নিঃসঙ্গতার সংজ্ঞা কি?What is the definition of loneliness?

in Incredible India4 months ago (edited)
1000031054.png

অফিস থেকে বাড়ি পৌঁছতে এখনও প্রায় একঘণ্টার উপরে লেগে যাবে, আজ এমনিতেই ২১শে জুলাই এর কারণে রাস্তায় যানবাহন কম!

সবটাই রাজনৈতিক সমাবেশের কারণে, আগে থেকেই চলে গেছে সেন্ট্রাল পার্কের উদ্দেশ্যে।
এমনিতেই প্রতিদিন দু'ঘণ্টা লেগে যায়, আজ তো গাড়ি পেতে পেতেই আরো বাড়তি একঘন্টা এমনিতেই চলে গেছে!

তবে, আমার বাড়ির পথের উল্টো দিকে সমাবেশ তাই রাস্তা ফাঁকা পাওয়া গেছে এই যা বাঁচোয়া!
প্রায় পঁয়তাল্লিশ মিনিট বাদে, একটি বসার জায়গা পেয়েছি এতটাই ভিড় ছিল বাসে,
সমাবেশের কারণে যানবাহন কম, কিন্তু তা বলে তো আর অফিসের ছুটি নেই।

যাবার সময় সমস্যা হয়নি, ফেরার সময় যখন একরাশ সাংসারিক দায়িত্বের বোঝা মাথায়, ঠিক সেই সময়ে এই সমস্ত ঝক্কি!

1000017779.jpg
1000007721.jpg
1000007611.jpg
(মানুষের ভিড়ে সব মানুষই, কোথাও না কোথাও নিঃসঙ্গ)

কোনক্রমে জায়গা পেয়ে ভাবছিলাম, ছেলেটা নিজের হোমওয়ার্ক করেছে কিনা কে জানে?
রাতের রান্নায় আজ কে কি খাবে?
ঘরে কি কি আছে?
আজকে শ্বশুর শ্বাশুড়ীকে রাতের খাবার আর ওষুধ দিতে দেরি হয়ে না যায়!

আরও সাত সতেরো ভাবনায় কাটে বাড়ি ফেরার পথ।

কালকে আবার সকালে আমার স্বামীর একটা জরুরি মিটিং আছে অফিসে, রাতেই খানিক রান্নার জোগাড় করে রাখতে হবে!
সকালে টিফিনে ছেলে একদম রুটি নিতে চায় না, কাল দেখি কি নিয়ে যেতে চায়!

ভাবনার অতলে তলিয়ে গেছিলাম, কিছু ভুলে যাচ্ছি না তো? কারোর জন্য কি কিছু নেওয়ার আছে বাড়ি পৌঁছানোর আগে?

হ্যাঁ! মনে পড়েছে, আমার স্বামীর জন্য একটা পেন ড্রাইভ, ছেলের জন্য রং পেন্সিল, শ্বশুরের কিছু ওষুধ আর, আর নাহ্! আর তো কিছু মনে পড়ছে না!

1000007148.jpg
1000007808.jpg

নামার সময় হয়ে গেলো, নেমেই আগে এক্ এক্ করে সবার প্রয়োজনীয় জিনিষ কিনে নিলাম।
ব্যাস! এইবার বাড়ি পৌঁছেই রান্নার কাজে লেগে পড়তে হবে।

দরজায় বেল বাজাতে ছেলে ছুটে এলো, এসেই মা আমার রং পেন্সিল এনেছো?
হাসি মুখে মাথা নেড়ে জানালাম এনেছি, সঙ্গে সঙ্গে কই দেখি আমায় দাও।
আমি বললাম, আগে আমায় ঘরে তো ঢুকতে দাও!
হোমওয়ার্ক করেছো? সে জানালো তার বাড়ির শিক্ষিকা করিয়ে দিয়ে গেছেন।

এরপর শ্বাশুড়ি, আমার পান এনেছো বৌমা?
আমার লজ্জায় মাথা কাটা যায়, বললাম মা এক্ষুনি নিয়ে আসছি, একদম মনে ছিল না!

ভাগ্যিস তখনও জামাকাপড় ছাড়া হয়নি!
ব্যাগ রেখে হাতে করে টাকা নিয়ে ছুটলাম বাজারের দিকে, পান না পেলে রক্ষে নেই।

কপাল ভালো, পরিচিতি পানের দোকান খোলাই ছিল; পান নিয়ে এক ছুটে বাড়িতে ঢুকলাম, হাঁপাতে হাঁপাতে বললাম, মা এই যে আপনার পান!

উত্তর এলো আমার পানের মত শ্বশুরের ওষুধ গুলো আনতেও কি ভুলে গেছো?
আমি জানালাম, না মা ওগুলো সব নিয়ে এসেছি, প্রেসক্রিপশন তো অফিসে যাবার সময় সঙ্গেই নিয়ে গেছিলাম।

তারপর, নিজের ঘরে ঢুকে দেখলাম, ছেলে ব্যাগ থেকে তার রঙ পেন্সিল বের করে নিয়েছে, আর আমার স্বামী তার পেন ড্রাইভ এবং দুজনেই নিজের নিজের জিনিষ নিয়ে কাজে ব্যস্ত।

1000021702.jpg
1000021695.jpg
1000021029.jpg
(বাষ্প হয়ে উড়ে যায় চোখের জল, ঘামের সাথে, তার খবর জানে খালি দৈনন্দিন গায়ের বস্ত্র!)

আমিও চটজলদি পোশাক পরিবর্তন করে, রান্নার কাজে বসে গেলাম, সবাইকে যাইহোক করে সময় মতো খেতে দিতে পেরেছি এই যা রক্ষে।

সকালে আমারও অফিস আছে, তাই খানিক জোগাড় প্রতিদিন রাতেই করে রাখতে হয়;
আজও তার অন্যথা হয়নি।

সমস্ত কাজ সেরে, সকলকে খাইয়ে, যখন বিছানায় ক্লান্ত দেহটাকে রাখলাম;
দেখলাম স্বামী এবং ছেলে তারা অনেক আগেই ঘুমিয়ে পড়েছে।
রাত দুটো বাজে, জানিনা কেনো চোখের দু'কোল বেয়ে জল গড়িয়ে পড়ছিল!

আমাদের বিয়ে হয়েছে আট বছর, আর আমার ছেলের বয়স ছয়।
আমি এমন একটা পরিবারে বেড়ে উঠেছি, যেখানে আত্মমর্যাদা, আত্মসম্মানের পাশাপশি, সকলকে নিয়ে, সকলকে দিয়ে বাঁচতে হয়, সেই শিক্ষায় শিক্ষিত করে আমাকে গড়ে তোলা হয়েছে।

বিয়ের আগে থেকেই আমি চাকরি করি, কিন্তু আমার স্বামীর উপার্জন যথেষ্ট তাই আমাকে দেখতে গিয়ে আমার শ্বশুর বাড়ির শর্ত ছিল,
তারা ঘরোয়া মেয়ে চান, তাদের ছেলের যথেষ্ট উপার্জন, কাজেই বিয়ের পরে কিন্তু চাকরি ছাড়তে হবে!

সেদিনের আমার হবু স্বামী কিন্তু বিষয়টি নিয়ে বিরোধিতা করেছিল।
আর ঠিক সেই কারণেই কোথাও তাকে ভালো লেগেছিল, এটা ভেবে মানুষটা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে চলতে বিশ্বাসী।

বিয়ে করে সংসারে আসার পরে, সময়ের সাথে সাথে বুঝলাম, আমাকে চাকরি বহাল রাখতে হলে, সংসারের যাবতীয় দায়িত্ব পালন করতে পারলে, তবেই তারা আমাকে চাকরিটা করেতে দেবেন;
আমার স্বামী সহ আমার নতুন পরিবার।

এখানে বলে রাখা ভালো, আমার স্বামীর উপার্জন আমার চাইতে বেশি, যেহেতু তিনি বেসরকারি একটি সংস্থায় বেশ উঁচু পদে আসীন রয়েছেন।

আর আমি একটি সরকারি সংস্থায় কর্মরত এবং সেটা বিয়ের আগে থেকেই, আমার সবসময় মনে হয়েছে, যতো কষ্টই হোক না কেনো চাকরি আমি ছাড়বো না।

এটাকে জেদ ভাবলে তাই, আর আমার মেধার ভিত্তিতে উপার্জিত সম্মান ভাবলে তাই।

একটি করে বছরের সাথে সাথে আমার উপরে সভ্য অথচ এক প্রকারের শান্ত অত্যাচার শুরু হয়ে গেলো, বলা বাহুল্য এখন সেটায় আমার স্বামীও সামিল।

আমি একটা মানুষ এটা কবেই যেনো দায়িত্বের আড়ালে ভুলিয়ে দিয়েছে এরা সকলে;
এখন বাড়ি ঢুকলে আমার ক্লান্তির কোনো খোঁজ কেউ নেয় না!
দেরি হলে আমাকে কেউ একটা ফোন করে না, যদি না নিজেদের প্রয়োজনীয় সামগ্রী আনার থাকে!

আমার অর্থেই এই সংসারের প্রায় যাবতীয় খরচ চলে, কারণ তার ছেলের উপার্জন তার সন্তানের জন্য সঞ্চয়ের পাশাপশি তার বন্ধু মহলদের নিয়ে বিদেশ সফরের জন্য তোলা আছে।

1000002381.jpg
1000002889.jpg
(রাতের আঁধার নিঃসঙ্গতাকে উস্কে দিয়ে যায়)
আমার মত নারীর জীবনের গল্প শুনে কি বলবেন? আমি কি স্বজন নিয়ে সুখে সংসার করছি? নাকি সকলের উপস্থিতিতে আমি একজন নিঃসঙ্গ নারী?

কোন্ একাকীত্ব বেশি কষ্টের?

  • যারা একা গোটা জীবন কাটিয়ে দেন আর আক্ষেপ করেন যদি পরিবার থাকতো!

  • নাকি তারা, যাদের এক সময় সব ছিল, কালের স্রোতে সব মুছে গেছে জীবন থেকে!

  • আর নাকি আমার মত মানুষ, যাদের বাইরে থেকে দেখে সুখী এবং খুশি মনে হলেও ভিতরটায় ঘুন ধরে গেছে!

আমরা আসলে সকলেই কোথাও না কোথাও বোধহয় নিঃসঙ্গ, কেউ সেটা বেছে নিতে চান নি, ভাগ্যের পরিহাসে নিঃসঙ্গ হয়ে গেছেন! আবার কেউ ভিড়ের মাঝেও আমার মতন নিঃসঙ্গ, যার মনের খবর কেউ রাখে না। যার ব্যাক্তি স্বাধীনতা সমাজের চলে থাকলেও নিজের সংসারে নেই!

1000010907.gif

1000010906.gif

Sort:  

Upvoted. Thank You for sending some of your rewards to @null. It will make Steem stronger.

Loading...