নতুন আশায় বাঁধা ঘর | [ দ্বিতীয় পর্ব ]

আমার সহযোগী লেখক ও পাঠকবৃন্দ,

সবাইকে সালাম/ আদাব ও মোবারকবাদ জানাই, আরো যারা কাছে কিংবা দূর দূরান্ত থেকে যুক্ত আছেন এই মঞ্চটিতে। আশা করি বরাবরের মতো সকলেই ভালো, সুস্থ সুন্দর ও নির্ঝঞ্ঝাট একটি মুহুর্ত পার করে চলেছেন। প্রতিদিনের উন্নতি, সুখ ও আনন্দ বয়ে আসুক জীবনে ও ভাবনায়, এই মনোষ্কামনা করি পরিশেষের সম্ভাষনে।

অতঃপর, নতুন এই সময়ের মাঝে আজকের লেখার মূল পর্বে প্রবেশ করা যাক তবে দেরি না করে।

গত পর্বে তুলে ধরেছিলাম উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষের জীবনে ঘটে যাওয়া কিছু সত্য ঘটনা যা প্রায় প্রত্যেকটা ভুক্তভোগী ব্যাক্তির জীবনেই ঘটে চলে। সমাজ বা রাষ্ট্রের মূল শহরাঞ্চল কিংবা সভ্যতার আলো থেকে কিছুটা দূরে থাকা এ মানুষগুলি বড় অসহায় বিভিন্ন সুযোগ সুবিধার দিক থেকে। প্রকৃতির সাথে যে সংগ্রামের বিষয়টা জড়িত থাকে, তার প্রায় সিংহভাগই এসব অঞ্চলের মানুষকে ঘিরে গড়ে ওঠে।

Src

বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ। আর নদীই হলো সেই উপাদান যেটি পৃথিবীর প্রায় সবকয়টি সভ্যতার গোড়াপত্তন কিংবা সৌকর্যময় উৎকর্ষতার পেছনে মূল ভূমিকা রেখে চলে। নদী ছাড়া মানুষের জীবন স্থবির, সাথে গ্রাম, গঞ্জ, নগর রাষ্ট্রের যাত্রা। তবুও সেই নদীই হলো সৃষ্টির কারিগর, আবার কারো জন্য ধ্বংসের কারণ।

নদীভাঙন হলো সে সমস্যার চূড়ায় থাকা একটি বিষয় যার হাত ধরে রচিত হয় অনেক সংগ্রাম ও বসবাসের পরিবর্তনের প্রেক্ষাপট। চলমান গল্পটির দ্বিতীয় পর্বে প্রবেশ করার শুরুতে দেখেছি, শ্রেয়া নামক একটি তরুণী মেয়ের পরিবারের নানা বাঁকবদল। কখনো ঘটনা পরিক্রমায় তা নদীভাঙনে সব হারিয়ে জলপথে ভেসে নতুন ভাগ্যের, নতুন ভবিষ্যতের অন্বেষণের দিকে চালিত করে।

কিছুদিন নদীতে একটি বজরা নৌকায় করে ভেসে চলার পর তারা একটি চরের সন্ধান পায়। দূর থেকে মাঝি আর মানুষজন তা দেখতে পেয়ে ভীষণ আপ্লুত হয়ে পড়ে। তাদের নিরুদ্দেশ যাত্রায় এই বুঝি একটি গন্তব্য ফিরে পেল৷
শ্রেয়া আর তার পরিবার এভাবেই বছর আটেক পূর্বে নতুন এক নগরে বসতি করা শুরু করলো।

তারপরে তাদের জীবন ও ভাগ্যে কি ঘটেছে, তা তুলে ধরবো আজকের পর্বে। দেখা হবে আগামীর পর্বে ততক্ষণ পর্যন্ত ভালো থাকুন আর সুস্থ থাকুন। ধন্যবাদ।

দ্বিতীয় পর্ব (২)

চরাঞ্চলের মানুষগুলো প্রত্যেকেই কোন না কোন গ্রাম, বন্দর কিংবা নগর থেকে এসে নদীর মাঝখানে জেগে ওঠা মাইল চারেকের ভূমি খন্ডে ঠাঁই নিয়েছে। তারা শুধু ভাগ্যের পরিহাসে এ স্থানে এসে জড়ো হয় নি, কেউবা বিতাড়িত হয়েছে আর স্থানীয় ভূমিদস্যু, কখনো মাতব্বর মানুষদের রোষানলে পড়ে নিজেদের ভিটে মাটি ছেড়ে আসতে হয়েছে।

Src

নদীভাঙনের কবলে পড়লে মানুষ সহায় সম্বল হারাতে শুরু করে, কিন্তু কখনো মানুষের দ্বারা মানুষ জুলুমের শিকার হয়, প্রাকৃতিক দুর্যোগের চেয়েও তা গভীর একটি অনুভূতি সৃষ্টি করে। শ্রেয়ারা সপরিবারে যখন চরাঞ্চলে চলে আসে তখন সে চরটির আয়তন স্বল্প ছিল। ছোট একটি দ্বীপের মতো, চারপাশে সবুজ বৃক্ষ, অরণ্য রয়েছে, তাছাড়া নৌকা বাঁধা আছে - ঘাটের মতো জায়গায়।

সবচেয়ে অবাক করা বিষয়টি ছিল, যে দ্বীপটি তারা নতুন করে বসতি নির্মাণ ও জীবনযাপনের জন্য বেছে নিল তার একটি আলাদা দিক ছিল। চরের থেকে সীমানার কিনারে গাছের সমাহার, তার থেকে প্রায় শ মিটার দূরেই আরেকটি চর যা মাস দুয়েক সময়ে জেগে ওঠে বিস্তীর্ণ যে ভূভাগটি মূল নগরের গঞ্জের সাথে জুড়ে দিয়েছে তার সাথে মিলিত হয়েছে।

ফলশ্রুতিতে, খুব সহজেই চরের মানুষ, নৌকা কিংবা বোটযোগে অথবা নিজেরা সালতি কিংবা ডিঙি বানিয়ে পারাপার করতে পারতো। ছোটখাট বাজার আর দোকানপাটও বছরের শেষে গড়ে উঠলো। একটি কথা আছে লোকমুখে প্রচলিত,

প্রয়োজনের কারণে নতুন কোন কিছুর উদ্ভাবন ঘটে।

শ্রেয়া দেখতে পেল সেই প্রথম দিন যখন তারা এলো, তখন সবেমাত্র মানুষজন খুৃৃঁটি, শন, ইট বানিয়ে নিল। নৌকা যোগে নিজেদের মতো আশ্রয় গড়িয়ে নিচ্ছে। কেউ টিনের ছাউনি দিচ্ছে, কেউবা মাটি খুঁড়ে একটি সুপেয় পানির ব্যবস্থা করছে। চররে মানুষগুলোর মাঝে এক ধরনের ঐক্য আর ভ্রাতৃত্ব লক্ষ্য করা গেল, যা সে অন্য কোথাও দেখে নি।

Src

কয়েকদিনের মধ্যে নিজেদের ঘরদোর তৈরি হয়ে গেল। বৃষ্টির পানি ধরার জন্য একটি চারকোনা রিজার্ভার, কাঠের ঘরবাড়ি আর ছাদ, কাঠের নৌকা চার-চারটি, দুটি মাঝিদের মাছ ধরার জন্য, দুটি তাদের পরিবারের মানুষজন,আত্নীয় স্বজন পারাপারের জন্য। প্রতিদিন হাট থেকে বাজার করে, খাবার দাবার ব্যবস্থা করে তাদের সংসার চলছে।

শ্রেয়া কলেজ পাস করে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা শুরু করলো। তার ভাইদ্বয় ও বাবা নিজ ব্যবসায় ভালো অবস্থান সৃষ্টি করে নিল। এভাবে বছর পাঁচেকের মাথায় তারা ঘুরে দাঁড়িয়ে গেল। কখনো সাংসারিক টানাপোড়েন থাকলেও উদ্যম ও নিষ্ঠার বলে তারা তাদের ভাগ্যকে বদলে নিল।

একে একে চরের মানুষগুলোও নিজেদের মধ্যে খুঁজে পেল অগ্রগতি যা শহর নগরের মানুষের এমনকি সেই নদীভাঙনে বিলীন হয়ে যাওয়ার পাশে গড়ে ওঠা গঞ্জের মানুষের কাছেও পৌঁছে গেল। ধীরে ধীরে গড়ে উঠলো একটি জনপদ আর মানুষের ভীড় -জমায়েত।

জীবনযাত্রায় নতুন মোড় নিল...

[চলমান]

১০% সাই-ফক্স ও ৫% এবিবি স্কুল বেনিফিশিয়ারি