ছন্দপতনের মাঝে খুঁজে চলা স্মৃতি | একটি গদ্যরূপ সাহিত্য

আমার সহযোগী লেখক ও পাঠকবৃন্দ,

সবাইকে সালাম/ আদাব ও মোবারকবাদ জানাই, আরো যারা কাছে কিংবা দূর দূরান্ত থেকে যুক্ত আছেন এই মঞ্চটিতে। আশা করি বরাবরের মতো সকলেই ভালো, সুস্থ সুন্দর ও নির্ঝঞ্ঝাট একটি মুহুর্ত পার করে চলেছেন। প্রতিদিনের উন্নতি, সুখ ও আনন্দ বয়ে আসুক জীবনে ও ভাবনায়, এই মনোষ্কামনা করি পরিশেষের সম্ভাষনে।

অতঃপর, নতুন এই সময়ের মাঝে আজকের লেখার মূল পর্বে প্রবেশ করা যাক তবে দেরি না করে।

আজ সকাল থেকে ব্যাক্তিবিশেষের হিসেবে নিত্যদিনের কাজকর্মের মধ্য দিয়ে চলছিলাম। সকাল গড়িয়ে দুপুর বেলা ক্রমশ এগিয়ে চলেছে আর আমি বুঝতে পারলাম কিছু ঘটনা পরম্পরায় বারবার আটকে যাচ্ছি৷ কথাগুলো জড়িয়ে যাচ্ছে, হয়তো একরাশ হতাশা আর স্মৃতিকাতরতায় পর্যবসিত হয়ে পড়ছিলাম। কোনো কারণ ছাড়াই ।

Src

এটি একটি প্রতিষ্ঠিত ধারণা যে, যখন মানুষের স্বাভাবিক উদ্যম, কর্মস্পৃহা, কারো উৎসাহ প্রদানে ঘাটতি পড়তে থাকে, তার একটি নির্দিষ্ট কিংবা পরোক্ষ প্রভাব পড়ে দৈনন্দিন কাজগুলোতে, পারফরম্যান্সে । আমাদের সমাজে কত শ্রেণি পেশার মানুষ রয়েছে যারা ভিন্ন আঙ্গিকে নিজেকে মেলে ধরছেন, মেধা -বুদ্ধি ও মননশীলতার মাধ্যমে দেশকে ও নিজেকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন।

কিন্তু, কখনো শত সাফল্য, কৃতিত্ব, শুভাকাঙ্ক্ষী ও যারা সমর্থন দিয়ে যায় তাদের ছায়ার মতো আশীর্বাদ ও অনুপ্রেরণা থাকার পরেও কোন কোন সময় মন সায় দেয় না স্বাভাবিক ছন্দে ফিরে আসার । এটি একটি সাধারণ ঘটনা যা ঘটে চলে, সবার মধ্যেই রয়েছে - ছাপ ফেলে যায় জীবনের প্রতিটি অধ্যায়ে, তবুও আমরা বেশিরভাগ সময় তা বুঝতে পারি না।

আজ, যে বিষয়টি সামনে নিয়ে আসছি ও তুলে ধরার জন্য ব্লগ লিখছি, সেটির মূখ্য প্রসঙ্গের কেন্দ্রবিন্দুতে আছে ছন্দপতন। ছন্দের অভাবে ছন্দপতন, আর এর মাধ্যমে স্বাভাবিক অগ্রযাত্রা ব্যহত হয়ে চলে জীবনের কোন না কোন সময়। কেন ঘটে এ ছন্দপতন, তার পেছনে মূল উপজীব্য ভূমিকা রাখে কোন প্রভাবক ?

প্রশ্নগুলোর উত্তর খোঁজর জন্য নিজের দিকে একবার তাকালাম। কিছু ক্ষেত্রে খুব স্বাভাবিক সহজ সরল ব্যাপার গুলিয়ে ফেলছি, ভুল করে বসছি যা খুবই সরল কিছু। উদ্যম ও স্পৃহা মানুষের সবসময় একরকম থাকে না, তা সত্য। তবে যখন কেউ আবেগীয় দিক থেকে পিছনে পড়ে যায় - তার থেকে উত্তরণের পথে গতিলাভ করা অনেক কঠিন।

Src
হতাশার বাষ্প যখন ঘন হয়ে ওঠে, তখন শুধু নীলচে রঙের আকাশটা খুঁজে বেড়াই। সেটি বড্ড নীল, কখনো সাদা শুভ্র রঙের ছটা দেখতে পাওয়া যায়। কোন এক জাদুকরী রঙতুলির হাতে নিয়ে বসে থেকে যেন নীলের মাঝে শরতের সাদা রঙে রাঙিয়ে দিয়েছে সারা আকাশ জুড়ে। চেয়ে চেয়ে দেখি, সুখ আর দুঃখ তখন ধোঁয়া হয়ে উড়ে যেতে থাকে।

ব্যর্থতা, সহজ ও সরল কিছু হিসেবে ভূল করে বসা, কোন ধাপ পার হতে অকৃতকার্য হওয়া আর তেমন বেশি রেখাপাত করে না। কারণ, ছন্দপতন যে হবে, যা হওয়ার তা তো হবেই। ছন্দের পতন হয় বিধায়ই তো ছন্দের এত মূল্য। জীবনের মৌলিক বিষয়গুলো ছন্দের ওপর দাঁড়িয়ে রয়। প্রকৃতির নিয়ম।

বেশ কয়েক বছর আগে মায়ায় পড়েছিলাম, চারদিকে শহুরে জীবন, কোলাহল, ব্যস্ততা আর যান্ত্রিকতা এগিয়ে চলেছে ক্রমশ অনেকটা পথ ধরে। অবিরল, বিরামহীনভাবে। রাস্তাঘাটে ব্যস্ততা, অফিস আদালতে ব্যস্ততা, শপিংমলে ব্যস্ততা, খেলার মাঠের ধারের আঙিনায় ব্যস্ততা। ব্যস্ততার আর শেষ নেই - নানান জীবনের আয়োজনের ভীড়ে ক্লান্ত এক প্রাণ আমি খুঁজে খুঁজে চলেছিলাম কোথাও একটু জিরিয়ে নেব।

অবসাদ গ্রাস করে নিতে চাইলো। রাস্তার ধারে পার্ক এগিয়ে চলেছে, নিকটে একটি বেঞ্চিতে গিয়ে বসলাম। বেশ কিছুটা মানুষের ঢল কম ও ধারে তখন। আমি কিছুক্ষণ জিরিয়ে নিলাম। মিনিট দুয়েক পর একজন আইসক্রিম ওয়ালা ফেরি করে আইসক্রীম বিক্রি করতে করতে যাচ্ছিল।

Src

আমার বেঞ্চের পাশে আসা মাত্রই তাকে ডেকে একটি আইসক্রিম নিয়ে নিলাম কর্ণেলী স্ট্রবেরি ফ্লেভারের। মোড়কের ধার খুলে খেতে বসলাম, অমনি একজন স্বল্প পরিচিতা সমবয়সী মেয়ে কুকুরের পাল্লায় পড়লো। আমি কুকুর তাড়িয়ে দিতেই, তার সাথে কিছু বাক্য বিনিময়ের সুযোগ পেলাম।

আমার আইসক্রিমটি তাকে দিয়ে, আরেকটি আইসক্রিম খরিদ করে নিলাম দূর থেকে ফেরিওয়ালাকে ডেকে। ততক্ষণে বিকাল গড়িয়ে চলেছে, মানুষজন পার্কে আনাগোনায় মুখরিত হয়ে রয়েছে। আমি কিছুক্ষণের আলাপে জেনে নিলাম অনেক কথা, সে যে বিদ্যায়তনিক দিক থেকেও কাছের - তা জানারও অবকাশ রইলো না।

তারপর বছর দুয়েক পার হয়ে গেল। কিছু স্মৃতি ক্ষয়ে যায়, আর সময় এগিয়ে চলে। স্মৃতিরা হারায় না, ফিরে আসে যেমনি সব পাখি নীড়ে ফিরে যায় সন্ধ্যার প্রাক্কালে। ছন্দ হারিয়ে যাবে, তা-ই স্বাভাবিক। কিন্তু তা ই বলে ফিরে আবার আসবে না, তা-ই বা হওয়ার জন্য নয়।

তারপর সময় গড়িয়ে চললো অনেকটা সময়। সন্ধ্যার আলো ফিকে হয়ে আসছে, অন্ধকারের আগে ফিরে যেতে হবে সেই চিরচেনা আঙিনায় যেখানে বাড়ির রাস্তাটা দৃশ্যমান।

ধন্যবাদ।