একটি মর্মান্তিক ঘটনা

in Incredible India3 days ago

আসসালামু আলাইকুম

আশা করি সবাই খুব ভালো আছেন। আমিও বেশ ভালো আছি। আমি আজকে আপনাদের মাঝে একটি মর্মান্তিক ঘটনা নিয়ে পোস্ট শেয়ার করব। তাহলে বন্ধুরা দেরি না করে শুরু করা যাক :

blood-5053760_1280.jpg
Source

গতকাল ছিল মঙ্গলবার দিন। অন্যান্য দিনের মতো স্বাভাবিকের মতোই ছিল দিনটি। কিন্তু হঠাৎ করে সন্ধ্যার দিকে এরকম একটা দুর্ঘটনা নিয়ে ভিডিও দেখব কখনো আশা করিনি। দুর্ঘটনাটি আসলেই একটি মর্মান্তিক ঘটনা। আপনারা হয়তো সবাই অবগত হয়েছেন, আমি মেডিকেল স্টুডেন্ট। এখন পড়াশোনা শেষ করে মেডিকেল ল্যাব টেকনোলজিস্ট হিসেবে ডায়াগনস্টিক সেন্টারে কর্মরত রয়েছি।

আমাদের মেডিকেল টেকনোলজিস্টের মেসেঞ্জারে অনেক কয়েকটা গ্রুপ আছে। সেখানে হঠাৎ করেই আমার এক বন্ধু একটি ভিডিও শেয়ার করে। ভিডিওটি দেখা মাত্রই, একদম থমকে গিয়েছিলাম। ঘটনাটি হয়েছিল আমাদের রংপুর মেডিকেল হাসপাতালের ব্লাড ট্রান্সফিউশন বিভাগে

blood-5053770_1280.jpg
Source

আপনারা সবাই জানেন, ব্লাড ট্রান্সফিউশন বিভাগে রোগীর জন্য ব্লাড ডোনেট এবং Cross Matching এর কাজ করা হয়। Cross Matching খুব সাবধানতা অবলম্বন করেই কাজ করতে হয়। আমি যেহেতু ইন্টার্নি রংপুর মেডিকেল হাসপাতালে করেছি। সেহেতু হাসপাতালের ব্লাড ট্রান্সফিউশন বিভাগ সম্পর্কে আমার পুরোপুরি ধারণা আছে।

Cross Matching এর কাজ সাধারণত টেকনোলজিস্টরা করে থাকে। যাইহোক, ঘটনাটি হয়েছিল ২৩শে জুন। কিন্তু এর আগে আমরা কেউ এই বিষয়ে জানতে পারিনি। গতকালকে ভিডিও দেখার পরেই সব কিছু বিস্তারিত তথ্য জানতে পেরেছি।

হাসপাতালের মহিলা ওয়ার্ডে একজন মহিলা রোগী জরায়ু অপারেশন করার জন্য ভর্তি ছিল। জরায়ু অপারেশন করার সময় রোগীর জন্য ব্লাড লাগতে পারে। এজন্য ডাক্তার আগে থেকেই ব্লাড ম্যানেজ করে রাখতে বলেছিল। রোগীর ব্লাড গ্রুপ ছিল 'A' Positive. রোগীর লোক খুব দ্রুত ডোনার ম্যানেজ করেছিল।

doctor-650534_1280.jpg
Source

এরপর নিয়মঅনুসারে ব্লাড ট্রান্সফিউশন বিভাগে Cross Matching এর জন্য গিয়েছিল। আলহামদুলিল্লাহ Cross Matching ভালোভাবে সম্পন্ন হয়েছিল। মহিলা রোগিটির নাম ছিল ফাতেমা। Cross Matching করার সময় টেকনোলজিস্ট ব্লাড গ্রুপ পেয়েছিল 'O' Positive ।

কিন্তু ভুলটা হয়ে গেছিল অন্য জায়গায়। এই ফাতেমা নামের আরো একজন রোগীর Cross Matching হয়েছিল। পরের ফাতেমা নামের রোগীর ব্লাড গ্রুপ ছিল 'A' Positive । দুইজন রোগীর নাম একই হলেও তাদের আইডি নাম্বার দুটো ভিন্ন ছিল। আর আপনারা এটাও জানেন, ব্লাড ব্যাংকে সারাদিনে অনেকগুলো কাজ হয়। এমনকি ফ্রিজে অনেকগুলো ব্লাড ব্যাগ জমা থাকে।

দুই ফাতেমা নামের রোগীর Cross Matching এর কাজ সঠিকভাবে হয়েছিল। কিন্তু বিষয়টি ঘটে গেছিল ভিন্নভাবে। যিনি ব্লাড ব্যাগ ডেলিভারি দেয়। তিনি ভুল করেই, প্রথম ফাতেমা নামের 'O' Positive রোগীকে পরের ফাতেমা নামের 'A' Positive ব্লাড ব্যাগ ডেলিভারি দিয়ে দেন। মানে তিনি আইডি নাম্বার ভালোভাবে চেক করেনি।

blood-bags-91170_1280.jpg
Source

এদিকে রোগীর জরায়ু অপারেশন করার পর ঐ 'A' Positive ব্লাড ব্যাগ লাগিয়ে দেয়া হয়েছিল। পুরো এক ব্যাগ ব্লাড যাওয়ার পরে মোটামুটি ৬ ঘণ্টা পর রোগীর শরীরে রিয়েকশন শুরু হয়ে গেছিল। ঐ সময় রোগীর ক্যাথেটার লাগানো ছিল। ক্যাথেটার দিয়ে প্রায় এক ব্যাগেরও বেশি ব্লাড বের হয়ে গেছিল।

পরে রোগীর লোকেরা তৎক্ষণা ওয়ার্ডের ডিউটি ডাক্তারকে ডাক দেয়। ডাক্তাররা এরকম অবস্থা দেখে আবারও দ্রুত ব্লাড গ্রুপিং করে। পরে দেখতে পায় রোগীর ব্লাড গ্রুপ 'O' Positive ।

কিন্তু রোগীকে দেওয়া হয়েছে 'A' Positive ব্লাড ব্যাগ। সাথে সাথেই রোগীর পুরো শরীর ফুলে যায় এবং শরীর কালো হতে শুরু করে। পরে রোগীকে ইমারজেন্সি ICU তে নিয়েছিল। কিন্তু রোগীর কন্ডিশন আস্তে আস্তে আরো খারাপ হতে থাকে।

blood-pressure-1584223_1280.jpg
Source

এদিকে রোগের লোকেরা বেশ চিন্তার মধ্যে পড়ে গেছিল। সেই মহিলা অসুস্থ রোগীর একজন ছেলে ছিল। রংপুর জেলা স্কুলে পড়াশোনা করে। পরে তারা পরিবারের সবাই মিলে ব্লাড ব্যাংকে কথা বলে এবং হাসপাতাল পরিচালকের সাথে যোগাযোগ করে। যিনি ব্লাড ব্যাগ ডেলিভারি দিয়েছিল, তিনি আইডি নাম্বার ভালোভাবে চেক করেনি।

এমনকি রোগীর যে জরায়ু অপারেশন করা হয়েছিল। সেখানে আবারো ব্লাড জমে গেছিল। কিন্তু যে ছেলের মা ছিল, তারা বলেছিল তাদের এই ছোট্ট ভুলের জন্য আজকে আমার মায়ের এই অবস্থা। তারা এটাও ভেবেছিল যে, তাদের ভুলের জন্য এই অবস্থা হয়েছে। এজন্য তারা যেভাবেই হোক আমার মাকে সুস্থ করে তুলবে।

কিন্তু না, রোগীর অবস্থা আস্তে আস্তে আরো খারাপ হতে থাকে। এক পর্যায়ে গিয়ে ডাক্তাররা বলে রোগীর আর এখানে চিকিৎসা করানো সম্ভব নয়। আপনাদেরকে দ্রুত ঢাকায় নিয়ে যেতে হবে। কিন্তু রোগীর পরিবারের পক্ষে এত টাকা খরচ করার মত অবস্থা ছিল না।

পরে তারা সবাই মিলে আবারো হাসপাতাল পরিচালককে একটি আবেদন করেছিল। যেন পুরো চিকিৎসার টাকা হাসপাতাল বহন করে। কিন্তু হাসপাতাল পুরো চিকিৎসার টাকা বহন করতে চাইনি। সামান্য কিছু টাকার কথা বলেছিল। কিন্তু রোগীর পরিবার সেটা মেনে নেয়নি।

patient-5691153_1280.webp
Source

শেষ পর্যন্ত রোগীর পরিবার বাধ্য হয়ে ঢাকায় একটি প্রাইভেট হাসপাতালে ভর্তি করায়। কিন্তু ভুল গ্রুপের ব্লাড দেওয়ার কারণে রোগীর কিডনির লেভেল আস্তে আস্তে বাড়তে থাকে। যেখানে কিডনির নরমাল পয়েন্ট সর্বোচ্চ 1.2 থাকার কথা। কিন্তু কিডনি লেভেল বেড়ে 12 পয়েন্ট চলে গেছিল।

ঢাকায় শেষ পর্যন্ত ডাক্তার বলেছিল, যদি কিডনির লেভেল না কমে তাহলে কিডনি ট্রান্সফার করতে হবে। কিন্তু রোগীর পরিবারের পক্ষে এত টাকা খরচ করার মতো সাধ্য ছিল না। পরে যে মা অসুস্থ ছিল, উনার ছেলে ফেসবুক লাইভে একটি ভিডিও করেছিল।

সেখানে এতটুকুই বলেছিল, তাদের এই ছোট্ট একটা ভুলের জন্য আমার মা আজকে মৃত্যুর শয্যায়। এরকম যেন আর কোন মা'য়ের সাথে কখনো না হয়। সবার কাছ থেকে লাইভে দোয়া চেয়েছিল। শেষ পর্যন্ত ব্লাড ব্যাংকের বিষয়টি মিডিয়া পর্যন্ত হয়ে গেছে। বেশ কয়েকটি নিউজে দেখানো হয়েছিল। আপনারা ক'জন দেখেছেন তা জানিনা।

laboratory-563423_1280.jpg
Source

আপনারা শেষ পর্যন্ত পোস্টটা পড়েই বুঝতে পারছেন, একজন মানুষের ছোট্ট একটি ভুলের জন্য একজন রোগী মৃত্যুর শয্যায়। এমনকি পরিবারের জন্যও সারা জীবনের কান্নার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। শেষ পর্যন্ত আমি এতোটুকুই বলবো, মেডিকেল সেক্টরের কাজগুলো খুব নিখুঁতভাবে করতে হয়।

আমিও একটি ডায়গনস্টিক সেন্টারের প্যাথলজিতে ল্যাব টেকনোলজিস্ট হিসেবে কর্মরত রয়েছি। আমার দিক থেকে আমি সর্বোচ্চটা দিয়ে কাজ করার চেষ্টা করি। আমার জন্য দোয়া করবেন, যেন আমার মাধ্যমে এরকম কখনো না হয়। আর আপনারাও যেকোন চিকিৎসার ক্ষেত্রে হাসপাতালে সতর্ক থাকবেন। আর সবাই ঐ মা'য়ের জন্য দোয়া করবেন তিনি যেন সুস্থ হয়ে যায়।

ধন্যবাদ

Sort:  
Loading...
 3 days ago 

আসলে আমাদের কিছু কিছু ভুলের কারণে একটি মানুষের জীবনে যেতে পারে, আপনি যে ডেলিভারি ম্যান এর কথা বলেছেন তার অবশ্যই উচিত ছিল একবার হলেও রিপোর্টটি দেখা যদি সে দেখে দিত তাহলে আজকে হয়তো এ অবস্থাটি হত না, এখন আমি মনে করি আমরা যে কোন কাজ তাড়াহুড়োতে না করে আস্তে আস্তে করাটাই ভালো। দোয়া করি যাতে মহিলাটি দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠেন।

 7 hours ago 

আসলে এই মেডিকেল সেক্টরের কাজগুলো খুব নিখুঁতভাবে করতে হয়। কারণ এই কাজগুলোর মধ্যে একটি ভুল হলে সারা জীবনের কান্নার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। মেডিকেল টেকনোলজিস্ট ভালো ভাবে ক্রস ম্যাচিং করেছিল। কিন্তু যিনি ব্লাড ব্যাগ ডেলিভারি দিয়েছিল, তিনি ভালভাবে খেয়াল করেননি। যার কারণে আজকে রোগীটি মৃত্যুর শয্যায়।
আমার পোস্ট পরিদর্শন করে সুন্দর মন্তব্য ব্যক্ত করার জন্য ধন্যবাদ।

 2 days ago 

পোস্টটা পড়ে গা শিউরে উঠেছিল, একটা ভুল একটা মানুষের জীবন মুহূর্তের মধ্যেই মৃত্যুর ঢলে নিয়ে যায়। এখানে আমরা চিকিৎসার জন্য যাই সেখানে যদি ভুল বুঝার জন্য একজন মানুষ মৃত্যুবরণ করে এর দায়ভার কে নেবে।। সতর্ক না থাকার জন্য একটা পরিবার এখন হতাশার মধ্যে ভোগছে।।।

দোয়া রইল সৃষ্টিকর্তার কাছে তাকে যেন সুস্থ করে দেন।।। আসলে নাম একই হওয়ার জন্য এই সমস্যাটা ডেলিভারি উচিত ছিল নাম্বার চেক করা।

 7 hours ago 

প্রথমত কথা হলো আপনিও আমাদের এই উত্তরবঙ্গের মানুষ। সে ক্ষেত্রে আপনাদের পরিবারেরও চিকিৎসা এই রংপুর মেডিকেল হাসপাতালের উপর ভরসা রেখে করতে হয়। কিন্তু সেই হাসপাতালে যদি এরকম হয়। সত্যিই বলার মত কিছু নেই।
একটি ভুলের জন্য একজন রোগী আজকে মৃত্যুর শয্যায়।
দোয়া করবেন ভাই অসুস্থ মা যেন তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে ওঠে।

 7 hours ago 

আপনি বলার পর আমি এই নিউজটা দেখি ভাই দেখে অনেক খারাপ লাগতেছিল।। আমি মনে করি এটা অবহেলার জন্যই হয়েছে যদি গুরুত্ব দিয়ে বিষয়টা দেখতো তাহলে এরকম ভুল কখনোই হতো না।।

 yesterday 

একটি দুর্ঘটনা সারা জীবনের কান্না এটা হয়তোবা সবাই জানে তবে কিছু কিছু সময় ডাক্তারের একটি ভুল অপারেশনে হতে পারে সারা জীবনের কান্নার কারণ।

আপনার এই ঘটনাটি অনেকে পড়তে সাহস করবে না কেননা এমন মর্মান্তিক ঘটনা হয়তোবা সবার হার্টবিটে একজাস্ট করতে পারবে না। ভাই আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ এই ঘটনা কি আমাদের কাছে উপস্থাপনা করার জন্য।

 2 hours ago 

সত্যি ভাই সামান্য একটি ছোট ভুলের জন্য একজন রোগী মৃত্যুর শয্যায় চলে গেছে। এটা আমাদের সবার কাছেই দুঃখজনক একটি বিষয়। আপনি হয়তো বিষয়টি ভালোভাবে পড়ে নিয়ে আসলে ডাক্তারের অপারেশন নয়, ভুল ব্লাড গ্রুপের ব্লাড দেওয়ার পর এরকম হয়েছিল।
ভুল ব্লাড দেওয়ার পর রোগী কন্ডিশন আস্তে আস্তে আরো খারাপ হতে থাকে। আসলেই ভাই একটি ছোট্ট ভুল সারা জীবনের কান্নার কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
দোয়া করি সেই মা যেন তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে ওঠেন।

 yesterday (edited)

এই লেখাটা পড়ার পরে আমার মনে ভয় ঢুকে গেছে। রোগীরা হসপিটালে যায় সুস্থ হবে বলে। উল্টো তাদের দায়িত্বে অবহেলার জন্য যদি মৃত্যুর লড়াই করতে হয় তাহলে তো হসপিটালে যাওয়ায় আগে দুইবার ভাববে। আমি নিজেই তো ভয় পাচ্ছি। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের উচিত ছিল পুরো খরচ বহন করার এবং দায়িত্বে অবহেলার জন্য শাস্তির ব্যবস্থা করার যাতে ভবিষতে এধরণের ঘটনা না ঘটে।
দোয়া করি এই অসুস্থ মহিলা যেন সুস্থ হয়ে উঠেন।

 2 hours ago 

আসলে এই ছোট্ট একটি ভুলের কারণে আজ রোগীটা মৃত্যুর শয্যায়। যিনি ব্লাড ব্যাক ডেলিভারি দিয়েছিল, তিনি ভালোভাবে যাচাই করে দিলে আজকে রোগীটির এই অবস্থা হইত না। তবে হ্যাঁ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের রোগিটির সমস্ত খরচের দায়িত্ব নেওয়া উচিত ছিল।
বিষয়টি বেশ কয়েকটা নিউজে দেখানো হয়েছিল।
এজন্য আমরা নিজেরাও সবসময় হাসপাতাল বা ক্লিনিকে গেলে সচেতন থাকবো।