অনেকদিন পর রংপুরে গিয়ে হঠাৎ একটি দুর্ঘটনার শিকার

in Incredible India4 days ago

আসসালামু আলাইকুম

আশা করি সবাই খুব ভালো আছেন। আমিও বেশ ভালো আছি। আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে এখনো সুস্থ রেখেছেন এজন্য সবাই শুকরিয়া আদায় করব। আলহামদুলিল্লাহ। সৃষ্টিকর্তা আমাদের কখন বিপদের মুখে ফেলবে তা বলা মুশকিল। গতকালকে রংপুরে গিয়ে হঠাৎ একটি দুর্ঘটনা নিয়ে পোস্ট শেয়ার করব। তাহলে বন্ধুরা দেরি না করে শুরু করা যাক:

20240630_162410_0000.png

Edit by canva

শনিবারে আমার রংপুরে যাওয়ার চিন্তা ছিল অনেক আগে থেকেই। রংপুরে যাওয়ার কয়েকটা কারণ ছিল। আমার ল্যাপটপের চার্জার নষ্ট হয়ে গেছিল।আমাদের পার্বতীপুরে ল্যাপটপের ভালো চার্জার পাওয়া যায় না। তার পাশাপাশি আরও একটা গুরুত্বপূর্ণ কাজ ছিল।

আমি যখন রংপুর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে ইন্টার্নি করেছিলাম। তখন প্যাথলজি বিভাগ থেকে আমাদের প্রত্যেককে internship এর সার্টিফিকেট দিয়েছিল। কিন্তু প্যাথলজি বিভাগ ছাড়াও আমাদের ব্লাড ব্যাংক থেকেও সার্টিফিকেট দিয়েছিল।

সেখানে শুধু ব্লাড ব্যাংকের বিভাগীয় ডাক্তারের স্বাক্ষর ছিল। প্রিন্সিপাল স্যারের স্বাক্ষর ছিল না। না থাকারও একটা কারণ ছিল। কারণ ওই সময় প্রিন্সিপাল স্যার পরিবর্তন হয়ে নতুন প্রিন্সিপাল এসেছিল। এসব ঝামেলার কারণে তখন আর স্বাক্ষর নেওয়ার সময় হয়নি।

IMG_20240629_102052.jpg

যাইহোক, সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে বাইরে কিছুক্ষণ হাটাহাটি করেছি। পরে তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে রংপুরে যাওয়ার উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছিলাম। আবহাওয়া তেমন একটা ভালো ছিল না। বাসা থেকে বের হয়ে ভ্যান গাড়ি করে বাসস্ট্যান্ডে পৌঁছে গিয়েছি। বাস স্ট্যান্ডে যাওয়া মাত্রই বাস চলে এসেছিল। তারপর বাসে উঠে রংপুরের উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছি।

IMG_20240629_104135.jpg

অনেকদিন পর আবারো রংপুর যাচ্ছি, মনের ভেতর একটা অন্যরকম ভালোলাগা কাজ করছিল। যাওয়ার পথেই রাস্তায় অনেক জোরে বৃষ্টি এসেছিল। এর মাঝে আমি আমার বন্ধু @saikat01 কে ফোন দিয়েছিলাম। কারণ সেও রংপুরেই থাকে। চিন্তা ছিল রংপুরে পৌঁছে দুজনে মিলে আমার কাজগুলো সম্পন্ন করব। সেই সাথে তার আইফোনেরও কি যেন সমস্যা হয়েছে সেটা সার্ভিসিং করাবো।

আলহামদুলিল্লাহ ঠিক ১২:০০টা নাগাদ রংপুর শাপলা চত্বরে পৌঁছে গিয়েছি। আহ! অনেকদিন পর রংপুরে পা দিয়ে বেশ ভালই লাগছিল। শাপলা চত্বরে নামা মাত্রই এত জোরে বৃষ্টি এসেছিল যা বলার মত নয়। পরে বৃষ্টি না থামা পর্যন্ত দোকানের সামনে অপেক্ষা করেছি।

IMG_20240629_121033.jpg

এর মাঝে আমার বন্ধুর সাথে যোগাযোগ করেছিলাম। সেও সঠিক সময়ে আমার কাছে পৌঁছে গিয়েছিল। পরে বৃষ্টি থামার পর দুজনে মিলে রংপুর রামমোহন মার্কেটের দিকে রওনা হয়েছি। রামমোহন মার্কেটে যেকোন প্রকার ইলেকট্রনিক্স জিনিস কিনতে পাওয়া যায়।

সেখানে গিয়ে আমার পরিচিত দোকান থেকে সর্বপ্রথম আমার ল্যাপটপের চার্জার কিনেছি। আসলে সব জায়গায় পরিচিত থাকা ভালো। দেখা যায়, দামের ক্ষেত্রেও অনেকটা সুবিধা পাওয়া যায়। আবার ভালো জিনিসও পাওয়া যায়।

IMG_20240629_124609.jpg

ল্যাপটপের চার্জার কিনে আমরা আবারো সুপার মার্কেটে গিয়েছি। সুপার মার্কেটে আমার বন্ধুর আইফোনটা কয়েকটা দোকানে দেখাইছি। বন্ধুর আইফোন ভার্সন আপডেট দেওয়ার পর সমস্যা হয়েছিল। অনেক দোকান দেখানোর পরে একটি দোকানে কাজ হয়েছিল।

মূলত, ফোনের সফটওয়্যারের কাজ ছিল। দোকানদার আমাদের কাছ থেকে ২ ঘণ্টার মত সময় নিয়ে ছিল। এর মাঝে হঠাৎ করে আমার বন্ধুর বাসা থেকে ফোন আসে। পরে ফোন রিসিভ করে জানতে পারে তার বড় খালা মারা গেছে। মুহূর্তেই বন্ধুর অনেক মন খারাপ হয়ে যায়। আসলে সবকিছুই সৃষ্টিকর্তার হাতে।

IMG_20240629_142741.jpg

এদিকে যে আমরা তাড়াতাড়ি করে বাসায় আসব সে উপায়ও ছিল না। কারণ ততক্ষণে ফোনে সফটওয়্যারের কাজ শুরু করেছিল। তাই আমি নিজের সাধ্যমত তাকে সান্তনা দেওয়ার চেষ্টা করেছি। আসলে হঠাৎ করে যে, এরকমটা হবে কখনো আশা করিনি।

মোবাইল ঠিক করতে যেহেতু দুই ঘন্টা সময়ের কথা বলেছিল। তাই আমি তাকে বলেছিলাম, মেসে গিয়ে কাপড়ের ব্যাগ সাথে করে নিয়ে আসার জন্য। আর আমারও সার্টিফিকেট এর কাজের জন্য মেডিকেল মোড়ে যেতে হবে। পরে সে আমার কথা মত ব্যাগ নিয়ে আসার জন্য মেসে চলে যায়। আমিও মেডিকেল মোড়ে চলে আসি।

IMG_20240629_133006.jpg

মেডিকেল মোড়ে এসে আমার এক বন্ধুর সাথে দেখা করে আমার সার্টিফিকেট তাকে দিয়েছিলাম। পরে সেখান থেকে আবারো বের হয়ে মোবাইলের দোকানে চলে গিয়েছি। ততক্ষণে আমার বন্ধুও কাপড়ের ব্যাগ নিয়ে দোকানে চলে এসেছে। মোটামুটি ৩ ঘন্টা পর ফোনের কাজ সম্পন্ন হয়েছে।

IMG_20240629_173920.jpg

পরে মোবাইলে সব কিছু দেখে শুনে তাড়াতাড়ি বাসায় আসার উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছি। এদিকে বন্ধু একদম মনমরা হয়ে গেছিল। আসলে নিজের আপন জন কেউ মারা গেলে খারাপ লাগা স্বাভাবিক। আলহামদুলিল্লাহ মোটামুটি বিকেল পাঁচটার দিকে বাসায় পৌঁছে গিয়েছি। সত্যিই রংপুরে যাওয়ার পর মুহূর্তটা যে এরকমটা হবে কখনো ভাবি নি।

ধন্যবাদ

Sort:  
 4 days ago 

প্রয়োজনীয় কাজে আপনি রংপুরে গিয়েছিলেন। আসলে আপনার ল্যাপটপের চার্জার নষ্ট হয়ে গিয়েছে এজন্য গিয়েছিলেন তার পাশাপাশি আরও কাজ ছিলো। অনেক দিন পর পুরাতন জায়গায় গেলে সকলেরই ভালো লাগে। আপনি ঠিকই বলেছেন আপনজনকে হারানোর মতো আর কষ্ট নেই। ছোটবেলা থেকেই যাদের মাঝে বড় হয়েছি তাদের হারালে অনেক কষ্ট হয়। ধন্যবাদ আপনাকে সুন্দর পোস্ট শেয়ার করার জন্য। ভালো থাকবেন।

 3 days ago (edited)

আমার মেডিকেল ইন্টার্নির সার্টিফিকেট এবং ল্যাপটপের চার্জার কিনতেই মূলত রংপুরে গিয়েছিলাম। সেই সাথে আমার বন্ধু ফোনও সার্ভিসিং করার কথা ছিল। কিন্তু রংপুরে গিয়ে ওই মুহূর্তে হঠাৎ করে বন্ধুর ফোনে এভাবে দুঃসংবাদ আসবে সেটা কখনোই আশা করিনি। সৃষ্টিকর্তার উপরে আমাদের কারোর হাত নেই।

আমার পোস্ট পরিদর্শন করে সুন্দর মন্তব্যস্থ করার জন্য ধন্যবাদ ভাই।

 4 days ago 

আসলে সৃষ্টিকর্তার উপরে কারোর কোনদিন হাত নাই কখন যে কার কি হয়ে যায় সেটা কেউ কখনো বলতে পারে না। যেকোনো সময় যেকোন মানুষ যেকোনো বিপদে পড়তে পারে। যাইহোক আজকে আপনি আপনার একটি দুর্ঘটনা কিংবা আপনার সুন্দর একটি দিনের কথা আমাদের সাথে শেয়ার করেছেন যেটা আমার কাছে অনেক ভালো লেগেছে। আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই এত সুন্দর একটি পোস্ট আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য।

 3 days ago 

আপনি একদম ঠিক বলেছেন, সৃষ্টিকর্তার উপরে আমাদের কোন হাত নেই। তিনি কখন কি করবে সেটা সবারই অজানা। সেদিন রংপুরে গিয়েছিলাম বলতো আমার ল্যাপটপের চার্জার এবং বন্ধুর মোবাইল সার্ভিসিং করার জন্য। কিন্তু ওই মুহূর্তে বন্ধুর ফোনে হঠাৎ এরকম একটা দুঃসংবাদ আসবে কখনো আশা করিনি।
আসলে নিজের আপন জন কেউ পৃথিবী থেকে চলে গেলে অনেক খারাপ লাগে।

আমার পোস্ট পড়ে সুন্দর মন্তব্য ব্যক্ত করার জন্য ধন্যবাদ।

 4 days ago 

দুর্ঘটনাগুলো এমন ভাবেই ঘটে। যখন আমাদের না থাকে করার আবার আমরা ঐ মুহূর্তে না বাড়ি সমস্যা গুলোর সমাধান করতে। অনেকটা জার্নি এবং বেশ কিছু কাজের জন্য ব্যস্ততার মধ্যেই সময় অতিবাহিত করেছেন যেটা আপনার লেখা পড়ে থেকে বুঝতে পারলাম।

আপনাকে অনেক ধন্যবাদ এই লেখাটি আমাদের সাথে ভাগ করে নেওয়ার জন্য। আপনার পরবর্তী লেখা পরিদর্শনের অপেক্ষায় রইলাম।

 3 days ago 

সর্বপ্রথম কথা হলো আমাদের সবকিছুই সৃষ্টিকর্তার হাতে। তিনি কখন কি করবে সবারই সেটা অজানা। আমার ল্যাপটপের চার্জার এবং বন্ধুর ফোন ঠিক করার জন্যই মূলত রংপুরে গিয়েছিলাম। কিন্তু সেখানে গিয়ে হঠাৎ করে বন্ধুর ফোনে যে এভাবে একটা দুর্ঘটনা সংবাদ আসবে কখনো আশা করিনি।সত্যিই নিজের আপন জন এভাবে চলে গেলে অনেক কষ্ট হয়।

আপনার মন্তব্য পরে খুব ভালো লাগলো। ধন্যবাদ।

Loading...
 3 days ago 

আপনার সারাদিনটা খুব ব্যস্ততার মধ্যেই কেটেছে। দূরের রাস্তা জার্নি করার সময় অতিরিক্ত রোদ বা বৃষ্টি কোন কিছুই ভালো লাগেনা। "পরিচিত দোকান থেকে কিছু কেনা ভালো "কথাটিকে দ্বিমত পোষণ করছি কারণ যদি বেশি টাকা রাখে তাহলে লজ্জায় দামাদামি করতে পারবেন না এবং বাসায় এসে যদি দেখেন পণ্যটি ভালো না তাহলে পরিচিতির খাতিরে তাকে কিছু বলতেও পারবেন না। আমি তাই পরিচিত দোকান থেকে কিছু কিনি না। আল্লাহ আপনার বন্ধুর খালাকে জান্নাত নসিব করুক। আমিন।

 2 days ago 

আপনি একদম ঠিক বলেছেন, দূরে জার্নি করার সময় রাস্তায় অতিরিক্ত রোধ বা বৃষ্টি হলে ভালো লাগেনা। কিছু কিছু পরিচিত দোকানে জিনিসপত্র কেন ভালো। আবার দেখা যায় কিছু পরিচিত দোকান কেমন দাম চেয়ে বসে, সেখানে বলার মত কিছুই থাকেনা। আবার পণ্য খারাপও হতে পারে। তবে সব পরিচিত দোকানের ক্ষেত্রে যে এরকমটা হয় তা নয়।
আমিও দোয়া করি আমার বন্ধুর খালাকে সৃষ্টিকর্তা জান্নাত নসিব করুক।

 2 days ago 

আপনাদের প্রয়োজনীয় সার্টিফিকেট নেয়ার জন্য রংপুর গিয়েছেন। কিন্তু নিজের মোবাইলের কিছু সফটওয়্যার ঠিক করার জন্য অনেকটা সময়ের প্রয়োজন হয়েছিল। তাই সেখানে কিছুটা সময় দিয়েছেন। একদমই ঠিক বলেছেন সব জায়গায় পরিচিত থাকা ভালো। এতে করে ভালো জিনিস পাওয়া যায় এবং দামের ক্ষেত্রে মোটামুটি লাভবান হওয়া যায়।

কথায় আছে জন্ম ও মৃত্যু বিয়ে তিন বিধাতা নিয়ে। অর্থাৎ কখন কি হবে সেটা আমরা কেউই জানিনা। আপনার বন্ধুর খালা মারা গেছে। তার জন্য সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করি কবরের জীবনী তিনি যেন ভালো থাকেন। আসলে কেউ মারা গেলে তার আত্মীয়-স্বজনকে সান্ত্বনা দেওয়া ছাড়া, আর কিছুই করার থাকেনা। অসংখ্য ধন্যবাদ বন্ধুর সাথে কাটানো এবং নিজের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে কাটানো মুহূর্তগুলো, আমাদের সাথে উপস্থাপন করার জন্য ভালো থাকবেন।