বড়দিনের সন্ধ্যায় শ্রীরামপুর গির্জায় কিছুক্ষণ সময় কাটানো।
বড়দিনের সন্ধ্যায় শ্রীরামপুর গির্জায় কিছুক্ষণ
প্রথমেই ভারত ও বাংলাদেশের সকল ব্লগার বন্ধুকে বড়দিনের সপ্তাহের শুভেচ্ছা জানাই।
২৫ শে ডিসেম্বর বড়দিন। অর্থাৎ খ্রিস্টান ধর্ম যাজক যীশুখ্রীষ্টের জন্মদিন। সেই দিন সারা পৃথিবীর মানুষ মেতে ওঠেন এই মহান ব্যক্তির জন্ম তিথি উপলক্ষে। কলকাতাতে বিভিন্ন গির্জায় পালিত হয় যীশুখ্রীষ্টের জন্মদিন। খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী মানুষেরা গির্জা কে সাজিয়ে তোলেন মনের মত করে। কারণ সেই দিন হলো ফেস্টিভাল। কলকাতাতে গির্জার অভাব নেই। তাই শীতের আমেজে ধর্ম বর্ণ জাতি নির্বিশেষে মানুষ পালন করে ২৫ ডিসেম্বরের সেই ছুটির দিনটি।
ঐদিন ছুটি উপলক্ষে আমিও পৌঁছে গিয়েছিলাম শ্রীরামপুরের গির্জাতে। এই গির্জাটি একদিকে যেমন ঐতিহাসিক তেমনি আবার ভারতীয় উপমহাদেশে ইউরোপিয়ানদের ঔপনিবেশিক ইতিহাসের আন্যতম সাক্ষী। আপনারা জানেন হুগলি নদীর পশ্চিম পাড় জুড়ে এক সময়ে ইংরেজ সমেত অন্যান্য ইউরোপিয়ান বণিকরা কুঠি করেছিল বাণিজ্যে উপকারের জন্য। ঠিক তেমনভাবেই হুগলির শ্রীরামপুরে ঘাঁটি তৈরি করেছিল দিনেমার বা ড্যানিস সাহেবরা। সময়টা প্রায় আড়াইশো বছর আগের। ১৭৫৫ সালে নবাব আলীবর্দী খানের কাছ থেকে বাণিজ্যের পরোয়ানা সমেত শ্রীরামপুরে জমি পায় ড্যানিস ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি। তারপর সেখানে তাদের ৯০ বছরের উপনিবেশ। ১৮৪৫ সালে এই শহরটি ইংরেজদের হাতে হস্তান্তরিত হয়। কিন্তু তার মধ্যেই বিভিন্ন ড্যানিশ স্থাপত্য শহরটির ভোল একেবারে বদলে দেয়।
বড়দিনের দিন আমি যে গির্জাটিতে গিয়েছিলাম সেই গির্জাটি শ্রীরামপুরের সেন্ট ওলাভ গির্জা নামের সারা বাংলায় পরিচিত। শোনা যায় এই গির্জায় এসেছেন স্বয়ং বাংলার বিখ্যাত কবিয়াল এন্টনি ফিরিঙ্গি সাহেব। ১৮০০ সালে তৈরি এই গির্জাটি কিছুদিন আগে পুরসভার পক্ষ থেকে আবার নতুন করে তৈরি করা হয়েছে। যদিও কোনরূপ পরিবর্তন ঘটানো হয়নি গির্জার কারুকার্যে। আর ২৫শে ডিসেম্বর উপলক্ষে খুব সুন্দর করে সাজানো হয়েছিল সম্পূর্ণ গির্জাটি। শ্রীরামপুর পুরসভার তরফে এই গির্জাটি সাজানো হয় এই বছর। এই গির্জায় গেলে ড্যানিস স্থাপত্য এবং সেইসব সাহেবদের নস্টালজিক ইতিহাস আপনার চোখের সামনে ফুটে উঠবে।
এবছর বড়দিন উপলক্ষে ভীষণ সুন্দর করে সাজানো হয়েছে এই গির্জাটি। খুলে দেওয়া হয়েছে ভেতরের কক্ষটিও। প্রার্থনা করার এই কক্ষটিতে একসঙ্গে বহু মানুষ বসে প্রার্থনা করতে পারেন যীশুর উদ্দেশ্যে। ভেতরটিও ভীষণ পরিপাটি করে সাজানো। আলোকসজ্জা ছাড়া ও বিভিন্ন মূর্তি দিয়ে চার্চটির ভেতর সাজানো হয়েছে অসাধারণ ভাবে। সামনে ঘুরে বেড়াচ্ছে সান্তাক্লজ। শিশুদের সঙ্গে তার খুব বনিবনা। সব সময় হাসিমুখে ছবি তুলছে সে সকল শিশুদের হাত ধরে। আর স্লেজ ভল্লুক থেকে শুরু করে বলগা হরিণের আলোকসজ্জায় সমস্ত জায়গাটির আবহই যেন বদলে গেছে একেবারে। চেষ্টা করেছি অসাধারণ সেই সব আলোকসজ্জার মুহূর্ত আপনাদের সামনে তুলে আনতে। সেদিন সমস্ত আলোয় শ্রীরামপুরের গির্জা যেন ঝলমল করছিল। সামনে মঞ্চ বেঁধে অনুষ্ঠান চলছে সারাদিন। বিভিন্ন শিল্পীরা গান গাইছেন, আলোচনা করছেন শ্রীরামপুরের ইতিহাস প্রসঙ্গে। আর বড়দিনের আবহে যেন আলোয় ঝলমল করে উঠেছে সারা শ্রীরামপুর শহর। আবার যেন ফিরে এসেছে সেই দুশো বছর আগের সাহেবদের হাতে তৈরি করা ঝলমলে গির্জার রূপ৷ আর সেই উৎসবে গা ভাসিয়েছেন আপামর শ্রীরামপুরবাসী।
গির্জার ছবি এবং বড়দিনের সেই মুহূর্ত নিয়ে পোস্ট যদি আপনাদের ভালো লেগে থাকে তবে নিশ্চয় মন্তব্য করে আমাকে অনুপ্রাণিত করবেন।
🙏 ধন্যবাদ 🙏
(১০% বেনিফিশিয়ারি প্রিয় লাজুক খ্যাঁককে)
--লেখক পরিচিতি--
কৌশিক চক্রবর্ত্তী। নিবাস পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলায়। পেশায় কারিগরি বিভাগের প্রশিক্ষক। নেশায় অক্ষরকর্মী। কলকাতায় লিটল ম্যাগাজিন আন্দোলনের সাথে দীর্ঘদিন যুক্ত৷ কলকাতা থেকে প্রকাশিত কবিতার আলো পত্রিকার প্রধান সম্পাদক। দুই বাংলার বিভিন্ন প্রথম সারির পত্রিকা ও দৈনিকে নিয়মিত প্রকাশ হয় কবিতা ও প্রবন্ধ। প্রকাশিত বই সাতটি৷ তার মধ্যে গবেষণামূলক বই 'ফ্রেডরিক্স নগরের অলিতে গলিতে', 'সাহেবি কলকাতা ও তৎকালীন ছড়া' জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। সাহিত্যকর্মের জন্য আছে একাধিক পুরস্কার ও স্বীকৃতি। তার মধ্যে সুরজিত ও কবিতা ক্লাব সেরা কলমকার সম্মান,(২০১৮), কাব্যলোক ঋতুভিত্তিক কবিতায় প্রথম পুরস্কার (বাংলাদেশ), যুগসাগ্নিক সেরা কবি ১৪২৬, স্রোত তরুণ বঙ্গ প্রতিভা সম্মান (২০১৯), স্টোরিমিরর অথর অব দ্যা ইয়ার, ২০২১, কচিপাতা সাহিত্য সম্মান, ২০২১ তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য।
কমিউনিটি : আমার বাংলা ব্লগ
ধন্যবাদ জানাই আমার বাংলা ব্লগের সকল সদস্যবন্ধুদের৷ ভালো থাকুন, ভালো রাখুন।
Daily tasks-
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
https://x.com/KausikChak1234/status/1873005192641429843?t=OtVHxGxzH_1I_MbHOK6xHQ&s=19
জাতিস্মর একটা সিনেমা আছে। ওখানে একটা গানে এই শ্রীরামপুর গীর্জার নাম শুনেছিলাম। আমার বেশ পরিষ্কার মনে আছে কথাগুলো। তবে আজ একেবারে ভিন্ন ভাবে জানতে পারলাম অনেক কিছু। সত্যি দারুণ লিখেছেন ভাই। ধন্যবাদ আপনাকে।।
একদম ঠিক কথা বলেছেন ভাই। জাতিস্মর সিনেমায় এন্টনি ফিরিঙ্গি সাহেব যে এই গির্জায় আসতেন সেই কথার উল্লেখ আছে। আমি সেই কথাই এখানেও লিখেছি। বেশ বুঝতে পারি আপনি অনেক পড়াশোনা করেন এবং সিনেমা মুভি দেখেন।