ইঞ্জিনিয়ার কিংবা বিজ্ঞানী কিভাবে চিন্তা করে?
আজ একটু ভিন্ন ধরনের বিষয় নিয়ে আপনাদের সাথে কথা বলবো। আমার এই অল্প জীবনে অল্প কিছু অভিজ্ঞতা রয়েছে। সেসব অভিজ্ঞতার আলোকেই আজ একটু ভিন্নধর্মী বিষয় নিয়ে আমার নিজস্ব মতামত ব্যক্ত করব। আমরা এই পৃথিবীতে বসবাস করি এবং এই পৃথিবীর বিভিন্ন ধরনের সমস্যার জন্য বিজ্ঞানীরা এবং ইঞ্জিনিয়ারেরা প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছেন। কিন্তু তাদের কাজ কিভাবে তারা সম্পাদন করে? কিংবা তারা কিভাবে চিন্তাভাবনা করে সেই বিষয়গুলো আজ সংক্ষিপ্ত আলোচনা করব।
প্রথমেই বলে রাখি ইঞ্জিনিয়ার কিংবা বিজ্ঞানীরা এমন এক প্রজাতির মানুষ তারা কখনো চুপচাপ বসে থাকতে পারে না। কোন সমস্যা না থাকলেও তারা সমস্যা বের করে সেই সমস্যার বিভিন্ন ধরনের সমাধান করতে থাকে। এই প্রজাতির মানুষ কখনোই সাধারণ মানুষের সাথে তুলনা করা সম্ভব নয়। কারণ তারা তাদের চিন্তা ভাবনা গুলোকে অন্য লেভেলে নিয়ে গেছে। যারা আমরা সাধারণ মানুষ রয়েছি সেই বিষয়ে কখনো কল্পনাও করতে পারবো না।
আমার এই ছোট জীবনে অনেকগুলো বিজ্ঞানীদের জীবন ইতিহাস পড়েছি। সেসব ইতিহাস থেকে যেসব বিষয় জানতে পেরেছি সেসব আপনাদের সাথে শেয়ার করব। তবে আজ কোন জ্ঞানের কথা বলবো না বরঞ্চ সাধারণত তারা কিভাবে চিন্তাভাবনা করে এবং কিভাবে কোন একটি সমস্যার সমাধান খুঁজে বের করে সে বিষয়ে আলোচনা করছি।
পৃথিবীর মহান বিজ্ঞানীদের তালিকায় আর্কিমিটিস সবার উপরে তালিকায় থাকবে। আর্কিমিটিস তার সেই সময়ে তার নিজের ভুখন্ড রক্ষা করার জন্য অনেক অনেক নতুন অস্ত্র এবং সরঞ্জাম তৈরি করেছিল। সেসব বিষয়গুলো তারা ওই সময় কখনো চিন্তাও করতে পারেনি। কিন্তু তিনি কিভাবে এই বিষয়গুলো চিন্তাভাবনা করে সেটা বাস্তবায়ন করলো! এছাড়াও ব্যক্তিগতভাবে নিকোলা টেসলা কে আমার অনেক ভালো লাগে। তিনি তার সম্পূর্ণ জীবনে এমন এমন কিছু আবিষ্কার করে গেছেন যে সব আবিষ্কার আমরা আজ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে ব্যবহার করেই যাচ্ছি।
কিন্তু অন্যান্য বিজ্ঞানীদের তুলনায় নিকোলা টেসলার গুরুত্ব অনেক কম ছিল। সেই সময়ে যার কারণে তার অনেকগুলো আবিষ্কার হয় এখন পর্যন্ত মানুষের সামনে আসেনি। এছাড়াও তিনি আরো অনেক কিছু আবিষ্কার করেছিল যেগুলো এখনো পর্যন্ত আমরা সাধারণ মানুষ জানতে পারিনি।
আলবার্ট আইনস্টাইন, নিউটন আরো অনেক অসংখ্য বিজ্ঞানী রয়েছে তারা মূলত এই বিজ্ঞানের বিষয়গুলো কোথা থেকে চিন্তা করেছে? এর সংক্ষিপ্ত এবং সহজ উত্তর হচ্ছে প্রকৃতি থেকে। এই নিউটনের মাথায় কিন্তু আপেল পরেছিল। এই বিষয়টা তো হয়তো সবারই মনে আছে। তবে এই বিষয়টি তিনি অন্যভাবে চিন্তা করেছেন। কেন আপেল উপরে না গিয়ে নিচে পরল এ থেকেই তিনি অনেক বড় একটি থিওরি আবিষ্কার করেন। যার কারণে আজ আমরা গ্রাভিটির অস্তিত্ব আছে বলে বিশ্বাস করি।
মনে করুন আপনি একটি সাবমেরিন তৈরি করবেন। কিন্তু সাবমেরিন তো পানির নিচ দিয়ে চলাচল করবে। সেক্ষেত্রে আপনার কি কি বাধা বিপত্তি আসতে পারে সেই বিষয়ে সর্বপ্রথম আপনাকে চিন্তা করতে হবে। সাবমেরিন এর বিভিন্ন অংশে কিন্তু ফাঁকা জায়গা রয়েছে। যেখানে আমরা পানি ভর্তি করেই সাবমেরিনকে সমুদ্রের তলদেশে নিয়ে যাই, আবার সেখান থেকেই আমরা পানি বের করে দিয়ে সাবমেরিনকে সমুদ্র পৃষ্ঠে নিয়ে আসি। বিষয়টি শুনতে যেরকম সহজ মনে হচ্ছে বাস্তব বাস্তবায়ন করা ততটাই কঠিন।
কতটুকু পানি ঢুকালে সেই সাবমেরিন সমুদ্র কতটুকু নিচে যাবে, আবার কতটুকু পানি বের করে দিলে সমুদ্রপৃষ্ঠে উঠবে। এখানে একটা বড় ক্যালকুলেশন রয়েছে। আবার কতটুকু পানি ঢোকালে সেই সাবমেরিনটির ভারসাম্যহীন হয়ে যাবে। সামনে এবং পিছনের অংশটুকু সমান ভাবে ডুবে এবং ভেসে উঠবে। এছাড়া সামনের দিকে ডানে বামে নেওয়ার জন্য বিভিন্ন ধরনের মেকানিজম রয়েছে এবং সেই ম্যাকানিজম গুলো কিভাবে কাজ করবে! এই বিষয়ে অনেক ধরনের ক্যালকুলেশন রয়েছে। যখন সাবমেরিন প্রথম প্রথম মানুষ আবিষ্কার করে তখন অনেক ধরনের ফেইলিওর ঘটনা রয়েছে। প্রায় অনেক বছরের অনেকগুলো বিজ্ঞানের গবেষণার ফলে, আজ আমরা অত্যাধুনিক সাবমেরিন দেখতে পাচ্ছি।
সাধারণত কোন কিছু তৈরি করার সময় যেসব সমস্যার আমরা সম্মুখীন হই সে সমস্যা থেকে বার হওয়ার জন্য প্রকৃতি কোন কোন উপাদান রয়েছে এবং কোন কোন উপাদানের সাহায্যে সেই সমস্যাটি সমাধান করা যায় বিজ্ঞানীরা সবার আগে সেই বিষয়টি চিন্তা করেন। যেমন সাবমেরিন তৈরি করার সময় মাছের উপর ব্যাপক গবেষণা শুরু হয়েছিল এবং মাছ কিভাবে সমুদ্রের তলপৃষ্ঠে যায় আবার উপরে ভেসে ওঠে। এছাড়াও বিভিন্ন ধরনের প্রাণীর উপর গবেষণা করেছিল, সেই গবেষণার ফল স্বরূপ আজ আমরা অত্যাধুনিক সাবমেরিন দেখতে পাচ্ছি।
আমি শুধুমাত্র সাবমেরিন এর উদাহরণ দিয়ে বিষয়টি বুঝানোর চেষ্টা করলাম। আসলে আমাদের প্রকৃতিতে প্রায় সবকিছুই রয়েছে। শুধুমাত্র খুঁজে বের করতে হবে। আপনার সমস্যার জন্য কোন এলিমেন্ট প্রয়োজন এবং সেই এলিমেন্ট দিয়ে কিভাবে আপনি আপনার সমস্যার সমাধান করবেন।
একবার কল্পনা করে দেখুন বিজ্ঞানীরা যদি এত সবকিছু আবিষ্কার না করতো তাহলে কিন্তু এখনো আমরা আদিম যুগের মতোই বসবাস করতাম। ইন্টারনেট থেকে শুরু করে ইলেকট্রিসিটি এবং বিভিন্ন ধরনের গবেষণার কেন্দ্র, স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় সবকিছুই কিন্তু আমাদের এই বিজ্ঞান এবং গবেষণার ফলাফল। তাই এ বিষয়টিকে ছোট করে দেখার কিছুই নেই। আশা করছি আজকের এই টপিক আপনাদের বুঝতে সুবিধা হয়েছে। আমি ব্যক্তিগতভাবে একদম সহজ ভাষায় নিজের মতো করে বুঝানোর চেষ্টা করেছি।
আজকের মত এখানেই শেষ করছি। আপনারা সবাই ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন, নিজের যত্ন নিবেন। ঢাকা শহর এবং বাংলাদেশের সব জায়গায় কিন্তু ডেঙ্গুর মহামারীর ছড়িয়ে পরেছে। তাই আপনার একটু সাবধানতা অবলম্বন করে চলাচল করবেন, ধন্যবাদ সবাইকে।
VOTE @bangla.witness as witness
OR
250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP | 5000 SP |
আমি আল সারজিল ইসলাম সিয়াম। আমি বাঙালি হিসেবে পরিচয় দিতে গর্ববোধ করি। আমি বর্তমানে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের বিএসসি-র ছাত্র। আমি স্বতন্ত্র স্বাধীনতা সমর্থন করি। আমি বই পড়তে এবং কবিতা লিখতে পছন্দ করি। আমি নিজের মতামত প্রকাশ করার এবং অন্যের মতামত মূল্যায়ন করার চেষ্টা করি। আমি অনেক ভ্রমণ পছন্দ করি। আমি আমার অতিরিক্ত সময় ভ্রমণ করি এবং নতুন মানুষের সাথে পরিচিত হতে ভালোবাসি। নতুন মানুষের সংস্কৃতি এবং তাদের জীবন চলার যে ধরন সেটি পর্যবেক্ষণ করতে ভালোবাসি। আমি সব সময় নতুন কিছু জানার চেষ্টা করে যখনই কোনো কিছু নতুন কিছু দেখতে পাই সেটার উপরে আকর্ষণটি আমার বেশি থাকে।
বিষয়: ইঞ্জিনিয়ার কিংবা বিজ্ঞানী কিভাবে চিন্তা করে?
কমিউনিটি : আমার বাংলা ব্লগ
আন্তরিক ভাবে ধন্যবাদ জানাই এই কমিউনিটির সকল সদস্য কে, ধন্যবাদ.......
ঠিক বলেছেন ভাই, বিজ্ঞানীদের চিন্তা ভাবনা এবং সাধারণ মানুষের চিন্তা ভাবনার মধ্যে বিরাট পার্থক্য রয়েছে। আমরা তো সাধারণত কোনো সমস্যা হলে সেটার সমাধান বের করার চেষ্টা করি। কিন্তু বিজ্ঞানীরা সমস্যার সমাধান আগে থেকেই বের করে রাখে। এটা অবশ্যই স্বীকার করতে হবে যে, বিজ্ঞানীরা যদি এতো কিছু আবিষ্কার না করতো, তাহলে আমরা এখনো আদিম যুগের মতোই বসবাস করতাম। যাইহোক পোস্টটি পড়ে খুব ভালো লাগলো ভাই। শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।
সাধারণ মানুষ থেকে যে ব্যক্তি একটু ভিন্নভাবে চিন্তা-ভাবনা করতে পারবে সেই তো হচ্ছে প্রকৃত বিজ্ঞানী, যাইহোক আমার ছোট্ট জ্ঞানে যতটুকু বুঝতে পেরেছি ততটুকুই নিজের মত করে উপস্থাপন করেছি, ধন্যবাদ আপনাকে...
বিজ্ঞানীরা কিংবা ইঞ্জিনিয়াররা সব কিছুই গভীরভাবে উপলব্ধি করার চেষ্টা করে। আসলে আমরা যে বিষয়গুলো খুব সাধারণ মনে করি সেই বিষয়গুলো তারা অনেক গভীরভাবে চিন্তা করে। এর বিভিন্ন দিক তুলে ধরার চেষ্টা করে। তাদের চিন্তাধারার সাথে আমাদের চিন্তাধারার বেশ তফাৎ রয়েছে। তবে যারাই ভিন্ন ধরনের চিন্তাধারায় এগিয়ে গেছে তারাই জীবনে ভালো কিছু করেছে এবং আমাদের মাঝে ভালো কিছু উপহার দিয়েছে। যাইহোক ভাইয়া আপনার লেখাগুলো পড়ে অনেক ভালো লাগলো। সেই সাথে ডেঙ্গুর হাত থেকে আমাদের রক্ষা পেতে হলে অবশ্যই সচেতন হতে হবে এবং ভালো থাকার চেষ্টা করতে হবে।
ধন্যবাদ আপনাকে, আপু।
বিজ্ঞানী বলেন কিঁংবা ইন্জিনিয়ার বলেন এদের চিন্তা ভাবনা সাধারণ মানুষ থেকে অনেক উর্ধ্বে।এদের চিন্তা ভাবনার ফলে আমরা আজ আধুনিক জীবন পেয়েছি।নয়তো আদিম যুগেই আমাদের পরে থাকতে হতো। তাদের কাজের ফল আমাদের এই উন্নত সমাজ ও দেশ।অনেক সুন্দর করে গুছিয়ে নিজের ভাষায় লেখাগুলো শেয়ার করলেন। জেনে ভীষণ ভালো লাগলো। আর অবশ্যই ডেঙ্গু থেকে নিরাপদে থাকবেন।শুভকামনা রইলো আপনার জন্য।
ধন্যবাদ আপু।।