রাজ্যহারা লালচে বিকেল | [ একটি ছোটগল্প ] || ১০% সাই-ফক্স ও ৫% এবিবি -স্কুল বেনিফিশিয়ারি

🗓️📌 তারিখ : ৩১.০৭.২০২৪ খ্রিস্টাব্দ ।

শুভ সকাল বন্ধুরা৷ দেখতে দেখতে জুলাই মাস চলে আসলো আর নতুন একটি প্রহরে সবাইকে আমার বাংলা ব্লগে আমন্ত্রণ জানাই।

আশা করি সকলে ভালো আছেন আর সময়টাকে বেশ ভালোভাবেই পার করছেন । আজ আমি আপনাদের সাথে একটি ছোটগল্প প্রকাশ করবো, যেটি কিছুটা বাস্তবিকতাকে তুলে ধরবে।

স্বভাবতই কিছু নিজস্ব ধারার অনুসরনের ফলেই নিজের হাতে গড়া সাহিত্যকেই আমি বাস্তবতার সাথে খাপ খাইয়ে চলার মতো করে সৃষ্টি করি, ফিকশন কিংবা কল্পনাতুর শ্রেণিকে পাশ কাটিয়ে। আধো বাস্তব আধো কল্পনার সাহিত্যশৈলীই আমার সবচেয়ে পছন্দের, তার পেছনে অনেক কারণ আছে।

প্রথমটি হলো, একটি সামগ্রিক জীবনের প্রতিফলন যেহেতু সাহিত্য, সে কারণে জীবনকে আর তার সাথে সামঞ্জস্যতা রেখেই এ বিশেষ সৃষ্টিশীল শাখাটি বেড়ে ওঠে, তার থেকে দূরে গিয়ে কোন নিস্তার পাওয়ার জো নেই। যদি সে দিকের বাইরে গিয়ে একটি শাখা গড়েই ওঠে তাহলে তা খাঁটিত্ব ও স্বকীয়তা হারাতে বসে।তাই, তার বিপরীতে গিয়ে অনন্য কিছুর খোঁজ করি না, অন্য সময় তা নিয়ে ভেবে দেখা যাবে।

তো, বেশি কথা না বাড়িয়ে মূল গল্পে প্রবেশ করা যাক।

Src

এক ছিল মহাপরাক্রমশালী অধিপতি, বিস্তর ভূখন্ডের মালিক । তিনি খুব ছোটবেলা থেকেই বংশানুক্রমিক ধারায় ক্ষমতা, রাজত্ব ও দেশ পরিচালনার কাছাকাছি থেকে বড় হয়েছেন । নিজেদের ভূখণ্ডে স্বাধীন ছিল পারিবারিক সূত্রে থাকা তাদের মুলুক, মাঝে মাঝে অন্যান্য রাজাদের ও সেনাপতিদের দ্বারা আক্রান্ত হলেও বেশ সামরিক রণকৌশলের আভিজাত্যে তারা তা উতরে গিয়েছেন।

এমন রাজ্য আক্রমণ, প্রতি আক্রমণ ঘটেই চলতো বছরের পর বছর ধরে, যেন যুদ্ধের দামামা আর জয়ধ্বনি নিত্য দিনের একটি অনুষঙ্গ, তার ভেতর দিয়ে সামনে পা বাড়ানো ছাড়া হাঁফ ছেড়ে বাঁচার জো নেই। এটি এক ধরনের অনুভূতি আর অভিজ্ঞতার মিশেলে গড়া উপলব্ধি যে, যতদিন রাজত্ব আছে, ততদিন তা টিকিয়ে রাখার জন্য সবকিছুকে যুদ্ধের মুখে ঠেলে দিতেই হবে ।

একদিকে প্রাণ, ধন-মান, রাজটীকা অন্য দিকে সংঘর্ষ, লোকক্ষয়, নির্বাসন আর রাজ্য হারানোর ভয়, দুটোই চলে সমানতালে।

যেই মানুষটি সেই শৈশব থেকে দেখে এসেছে পূর্বসূরীদের রণবেশ সকাল কি সন্ধ্যায়, কখনো প্রচন্ড ধুমধামের মধ্যে দিয়ে যাওয়া উৎসবের সাজ সাজ রবের কালেও আক্রমনের জবাবে পাল্টা আক্রমণ করতে হয়েছে।

সাধারণ মানুষের চাওয়া পাওয়ার সুখ দুঃখের মূল্য নেই তেমন, শুধু আছে অনিশ্চয়তা, আজকে তা ঘিরে ধরবে না বা সকল ছন্দের মধ্যে একটি বড় ছন্দপতন অবশিষ্ট নেই - এ কথা হলফ করে বলে নিশ্চিন্ত থাকার মতো পরিস্থিতি ছিল না তখন। ভৌগোলিক দিক দিয়ে এতটাই দ্বন্দ্বে ঘেরা রাজ্য ছিল তখন তাদের।

Src

যে ভূপতির কথা বলছি তিনি বয়সে তরুণ, জীবনের তেমন গভীর বোধশক্তি ও বিচারবুদ্ধির স্থিরতায় থিতু হওয়ার সময়ে এসে পৌঁছাতে পারেন নি। তাই স্বভাবতই তার সকল যোগ্যতা থাকার পরেও কিছু শাসকসুলভ গুন থেকে দূরে আছেন, যদিও প্রজাদের সুখদুঃখ বোঝার ব্যপারে তার কার্পণ্য ছিল না, ছিল একটি বিশেষ গুন যেটি তাকে সাধারণ মানুষের ভালোবাসা পেতে সাহায্য করেছে।

রাজকার্যের ফাঁকে তিনি কিছু সময় পাঠাগারে কাটাতেন। কিছুটা সময় নিভৃতে নিরালায়, প্রকৃতির সান্নিধ্যে থেকে পাখিদের কলকাকলি উপভোগ করতেন। কিভাবে সূর্যাস্ত যাচ্ছে, নদীর স্রোত বয়ে চলেছে অবিরল ধারায়, তার থেকে প্রাণ সঞ্চার করে জনজীবন কি সুন্দরভাবে মানিয়ে নিতে পেরেছে অনেকখানি। সাধারণ জীবনের ছাপ তার মনে একদিন তাদের মতোই বেড়ে ওঠার অভিলাষ জোগাতো।

বিকেলের অবসরে সাধারণ মানুষের মতো পোষাক পরে তিনি প্রজাদের সাথে সময় কাটাতেন। যখন তার ওপর রাজদায়িত্ব এসে পড়েনি, কিংবা রাজ্যাভিষেক হয় নি, তখন থেকেই তিনি খুঁজে পেতেন প্রাসাদের রঙিন জলমহলের বাইরেও একটি সুন্দর নির্ঝঞ্ঝাট সরল পৃথিবী আছে যার মূল্য আর্থিক পরিমাণে নিছক হলেও অনেকটাই সুখের ও তাৎপর্যে নিহিত।

প্রজাদের সাথে মিশতে তার ভালোই লাগতো। কখনো তিনি মানুষের ঘরের পাশ দিয়ে হেঁটে গেলে কেউ তাকে নিজ ঘরে নিয়ে যাবার অনুরোধ করতেন। তিনি অন্তত তাদের সাথে মিশতেন, আর প্রজাদের গিন্নীদের দেওয়া উপহার নিতেন, পিঠাপুলি খেতে দিলে না খেয়ে চলে আসতেন না। এমনি করে দিন তার বেশ কাটছিল।

সবেমাত্র কয়েকটি বছর হলো তিনি রাজদায়িত্ব হাতে পেয়েছেন। তার অনেক কাজ বটে, এই কয়েক বছরে রাজ্যের প্রভূত উন্নতি সাধন করেছেন তিনি যার জন্য পাশাপাশি রাজ্যের সাম্রাজ্যবাদীদের লোভ তার সিংহাসনের ওপর ছিল। একদিন মুহুর্মুহু যুদ্ধ বেঁধে গেল, তিনি সমগ্র সৈন্যবাহিনীকে ডেকে সমাবেশ করালেন, আর যুদ্ধের প্রস্তুতি নিলেন।

Src
প্রতিপক্ষ সৈন্যদের পরাক্রমের সাথে, বীরত্বের সাথে পরাস্ত করলেন। অনেক শত্রুর সৈন্য বন্দী করা হলো, কেউ পলায়ন করলো। যুদ্বের প্রায় শেষদিকে চলে এসেছে, এখন জয় প্রায় সুনিশ্চিত। এমন সময় বাইরের তাঁবু ছাউনিতে তিনি অবস্থান করছেন, তার জ্ঞাতি ভাই এসে তাকে রাজপ্রাসাদে ফিরে যেতে বললেন, কি একটি জরুরি কাজ আছে বলে।

তিনি কৌতুহলের বশে ফিরে গেলেন এবং সৈন্যরা সেখানেই রয়ে গেল। জ্ঞাতি ভাইকে এত বিশ্বাস করতেন যে, কোন দেহরক্ষী না নিয়ে গিয়েই রওয়ানা হলেন। বাড়ি ফিরে দেখলেন সিংহাসনের ওপর একটি চিঠি, খামে ভরা। তিনি তা পড়তে লাগলেন। এমন সময় পুরোটা প্রায় পড়ে ফেলেছেন, পেছন থেকে কে যেন এসে তাকে ধরেবেঁধে রাজ্যের বাইরে নিয়ে গেলেন।

Src

অন্যদিকে সৈন্যরা দেখলো তাদের সর্বাধিনায়ক নিখোঁজ, এবার তারা আদেশ না পেয়ে ছত্রভঙ্গ হতে লাগলো। অন্যদিকে শত্রুর দল আরো সৈন্য জোগাড় করে পাল্টা আক্রমন করে বিশাল সৈন্যদলকে পরাস্ত করলেন। রাজ্য নিমিষেই পতনের মধ্যে চলে আসলো। জ্ঞাত ভাই লোভের বশে নিজেদের সর্বনাশ ডেকে আনলো।

একটা সময় পুরো পরিবার নিজেদের রাজ্য হারালো আর সে তরুণ রাজাকে আর খুঁজে পাওয়া গেল না। এভাবেই একটি সুন্দর বলিষ্ঠ রাজ্যের অকাল পরিণতিতে তা গড়িয়ে গেল আর গল্পের অবসান নেমে আসলো।

অবসান ।

নিজের সম্পর্কে কিছু কথা

(