বিছানাকান্দি ভ্রমণ ও তার সাথে জড়িয়ে থাকা দুঃখজনক স্মৃতি।
আমরা সেবার আমার হাসবেন্ডের কলিগদের সাথে সিলেট গিয়েছিলাম। আমরা যেদিন যাই তার পরের দিন ট্রেনে করে আমার হাসবেন্ডের ভাগ্নে ও ওর তিন বন্ধুও সিলেট যায়। আমাদের সাথে প্রতিদিনই ফোন কথা হতো আর রাতে ও সকালে দেখা হতো। আমাদের ফেরার তারিখও একই ছিল। আমরা সিলেটে গিয়েছিলাম পর্যটনের বাস রিজার্ভ করে।
যে কদিন ছিলাম ওই বাস নিয়েই ঘুরে বেড়িয়েছি। সব জায়গাতে অবশ্য বাস এ যাওয়া যায় নাই। কখনো নৌকা ,কখনো হেঁটে কিংবা রিকশাতে গিয়েছি। যেসব জায়গাতে গিয়েছিলাম এর মাঝে মাধবকুন্ড জলপ্রপাত,লালাখাল, জাফলং,বিছানাকান্দি প্রভৃতি জায়গা ছিলো। এটা ছিলো আমার প্রথমবার সিলেট ভ্রমণ যার কারণে সব কিছুই খুব সুন্দর লাগতেছিলো।
আগে কখনো চা বাগান দেখা হয় নাই আমার যার কারণে প্রথমবার চা বাগান দেখে মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিলাম । যদিও পরবর্তীতে মনে হয়েছে চা বাগান দেখতে হলে আর সবুজের সমারোহে ডুবে যেতে হলে সিলেটের চেয়ে শ্রীমঙ্গল অনেক বেশি ভালো। সবকিছুই ঠিক ছিলো কিন্তু একটাই সমস্যা ছিলো তখন অতিরিক্ত গরম আর রোদ ছিলো যার কারণে একসাথে রোস্ট আর সেদ্ধ দুটোই হতে হচ্ছিলো আমাদেরকে।
যাওয়ার দ্বিতীয় দিন রাতেরবেলা ঠিক হলো আমরা বিছানাকান্দি যাবো। সত্যি কথা বলতে এই নাম আমি আগে শুনি নাই যার কারণে এখানে যাওয়ার জন্য ইচ্ছেটা একটু প্রবলই ছিলো।রাতে ভাগ্নে এসে জানালো যে পরের দিন ওরাও বিছানাকান্দি যাবে। শুনে আমরা একটু খুশিই হলাম।
কিন্তু পরের দিন সকালবেলা আমাদের সাথে দেখা করে বলে গেলো যে ,ওরা ওদের প্ল্যান পাল্টেছে। ওরা রাতারগুল সোয়াম্প ফরেস্ট এ যাবে। তখন এই জায়গাগুলো পর্যটকদের কাছে অতটা পরিচিত ছিলো না ,মানুষজন কম যেত।
আমি নিজেও এর আগে কোনোদিন রাতারগুলের নাম শুনি নাই। ও আমাদের সাথে দেখা করে চলে যায়। আমরা নাস্তা করে কাছাকাছি কিছু সময় ঘুরে বিছানাকান্দির উদ্দেশ্যে যাত্রা করি। সিলেট থেকে বিছানাকান্দি ৩৫ কিমি দূরে অবস্থিত। এই জায়গার তিনদিকেই মেঘালয়ের উঁচু উঁচু পাহাড় ঘিরে রেখেছে।সেখানথেকে অসংখ ঝর্ণার ধারা নেমে এসে এখানকার ছোটোবড়ো পাহাড়ে ধাক্কা খেয়ে কলকল শব্দ ছড়িয়ে পরে চারিদিকে।
আমরা বাসে করে হাদারপাড় এসে অনেকটা জায়গা পায়ে হেঁটে নৌকা ঘাটে গিয়ে পৌঁছাই। এখানে এসে আমরা বেশ বড়ো একটা ইঞ্জিনচালিত ট্রলার ভাড়া করি ।সেখান থেকে ৪০ /৪৫ মিনিট সময় লাগে কিন্তু পাহাড়ি যদি হওয়ার কারণে এই নদীর কোথাও কোথাও অনেক গভীর আবার কোথাও একদমই পানি কম। আমাদের নৌকা কিছু সময় চলার পরে মাঝ নদীতে আটকে পরে। এখানেই আমাদের অনেক সময় চলে যায়। সবাই মিলে নৌকা থেকে নেমে নৌকাকে ধাক্কা দিতে থাকে আটকে থাকা অবস্থা থেকে বের হওয়ার জন্য। একসময় আমাদের নৌকা চলতে শুরু করে।
আমরা এগিয়ে যাই বিছানাকান্দির দিকে। আমরা কিছুক্ষন পরে বিছানাকান্দিতে গিয়ে পৌঁছাই। অসম্ভব সুন্দর আর পানির কলকল শব্দ শুনা যাচ্ছিলো। বাচ্চারা পানিতে নেমে ঝাপাঝাপি শুরু করে দিলো। কিন্তু সামান্য পরেই স্থানীয় কিছু লোকজন এসে আমাদেরকে বললো যে আপনারা যারা ঢাকা থেকে এসেছেন তারা উঠে পড়ুন কারণ লাশ পাওয়া গেছে একটা। তাকিয়ে দেখলাম আমাদের সামান্য দূরেই একটা লাশ রাখা। এরপর তারা আমাদেরকে পানিতে নামতে বাধা দেয়া শুরু করলো। সাথে আমাদের মন খারাপ হয়ে গেলো লাশ দেখে। আমরা সিলেটে ফেরত যাবো বলে সিদ্ধান্ত নিলাম। আমরা হোটেলে ফেরত এসে বিকেলে নাস্তা করতে গেলাম পাশেই।
এমন সময় আরেক ভাগ্নের কল আসলো ঢাকা থেকে যে ,হিমু মানে আমার যে ভাগ্নে সিলেটে এসেছে তাদের কোনো খোঁজই পাওয়া যাচ্ছে না। ও একজনের কাছে শুনেছে যে ওই গ্ৰুপের একজন মারা গেছে । আমরা ওকে বুঝতে চেষ্টা করলাম যে ওরা রাতারগুল গিয়েছে। কিন্তু ও জানালো যে শেষ মুহূর্তে ওরা প্ল্যান চেঞ্জ করে বিছানাকান্দি গিয়েছিলো।
তখন আমাদের মনে পড়লো সেই লাশের কথা। কিন্তু প্রথম প্রশ্নই আসলো ঐটা কার লাশ ছিলো। তখন আমরা কোন হাসপাতালে যাবোনা কোথায় যাবো কিছুই বুঝতে পারতেছিলাম না।
পরে জানতে পারলাম যে, ওরা ছোট একটা নৌকা ভাড়া করে সেটাতে বিছানাকান্দি যাচ্ছিলো।কিন্তু ওরা যেখান থেকে নৌকাতে উঠেছিল, সেই জায়গা অনেক গভীর ছিল।আর ছোট নৌকা হওয়ার কারনে নৌকায় উঠার সাথে সাথে কাত হয়ে যায় নৌকা আর আমার ভাগ্নের সাথে থাকা সাতার না জানা বন্ধু সাথে সাথে পানির নিচে চলে যায়। ওকে তোলার জন্যসাথে সাথে মাঝি সহ কয়েকজন লাফ দিয়েছিলো কিন্তু ওকে আার পাওয়া যায় নাই।
স্রোতে ভাসিয়ে ওকে বিছানাকান্দিতে নিয়ে যায়। যেখানে আমরা ওকে দেখেছিলাম। রাতেই ওর বন্ধুর লাশ নিয়ে ঢাকায় চলে আসে ওরা।এখনো মনে হলে কস্ট হয় যে, আমরা যে নৌকায় গিয়েছিলাম সেটায় ১০০ জনের বেশি লোক উঠা যায়। ওরা যদি আমাদের নৌকায় যেত ছোট নৌকা না নিয়ে তাহলে হয়তো এত কম বয়সে এমন মৃত্যু হতো না ছেলেটার।পরের দিন আমরাও ঢাকাতে চলে আসি।
আপনার সিলেটে বিছানাকান্দি ঘুরতে গিয়ে কতই না আনন্দ করেছেন। বিছানাকান্দি যাওয়া মাত্রই একটা দুর্ঘটনার স্বীকার হলেন আপনারা। আসলে বিপদ কখন আসবে, তা বলে কখনো আসে না। তবে হ্যাঁ! আমারও কিছু বন্ধুর বাড়ি সিলেটে। তারাও বলে যে, সিলেটের থেকে শ্রীমঙ্গল বেশি দেখতে সুন্দর।
ঘুরতে যাওয়ার এরকম দুঃখজনক ঘটনা নিয়ে পোস্ট শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ।
ঠিকই বলেছেন বিপদ কখন আসবে বলা যায় না। আর কার মৃত্যু যে কোথায় সেটাও জানার কোন সুযোগ নেই। নাহলে যে ছেলে সকালে হাসিমুখে কথা বলে গেল সে বিকেলে লাশ হয়ে গেল।
সিলেটের চেয়ে শ্রীমঙ্গল দেখতে সুন্দর হল সিলেটের ঘোরার অনেকগুলো স্পট আছে। অবশ্য করার জন্য শ্রীমঙ্গলেও আছে। কিন্তু চা বাগানের সৌন্দর্য সিলেটের চেয়ে শ্রীমঙ্গলেই বেশি।
চা বাগানের ঘুরে বেড়ানোর শান্তিই আলাদা। চমৎকার করে মন্তব্য করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
Oh yes! We support ANY quality post and good comment
ANYWHERE and at ANYTIME
Curated by : @patjewell
@patjewell,
Thank you so much, ma'am.
Pleasure! 🎕