সম্প্রীতির বাংলাদেশ প্রমাণে মানুষের উদ্যোগ দেখে আমি মুগ্ধ।।

in আমার বাংলা ব্লগ4 months ago

আমার বাংলা ব্লগ
সাজাও মন, রাঙাও হৃদয় ভালোসাবার বন্ধনে-

oikos-helping-hand-2425657_1280.jpg
Image Source

বন্ধুরা আপনারা সবাই জানেন যে, বাংলাদেশের জনগন বর্তমানে কঠিন একটি সময় অতিক্রম করছে। একদিক দিয়ে সরকার পরিবর্তন হয়েছে, পরিস্থিতি শান্ত হতে না হতেই অন্য দিকে হঠাৎ বন্যার কারনে সবাই কিছুটা আতংকের মধ্যে আছে। দেশের এই পরিস্থিতি নিয়ে সবার মধ্যে নিয়ে কিছুটা ভীতি বিরাজ করছে। বিশেষ করে বাংলাদেশের পূর্বাঞ্চলের নয়টি জেলাতে হঠাৎ করে বন্যা দেখা দেওয়ার কারনে সবাই কিছুটা চিন্তায় পড়ে গেছে। অনেক বয়স্ক মানুষের মুখ থেকে শুনলাম ফেনী, কুমিল্লা, নোয়াখালীর মানুষ জীবনে এত পানি দেখে নাই। আমি সরাসির সেখানে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতিটা দেখি নাই, তবে যারা হেল্প করতে সেখানে গেছে তাদের বিভিন্ন বিডিও দেখে অবাক হয়ে গেছি। বিভিন্ন জাগায় দেখলাম টিনের ঘর গুলোর চাল পর্যন্ত ডুবে গেছে। কিছু জাগায় এক তলার ছাদ ডুবে গেছে। লাখ লাখ মানুষ পানি বন্দি হয়ে পড়েছে। সর্বশেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ১৩ জন মানুষ নিহত হয়েছে।

এই অবস্থায় সারা বাংলাদেশের মানুষ তাদের জন্য সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছে। বন্যার পানি দেখে যেমন বিস্মিত হয়েছি, ঠিক তেমনি মানুসের হেল্পিং হ্যান্ড দেখে মুগ্ধ হয়েছি। বৃহস্পতিবার রাতে আমি সাড়ে তিনটার সময় ঘুমিয়েছিলাম। চিন্তায় টেনশনে ঘুম আসছিলো না। আমার গ্রামের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার কসবা উপজেলাতে। কসবা উপজেলায় কিছু গ্রামের ভিতরে বন্যার পানি প্রবেশ করেছে। যার ফলে চিন্তাটা একটু বেশিই হচ্ছিলো। তবে গতকালকের চিত্র দেখে গর্বে চোখ দিয়ে পানি চলে এসেছে। বোধবার, বৃহস্পতিবারে যখন লাখ লাখ মানুষ পানিতে হাবুডুবু খাচ্ছিলো তখন বন্যার্তদের সব থেকে বেশি জরুরী ছিল তাদেরকে নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়ে যাওয়া। আর সেই জন্য নৌকা বা স্পিডবোটের বেশি প্রয়োজন ছিল। তখন দেখেছি ঢাকা, চট্রগ্রাম সহ বিভিন্ন জেলা থেকে ট্রাকে তুলে শত শত নৌকা স্পিডবোট নিয়ে মানুষ পাখির ঝাঁকের মত ঝাপিয়ে পড়েছে। যারা যেভাবে পেরেছে মানুষকে উদ্ধায় করে আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়ে গেছে। যাদের এক তলার উপরে বাড়ি ঘর ছিল তারা মানুষদের সেখানে আশ্রয় দিয়েছেন। তখন কেউ মসজিদ মন্দির দেখে নাই। যে যেখানে নিরাপদ মনে করেছে, সেখানেই আশ্রয় নিয়েছে। মুসলমানকে মন্দিরে ও হিন্দুকে মসজিদ মাদ্রাসায় আশ্রয় নিতে দেখা গেছে।

আর আমাদের সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিজিবি ভাইয়েরা যেভাবে মানুষকে উদ্ধার করেছে, তাদের তৎপরতা দেখে সবাই মুগ্ধ হয়েছে। নিজেদের জীবন বাজি রেখে খেয়ে না খেয়ে তারা মানুষের দুয়ারে দুয়ারে গিয়ে খুঁজে খুঁজে মানুষদেরকে উদ্ধার করেছে। আমরা বিডিওতে দেখেছি মানুষ গাছের মধ্যে আশ্রয় নিয়েছে, টিনের চালে আশ্রয় নিয়েছে, ঘরের ছাদে আশ্রয় নিয়েছে। সবাইকে খুজে খুজে নিরাপদ আশ্রয়ে নেওয়া হয়েছে। দেশের বিভিন্ন বাহিনীর সাথে সাধারন যুবক ভায়েরা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে মানুষদেকে উদ্ধার করেছে। সেনাবাহিনী নিজের উদ্যোগে বিভিন্ন খাবার রান্না করে বন্যার্তদের খাবার দিয়েছে।

এখন আসি গতকালকের ঘটনায়। গতকালকের চিত্র দেখে আমার দুই চোখ দিয়ে পানি চলে এসেছে। সম্প্রীতির বাংলাদেশ প্রমাণে মানুষ এভাবে এগিয়ে আসবে সেটা বন্যার পানি না আসলে হয়তো কেউ দেখতে পেতো না। গতকাল বন্যার্তদের জন্য সারা বাংলাদেশ থেকে ত্রাণ তহবিল গ্রহন করা হয়েছে। কিছু কিছু চিত্র সারা বিশ্বকে অবাক করে দিয়েছে। হিন্দুরা তাদের পূজার অর্থ, মন্দিরের জমা করা অর্থ ত্রাণ তহবিলে জমা দিয়েছে। মুসলমান ভাই বোনেরা তাদের হজ্ব ও ওমরা করার জন্য জমিয়ে রাখা অর্থ, চাকরিজীবীরা তাদের বেতনের টাকা, ছাত্রছাত্রীরা তাদের টিউশনির টাকা, প্রাইভেটের টাকা ত্রাণ তহবিলে জমা দিয়েছে। গতকাল জুম্মার নামাজের পরে প্রত্যেকটা মসজিদে ত্রাণ তহবিলের জন্য টাকা উঠানো হয়েছে। সবাই হৃদয় উজার করে সহযোগিতা করেছে।

গতাকল বন্যার্তদের সহযোগিতার জন্য ঢাকা বিশ্বাবিদ্যালয়ে গণ ত্রাণ সংগ্রহ করছে বৈষম্য বিরোধীছাত্র আন্দোলনের কর্মীরা। তারা একদিনে নগদ প্রায় দেড় কোটি টাকা ও আট-দশ ট্রাক খাদ্রসামগ্রী সংগ্রহ করেছে। সেখানে দেখলাম একজন ভিক্ষুক তার ভিক্ষে করে জমানো টাকা থেকে কিছু টাকা ত্রাণ তহবিলে দিয়েছে, একটি ছোট বাচ্ছাকে দেখলাম, সর্বউচ্চ দ্বিতীয় বা তৃতীয় শ্রেণীতে পড়ে মনে হয়। সে তার সাইকেল কেনার জন্য জমানো টাকা মাটির ব্যাংক সহ ত্রাণ তহবিলে নিয়ে এসেছে। চিন্তা করা যায়। সেচ্ছাসেবকরা মানুষের ধারে ধারে গিয়ে এই ফান্ড সংগ্রহ করে নাই। তারা ঢাকা বিশ্বাবিদ্যালয়ের টিএসসির মোড়ে টেবিল নিয়ে বসে ছিল। মানুষ নিজ দায়িত্বের গাড়ি ভাড়া করে এসে নিজ হাতে ফান্ড দিয়ে গেছে। বাচ্ছা যুবক, ছেলে বৃদ্ধ, মেয়ে মহিলা যে যেভাবে পেরেছে ত্রাণ তহবিলে অর্থ জমা দিয়েছে।

আর অনেক মানুষকে দেখলাম গাড়ি ভাড়া করে, রিকশা ভাড়া করে শুকনো খাবার, শুকনো কাপড়,খাবার সেলাইন, বিশুদ্ধ পানির বোতল কিনে কিনে ত্রাণ তহবিলে দিয়ে যাচ্ছে। এসব চিত্র দেখে নিজেকে বাঙালী হিসাবে গর্বিত মনে হচ্ছে। একজনের বিপদে অন্যজন কিভাবে এগিয়ে আসছে। এখানে কোন ধর্ম নাই, বর্ণ নাই, কোন দল নাই, কোন মত নাই সবাই এক কাতার দাড়িয়ে এক বাক্যে সম্প্রীতির বাংলাদেশ গড়তে এগিয়ে আসতেছে। আমরা জেন-জি এমনই একটি বাংলাদেশ আশা করেছিলাম। যেখানে ছোট বড়, ধর্ম বর্ণের কোন ভেদাভেদ থাকবে না। গতকাল যারা ত্রাণ তহবিল সংগ্রহ করেছে, রাতেই অনেকে বন্যার্তদের মাঝে ত্রাণ পৌছে দিয়েছে। আজকে সকালেও ট্রাক ভরে ত্রাণ সামগ্রী নিয়ে মানুষ বন্যার্তদের কাছে যাচ্ছে। এই বন্যা একদিন থাকবে না। থাকবে না ক্ষয়ক্ষতির চিহৃ, তবে বন্যার্তরা মানুষের যে ভালোবাসা পেয়েছে, সেটা কখনো ভুলবে না।

সবাইকে ধন্যবাদ। আল্লাহ হাফেজ।।

2gsjgna1uruv8X2R8t7XDv5HGXyHWCCu4rKmbB5pmEzjYSj1ATxRsaEvyH89EyziiK3D1ksn1tTDvDwLCveqrhctVcDnDqtNbsqFMtuqD1RetzrgjG.png

JvFFVmatwWHRfvmtd53nmEJ94xpKydwmbSC5H5svBACH7xbS7ungTbMjNMsQ7fPnm8uUBT2bU8Azf8zCDQrq3tkzHjjCFyraxJQeY79tPTN45w8XxU9wtvaFmWRaLhgHSy5GYKQ6bg.png

IMG_20190907_175336_618.JPG

আমি একজন বাংলাদেশের সাধারন নাগরিক। বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকাতে আমার বসবাস। সিম্পল আমার স্বপ্ন সিম্পল আমার জীবন। স্টিমিট আমার জীবনের একটি অংশ, আমার বাংলা ব্লগ আমার পরিবার। বর্তমানে সোশ্যাল মিডিয়া বলতে আমি স্টিমিটকেই চিনি। ভ্রমন করা, ফটেগ্রাফি করা আর বই পড়া আমার স্বপ্ন। আমি বিশ্বাস করি মানুষের জীবনে উত্তান পতন আছেই। সর্বপরি কাজ করতে হবে লেগে থাকতে হবে, তাহলেই একদিন সফলতা আসবে,এটাই আমি বিশ্বাস করি। সবাইকে ধন্যবাদ।।

FNeY1coMNUL9WkErUPeUKmtGszS37qoEdLJEhh8bj8LkMZg4ZnLbSCPtsqdFwbPFaU6vxamfJRhKsAXwWBZmAwtf2KFjktn9asDsnKpUF6cbBcNYFzwcTbFb5dfFf7N5Lt5j8KUqpB64Bhu5yFCR9Qn5uG4sQo8t4PYbc7VJq37PW7258mLRbFTrsBTtbAnos9AJnU46Lv3HqXsN7s.gif

2N61tyyncFaFVtpM8rCsJzDgecVMtkz4jpzBsszXjhqan9uuNWjCEgJj5LnknUa3pWA9yop6dT9GDfEUZtz2oDgA9ocMHrCEtkFpngXowo13q8Mn1YvzEMh5bSRg1SNaKSZwbsLwb3YA.png

KNoz79cGRt58XHcjM3shjWsSEtKgRtxoVdChppmw4FvW2CQtZxVJGen4yBCeRMj2Y2h9ttHevCs9rtWncvn3FXAHo5MrkNBCbLay5LtH7wgCA27mBRvWM5GDKNQKzJk62Dz8KRvqdiFsZ66guzvyhyBYqJu6KB21dLiPDmtFGR2yvqBCtUPp3Rscm37PwtDEWYMtuKM5v3qhNod24L.png

7258xSVeJbKkzXhyseBP4PYz11eBDT8sW2oR1a4vfVFS6JTrGU8e1FPUaNdHG5vjXyg2xthV78bDEmEVvKCQpyzX1kq8gAVzGsPp9GqJVRWxb6T9y35PZmQehnLjELdKKmnhdxQjDuny4.png

Bangla Witness কে সাপোর্ট করতে এখানে ক্লিক করুন

HNWT6DgoBc14riaEeLCzGYopkqYBKxpGKqfNWfgr368M9VRjuxKSTKuNvqEk1nfiYiKKnHbcTuABq9Fu2qE77V9BjGsoqkb23ngKUAk2mCBmjpG3wz3go7Vd2YW.png

2r8F9rTBenJQfQgENfxADE6EVYabczqmSF5KeWefV5WL9WP87ckB6VoL3UD42BtkosJzLXYjuCC4ws3sxuihZ3nhDfd815qMJiiETpWAiutfN7bjurhaBbivMFVTYEDiv.png

download-03.png

2N61tyyncFaFVtpM8rCsJzDgecVMtkz4jpzBsszXjhqan9xBEnshRDSVua5J9tfneqYmTykad6e45JWJ8nD2xQm2GCLhDHXW9g25SxugWCoAi3D22U3571jpHMFrwvchLVQhxhATMitu.gif

এখানে ক্লিক করো ডিসকর্ড চ্যানেলে জয়েন করার জন্য

download-044.png

Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power
250 SP 500 SP 1000 SP 2000 SP 5000 SP

RGgukq5E6HBM2jscGd4Sszpv94XxHH2uqxMY9z21vaqHt1rDaeRdtDvsXGmDbuRg1s1soomTEddbTFxfMMYzob4oRFK8fTZQyYP8LbQ4tbMTAd2enV3Wq9Ze3N8TTU2.png

Click Here For Join Heroism Discord Server

cyxkEVqiiLy2ofdgrJNxeZC3WCHPBwR7MjUDzY4kBNr81R73dHAE6Ew3WjyveXn6UfQ8ahESLfvvdHjthdnPNKJby2matSBUDur7QMrVroCpwxQmohTSZHpBAXjQT9ZkpEa.png

456.gif

Sort:  
 4 months ago 

একদম ঠিক বলছেন আপনি পরিস্থিতি একটা ঠান্ডা হতে না হতে আবারো নতুন একটি খারাপ পরিস্থিতি তৈরি হলো। তবে দেশের সর্বস্তরের মানুষ এভাবে মানবিক কাজে ঝাঁপিয়ে পড়া দেখে বেশ গর্ব হচ্ছে। আমাদের বাংলাদেশের মানুষ বেশ সচেতন হয়ে গেছে দেখছি। এভাবে সবাই সবার পাশে দাঁড়ানোটা আমাদের জন্য অনেক গৌরবের বিষয়। আপনি খুব সুন্দর ভাবে পোস্ট টি সাজালেন ভীষণ ভালো লেগেছে পড়ে।

 4 months ago 

জী আপু মানুষের সহযোগিতার হাত দেখে খুবই খুশি লাগছে। এভাবেই আমরা সোনার বাংলাদেশ গড়বো। ধন্যবাদ।