"একসাথে পথ চলা"
|
---|
Hello,
Everyone,
মাঝখানে কেটে গেছে ৪২ টা বছর। হাসি-কান্না, আনন্দ-দুঃখ, মত পার্থক্য, শাসন-আদর, পারস্পরিক ভুল বোঝাবুঝি, আর একে অপরকে অনেকখানি মানিয়ে নিয়ে কেটেছে তাদের সংসার জীবন।
আমি কথা বলছি আমার শ্বশুরমশাই ও শাশুড়ি মায়ের সংসার জীবনের। কাল যাদের বিবাহিত জীবনের ৪২ টা বছরে অতিবাহিত হয়েছে। ৪২ বছর আগে এই দিনে আগুনকে সাক্ষী রেখে, হিন্দুশাস্ত্রমতে একে অপরের সঙ্গে পথচলা শুরু করেছিলেন। জীবনের অনেক ওঠাপড়া অতিক্রম করে তবেই এইদিনে এসে পৌঁছেছেন ওনার দুজন।
প্রায় ৬০ বছরের জীবনে বেশিরভাগ সময় শাশুড়ি মা কাটিয়েছেন শ্বশুরমশাইয়ের সাথে। সম্বন্ধ করে তাদের বিয়ে হয়েছিলো, তবে সম্পর্কের গভীরতা অনেক ভালোবাসার বিয়ের থেকেও অনেকটাই বেশি। আসলে আগের মানুষদের চেষ্টা ছিলো সম্পর্ককে ধরে রাখার, আত্মকেন্দ্রিকতায় নয়।
ফলতো সংসার রক্ষা করার কারণে, দুজন দুজনের অনেক কিছু কখনো কখনো মানিয়ে নিয়েছেন, আবার মেনেও নিয়েছেন। আজকাল চারিদিকে যখন বিয়ে বা সম্পর্ক ভাঙার খবর শুনি, তখন এই সকল সম্পর্ক গুলো সামনে দেখলে সত্যিই ভালো লাগে।
এই পৃথিবীতে কোনো মানুষের চাহিদা সম্পূর্ণ হয় না কখনোই। হয়তো আমার শাশুড়ি মায়েরও অনেক চাহিদা এ জীবনে পূর্ণ হয়নি। কিন্তু শুধুমাত্র তা পূর্ণ হয়নি বলে, জীবনকে অন্যভাবে সম্পূর্ণতা দেওয়ার চেষ্টা করেননি। আসলে আগেরকার দিনে মানুষের মানসিকতা ছিল ভিন্ন, যার সাথে আজকালকার ছেলে মেয়েদের মানসিকতার মিল পাওয়া যায় না। এই কারণেই বোধহয় আজকালকার সমাজে পুরনো দিনের মানুষদের চিন্তাভাবনা খানিক হাস্যকর হয়ে উঠেছে।
আমার শশুর শাশুড়ির কথা বলি, অথবা আমার বাবা মায়ের কথা বলি, গল্পটা খানিক একই। ছোটোবেলা থেকেই আমি দেখেছি মায়ের সাথে বাবার প্রতিদিন কোনো না কোনো বিষয় নিয়ে কথা কাটি হতো। সংসারের টানাপোড়েন হোক, আমাদের পড়াশোনা হোক, অথবা ছোট ছোট কোনো বিষয় হোক, তা সত্ত্বেও দিন শেষে মানুষটা বাড়িতে না ফেরার পর্যন্ত তার জন্য অপেক্ষা করা, তারপর রান্না করা, তাকে নিজের হাতে খেতে দেওয়া, এই সমস্ত কিছুর মধ্যেই ছিল মায়ের সর্ব সুখ। ঠিক এমনটাই দেখেছি আমার শাশুড়ি মায়ের ক্ষেত্রেও। আজও তিনি নির্বিকারেই শশুর মশাইয়ের সেবা করে চলেছেন।
আমার লেখার মাধ্যমে হয়তো বেশিরভাগ সময় আমি শশুর মশাইয়ের শারীরিক অবস্থার কারণে আমার কতখানি কষ্ট হচ্ছে তা তুলে ধরেছি। কিন্তু অন্যদিকে আমার শাশুড়ি মায়ের খারাপ লাগাগুলো কখনোই তুলে ধরা হয়নি। সত্যি বলতে যে মানুষটার সাথে ৪২ বছর কাটিয়ে দিলো, সেই মানুষটাকে হাজার চেষ্টা করেও আর বেশি দিন বাঁচিয়ে রাখতে পারবে না, এই ভাবনাটাই হয়তো ওনাকে ভিতরে ভিতরে শেষ করে দিচ্ছে। তার উপরে প্রতিদিনকার শারীরিক পরিশ্রম, মানসিক চিন্তা, ধীরে ধীরে ওনাকে ভিতরে অনেক কষ্ট দেয়।
হঠাৎ করে গতকালই এই কথাগুলো আরও বেশি করে মনে পড়লো, যখন শ্বশুর মশাইয়ের সাথে শাশুড়ি মায়ের ছবিটি তুলছিলাম। আয়োজন তেমন কিছুই ছিল না। তবুও যেন হঠাৎ করেই সবটা হয়ে গেলো।
গতকাল ননদের ছোট ছেলের ফাইনাল পরীক্ষা শেষ হয়েছিলো। পরীক্ষা শেষ হলে মামা বাড়ি বেড়াতে আসবে এটা আগেই বলে রেখেছিল। আবার অন্যদিকে আমার মেজ মামাশ্বশুরের ছেলেরও পরীক্ষা শেষ হয়েছে, তাই ওরাও গতকাল আমাদের বাড়িতে আসার জন্য ফোন করেছল।
এই সমস্তটাই বোধহয় উপরওয়ালাই প্ল্যান করেছিলো, যাতে করে ছোটখাটো আয়োজনের মাধ্যমে শ্বশুর-শাশুড়ির জীবনের এই বিশেষ দিনটি আমরা পালন করতে পারি। আপনারা সকলেই জানেন, গত প্রায় দু বছর ধরে আমার শ্বশুরমশাই অসুস্থ। তাই বোধহয় এই বছরটা আরও বেশি গুরুত্ব দিলাম। কারণ আমরা জানিনা এমন দিন আর জীবনে ফেরত আসবে কিনা। এই একই কথা আমার শাশুড়ি মায়ের।
প্রথমে একটু কিন্তু কিন্তু করলেও পরে যখন আমরা সবাই মিলে আবদার করলাম, তখন আর মানা করতে পারেনি। কিছুই না সকলে মিলে এক জায়গায় কেক কাটার মাধ্যমে সেলিব্রেট করেছিলাম দিনটি। যদিও মানুষ হিসেবে কেক বেশ ছোটো হয়ে গিয়েছিল। তবে শাশুড়ি মা এই এগলেস কেক খান এবং দোকানে এক একটিই অপশন ছিলো, তাই অগত্যা ওই কেকটি আনতে হয়েছিল।
আজকের আধুনিক যুগে অনেক মেয়েরাই শাঁখা-সিঁদুর পরতে পছন্দ করে না। তবে পুরনো দিনের মানুষদের দেখেছি খুব যত্ন করে শাঁখা-সিঁদুর পড়তে। আমার শাশুড়ি মা প্রায়ই বলে এটি পড়ার ভাগ্য সবার হয় না। ছবিগুলো দেখতে দেখতেই হঠাৎ মনে হলো, একটা সময় হয়তো শাশুড়ি মাকে আর শাঁখা-সিঁদুর পড়তে দেখব না।
না জানি তখন ওনাকে কেমন লাগবে দেখতে। তবে আমি চাই শশুর মশাই বেঁচে থাকুক আরও কয়েক বছর। হয়তো কখনো কখনো বিরক্ত হই, কখনো ধৈর্য্য হারিয়ে ফেলি, কিন্তু গত কালকে যখন দুজনকে একসাথে বসতে দেখেছি, ভেতর থেকে একটা আনন্দ ও খারাপ লাগার মিশ্র অনুভূতি অনুভব করেছি।
যাইহোক দিনটিকে একটু স্মরণীয় করার চেষ্টা করেছি আমরা সকলে মিলে, জানিনা কতখানি আনন্দ ওনার পেয়েছেন। কিন্তু স্মৃতির পাতায় সুন্দর একটা দিন যুক্ত হয়েছে এটুকু বলতে পারি।
ভাবলাম আপনাদের সাথেও এই দিনটির কিছু স্মৃতি শেয়ার করি, হয়তো আপনাদের ভালো লাগবে। চাইলে আপনারাও আপনাদের প্রিয়জনদের এই দিনগুলোকে স্মৃতি করতে পারেন, বিশ্বাস করুন এই এক অনন্য অনুভূতি। যাইহোক ভালো থাকবেন সকলে। শুভরাত্রি।
celebration brings family together.. thankyou for sharing your precious moments with us..