মনের জমাট ধুলো। (The congealed dust of the mind)
বড্ড ধুলো জমেছে, বই খাতাগুলোতে, ভাবলাম জমাট ধূলগুলোকে একটু সরিয়ে সবকিছুর আসল চেহারাটা অনেকদিন দেখা হয়নি।
বাঁধলাম মুখে কাপড়, ধুলোয় আবার এলার্জি আমার! জ্বালার কি অন্ত আছে!
খানিকক্ষণ নাক মুখ বেঁধে কাজ করতে করতে দম আটকে মরবার জোগাড়;
ধুর ছাই! দিলাম খুলে মুখের কাপড়।
ধুলো যদি সরাতে হয়, তবে উন্মুক্ত চেহারাতেই সরাবো ঠিক করলাম।
এরপর, একে একে পুরোনো খাতা, বই মুছতে মুছতে একটা ডাইরি বেরিয়ে পড়ল;
ভুলেই গেছিলাম ডায়রিটির কথা, দেখেও চিনতে পারছিলাম না!
মনে পড়ল যখন তাকে খুললাম, বেশকিছু পাতা হালকা হলদে হতে বসেছে;
নিঃশব্দে যেনো নালিশ জানালো! বড্ড আধুনিক হয়েছিস? এখন তোদের সম্বল কেবল যন্ত্র!
কাগজ আর কলম দুটোই তো, এখন
হ্যাঁ, তবে পারলে একবার পিছন ফিরে চেয়ে দেখিস, যখন তোর মনে অনেক ধুলো জমে ছিল;
তখন কিন্তু আজকের যন্ত্র নয়, আমি আর সেই হারিয়ে যাওয়া কলমটাই ছিল তোর মনের ধুলো ঝেড়ে ফেলার হাতিয়ার!
(আমার মনের ধুলোর ভার বয়ে চলা ডাইরি) |
---|
খানিক বসে রইলাম ধুলোমাখা শরীরে, কারণ সেটা হয়তো স্নানের জলে ধুয়ে যাবে, কিন্তু এই কোটি টাকার প্রশ্নের কি উত্তর দেবো? সেটা নিয়েই ভাবতে বসলাম।
সত্যি তো একদিন এই বই, খাতা, কলম এগুলোই তো সব ছিল আমাদের জীবনে, অথচ আধুনিকতার ছোঁয়া পেতে না পেতেই নিজেদের সুবিধাগুলোকে আর বেশি সুবিধায় পরিবর্তিত করতে গিয়ে, বেমালুম ভুলে গেছি জীবনের পিছনে পড়ে থাকা বই, খাতা আর কলম এদেরকে!
সারা মুখ চোখ ততক্ষণে চুলকোতে শুরু করেছে, বেশ কয়েকবার হাঁচি দিয়েও ডায়েরিটি কে হাতছাড়া করলাম না।
খুলতেই শুধু নিজের নয়, পেলাম হারিয়ে যাওয়া সম্পর্কের হাতের ছোঁয়া!
ইংরিজিতে বহু কিছু লেখা, এখনও লেখাগুলো সেভাবে মলিন হয়নি, তাই পড়তে অসুবিধা হচ্ছিল না।
জানিনা, কি পড়ছিলাম তবে এক্ নিমেষেই নয় বছর পার করে চোখের সামনে ভেসে উঠছিল, আমার সবচাইতে প্রিয় মানুষের মুখ।
নিজের অজান্তেই গাল বেয়ে জল গড়িয়ে পড়ছিল, সম্বিৎ ফিরে পেলাম যখন ফোন বেজে উঠলো।
সাথে সাথে, ডায়েরিটি আলাদা করে রাখলাম, এগুলো তো হাতছাড়া করবার উপায় নেই, এগুলো তো আমার জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত সঙ্গে থাকবে, তাই যত্ন করে আলমারির নিচের ড্রয়ারে তাকে রেখে শাওয়ারের জলে নিজের গাল বেয়ে পড়া ব্যথা গুলোকে ধুয়ে ফেলার প্রয়াস করলাম।
স্বাদের পার্থক্য কেবলমাত্র দুটি জলের, কিন্তু দুটোই দেখতে এক্ কাজেই কারোর জানার অথবা বোঝার উপায় নেই।
আর কাউকে কেনই বা বুঝতে দেবো?
কি হবে কাউকে নিজের সেই মনের ধুলোর সন্ধান দিয়ে?
ডাইরি বন্দি থাকুক তারা, মাঝে মধ্যে পাতা উল্টে পুরোনো ইতিহাসের খবর নিয়ে নেবো, সঙ্গে হারিয়ে যাওয়া মানুষ আর সম্পর্কের!
তবে, আশ্চর্য্য! আজও খালি রয়ে গেছে ডাইরির শেষ পাতাটা।
|
---|
আনকোরা আজও ডাইরির শেষ পাতা;
শেষ অঙ্ক মেলা বাকি, বলছে পুরোনো খাতা!
জমাট ধুলোর আড়ালে
আজও মন খারাপের কথা;
ধরে রেখেছে অমলিন ভাবে
আমার সেই ডাইরি, আমার সেই পুরোনো খাতা!
বেদনাগুলো মনের কোণে দিলেই উঁকি;
ডাইরির পাতা জুড়ে কাটতাম আঁকি বুকি!
দিন চলে যায়, রয়ে যায় স্মৃতিগুলো;
আসবাব চকচকে করা গেলেও
সরাতে পারিনি মনের জমা ধুলো!
- সুনীতা দত্ত।
মানুষ, সম্পর্ক পুরোনো হয়ে যায় বয়সের সাথে, কিন্তু স্মৃতি গুলো চির সবুজ হয়ে আবদ্ধ থেকে যায় মনের কোনো এক্ কোণে!
ব্যস্ততায় হয়তো তাদেরকে মনে রাখে না কেউ, তবে,
কোথায় কোনটা রাখা আছে যেটা আমার পুরোনো আমিকে, কখনোই ভুলতে দেবে না।
Upvoted. Thank You for sending some of your rewards to @null. It will make Steem stronger.
Congratulations 🥳
We support quality posts and good comments Published in any community and any tag.
Curated by : @malikusman1
এটা একেবারেই ঠিক বর্তমান সময়ে আমরা যান্ত্রিক জিনিসগুলো পেয়ে, এই ডাইরি কলমের কথা ভুলেই গেছি। আমার কাছে একটা ডাইরি আছে। যেটা আমার স্কুল জীবনের আমার কিছু ফ্রেন্ডের লেখা সেখানে আছে। তাদের মনের অনুভূতি আমার প্রতি যাদের ভালোবাসা তাদের প্রতি আমার ভালোবাসা খুনসুটি, সবকিছুই ওখানে লেখা আছে সবকিছুই এখন শুধুমাত্র স্মৃতি।
আসলে ডাইরি হয়তোবা কিলো দরে বিক্রি করা যাবে। কিন্তু মনের কথা মনের কষ্টগুলো কখনোই বিক্রি করা যাবে না। আমাদের মৃত্যুর আগ পর্যন্ত সেগুলো আমাদের মাঝেই থেকে যাবে। আপনার ডায়েরি নিয়ে কবিতাটা অসাধারণ হয়েছে। সেই সাথে বলা যায় আসবাবপত্র আমরা যতই পরিষ্কার করি না কেন? আমাদের মনের কষ্ট মনের ধুলো কখনোই পরিষ্কার করতে পারবোনা। অসংখ্য ধন্যবাদ উপরোক্ত বিষয় নিয়ে আলোচনা করার জন্য। ভালো থাকবেন।