শিক্ষক দিবস পালন (১০%@shy-fox এবং ৫%@abb-school এর জন্য)
শিক্ষক রা হলেন সমাজ গড়ার কারিগর, আমার সমাজ সুষ্ঠ ও স্বাভাবিক গড়ে তোলার জন্য আমার এই যাত্রা শুরু হয় দীর্ঘ দশ বছর আগে। আমার এখনও মনে পরে মাধ্যমিক দেওয়ার পরই শুধুমাত্র হাত খরচ তোলার উদ্দেশ্যেই একটি ক্লাস থ্রি এর বাচ্চাকে দিয়ে আমার গৃহ শিক্ষক হিসেবে পথ চলা শুরু হয়। টিউশনি টা আমি ভালোবেসে করি, এটা কখনই আমার পেশা নয়।
আমার এক ছাত্রের হাতের বানানো
তবে ২০২২ সালে দাড়িয়ে আমার জীবনের অনেক খানি জুড়ে রয়েছে এই গৃহ শিক্ষকতা। অল্প অল্প করে পাওয়া এই রোজ গার দিয়ে অনেক সখ, চাহিদা পূরণ করেছি জীবনে। এমন অনেক অভিভাবক দের সাথে পরিচয় ঘটেছে যারা আমার ওপর বিশ্বাস রেখে নিজের সন্তানের দায়িত্ব আমার ওপর ছেড়ে দিয়েছেন, আবার অনেকে ভেবেছেন এই মাস্টার টা কে বদলে দিতে হবে। অনেকের সাথে সম্পর্ক এত নিবিড় হয়েছে যে স্টুডেন্ট দের এখন আর না পড়ালেও তাদের সাথে আত্মীয়তা রয়ে গেছে ষোলোআনা। গতকাল শিক্ষক দিবস উপলক্ষ্যে আমার ছাত্র ছাত্রীরা এসে হাজির হয়েছিল প্রতিবারের মত। সামান্য কিছু খাবারের আয়োজন ছিল ওদের জন্য স্টার্টার হিসেবে ছিলো স্যান্ডউইচ , মেইন কোর্স ছিল সেজ্যুয়ান পোলাও আর আলুরদুম, শেষে একটা করে আইস্ক্রিম। আর আমার ছাত্রছাত্রীরা হাতে করে এনেছিল নানান উপহার। উপহার পেতে কার না ভালো লাগে বলুন, আমারও তাই, আনন্দে মনটা গদগদ হয়ে উঠেছিলো।আজ আপনাদের মাঝে সেই উপহারের ছবিগুলো শেয়ার করছি।
ফটো১ | ফটো২ | ফটো৩ |
---|
উপহার গুলি পেয়ে আমার যা না আনন্দ হয়েছে তার চেয়ে ঢের বেশি আনন্দ ওরা পেয়েছে। বছরের এই একটা দিন সকল ছাত্র-ছাত্রী এক জায়গায় হওয়ায় ওদের আনন্দের সীমা ছিল না। যাক গে, যে ছবিগুলো আপনারা দেখলেন সেগুলো যে শুধুমাত্র উপহার তাই নয়। এর মধ্যে মিশে রয়েছে ওদের শ্রদ্ধা ভালোবাসা ইত্যাদি অনেক অনুভূতি। তবে আমরা যখন ছোট ছিলাম এই ধরনের অভিজ্ঞতা আমাদের সাথে তেমন ঘটেনি, শিক্ষকদের জন্য যে আলাদা একটা দিন থাকে, সেটাকে মহা ধুমধামে আড়ম্বরে পালন করতে হয়, সেটা একপ্রকার অজানাই ছিল।
এই হলো আমার ছানা পোনারা
অনেকে আবার বলে এগুলো নাকি আজকালকার ফ্যাশন, কিন্তু আমি তা মনে করি না। এখন মাঝে মাঝে আফসোস হয়, যদি ছোটবেলায় এসব কিছু জানা থাকতো তাহলে ছোটবেলায় যে দিদিমণি বা মাস্টারমশাইয়ের কাছে পড়তাম, তাহলে প্রতিবছর খুব মজা করে তাদের সাথে দিনটা কাটানো যেত। একটু যখন বড় হয়েছে ঘরের গণ্ডি পেরিয়ে বাইরে ব্যাচে পড়তে যেতে শুরু করেছি , তখন জানতে পেরেছি শিক্ষক দিবস সম্পর্কে। তারপর সব ছাত্রছাত্রীদের থেকে চাঁদা তুলে মাস্টারমশাইদের জন্য কেক, উপহার ,ফুল, পেন কত কিছুই না কেনা হতো। মাস্টারমশাইরা খুশি হয়ে আমাদেরকে অনেক কিছু খাওয়াতেন। তখনকার দিনের গুরু শিষ্য সম্পর্ক আর আজকালকার ছেলেমেয়েদের সাথে শিক্ষক শিক্ষিকাদের সম্পর্ক দেখলে অবাক হতে হয়। এখনকার কিছু বড়ো ছাত্রদের দেখলে মনে হয় এরা খুবই বেপরোয়া মনোভাবের। সম্মান অসম্মানের তোয়াক্কা এরা করে না। এখনো পথে ঘাটে চলতে যখন স্কুলের স্যার ম্যাডামদের সাথে দেখা হয় , ওনারা নিজে থেকেই বলে ওঠেন, "তোরাই ভালো ছিলি রে, পড়াশোনা কমবেশি করতিস ঠিকই কিন্তু প্রকৃত ছাত্র ছিলি, আর এখনকার ছাত্ররা কি যে আর বলি।" সত্যি মাঝে মাঝে ভাবি কোথায় যাচ্ছি আমরা, কোথায় এগোচ্ছে এই সমাজ। যাই হোক আমার তরফ থেকে আমার বাংলা ব্লগে থাকা সমস্ত শিক্ষক-শিক্ষিকাদের শিক্ষক দিবসের আন্তরিক প্রীতি ও শুভেচ্ছা।