকের আজকের দিনটি খুব ভালো কেটেছে। আজকের রবিবার, তাই একটা ব্যস্ততম দিন কাটিয়েছি আজ।
তবে দিন শেষে অনেকখানি আনন্দ নিয়ে আজকের পোস্ট লিখতে বসলাম। এই আনন্দ পাওয়ার কারণ অন্য কখনো আপনাদের সাথে শেয়ার করবো। কারণ আজ আমি আপনাদের সাথে শেয়ার করবো, আমার দিদির জন্মদিনের পর দিন আমাদের ঘুরতে যাওয়ার গল্প।
ঘুরতে যাওয়া বললে ভুল হবে, যেমনটা দিদির জন্মদিনের পোস্টে জানিয়েছিলাম আমরা দুজনে মিলে ঠিক করেছিলাম দক্ষিণেশ্বরে ভবতারিণী মায়ের দর্শন করতে যাবো। মূলত সেই কারণেই আমি সেদিন রাতে দিদি বাড়িতে থেকে গিয়েছিলাম।
|
---|
কথা হয়েছিল ভোরবেলায় তিতলি স্কুলে বেরিয়ে যাওয়ার পর, আমরাও বেরিয়ে পড়বো। তবে দিদি সকালে বেরোনোর আগে বাড়ির ঠাকুরের পুজো করে যেতে চাইলো। তাই আমরা আরো কিছুক্ষণ লেট করে বেরবো ঠিক করলাম। যেহেতু পুজো দেবো, তাই দুজনেই উপোস ছিলাম।
যাইহোক সব কাজ সেরে আমরা দুজনে রেডি হয়ে বেরিয়ে পড়লাম। প্রথমে ভেবেছিলাম ট্রেন ধরে মেট্রো স্টেশন পৌঁছাবো, কিন্তু পরে দিদি বলল অটো করে গেলে সময় কম লাগবে। যেমন ভাবা তেমনি কাজ। তাই অটো করে বেরিয়ে পড়লাম নোয়াপাড়া মেট্রো স্টেশনের উদ্দেশ্যে।
দমদম ক্যান্টনমেন্ট থেকে সেখানে যেতে দুটো অটো বদলি করতে হয়। যদিও দূরত্ব খুবই সামান্য, তবে ওই অটো দৌড়ত্য বলতে পারেন। এক এলাকার অটো অন্য এলাকায় ঢুকতে দেবে না। ফলতো সমস্যায় পড়তে হয় আমাদের মত সাধারণ মানুষদের। একবার নেমে আবার অন্য পাশের অটোতে ওঠার ঝক্কি।
|
---|
|
---|
যাইহোক তেমনভাবেই পৌঁছে গেলাম নোয়াপাড়া মেট্রো স্টেশনে। দিদির কাছে দুটো স্মার্ট কার্ড ছিলো। ফলে আর আলাদা করে টিকিট কাটতে হয়নি। চলন্ত সিঁড়ি ধরে পৌঁছে গেলাম প্ল্যাটফর্মে। প্ল্যাটফর্ম একেবারেই ফাঁকা ছিলো। বিশেষ করে দক্ষিণেশ্বরের দিকে প্ল্যাটফর্মে। কারণ সকালের দিকে সবাই অফিসের জন্য কলকাতার দিকে অর্থাৎ কবি সুভাষের দিকে যাত্রা করে।
|
---|
তাই ওই দিকের প্লাটফর্মে ভিড় থাকলেও, দক্ষিণেশ্বরের দিকটা একদমই ফাঁকা ছিল। খুব বেশি হলে দুই থেকে তিন মিনিট বসতে হয়েছিলো। এর মধ্যেই ট্রেন ঢুকে গিয়েছিলো। মাঝে শুধু মাত্র বরানগর স্টেশন, তারপরে ছিল দক্ষিণেশ্বর। আর এই দক্ষিণেশ্বর প্লাটফর্মই যাত্রাপথের শেষ প্ল্যাটফর্ম ছিলো, তাই ঐদিকে লোকের ভিড় নেই বললেই চলে।
|
---|
ট্রেনের জানালা দিয়ে খেয়াল করলাম দূরে তখনও কুয়াশা দেখা যাচ্ছে। তাই ট্রেনের ভিতরে বসেই কোনো রকমে একটা ছবি তোলার চেষ্টা করলাম। তবে কুয়াশা ততটাও স্পষ্টভাবে বোঝা যাচ্ছে না।
|
---|
ওই ছবিটা তোলার পরেই খেয়াল আমাদের পেছনে জানালা দিয়ে রোদ্দুর পড়ে আমার ও দিদির ছায়াটা বেশ ভালো লাগছিল মেট্রোর ভিতর। তাই ক্যামেরা দিয়ে সেটাও তোলার চেষ্টা করলাম। ছবিটা দেখে আশাকরি দেখে বুঝতেই পারছেন ফোনটা আমার হাতে রয়েছে।
|
---|
বরানগর স্টেশন পার করতেই হাতে গোনা কয়েকজন রইলাম ট্রেনের কামড়াতে, যারা সকলেই নেমে গেলাম পরের স্টেশনে। দক্ষিণেশ্বরে মেট্রো স্টেশন থেকে বেরিয়ে চোখে পড়ল দক্ষিণেশ্বর মন্দিরের আদলে তৈরি একটা দেওয়াল। দিদিকে দাঁড় করিয়ে তাই ছবিটি তুলে নিলাম।
এরপর পায়ে হেঁটে সেখান থেকে পৌছালাম স্কাই ওয়াকে। সেখান থেকে পায়ে হেঁটে ৮ থেকে ১০ মিনিটে পৌঁছে গেলাম দক্ষিণেশ্বর মন্দিরের মূল গেটে। সত্যি বলতে এই স্কাই ওয়াক হওয়ার পর, মন্দিরে পৌঁছানোর কোনো সমস্যা নেই। কারণ এর আগে যখন রাস্তা পার হয়ে যেতে হতো, তখন বেশ সমস্যায় পড়তে হতো।
|
---|
স্কাই ওয়াকের মাঝেই সারিবদ্ধ দোকান গুলো সেই মুহূর্তে বেশিরভাগই বন্ধ ছিলো। কারণ তখন অনেকটাই সকাল ছিলো, সমস্ত দোকান তখনো খোলা হয়নি। এরপর একটা দোকান থেকে পুজোর ডালা নিয়ে, সেই দোকানে জুতো খুলে আমি আর দিদি মন্দিরের ভিতর প্রবেশ করলাম। সেখানে আলাদা জায়গায় ব্যাগ ও ফোন জমা রেখে, সোজা পৌঁছে গেলাম মায়ের মুখ দর্শন করার উদ্দেশ্যে।
দক্ষিণেশ্বরে পুজো দেওয়ার দু তিনটে লাইন হয়। তবে আমরা সর্বদা গিয়ে সব থেকে লম্বা লাইনে দাঁড়াই, কারণ ওই লাইনটাই কেবলমাত্র মাকে সামনাসামনি দর্শন করা যায়। বাদবাকি লাইনগুলো দিয়ে গেলে ভিড় কিছুটা কম হয় ঠিকই, তবে মাকে পাশ থেকে দর্শন করতে হয়।
আমি যতবারই গিয়েছি ততবার সামনে থেকে দর্শন করার চেষ্টা করেছি। কিন্তু লোকের ভিড়ে হয়তো কয়েক সেকেন্ডের জন্য দাঁড়ানোর সুযোগ পেয়েছি। সেটা নিয়েই লাইনে দাড়িয়ে আমি আর দিদি কথা বলছিলাম। ভিতরে থাকা পুরোহিত গুলো এতো বেশি তাড়া দেয় যে, মাকে ভালো হবে দর্শন করতে পারিনা।
তবে মা বোধহয় চেয়েছিলেন এই দিন ওনাকে মন ভরে দর্শন করি, এই কারণে আমাদের লাইনের ঠিক আগে যারা ছিলেন তারা ডালাটা হাতে দেওয়ার সাথে সাথেই মায়ের ফুল শেষ হয়ে গিয়েছিলো যেটি প্রসাদী হিসেবে আমাদের মতন ভক্তদের কে ওনার দিয়ে থাকেন। ঠিক সেই মুহূর্তেই পুরোহিত ডালা নেওয়া বন্ধ করে, মায়ের গলা থেকে জবা ফুলের মালা খোলার জন্য গেলেন। আর তখনই প্রায় দু থেকে তিন মিনিট সময় পেলাম মাকে দর্শন করার।
সে যে কি অনাবিল শান্তি তা আপনাদের সাথে সত্যিই ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়। কি অদ্ভুত এক প্রাণশক্তি আছে মায়ের মুখে, তা সত্যিই ব্যাখ্যা করার মতো নয়। এরপর মাকে দর্শন করে প্রণাম জানিয়ে, চরনামৃত নিলাম, সিঁদুর পড়লাম। যদিও আমার টিপটা একটু ব্যাঁকা হয়েছিলো, তবে মায়ের সিঁদুর কপালে উঠেছে, এটাই অনেক বড় পাওনা।
|
---|
এরপর ওখান থেকে বেরিয়ে আমরা নিজেদের ব্যাগ ও মোবাইল নিয়ে নিলাম। তারপর দুজন মিলে বেশ কিছু ফটোগ্রাফি করেছি এবং সেখান থেকে আমরা আরও একটা মন্দিরে গিয়েছিলাম। সেই বিষয়ে আপনাদের সাথে পরবর্তী পোস্টে কথা বলবো।
তবে যে মন্দিরটিতে গিয়েছিলাম সেই মন্দিরের কোনো ছবি তুলতে পারিনি। কারণ সেটা নিষিদ্ধ ছিলো। তবে নিজের চোখে যেটা দেখেছি, তার বর্ণনা অবশ্যই আপনাদের সাথে শেয়ার করতে চাইবো। আশা করছি আপনাদের ভালো লাগবে। শুভরাত্রি। ভালো থাকবেন।
Thank you so much for your support @adeljose Sir.