বেলাশেষের রোদ্দুর! Late afternoon Sunshine!

in Incredible India2 days ago
1000043850.png

গরমে যে রোদ থেকে বাঁচতে আমরা হামেশাই ছাতার ব্যবহার করি, নাজেহাল হয়ে যাই কাজ করতে, অসহ্য লাগে সূর্য্যের রশ্মি থেকে নির্গত তাপ;
ঋতুর পরিবর্তন হতে না হতেই সেই রোদ্দুর বয়ে নিয়ে আসে স্বস্তি!

বেশ অনেক মাস্ হলো, আমি ছাদে উঠিনি, তবে গত পরশু ঘরের কাজের মাঝে ছিল কিছু ধোয়া কাচা, সেই কারণে কিছু জিনিষ আরেকটি ঘরে মেলে দিলেও একই দিনে কম্বলের কভার কেচে শুকিয়ে ফেলার প্রয়োজন ছিল।

এলার্জির কারণে আমি কভার ছাড়া কম্বল ব্যবহার করতে পারি না।
তাই ওটিকে ছাদে দেবার তাগিদে ছাদে উঠতেই হয়েছিল।
তবে, তখন এত কাজ বাকি ছিল ঘরে যে, মেলে দিয়েই নিচে নেমে এসেছিলাম।
মাথায় মাস্ক ব্যবহার করেছিলাম, সঙ্গে ভিটামিন ই ক্যাপসুল আর অ্যাম্ফুল দিয়ে, শ্যাম্পু করবো বলে।

এরপর, কাজ শেষ করতে সেই পৌনে চারটে বেজে গেছিলো। পুজো শেষে ভেজা মাথায় ছাদে চলে গিয়েছিলাম, কারণ হেয়ার ড্রায়ার থাকলেও আমি সচরাচর চুলে ব্যবহার করি না।

যদিও ঠান্ডা গরম দূরকমের হওয়া বের হয়, কিন্তু ছাদে মেলে রাখা কভার তুলতে যেতেই হবে, তাই, মোবাইল ফোন নিয়ে, ঘরের দরজা খোলা রেখে, শুধু সামনের গেটে তালা দিয়ে উপরে চলে গেছিলাম।

1000043581.jpg
1000043580.jpg
1000043582.jpg
1000043579.jpg
1000043578.jpg
Marigold flower - ওরফে গাঁদা ফুল

উপরে গিয়ে এদিক ওদিক একটু হাঁটাহাঁটি করে ছাদের বর্তমান পরিস্থিতি নিরীক্ষণ করতে করতে চোখে পড়লো, পূর্বের দিকের ছাদে ফুটে থাকা কিছু গাঁদা ফুলের সাথে একটি পূর্ণ প্রস্ফুটিত গোলাপী রঙের গোলাপ, জিনিয়া ফুল।

আরো বেশ কিছু ফুল ছিল, যেমন রজনীগন্ধা, আর নাম না জানা ফুল।

1000043571.jpg
1000043572.jpg
1000043575.jpg
1000043576.jpg
1000043574.jpg
1000043573.jpg
1000043577.jpg

এক্ এক্ করে তাদের ছবি তুলে নিলাম, এবার দেখি কভারের দুটো কোন সামান্য ভেজা, একটু উল্টে দিয়ে দেখি বেলা শেষের রোদ্দুর গোটা পশ্চিম আকাশ জুড়ে বেলা শেষের রোদ্দুর বিলিয়ে বিদায় জানাতে প্রস্তুত।

তাকে পিছনে সাক্ষী রেখে নিজের ছবি সাথে তার ছবি তুলতে গিয়ে রামধনু রঙের থেকে এক্ টুকরো সবুজ ছিটকে বেরিয়ে মোবাইল ক্যামেরা বন্দী হয়ে গেছে।

পশ্চিমের ছাদ থেকে দেখলাম, মাঠে খেলতে নেমে গেছে কিছু কুচো কাচার দল।
এই সময় ব্যাটমিন্টন খেলতে বেশ ভালো লাগে।

1000043597.jpg

1000043596.jpg
1000043598.jpg
1000043607.jpg

আমার দাদা প্রতি রাতে এই পেল্লাই একটা হ্যালোজেন লাইট লাগিয়ে ছেলের সাথে প্রতি রাতে দোকান থেকে ফিরে ছেলের সাথে খেলে, কিন্তু সঙ্গী বিহীন আমি শুধু দেখেই সন্তুষ্ট থাকি।

মনে পড়ে পুরোনো দিনের কথা, কিন্তু সময়ের সাথে অনেক পরিবর্তনের মাঝে অনেক কিছুই মেনে নিতে হয়েছে, জীবনে অনেক কিছুই হাতের বাইরে থাকে।

আরেকবার নিজের এলাকা দেখতে চলে গেলাম পূর্ব দিকের ছাদে, গিজগিজে উঁচু উঁচু বাড়ির মাথা ঘিরে রেখেছে পুরোটা এলাকা।

ভাগ্যিস একটি মাঠ এখনও অক্ষত রয়েছে, আসলে আমাদের এই এলাকায় প্রতিবেশী দেশের বহু মানুষ ঢুকে জাকিয়ে বসেছে, প্রোমোটারের ব্যবসা রমরমা, তাই বাড়ির চাইতে ফ্ল্যাট বেড়ে গেছে বহুগুণ।

তবে, এখনও পুরোনো বাসিন্দাদের মধ্যে অনেকেই নিজেদের বাড়ি অক্ষত রেখেছেন, এই যা বাঁচোয়া।

বাড়িতে বেড়ে ওঠার পর এই ফ্ল্যাট কালচারে আমার দম বন্ধ হয়ে আসে, খোলা উঠোনে খেলার মজাই আলাদা! আজও আমি আমার বাড়ী এবং পাড়াকে বড্ডো চোখে হারাই!
নেই সেই আসে পাশের মানুষের সাথে অবাধে যাতায়াত, না আছে একে অপরের বাড়িতে ভালো রান্না পাঠানোর চল, আর না আছে বিনা নিমন্ত্রণে অবলীলায় খেতে বসে পরার অধিকার।

1000043606.jpg
1000043605.jpg
1000043602.jpg
1000043603.jpg
1000043604.jpg
কিছু বাড়ী আজও অক্ষত এই যা বাঁচোয়া!

এখন সবটা নিজের নিজের ছোট্ট কুটিরে সীমাবদ্ধ! শ্বাস নিতে কষ্ট হয় মাঝেমধ্যে এই বদ্ধ পরিসরে! বাড়ী আমার সর্বকালের পছন্দের শীর্ষে। প্রতিবেশী শব্দের প্রকৃত মানে হারিয়ে যাচ্ছে দিন দিন, বিশেষত শহরে! নিজেদের ধনী প্রমাণিত করবার লড়াই সর্বত্র, আসলে এরা সবচাইতে বেশি দরিদ্র, যেটা উপলব্ধি করবার শিক্ষাই নেই এদের মধ্যে!

বাড়ী আর ফ্ল্যাট কালচারে বিস্তর ফারাক! তবে, যাদের পাকা বাড়ি করবার ক্ষমতা নেই, তারা প্রায় সময় টাকার লোভে এবং পাকা ঘরের কারণে জমি প্রমোটারকে দিয়ে দেয়, কিন্তু কোনোদিন ভুলতে পারে না, তার জমি আর বাড়ি এখন আর তার নেই, সেখানে পরিযায়ী পাখিদের ভিড় বেড়ে গেছে, যারা কোনোদিন দেশে ফিরবে না!

ফলস্বরূপ, না পারে নতুন কালচারে নিজেদের অভ্যস্ত করতে আর না পারে হাতছাড়া করা জমি বাড়ির মালিকানা ভুলতে!

1000043600.jpg
1000043601.jpg
1000043599.jpg

আমাদের এই ফ্ল্যাটের একই অবস্থা। যাক সেটি অন্য প্রসঙ্গ, তবে নিচে নেমে আসবার আগে বেলা শেষের রোদ্দুর কে বলে আসলাম, তুমি অমরত্ব লাভ করেছো কিন্তু মানুষ হিসেবে আমার অবস্থিতি ক্ষণিকের!

তাই প্রতিদিন জানালা দিয়ে তোমায় একবার উঁকি দিয়ে দেখি, আর আজকে আকাশ নামের ছাদের এক্ কোণে অস্তমিত তোমাকে বন্দী করে চললাম, কাল কি হবে বলা তো যায় না!

IMG_20241217_000659.jpg
আমার সুস্থতার রসদ এই খোলা আকাশ আর তারমাঝে প্রশান্তির নিঃশ্বাস!

আমি মানুষ, আমার কাছে সত্যি কেবল মুহুর্ত, তোমার শক্তির একাংশ ছোঁয়া আমার ভিতরের আমি কে উজ্জীবিত করে প্রতিনিয়ত।

তাই, লড়াই চালিয়ে যাচ্ছি ক্লান্তিকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে আজও, যেমনি তুমি মেঘের মাঝেও দিনেন জানান দিতে উপস্থিত হও!

তোমার উপস্থিতিতে যেমন ফাঁকি নেই, তেমনি নিজের দৈনন্দিন জীবনে ফাঁকি না দেবার প্রয়াস করে চলেছি, এই তোমায় সাক্ষী রেখে চললাম!

বুঝলো কি না জানিনা, তবে ততক্ষণে আমার কম্বলের কভার শুকিয়ে গিয়েছিল, বেলা শেষের রোদ্দুরের তাপে।

তাই মনে হলো, বিদায়ের অনুমতি সে নিঃশব্দে জানিয়ে দিয়েছে, উচ্চারণ ছাড়াও নিঃশব্দতা অনেক কথা বলে, যেটা বুঝতে একটা আত্মিক সম্পর্ক প্রয়োজন প্রকৃতির সাথে।

কখনো কথা বলে দেখেছেন প্রকৃতির সাথে? ব্যস্ততার মাঝে একাকী কথা বলে দেখবেন, মনকে অনেক প্রশান্তি দিয়ে যায় ওই মুহূর্তগুলো।
বেলা শেষের রোদ্দুর, বলো দেখি, আমার জীবনের বাকি আর কদ্দুর?

1000010907.gif

1000010906.gif

Sort:  
Loading...

TEAM - 3


Congratulations!! Your post has been upvoted through steemcurator05. We encourage you to publish creative and quality content, so you have a chance to get valuable upvotes.

1000425932.jpg

 21 hours ago 

Thank you for your encouraging support my friend 😊

Loading...