কতদূরে তব নতুন আলো ?

সবাইকে সালাম ও মোবারকবাদ, নমষ্কার ও আদাব আরো যারা কাছে কিংবা দূর দূরান্ত থেকে যুক্ত আছেন এই মঞ্চটিতে। আশা করি বরাবরের মতো সকলেই ভালো, সুস্থ সুন্দর ও নির্ঝঞ্ঝাট একটি মুহুর্ত পার করে চলেছেন। প্রতিদিনের উন্নতি, সুখ ও আনন্দ বয়ে আসুক জীবনে ও ভাবনায়, এই মনোষ্কামনা করি পরিশেষের সম্ভাষনে।

আজ জুলাই মাসের শেষ দিন, দেখতে দেখতে একটি মাস কেটে গেল। মনে হয়েছিল এইতো সেদিন যখন মাসের প্রথম দিনটি শুরু হলো। তারপর ধীরে ধীরে একদিন দুদিন করে এগিয়ে যেতে থাকলো মাসটি । পৃথিবী যখন সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে চলে, ১২ টি মাস ধরে তার প্রতিটি ই সময়ের হিসেবে একই রকম। সময় যেহেতু নিয়মে চলে, তার জন্য সবগুলো মুহূর্তই সাংখ্যিক হিসেবে আলাদা নয়।

সোর্স

কিন্তু গত হতে যাওয়া জুলাই মাসটি অন্যান্য মাসের মতো একইরূপে আমি দেখি না । অন্তত, যারা বাংলা ভাষাভাষী, বাঙালি কিংবা মোটাদাগে বলতে গেলে বাংলাদেশী, তাদের জন্য এ দিনটি অত্যান্ত ঘটনাবহুল, অর্থপূর্ণ, নাটকীয় ও মর্মান্তিক। এ মাসের গভীরতাটুকু বোঝানোর জন্য অনেকগুলো বিশেষণ যোগ করে ফেললাম, কিন্তু আদতে শব্দগুলো যথেষ্ট নয়। যার জ্বালা সে বোঝে।

কিছু সত্যকে চাপা ধরে রাখা যায় না, তেমনি যা ঘটে চলে তা দাবিয়ে রাখা যায় না। ন্যায় ও নিষ্ঠার জয় ঘটে চলে এ পৃথিবীতে তার নিজস্ব নিয়মে আর প্রত্যেকটি ব্যাক্তিই কোন না কোন ভাবে তা প্রত্যক্ষ করে চলে। বাংলার রূপপ্রকৃতি যদিও তেমন একটি বৈচিত্র্য ধরে নেয় আগের মতো করে, তবুও জুন -জুলাই মাস বর্ষাকালের আপণ শ্রাবণধারার বর্ষণমুখরতাকে কাটিয়ে উঠে শরতের কাশফুলে ভিড়ে যায়।

আবহমান কাল ধরে বাংলার প্রকৃতি এমনই রূপ ধরে রেখেছে। একটুও কার্পণ্য করে চলে নি।

কিন্তু, কখনো জাতীয় জীবনে এমন অনেক দুর্যোগ ঘনিয়ে আসে যখন প্রকৃতির এমন ধরণের সৌন্দর্য আর চিত্তাকর্ষক রূপ তেমন প্রভাব ফেলে না মনের ওপর। শরতের আগমন কি নতুন সাজে সেজে যাওয়া নবপল্লব, ধরণীর বুকে সবুজ শ্যামল প্রকৃতি ও উষার আলোয় ছেয়ে যাওয়া সকালটুকুর মায়া ঘিরে ধরে না তেমন একটা। কারণ বড় কিছু ঘটে চলেছে।

সত্যিটা হলো এই, প্রত্যেকটা মানুষেরই ব্যক্তিগত একটি জীবন থাকে, তাতে নানা ভালো সময়, খারাপ সময় এগিয়ে চলে। মানুষ সবসময়ই কোন না কোনক্রমে নিজেকে ও নিজের পছন্দের কারো জন্যে বেঁচে থাকার চেষ্টা করে। কিন্তু কখনো দেখা যায়, ব্যাক্তিগত নানা চাওয়া পাওয়া ও দাবিকে ছাপিয়ে জাতীয় জীবনের বিভিন্ন বিষয় ও পরিসরই বড় হয়ে ওঠে।

স্বদেশী বিভিন্ন বিষয় কখনো এতটা অতিমাত্রায় বেড়ে ওঠে যাতে সাধারণ মানুষ হাঁপিয়ে ওঠে। খুঁজে পেতে চায় মুক্তির উপায়। তার জন্য অনেক ত্যাগ তিতিক্ষা স্বীকার করতে হয় আর সে পথ ধরে গিয়ে হয়তো অন্তিম কিছু চ্যালেন্জেরও মোকাবিলা করার দরকার হয়ে পড়ে। পাছে ডেকে যায়, নানা ভয়, ভীতি, আশঙ্কা ও অনিশ্চয়তা, যার সবটুকুই জীবনকে কেন্দ্র করে ঘোরার মধ্য দিয়ে পূর্ণতা পায়, তবুও হাল ছাড়ে না বিবেকবান ও সাহসী মানুষ।

সোর্স

ঘূণে ধরা কোন সমাজ নিয়ে যত ভেবেছি, ততটাই মুষড়ে পড়েছি। কখনো হতাশ হয়েছি,ক্লান্ত পরিশ্রান্ত এতটা যে কখনো হাল ছেড়ে দিতে চেয়েছি, স্বার্থপর হওয়ার চেষ্টা করে আপন পথের দিশায় আরেকটু এগিয়ে যেতে। কিন্তু পরক্ষণেই বুঝলাম, যা ক্ষনিকের সময়ের জন্য গোচরে চলে আসে তা কি সার্বজনীন ? মরীচিকা নয় তো ?

প্রত্যেকটা মানুষেরই ভুল ভাঙে। এটি একটি অনুসিদ্ধান্ত যখন কেউ কোন গল্পের শেষ ভাগে চলে আসে, একটি ধাঁধার সমাধান পেয়ে বসে আর তারপর চেয়ে দেখে সত্যিই যে ধারণা আগে বদ্ধমূল ছিল তা আর নেই। তেমনি করে আমিও বুঝেছি ঘূণে ধরা সমাজের পুরোটা তো একই পথের পথিক নয়, যেটুকু ক্ষয়ে গেছে তার ততটুকুই তো নিঃশেষ -বাকিটুকু অবশিষ্ট আছে।

হয়তো কিছুদিন উত্তাল হয়ে থাকবে জনক্ষোভ, তার থেকে নিস্তার পাওয়া যাবে না। আবার কোনদিন মানুষ বুঝবে যে উন্নত একটি সমাজ কোন পথে গিয়ে তার প্রকৃত রূপ খুঁজে পাবে। তার জন্য বেশি দূর যাওয়ার প্রয়োজন হয়তো পড়বে না, হয়তো চলমান দশকের শেষে, নয়তো এ শতাব্দীর পরে, নতুবা তারও কিছুকাল পরে। আমরা হয়তো থাকবো না, কিন্তু যারা স্বেচ্ছাচারী, দারুনভাবে তারা একদিন ছায়া সুদ্ধ মুছে যাবে।

ইতিহাস অনেক কিছুকেই মুছে দিয়েছে, দিবে হয়তোবা কিছু ছেলেখেলা, অনিয়ম অবিচার, জুলুম যা কিছু মানুষের জীবন বিপন্ন করে দিয়েছে। মনে থাকবে প্রতিরোধের শক্তি, আত্নত্যাগ আর নিজের আত্নসম্মানের প্রতি সুবিচার যা নিজের ব্যাক্তিবিশেষকে ছাড়িয়ে গিয়েছে অনেকদূরে, সাধারণ থেকে অসাধারণত্বে।

আপনাদের সবাইকে ধন্যবাদ। দেখা হবে আগামী কোন পর্বে, অন্য কোন নতুন দিনে। ততক্ষণ পর্যন্ত ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন। শুভকামনা রইলো।

পোস্টের ধরণ	সাহিত্য
শিরোনাম	কতদূরে তব নতুন আলো ?
বিষয়	বিশেষ সমালোচনা
প্রসঙ্গ/উপক্রম	জাতীয় জীবন
ফোরাম	আমার বাংলা ব্লগ

১০% সাই-ফক্স ও ৫% এবিবি স্কুল বেনিফিশিয়ারি ।

নিজের সম্পর্কে কিছু কথা