পরিণতি- একটুকরো মনের কথা ছন্দে প্রকাশ।
সব সম্পর্ক আমৃত্যু জীবনের সাথে জড়িয়ে থাকে এমনটা কিন্তু নয়, তবে কিছু সম্পর্ক সঙ্গে না চললেও মনের মধ্যে এমন একটা গভীর ক্ষত সৃষ্টি করে রেখে যায়, সময় সময় যেটার বেদনা আমাদের কিন্তু আমৃত্যু বয়ে বেড়াতে হয়।
হতে পারে সেটা রক্তের সম্পর্ক, আবার হতে পরে সেটা রক্ত বহির্ভূত! কোনোটাই বিশেষ মানে আমার কাছে রাখে না, আমার কাছে নিস্বার্থ সম্পর্কের মূল্য সবচাইতে অধিক।
অনুভূতি রক্তের সম্পর্কের বাইরেও তৈরি হয় এবং তার স্মৃতি চিরকাল অমলিন হয়েও যায় অনেক সময়।
আমার সেই ছোট্ট বেলার বান্ধবী কবরী যে খুব অল্প বয়সে পরলোক গমন করেছে, তার কথা এবং তার সাথে বিজড়িত বহু স্মৃতি আজও আমার কাছে জীবন্ত। আমি যতদিন এই ধরায় থাকবো সেই স্মৃতি একইভাবে সযত্নে তোলা থাকবে আমার মনের মনিকোঠায়।
আবার এমন অনেক সম্পর্ক আছে যেখানে সম্পর্ক নিজের ইচ্ছে, সুবিধে এবং প্রয়োজন অনুসারে চলে।
যেখানে অনুভূতির চাইতে বাস্তব জীবনের নিজের নাক বাঁচানোর তাগিদ বেশি। ওই যে প্রবাদ আছে,
আগে এতটা বুঝতাম না, আসলে না ঠেকলে কেউই জীবনে কিছু শেখে না, কাজেই আমিও ব্যতিক্রমী নই!
মানুষের প্রকৃত রূপ দেখা যায় খারাপ সময় এবং বিপদে পড়লে।
আমরা যখন মানিয়ে নিতে পারি তখন সেরা, কিন্তু যখন মেনে নেবার পালা আসে তখন প্রকৃত রূপ বোঝা যায়।
এমনটা কেনো হবে বলুন তো? যেখানে সম্পর্কে কেবল একপক্ষ বুঝবে আর একপক্ষ বুঝিয়ে যাবে তার মতো করে চিরকাল!
আমার মনে হয়, যদি একপক্ষের সবটা বোঝার দায় থাকে সেটা আর যাইহোক কখনোই
নিস্বার্থ সম্পর্ক হতে পারে না।
যেসকল মানুষ আশা করেন যে, তাদেরকে সবসময় সবাই বুঝবে, তারা কি সেই মানুষগুলোর জায়গায় নিজেকে কখনো একবারের জন্য বসিয়ে বিচার করে দেখেন?
আমার মনেহয় একেবারেই নয়! আর ঠিক সেই কারণে সত্যের সন্মুখীন হলেই তারা পালিয়ে বাঁচেন।
ব্যাক্তি জীবনে, কাজের জায়গায় আমি এমন অনেক সম্পর্ক দেখেছি যেখানে শর্ত আরোপিত থাকে ভালোবাসায়। এটা করা যাবে, ওটা করা যাবে না!
ভালোবাসা না বাজার থেকে কেনা দ্রব্য সেই মানুষগুলো! যে তাদের গায়ে শর্তের ট্যাগ ব্যবহার করা হয়! এই পৃথিবীতে মানুষ তখনই কেবল অন্যের পরিস্থিতি, কষ্ট উপলব্ধি করে, যখন একই পরিস্থিতি দিয়ে তাদেরকে যেতে হয়!
আর এটাও বাস্তব, আজকে যা আমার, কালকে তা অন্যের হবে, কারণ আমার আগে সেটা অন্য কারোর ছিল।
কথাটা আমার নয়, স্বয়ং শ্রী কৃষ্ণ বলেছেন যা লেখা আছে গীতায়।
কাজেই, আজকের কবিতাটির নাম তাই রেখেছি
|
---|
ছিল না খাদ ভালোবাসায়,
না ছিল বিশ্বাসে;
মিশে ছিলে তুমি শরীর সহ,
নিঃশ্বাসে, প্রশ্বাসে!
মেনে নিতে নিতে, আর মানিয়ে নিতে,
কেটে গেছে বহু বছর।
কেবল দেখেছো নিজের সুবিধা,
পড়েনি মোর শূন্যতায় কভু তোমার নজর!
সত্যি, বড়ো কঠিন উভয় ক্ষেত্রে..
তুমি হোক বা আমি;
সুপ্ত উদ্দেশ্যের খবর,
সে কেবল জানেন অন্তর্যামী!
অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছি,
এক পা বাড়াতে অনুমতি নিয়েছি;
শর্ত পালনে প্রতিটি পা ফেলেছি,
যতটা পেরেছি সবটা শুনেছি!
একটু প্রতিবাদ সব ভুলিয়ে দেয়,
নিমেষেই অনুভূতি পা পিছিয়ে নেয়!
সকলেই মানুষ, মনে রাখে না কেউ;
সহ্যের বাঁধ ভেঙ্গে, একদিন আসেই
সহস্র অভিযোগের ঢেউ!
হাজার পদক্ষেপ আমি চলেছি মেনে;
সুবিধা ডিঙিয়ে আসোনি কখনো
আমার সকল কষ্ট জেনে!
লুকোচুরি যেখানে! সেটা আর যাইহোক,
ভালোবাসা কখনোই নয়;
সম্পর্ক আর যোগাযোগ,
শুধুমাত্র আড়ালেই যেখানে রয়!
অসুস্থ অবস্থায় পেয়েছি কটাক্ষ,
পাশে পাবার আশায়;
গেছো কি হাসপাতালে?
রয়েছ তো বাসায়!
পরিণতি সকলের শেষ হয় খাটে;
সমস্ত নালিশের ইতি শ্মশান ঘাটে!
বিবস্ত্র এসেছি, বিবস্ত্র যাবো,
একটি সুতো সঙ্গে কি পাবো?
রেখে যাবো কিছু কষ্টের কথা,
আর কিছু অভিমান;
উত্তর যার থাকবে না কোথাও,
শত খুঁজলেও অভিধান!
সম্পর্ক বেহাত হলে, হারিয়ে গেলে তখন সেই মানুষগুলোর কদর বুঝে কি লাভ?
প্রবাদগুলো আসলে যারা সৃষ্টি করেছেন তারা কিন্তু জীবনের অভিজ্ঞতা থেকেই সেগুলো তৈরি করে রেখে গেছেন আজকে যা মুখে মুখে প্রচলিত।
তারমধ্যে একটা যেমন বেশ শুনতাম ছোট থেকেই আর সেটা হলো,
আরো আছে, যেমন দাঁত থাকতে, দাঁতের মর্ম কেউ বোঝে না!
এরকম কত শত কথা যা হুবহু সম্পর্কের বিশ্লেষণ করতে গিয়ে মিলে যায়। যাইহোক, কবিতাটি আপনাদের কেমন লাগলো মন্তব্যের মাধ্যমে জানাতে ভুলবেন না। আপনাদের দৃষ্টিভঙ্গি জানার প্রতীক্ষায় রইলাম সম্পর্ক সম্বন্ধে। ভালো থাকুন সবাই, আর সকলকে শারদীয় শুভেচ্ছা জানিয়ে আজকের লেখায় ইতি টানলাম।
আপনার পোস্টটি পড়ে অনেক কিছু শিখতে পারলাম যেমন; না ঠেকলে কেউই জীবনে কিছু শেখে না, একটি প্রবাদ বাক্য আছে, জিজ্ঞেস তুমি শিখছো কোথায় উত্তরে আমি ঠকেছি যেথায়।
আপনার লিখিত কবিতাটি আমি কয়েকবার পড়েছি, পড়েছি এবং জীবনের সাথে ফিট করেছি, আপনি বাস্তব কথাগুলোই এখানে তুলে ধরেছেন। শেষ পরিণতি পর্যন্ত, আমরা যখন মৃত্যুবরণ করবো তখন আমাদের সাথে কিছুই যাবে না শুধু আমরা রেখে যেতে পারবো আমাদের কিছু লেখা আর কিছু অভিমান যেগুলো কোন অভিধানে খুজলেও তার অর্থ পাওয়া যাবে না।
অনেক সুন্দর একটি কবিতা আবৃত্তি করে আমাদেরকে অনেক কিছু শিখিয়েছেন বুঝিয়েছেন।
এত সুন্দর একটি কবিতা আমাদেরকে উপহার দেওয়ার জন্য আপনাকে অন্তরের অন্তস্থল থেকে প্রাণঢালা শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। সর্বদা ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন।
অসাধারণ একটি লেখা প্রকাশ করার জন্য ধন্যবাদ দিদি। সত্যি তাই, আমরা থাকা জিনিসের কদর করতে নারাজ। কিন্তু জিনিসটি যখন হারিয়ে তখন আফসোস ছাড়া আর কিছুই করার থাকে না আমাদের।
আমাদের মধ্যে অনেকেই আছে, থাকতে মূল্য দেয় না। বিশেষ করে বর্তমান সমাজে বাবা-মায়ের ক্ষেত্রে অনেক বেশি দেখতে পাই। তারপর দেখতে পাই পরিবারের ক্ষেত্রে। কিছু মানুষ বাবা মাকে এমন ভাবে অবহেলা করে যেন তাদের কোন মূল্য নাই। আবার পুরুষ শাসিত সমাজে, তার পরিবারের সদস্য তার নিজের বিয়ে করা স্ত্রীকে, এমনভাবে অবহেলা করে।
মাঝে মাঝে তো আমার কাছে মনে হয়, তার কোন মূল্যই নেই সে পৃথিবীতে বেঁচে থাকার কোন প্রয়োজন নেই। যখন চলে যায় তখন ঠিকই তার মূল্য বুঝতে পারে।
আপনার কবিতার প্রত্যেকটা লাইনের মধ্যে অনেক রহস্য লুকিয়ে আছে। প্রত্যেকটা লেখায় আপনি বুঝিয়ে দিয়েছেন বাস্তবতা কতটা কঠিন। জীবনটাকে একটু হলেও শুধরে নিতে হবে। অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে, এত সুন্দর একটা কবিতা আমাদের সাথে উপস্থাপন করার জন্য। ভালো থাকবেন।
কবিতাটা জাস্ট অসাধারণ। কিছু ক্ষেত্রে ভালো না লাগলেও আত্মীয়তার সম্পর্ক আমাদের মেনে নিতে হয় কিন্তু বন্ধুদের আমরা নিজে নির্বাচন করি।