আমার ভালোবাসা
প্রিয়,
পাঠকগণ,
আশাকরি আপনারা প্রত্যেকে খুব ভালো আছেন।
আজকে আমি আপনাদের সাথে যার বিষয়ে কথা বলবো, আমার জীবনে তার জায়গা বাবা, মায়ের পরেই।
এই পৃথিবীতে বাবা মায়ের পরে আমি যাকে সবথেকে বেশি ভালোবসি, যে আমাকে অভিভাবকের মতোই আগলে রাখে সে হলো আমার ভালোবাসার মানুষ।
আশাকরি আপনারা অনেকেই এতক্ষণে বুঝে গেছেন আমি কার কথা বলছি। ভালোবাসার মানে একেক জনের কাছে একেক রকম, কিন্তু আমরা কাছে ভালোবাসা মানে মুলত দুজন দুজনকে বোঝা। আমি সত্যিই ভাগ্যবতী যে আমার কাছে এমন একজন ভালোবাসার মানুষ আছে যে আমাকে খুবই বোঝে এবং খুব ভালোবাসে। ঠিক বাবা মায়ের মতো। অবশ্য আমিও তাকে খুবই ভালোবাসি।
আমার ভালোবাসার মানুষটির নাম বিশাল মজুমদার। আমাদের সম্পর্ক শুরু হয়েছিল ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ সালে। আমি ওর সাথে প্রথম ভালোভাবে সময় কাটাই সরস্বতী পূজার দিন কলেজের প্রোগ্রামে। কিন্তু তার বেশ কয়েকদিন আগে আমি ও আমার বান্ধবীরা একটা জায়গায় ঘুরতে গিয়েছিলাম এবং সেখানে আমি ওকে প্রথমবার দেখেছিলাম কিন্তু সে আমাকে সেদিন দেখিনি।
কিন্তু পরে আমি শুনলাম সে আমার কলেজের একটা বান্ধবীর সম্পর্কে দাদা হয়। ওদের পাড়াতেই তার বাড়ি
আমার বান্ধবী ওর কাছে টিউশনি পড়তো। তারপর আসে সেই বিখ্যাত দিন সরস্বতী পূজো। আমরা সবাই একসাথে কলেজে মজা করছিলাম। কোথা থেকে বিশাল চলে এলো, আর আমাদের সাথে নাচ করতে, ফটো তুলতে, কথা বলতে শুরু করলো।
একটু পরে দেখলাম সবাই আমার বান্ধবীর বাড়ি যাবে বলে রেডি হলো কিন্তু আমি কার সাথে যাব সেটাই বুঝতে পারছিলাম না। কারণ তার আগে আমি আমার বান্ধবীর বাড়ি কোনো দিন যায়নি, তাই চিনিও না। তাই আমি বললাম আমি আর যাবো না। তখন আমার বান্ধবী বিশালকে দেখিয়ে বললো যে - তুই আমার দাদার সাথে চল। কারন ও আমাদের বাড়ি যাবে।
তারপর আমি উঠলাম টোটো গাড়িতে,ওঠার পরে টোটোর মধ্যে সে এক কোণায়, আর আমি এক কোণায়। না কেউ কারও দিকে তাকাচ্ছি, না কথা বলছি। প্রথমবার যাচ্ছিলাম তাই সব দিক দেখতে দেখতে যাচ্ছিলাম, কোথায় কি লেখা, কি ঠিকানা সব। মনে মনে ভাবছিলাম আমাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে ভুল জায়গায় নিয়ে যাচ্ছে না তো?
তারপর নামলাম টোটো গাড়ি থেকে। ও হাটছিল, আর আমি ওর পিছনে পিছনে হাটছিলাম এবং শেষে গিয়ে পৌছালাম ওদের বাড়ি। তখন দেখলাম আর কেউ আমার বান্ধবীর বাড়ি গেলো না। তারপর ওখানে গিয়ে একটু আড্ডা মারলাম সবাই মিলে এবং তারপরে বাড়ি চলে আসি।তারপর থেকে ওদের বাড়িতে প্রায় দিন যেতাম আমরা সকলে এবং ধীরে ধীরে ওর সাথে মিশতে শুরু করলাম।
আর কথা বলতে বলতে কোথাও একটা ভালোলাগা শুরু হলো। কিন্তু আমি জানতাম না ওর মনে কি আছে। তাও একদিন ভাবলাম আজ আমি বলেই দেব। তাই২০১৬ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি ওর ফোনে মেসেজ করে বললাম - আমার তোমাকে ভালোলাগে। যদিও বিশাল ভেবেছিলে যে, সেই ভালোলাগাটা দুই দিনের। তাই আমাকে তখন কিছুই বলেনি কিন্তু ৩দিন পর আমাকে বললো যে- আমারও তোকে ভালো লাগে।
সেই দিন থেকে আমাদের পথচলা শুরু হয়েছে এখনও সেই পথচলা একই রকম আছে। এতগুলো বছরে অনেক ঝগড়া হয়েছে, অনেক ভুল করেছি, ওকে না বূঝে অনেক কষ্টে দিয়েছি এবং অনেক অশান্তি হয়েছে আমাদের মধ্যে এবং আমার পরিবারের কেউ চাইত না আমি ওর সাথে কোনোরকম সম্পর্ক রাখি। তাই নিয়ে আমাদের বাড়িতে প্রায় দিন একটা ঝামেলা হতো। এমনও সময় গেছে আমাকে বাইরে যেতে দিতো না।
আমার বাবা মা ভেবেছিলো আমি ছোটো, তাই কোনো মোহতে আটকে গেছি। কিন্তু এতো সব কিছুর পরেও আমরা কেউ কাউকে ছেড়ে যায়নি। কারন আমি জানতাম যেদিন মা বাবা বুঝতে পারবে সেদিন সব ঠিক হয়ে যাবে। আমি তো কোনো অন্যায় করি নি। তাই ভয় ও পাইনি।
এখন সব ঠিক আছে।মজার ব্যাপার হলো এখন আমার মা বাবা নয়নের মনি সে। আমার মা বাবাকে বিশাল খুব ভালোবাসে,খুব সম্মান করে। আমার জন্য এটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। ভালোবাসায় সম্মান খুব দরকার। সেটা দুজন দুজনের জন্য হোক বা দুই পরিবারের জন্য।
বর্তমানে সে বিদেশে থাকে।হোটেল ম্যানেজমেন্ট পাশ করে প্রায় ৪ বছর হয়েছে বিদেশে গেছে। নিয়মিত কথা হয় কিন্তু অনেক দিন সামনাসামনি দেখা হয় না, কথা হয় না। তাই একটা খামতি তো থেকেই যায়। কখনো কখনো মন খারাপ হয় কিন্তু তার কারনে কখনো ভালোবাসা কমেনি। সে সব সময় আমার পাশে ছিল এখনো আছে।
আমি কোনো ভুল করলে চোখ আঙুল দিয়ে বুঝিয়ে দেয়,শাসন করে। আবার তেমনই ভালোবাসে। আমি ওর মধ্যে আমার বাবার প্রতিচ্ছবি দেখি। আমার সমস্ত বায়না আবদার সব ওর কাছে। কখন যেন বাবার জায়গাটা ও নিয়ে নিয়েছে বুঝতে পারিনি। তাই বলে এই না, যে বাবা কিছুই করে না। বাবা তো করেই , আজীবন করবে। তার সাথে বিশালও করে। আর শুধু আমার জন্য করে না আমার বাবা মায়ের জন্যে ও করে।
আমি ওকে প্রথম থেকেই বলেছিলাম আমি ছাড়া আমার বাবা মায়ের আর কেউ নেই, তাই আমাদের দুজনকেই বাবা মাকে দেখতে হবে। আর ও যে এটা এতো ভালোভাবে পালন। করবে আমি সত্যিই ভাবিনি।
যাইহোক,দেখতে দেখতে অনেক গুলো বছর আমরা পেরিয়ে এসেছি। আর এই ভাবেই আমাদের সম্পর্ক যেন সারাজীবন থাকে। এইভাবেই যেন দুজন দুজনের সাথে থাকতে পারি, দুই পরিবারের সকলকে নিয়ে। আপনারা আর্শীবাদ করবেন।
সকলে ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন। শুভ রাত্রি।
আগামী দিনের শুভেচ্ছা রইলো, তবে কি জানেন প্রেম টাই ভালো সময়, বিয়ের পর সব হওয়া হয়ে যায় দায়িত্ব সামলাতে গিয়ে।
ধন্যবাদ @pulook স্যার। ঠিকই বলেছেন প্রেমের সময়টা দায়িত্ব অনেক কম থাকে।
একে একে আপনার পরিবার এবং ভবিষ্যৎ সম্পর্কগুলোর সাথে পরিচিত হতে পেরে ভালো লাগছে, আশাকরি এছাড়া অন্য কিছু খুঁজে পাবো আপনার লেখাতে ভবিষ্যতে।
ধন্যবাদ @sduttaskitchen ম্যাম।