"ক্রিকেট বিশ্বকাপ-২০২৩ ফাইনাল খেলা দেখার অনুভূতি"
Hello,
Everyone,
বেশ ভারাক্রান্ত মন নিয়ে আজকের পোস্ট লেখা শুরু করছি। না, ব্যক্তিগত কোনো কারণে নয়, আজ মনটা খারাপ একজন ভারতীয় হিসেবে। বিশ্বকাপ ক্রিকেটে আরো একবার অবিশ্বাস্যভাবে ভারতের পরাজয়, আজ মনটা খারাপ করে দিলো।
আপনাদের মধ্যে অনেকেই জানেন, আমি ক্রিকেটপ্রেমী নই। ক্রিকেট খুব ভালোভাবে বুঝতে পারি এমনটাও নয়, তবে বিশ্বকাপের একটা আলাদাই মূল্য। তাই বিশ্বকাপ ফাইনাল দেখাটা নেশা না হলেও, আগ্রহ বলতে পারেন।
আর সেই আগ্রহ নিয়েই আজকে খেলা দেখতে শুরু করেছিলাম। বোধহয় এই প্রথমবার সকাল থেকে তাড়াহুড়ো করে সংসারের সব কাজ শেষ করেছিলাম, শুধুমাত্র খেলা দেখব বলে।
আমার হাজব্যান্ড ক্রিকেট পাগল বললেও ভুল হবে না। বিশ্বকাপের প্রত্যেকটি খেলা দেখতে না পেলেও, কোনো খেলারই হাইলাইট কখনো মিস করেনি। আমি নিজে ক্রিকেট না দেখলেও ওর কাছে গল্প শুনতে শুনতেই মনে হয় যেন অর্ধেক খেলা আমি দেখে নিয়েছি।
সমস্ত প্লেয়ারদের টিভিতে দেখে আমি যত না চিনেছি, ওর কাছে গল্প শুনে শুনে তার থেকে অনেক বেশি চিনেছি। ছোটবেলায় ও নিজেও অনেক ভালো ক্রিকেট খেলতো। আর ছোটোবেলা থেকেই ক্রিকেট খেলা দেখতেও পছন্দ করত। ওর প্রথম ব্যাট কেনার গল্প আমি আমার শাশুড়ি মার কাছে অনেকবার শুনেছি। যাক সেকথা অন্য কোনোদিন নিশ্চয়ই শেয়ার করব।
আপনারা সকলে নিশ্চয়ই জানেন, এইবার বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হয়েছে আমেদাবাদের নতুন স্টেডিয়ামে। স্টেডিয়ামটা অনেক সুন্দর। আর সারা স্টেডিয়াম জুড়ে শুধু ভারতের জার্সি গায়ে দর্শকদের ভীর।
এইবার বিশ্বকাপের শুধুমাত্র এই ফাইনাল ম্যাচটি হেরেছে। এর আগে বাকি দশটা ম্যাচের কোনো ম্যাচে কিন্তু ভারত হারে নি। সুতরাং ভারতীয় টিম যে ভালো নয়, এ কথা হয়তো আমার মতন আরও অনেকেই বিশ্বাস করবেন না।
কিন্তু কখনো কখনো মানুষের দিন ভালো যায় না, তার জন্য সত্যিই কোনো কারনের প্রয়োজন হয় না। আজ সকাল থেকে সমস্ত কাজ সেরে নিয়ে স্নান করে, যখন পুজো দিতে বসলাম, তখন সবেমাত্র টস হয়েছে এবং অস্ট্রেলিয়ার ক্যাপ্টেন জেতার পরেই ফিল্ডিং বেছে নিলো। সেই সময় আমার কেন জানি না মনে হল, ইন্ডিয়া প্রথম ফ্লিডিং করলে ভালো হতো।
কিন্তু শুভ বললো এটা কোনো ব্যাপার নয়, ভালো খেললে দুটোই মধ্যে যে কোনো একটা বেছে নিলেই হয়। যেহেতু আমার থেকে ও অনেক ভালো ক্রিকেট বোঝে, তাই ওর সঙ্গে তর্ক করলাম না। ভাবলাম বোধহয় এটাই ভালো হলো।
এরপর শ্বশুর মশাইকে ও পিকলু কে লাঞ্চ দিয়ে শুভর সাথে আমিও বসলাম খেলা দেখতে। সত্যি কথা বলতে খেলার শুরুটা দেখতে সত্যিই ভালো লাগে। যখন দুটো টিম একত্রে মাঠে নামে এবং দুই দেশের জাতীয় সংগীত পরিবেশন করা হয়।
দেশের জন্য হয়তো কখনোই ব্যক্তিগতভাবে কিছু করা হয়নি, কখনোই এমন কোনো কাজ করিনি যা দেশের ও দশের কাজে আসতে পারে। কিন্তু দেশের জাতীয় সংগীতের মধ্যে একটা অন্যরকম টান আছে, যেটা শুনলে এমনিতেই শরীরের রোমগুলো যেন দাড়িয়ে যায়। ভেতর থেকে গর্ব অনুভব করি ভারতীয় হিসেবে। আজও তার অন্যথা হলো না।
জাতীয় সংগীতের পর্ব শেষ হলে, প্রথম ব্যাট হাতে মাঠে নামলো রোহিত শর্মা এবং শুভমন গিল। শুভর অনেক আশা ছিল এরা দুজন অনেক ভালো খেলবে। বলতে পারেন ওর কথা শুনে আমিও হয়তো আশা করছিলাম ওরা ভালো খেলবে। কারণ ইন্ডিয়ান ক্রিকেট টিমের কে কত ভালো খেলে সে সম্পর্কে আমার সত্যিই অতটাও আইডিয়া নেই। প্রথমদিকে বেশ ভালোই লাগছিল দেখতে।
যখন গিল আউট হলো মনটা খারাপ হলো, আর রোহিত শর্মা যখন আউট হলো শুভ খাট থেকে নেমে উপরে চলে গেলো বুঝলাম ও নিরাশ হয়েছে। আমি তখনও বসে দেখে চলেছি। এরপর লাঞ্চ করার টাইম হলো, খেলা দেখতে দেখতে আমি, শাশুড়ি মা ও শুভ একসাথে লাঞ্চ করলাম।
তারপর আবারও উইকেট পড়ল। খাওয়া-দাওয়া শেষ করে শুভ করে চলে গেল উপরে। আর আমিও গিয়ে বিশ্রাম নিলাম। সত্য কথা বলতে তখন মনটা ভেঙে গিয়েছিল। আর বসে খেলা দেখতে একটু টেনশন ও হচ্ছিল।
তবে আমার শ্বশুর মশাই কিন্তু বসে সম্পূর্ণ খেলা দেখেছেন। সন্ধ্যা বেলায় আমি যখন সন্ধ্যা দিতে উঠলাম, তখন দেখলাম অলরেডি ৮ টা উইকেটপড়ে গেছে। আর লাস্ট দুই বল বাকি। শেষমেষ ২৪০ রানে গিয়ে ইন্ডিয়ার খেলা শেষ হলো।
ব্রেকের কিছুক্ষণ পরে অস্ট্রেলিয়া ব্যাট করতে শুরু করলো।শুরুর দিকে যখন দুটো উইকেট পড়েছিল, অনেক বেশি আনন্দ পেয়েছিলাম। ভেবেছিলাম এইভাবে যদি আরো কয়েকটা উইকেট পরে, তাহলে ভারতের জিতে যাওয়ার একটা চান্স আছে। সেই আশা নিয়েই বেশ কিছুক্ষণের জন্য কমিউনিটির কিছু কাজ শেষ করার জন্য উঠে গেলাম।
সেই কাজগুলো সম্পূর্ণ করে আসার পরে দেখছি, তখনও মাত্র তিনটা উইকেটে পড়েছে। এরপর খেলা এগোলো এবং আস্তে আস্তে বুঝতে পারলাম যে,ইন্ডিয়ার জেতার আর কোনো সম্ভাবনা নেই।
খেলা যখন একদম শেষের পথে, তখন মনটা অনেক বেশি খারাপ হচ্ছিল। অন্যদিকে শশুর মশাইয়ের ডিনার করার টাইম হয়ে গিয়েছিল, তাই আমি রুটি তৈরি করতে চলে গেলাম। রুটি করতে করতে শুনতে পেলাম অস্ট্রেলিয়া জিতে গেছে।
অস্ট্রেলিয়া টিমের প্লেয়ার হেড এত ভালো খেলেছে যা সত্যিই প্রশংসনীয়। কিন্তু তবুও নিজের দেশের জন্য অনেক বেশি মন খারাপ নিয়ে খেলার শেষের মুহূর্ত গুলো দেখলাম।
স্টেডিয়ামের সমস্ত দর্শকের উত্তেজনা তখন একদম তলানিতে। আজ অস্ট্রেলিয়ার জায়গায় যদি ইন্ডিয়া জিততো, তাহলে দর্শকের উত্তেজনায় বোধহয় স্টেডিয়ামে মাইকের প্রয়োজন হতো না।
তারপরেও বাজি, আলো সবকিছুর মাধ্যমেই উদযাপন হলো অস্ট্রেলিয়া টিমের বিশ্বকাপ বিজয়ের মুহূর্ত। এক এক করে পুরস্কার বিতরণী হল। রোহিত শর্মা এবং বিরাট কোহলির মুখটা দেখে সত্যিই খারাপ লাগছিল। অন্য একজন প্লেয়ারের কান্না দেখে মনটা সত্যি অনেক বেশি খারাপ হয়ে গেলো।
তখন একবার ভাবলাম **আমি নিজে ক্রিকেট প্রেমী নই তবুও আমার মধ্যে এতটা খারাপ লাগা কাজ করছে। যারা ক্রিকেটপ্রেমী তাদের কষ্ট ঠিক কতটা। আর যারা খেলেছে তাদের কষ্টটা বোধহয় আমরা আন্দাজ ও করতে পারব না।
গোটা টুর্নামেন্টে টোটাল ১১ টা ম্যাচ খেলার পর ১০টা ম্যাচে বিজয়ী হয়ে, যদি ফাইনালের ম্যাচটা হারতে হয়, সেই খারাপ লাগার ভারটা বহন করা বোধহয় এতটাও সহজ কাজ নয়।
এরপর সকলকে এক এক করে পুরস্কার দেওয়া হলো এবং সর্বশেষে বিশ্বকাপটি তুলে দেয়ার জন্য স্টেজে আমন্ত্রণ করা হয়েছিল আমাদের প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদি মহাশয়কে। মঞ্চে উঠে তিনি বিজয়ী দলের ক্যাপ্টেনকে বিশ্বকাপ তুলে দিলেন। এরপর দলের সকলে স্টেজের উপরে উঠে নিজেদের বিজয়ী মুহূর্তগুলো উদযাপন করল।
নিজের দেশের জন্য খারাপ লাগার ভাবনা সরিয়ে মন থেকে অস্ট্রেলিয়াকে অনেক শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। কারণ একদিকে তাদের ফিল্ডিং অসাধারণ ছিল। অন্যদিকে তাদের ব্যাটিংও ততটাই প্রশংসনীয় ছিল।
খারাপ লাগা এটাই যে এই টুর্নামেন্টের কোনো ম্যাচ না হেরে, শেষ পর্যন্ত ফাইনাল ম্যাচটিতে গিয়ে আমাদের টিম হেরে গেলো। আবারও চার বছর অপেক্ষা। তবে আশা করছি সামনের বারের বিশ্বকাপটা অবশ্যই আমরা পাবো।
যাইহোক এরপর খেলা শেষ হলে, আমরা সকলে ডিনার করলাম। শুভ সম্পূর্ণ চুপ হয়ে গিয়েছিল। ওর খারাপ লাগাটা অনেক বেশি ছিল বলে, আলাদা করে ওর সাথে খেলা বিষয়ে কোনো কথা বলা হয়নি। ডিনার শেষ করে,,কাজগুলো গুছিয়ে এসে,।এখন আমি লিখতে বসলাম। এরপর পোস্ট করে আমি শুতে যাবো। সকলে ভালো থাকবেন। শুভরাত্রি।
আজকের পোস্টে যে ছবিগুলো ব্যবহার করেছি, প্রত্যেকটি ছবি আমি টিভি থেকে মোবাইলের মাধ্যমে ছবি তুলেছি।
আমরা বিশ্বকাপ শুরু থেকেই খেলা দেখে আসছি, ইন্ডিয়া প্রত্যেকটা ম্যাচ অনেক সুন্দর খেলেছে। এবং সকলের মুখেই একটিই কথা এবার কাপ ইন্ডিয়ার হাতে। কিন্তু ভাগ্যের খেলা, সব ম্যাচ জিতে ফাইনালে গিয়ে ভারাক্রান্ত হৃদয় নিয়ে ফিরতে হলো।
খেলা দেখার সময় স্টেডিয়ামের দিকে তাকিয়ে দেখি প্রত্যেকটা কনায় কনায় দর্শক জমে বসে আছে। শুধুমাত্র ইন্ডিয়া জয়ের অপেক্ষায়। কিন্তু সকলকে মন বেজার করে বাড়িতে ফিরতে হয়েছে, আপনি ঠিকই বলেছেন যদি ইন্ডিয়া আজকে জিততে পারত তাহলে অবশ্যই মাইকের প্রয়োজন হতো না, সকলের আনন্দ উল্লাসে মেতে উঠত পুরো স্টেডিয়াম।
যদিও বর্তমানে আমাদের এলাকাতে কারেন্ট না থাকার কারণে। বিশ্বকাপ খেলা দেখতে পারিনি। কিন্তু আজকে আপনার খেলার অনুভূতি এবং খেলার সম্পর্কে বিস্তারিত রিভিউ জানতে পেরে, অনেক বেশি খুশি হলাম।
ক্রিকেট খেলা আমি নিজেও পছন্দ করি। কিন্তু দুর্ভাগ্য কারেন্ট না থাকার কারণে দেখতে পারি নাই। অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে, আপনার অনুভূতি এবং খেলার ভিডিওটা উপস্থাপন করার জন্য। ভালো থাকবেন।
দিদি আমি মনে করি ইন্ডিয়া বর্তমানে ওয়ার্ল্ডের সব থেকে বেষ্ট ক্রিকেট খেলে। কিন্তু গতকাল হয়তো তাদের ভাগ্য খারাপ ছিলো। আর কিছু রান করলে হয়তো খেলাটি অন্যরকম হতে পারতো। আর টস ভাগ্যটাও সেদিন ইন্ডিয়ার বিপক্ষে চলে গিয়েছিলো। যে টিম গত দশ ম্যচ জিতে ফাইনালে আসলো সেই টিম ফাইনালে হেরে যাবে এটা সত্যি মেনে নেয়ার মতো না।
যাই হোক দিনশেষে খেলায় হারজিত থাকবেই। আশারাখি সামনে ইন্ডিয়া ক্রিকেট টিম আরো শক্তিশালী হয়ে ওয়ার্ল্ড কাপ জয় করবে। ভালো থাকবেন।
জানিনা আপনার কতটা মন খারাপ হচ্ছে তবে আমি কাল রাতে ঘুমাতে পারি নাই। আমার আশেপাশে বন্ধুরা সবাই ভারতের বিপক্ষে আর আমি একমাত্র সেই ব্যক্তি যে সব সময় ভারতের পক্ষে।
এত কাছ থেকে যে বিশ্বকাপ হাতছাড়া হয়ে যাবে তা কখনোই কল্পনা করতে পারি নাই। 😭😭
সত্যি গতকালের ম্যাচে আমাদের টিম খুবই খারাপ খেলেছে। নকআউট ম্যাচে অস্ত্রেলিয়ার সামনে পড়লেই ভারতীয় ক্রিকেট দল খুবই খারাপ পারফর্ম করে আর কালকে তো ছিলো আবার বিশ্বকাপ ফাইনাল ম্যাচ। অস্ত্রেলিয়া যোগ্য দল হিসেবেই জিতেছে।
অস্ট্রেলিয়া বনাম ইন্ডিয়া ২ দলে ভালো খেলে কিন্তু ইন্ডিয়ার ভাগ্য খারাপ এ কারণে তারা হেরেছে ।অস্ট্রেলিয়ার ভাগ্য ভালো বিদায় তারা চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ।খেলায় হার-জিত আছে এই নিয়ে আমাদের কোন দুঃখ নাই ।