জীবন যুদ্ধে হার না মানা শিহাবের গল্প।

in আমার বাংলা ব্লগ2 years ago

২৬ভাদ্র , ১৪২৯ বঙ্গাব্দ

১০সেপ্টেম্বর , ২০২২ খ্রিস্টাব্দ
১৩সফর , ১৪৪৩ হিজরী
শনিবার।
শরৎকাল ।


আসসালামু আলাইকুম,আমি মোঃআলী, আমার ইউজার নাম @litonali।আমি বাংলাদেশ থেকে। আশা করি আপনারা সবাই ভালো আছেন। আলহামদুলিল্লাহ আমি আপনাদের দোয়ায় ভালো আছি। মাতৃভাষা বাংলা ব্লগিং এর একমাত্র কমিউনিটি [আমার বাংলা ব্লগ] এর সবাইকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দনজানিয়ে আমার আজকের পোস্ট শুরু করছি


প্রিয় আমার বাংলা ব্লকবাসি আশা করছি আপনারা সবাই ভাল আছেন। জীবন যাত্রার মান যত উন্নত হচ্ছে দিন দিন টাকার মানটা ঠিক ততটাই কমে আসছে।। আসলে জীবনটা যেখানে যেমন মানুষ সেখানে ঠিক তেমনি উপভোগ করছে। কেউ কোটি টাকার প্রাসাদে থেকে কোটি টাকার গাড়িতে চড়ে ঘুরছে তবুও মনে হচ্ছে তার কি যেন কমতি রয়েছে। আবার কেউ ইস্টিশনে বাস করছে গাছের তলায় বাস করছে নির্দিষ্ট থাকার কোন জায়গা নেই খাবার কোন স্থান নেই যখন যেখানে যেরকম ঠিক সেখানে সেরকমই জীবনটাকে উপভোগ করছে।। নিষ্ঠুর পৃথিবীতে আমরা সবাই কোন না কোন সমস্যার মধ্যে সব সময় পড়েই থাকি।। কেউবা ১০ টাকার একটা রুটির জন্য মানুষের কাছে হাত পেতে দাঁড়িয়ে থাকে।। আবার কেউ রেস্টুরেন্টে গিয়ে ১০ হাজার টাকার খাবার খেয়ে বিল দিচ্ছে তার জন্য কোন ব্যাপারই না।


IMG_20220909_205258.jpg

আজ আমি আপনাদের মাঝে তুলে ধরব জীবন যুদ্ধে হার না মানা 9 বছর বয়সী শিহাব নামে একটি ছেলের কিছু কথা। গত বৃহস্পতিবার রাতে জয়দেবপুর স্টেশন দিয়ে কুষ্টিয়াতে আমার বাড়ি এসেছি রাতের ট্রেনে। রাত তখন সাড়ে নটা বাজে দেখি একটা প্রতিবন্ধী ছেলে একটা বস্তার মধ্যে কিছু বোতল নিয়ে বসে একটা শুকনা রুটি 🍞 খাচ্ছে। স্টেশনে রেলের উপরে এরকম দৃশ্য দেখে আমি সামনের দিকে এগিয়ে গেলাম তার কাছে গিয়ে বসলাম। প্রথমে তার নাম জিজ্ঞেস করলাম বললো আমার নাম শিহাব। জিজ্ঞেস করলাম বাড়িতে কে কে আছে। বলতেই তার দু'চোখ বেয়ে পানি ঝরতে থাকলো।। বলল ভাইয়া আমি আর আমার ছোট ভাই বেশ কিছুদিন আগে বাবা মারা গেছে তার কিছুদিন পরে মা।। পৃথিবীতে আমাদের আর কেউ নেই স্টেশনে আমাদের ঘর ইস্টিশনে আমাদের বাড়ি।


শিহাবের এই কথা শুনে আমি আর কোন প্রশ্ন করতে পারছিলাম না না জানি আমার পরবর্তী প্রশ্নের উত্তর কতটা কঠিন হতে পারে। আমি কি বলবো ওর কাছে বসে থাকবো না উঠে চলে যাব না ওকে কোনো সান্তনা দেব কিছুই বুঝতে পারছিলাম না।


IMG_20220909_205338.jpg

আসলে পৃথিবীতে আমাদের জন্য পরীক্ষা সবসময় আমরা বাস্তবতার সম্মুখীন হয়ে থাকি।। সৃষ্টিকর্তা যেমনটি চেয়েছেন ঠিক তেমনি আমাদেরকে পৃথিবীতে রেখেছেন।। হতে পারে সম্পদ শালী মানুষের জন্য তাদের একটা পরীক্ষা।


আমি শিহাব কে বললাম তুমি সারাদিনে এরকম কতগুলা বোতল টুকাও। ওর হাতে ছোট্ট একটা বস্তা ছিল তখন বলল এরকম তিন চার বস্তা হয়। বিক্রি করার কথা বলল ২০ টাকা কেজি এক বস্তায় সর্বোচ্চ দেড় কেজি হতে পারে। এতে করে তার সারাদিনে ৮০ থেকে ৯০ টাকা বা ১০০ টাকা আয় হয়। এই দিয়ে ছোট ভাই এবং সে কোন মতে কিছু একটা খেয়ে স্টেশনের কোন এক কর্নারে রাত্রে ঘুমায়। আমি বললাম তোমার ছোট ভাইটি কোথায় সে বলল কোথাও এক জায়গায় ঘুমায়ে রেখে এসেছে তার বয়স ৬ বছর।


হয়তো শিহাবের সাথে আমার দেখা না হলে কথা না হলে আমি বুঝতেই পারতাম না জীবনটা আসলে কেমন। প্রকৃত যুদ্ধটা আসলে কি। পড়লে ছেঁড়া প্যান্ট গায়ে ছেঁড়া জামা পকেট শূন্য টাকা। দুবেলা দুমুঠো খাবারের জন্য ঘুরতে হয় মানুষের দ্বারে দ্বারে। স্টেশনে শিহাবের মত এমন আরো অনেকেই আছে যারা দুবেলা দুমুঠো খাবারের জন্য কত কিছুই না করছে।


আমি শিহাব কে বললাম চলো হোটেলে যাই তোমার সাথে আজ আমি রাতের খাবার খাব। সে তো রাজি হয় না আমাকে বলে ভাইয়া আমি ভিক্ষা করি না। আমি বললাম তোমাকে তো আমি ভিক্ষা দিতাছিনা চলো দুজনে বসে রাতের খাবারটা খাই হোটেলে। সে বান্দা কোন রকমে রাজি হলো না বলল আমার ছোট ভাই আছে ওকে ছাড়া আমি কিছু খাই না। আমি বললাম তোমার ছোট ভাইটা কেউ নিয়ে আসো। ও বলল ওকে মাত্র ঘুমায়ে রেখে আসলাম।


শিহাবের সাথে গল্প করতে করতে অনেকটা সময় পার হয়ে গেল এরই মধ্যে ট্রেনের ঘন্টা হয়ে গেল ট্রেন চলে আসলো। শিহাবের গল্প শুনে আমার ভিতরটা কেমন যেন করতে ছিল আসলে মানুষ কিভাবে বাচে স্টেশনে। কোনরকম শিহাবকে বুঝিয়ে সাজিয়ে রাতের খাবারের জন্য কিছু টাকা থাকে দিলাম। আমার কাছে মনে হচ্ছিল আমি যেটা দিলাম এটি অতি সামান্য। আরো বেশি কিছু দিতে পারলে হয়তো আমার অনেক ভালো লাগতো।

IMG_20220909_205235.jpg


কেমন নিষ্ঠুর জীবন শিহাবের মা নেই বাবা নেই দুই ভাই একসাথে থাকে সকাল থেকে বোতল কুড়ায় বিক্রি করে সেই টাকা দিয়ে দুবেলা দুমুঠো খেয়ে জীবন পার করছে। আমাদের উচিত শিহাবের মত আরও যারা আমাদের আশেপাশে রয়েছে আমাদের সাধ্যমত তাদের পাশে এগিয়ে যাওয়া। তাদের শিক্ষা চিকিৎসা অন্নবস্ত এর কিছু ব্যবস্থা করা।।


পৃথিবীতে আমরা চিরদিন কেউই রবো না সৃষ্টিকর্তা আমাদেরকে যেভাবে পৃথিবীতে রাখতে পছন্দ করতেছেন তিনি ঠিক সেভাবেই রেখেছেন।। এজন্য আমরা সর্ব অবস্থায় সৃষ্টি কর্তার শুকরিয়া আদায় করি। এবং আমাদের আশেপাশে থাকা অবহেলিত শিশুদের পাশে এসে দাঁড়াই তাদের বিপদের কিছুটা হলেও সমাধান দেয়ার চেষ্টা করি।

লোকেশন:


ডিভাইসঃ Redmi Note 5



standard_Discord_Zip.gif

>>>>>|| এখানে ক্লিক করেন ডিসকর্ড চ্যানেলে জয়েন করার জন্য ||<<<<<


সবাই ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন।

ধন্যবাদ

Sort:  
 2 years ago 
 2 years ago 

ভাইয়া আপনার গল্পটি পড়ে ভালই লাগলো. কাগজ পুরনো জেলের ব্যক্তিত্ব দেখে আমি অবাক.আপনি তাকে খাওয়ার কথা বলতে সে আপনাকে ফিরিয়ে দিল.

 2 years ago 

আসলে ঠিকই আপু এরাই ভালো আমার মনে হয় মানুষের কাছ থেকে ভিক্ষা করে খাওয়ার চেয়ে একটু পরিশ্রম করে কষ্ট করে খাওয়া অনেক ভালো

 2 years ago 

শিহাবের মত এরকম হাজার হাজার পথশিশু ২-৩ বেলা না খেয়ে পার করে দিচ্ছে। শিহাব কে ত তাও ভাল মনে হচ্ছে, অনেক শিশু আছে খারাপ কাজে লিপ্ত হয়ে যায়। এই কথা সত্যি যে আমরা রেস্টুরেন্টে অনেক টাকা খরচ করি কিন্তু পথশিশুদের জন্য কিছু করতে হাত আটকে যায়। এত ছোট বাচ্চার ৯ বছর বয়সে বাবা-মা না থাকলে রাস্তা দেখানোর মত কেউ থাকে না। ৮০-১০০ টাকায় ২ টা ছেলের জন্য অনেক কম উপার্জন। এই অবস্থার জন্য আমাদের সমাজ অনেকটা দায়ী। ধন্যবাদ ভাইয়া।

 2 years ago 

আমার কাছে মনে হয়েছে ছেলেটি অনেক ভালো সবাই যেখানে মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরে হাত পেতে ভিক্ষা করে দুবেলা খাবার জুটা চেয়ে সেখানে এই প্রতিবন্ধী ছেলেটি নিজে বোতলে এবং কাগজ কুড়িয়ে উপার্জন করে খাচ্ছে

 2 years ago (edited)

মাঝে মাঝে ধনীর দুলাল দের এই ধরনের জীবন দেখানো উচিৎ। এরকম শিহাব রা ২মুঠো খাবারের জন্য কত কষ্ট করে আর তারা অনায়াসে খাবার নষ্ট করে।আর সমাজের চোখ যে কবে খুলবে।মানুষ এড়িয়ে যায়।আপনি তাও কিছু করার চেষ্টা করেছেন তা সে যতটুকুই হোক।এজন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

 2 years ago 

আসলে বাস্তবতা যে কত কঠিন পথে ঘাটে চলতে ফিরতে সেটা বুঝতে পারি।। আসলে যাদের অঢেল সম্পদ রয়েছে কোটি টাকার বাড়িতে ঘুমায় আর কোটি টাকার গাড়িতে ঘুরে তারা এই কষ্ট কখনোই বুঝতে পারবে না।।

 2 years ago 

একদম ঠিক বলেছেন।এক বেলা খেলে আরেক বেলার ঠিক নেই।ঘুমানোর জায়গার নির্দিষ্টতা নেই।অসুখ হলে দেখার কেউ নেই।কত কঠিন জীবন এদের।

 2 years ago 

বাস্তবতার এক দৃষ্টান্ত রূপ ফুটিয়ে তুলেছেন আপনার আজকের এই সুন্দর পোস্টের মধ্য দিয়ে। আসলেই এ জাতীয় বিষয়গুলো নিয়ে খুব কম মানুষে বিবেচনা করে থাকে। তবে এটাকে বলা হয় বাস্তবতা, মানুষের জীবন কত না সংগ্রামীময়।

 2 years ago 

আসলে মানুষের জীবন কত নিষ্ঠুর আর কত বিপর্যয়ের মধ্যে রয়েছে সেটা বাহিরে ঘোরাফেরা করে না দেখলে বোঝা মুশকিল।।।। আমি তো জাস্ট একটা চিত্র তুলে ধরেছি এবং এমন হাজারো চিত্র রয়েছে আমাদের দেশে

 2 years ago 

প্রতিনিয়ত বলতে গেলে শিহাবের মতো এইরকম হাজারো পথশিশুরা কখনো খেয়ে কখনো না খেয়ে দিন কাটাচ্ছে। তবে সব থেকে বেশি খারাপ লাগলো ওর মা বাবা দুজনেই মারা গেছে। আর ছোট ভাইয়ের বয়স ছয় বছর, আসলে ৬ বছরের একটা শিশু এই রকম অবস্থা এটাই কিন্তু বাস্তবিকভাবে মানা যায় না। আমরা এমনিতে পথে-ঘাটে কিন্তু অনেক দেখি কিন্তু সরাসরি কারো সাথে কথা বললে কিংবা জানতে পারলেই বোঝা যায় আসলে কষ্টের মানেটা কি? আর একটা বিষয় হচ্ছে সে তার ছোট ভাইকে ছাড়া খাবে না। আবার এত কষ্টে থাকার পরও আপনার সাথেও খেতে রাজি নয়। ছেলেটার কথা শুনে বেশ ভালোই লাগলো।

 2 years ago 

।। কথা বলেছেন আপু প্রতিনিয়ত পথে-ঘাটে এমন হাজারো শিশু রয়েছে শিহাব এর মত যারা খেয়ে না খেয়ে দিন পার করছে এবং জীবন যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে।। শিহাবকে দেখেছি তার ছোট ভাইয়ের প্রতি গভীর ভালোবাসা যা দেখে সত্যিই আমি অবাক

 2 years ago 

আপনার লেখাগুলো পড়ে কে জানি নিজের কাছেই খারাপ লাগছে অপরাধ বোধ কাজ করছে। মনে হচ্ছে শিহাবদের জন্য কিছু করা দরকার। আসলেই কী মানবেতর জীবনযাপন করে এরা। খুবই হৃদয়বিদারক। সৃষ্টিকর্তা আমাদের কত ভালো রেখেছেন তারপরও আমরা খুশি না😩।।

 2 years ago 

আসলে আমাদের আশেপাশেই এমন ব্যক্তি রয়েছে যারা খেয়ে না খেয়ে জীবন পার করছে লজ্জায় হয়ত কারো কাছে কোনদিন চাইতেও পারছে না আমাদের উচিত তাদের পাশে থেকে তাদের সাহায্য সহযোগিতায় এগিয়ে আসা প্রতিনিয়ত

 2 years ago 

পিতা মাতা নেই তার ওপর প্রতিবন্ধী, পৃথিবীর বুকে এমন সন্তানদের লড়াই অন্ততপক্ষে যারা ভালোভাবে বেঁচে আছেন তারপরও নিজেকে দুঃখী মনে করেন, তাদের জন্য জলজ্যান্ত একটা উদাহরণ।
এমতাবস্তার পরেও শিহাব বেঁচে থাকার লড়াই থেকে সরে যায়নি, সে আত্মহত্যা করেনি, বহু কষ্টে বোতল জমা করে খুব সামান্য দামে বিক্রি করে জীবন চালাচ্ছে।
শিহাব বড় হোক। জীবন যুদ্ধে জয়ী হোক। তার জন্য অনেক হৃদয় থেকে শুভকামনা রইল।

 2 years ago 

ঠিকই বলেছেন ভাইয়া যারা দুমুঠো খাবারের আশায় জীবন যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে তাদের সাথে আমাদের কিছুটা সময় অতিবাহিত করা এবং তাদের দুঃখ কষ্টের কথা জেনে তাদের পাশে থাকা দরকার

 2 years ago 

এমন হাজারো পথশিশু রয়েছে। কয়জনের জীবনের কাহিনীই বা আমরা জানি। আপনার আজকের পোস্টটা পড়ে সত্যিই খুব খারাপ লাগছে। নয় বছরের একটা বাচ্চা কত নির্মম ভাবে তার এই জীবন চলছে। সাথে তার ছোট ভাই ও রয়েছে। আমাদের সবারই উচিত নিজের সামর্থ্য অনুযায়ী তাদেরকে সাহায্য করা। দোয়া করি শিহাব যেন জীবন যুদ্ধে জয়ী হয়।

 2 years ago 

এটা ঠিক যে কয়জনের জীবন কাহিনী বা আমরা জানি তারপরে সব সময় চেষ্টা করি যারা এবং কষ্টের মধ্যে জীবন অতিবাহিত করছে তাদের সাথে থেকে তাদের কষ্টগুলো ব্লকের মাধ্যমে তুলে ধরার